বাড়িতেই ফাইনাল দেখবেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কাতারে
বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ দেখতে কাতারে যাচ্ছেন না আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ। তিনি জানান, আজ
২৮ বছরের অপেক্ষা ঘোঁচানোর জন্য এর চেয়ে ভালো সুযোগ হয়ত পেত না ইংল্যান্ড। শক্তির বিচারে তারা যে সুইডেনের চেয়ে কত এগিয়ে সামারা অ্যারেনায় গতকাল তারই প্রমাণ দিল গ্যারেথ সাউথগেটের দল। হ্যারি মাগুইরি ও দেলে আলির দুই হেডে সুইডেনকে ২-০ গোলে হারিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে গেছে ইংল্যান্ড।
আসরে এখন পর্যন্ত এটিই ইংল্যান্ডের সবচেয়ে আলোকজ্জ্বল ম্যাচ বলা যায়। আক্রমণ, ডিফেন্স, মাঝমাঠ সবখানেই ছিল সাউথগেটের শিষ্যদের আধিপত্য। তরুণ গোলরক্ষক জর্ডান পিফোর্ডও ছিলেন দারুণ ফর্মে। তারই ফলস্বরুপ ১৯৯০ সালের পর বিশ্বকাপের শেষ চারে জায়গা করে নেয় ইংলিশরা। এই পর্বে প্রতিপক্ষ হিসেবে তারা পাবে দিনের অপর ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে জয়ী দলকে।
ইংলিশদের গতি আর আক্রমণাত্মক ফুটবলের সামনে ক্ষণিকের পাল্টা আক্রমণে সুইডিশরা কেবল আতঙ্কই ছড়াতে পেরেছে, জাল আবিষ্কার করতে পারেনি। ইংলিশ তরুণ গোলরক্ষক পিকফোর্ডও যেন ছিলেন ক্যারিয়ার সেরা ফর্মে। শেষ ষোলয় যার বীরত্বে টাইব্রেকারে কলম্বিয়াকে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। বার্গ-ফর্সবার্গদের সামনে এদিন ছিলেন চীনের প্রচীর হয়ে। অবশ্য গোলের অনেকগুলো সুযোগ কাজে না লাগাতে পারার দায় আছে সুইডশ নাম্বার নাইন মার্কাস বার্গেরও। শেষ আটেই তাই থামতে হয়েছে সবশেষ ১৯৯৪ সালে শেষ চারে খেলা সুইডেনকে। এক যুগ পর বিশ্বমঞ্চে ফিরে শেষ আটে খেলাও বা কম কিসে।
ম্যাচের শুরু থেকেই বলের দখল রেখে আক্রমনাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে ইংল্যান্ড। সুইডেনের ডি বক্সে চার-পাঁচ ইংলিশ ফুটবলার ঘুরেছেন সুযোগের অপেক্ষায়। কিন্তু কোনভাবেই সুযাগ মিলছিল না। অবশেষে গোলের দেখা মেলে কর্নার কিক থেকে। ঘড়ির কাটা অর্ধঘণ্টা স্পর্শ করার পর জোরালো হেডে ইংল্যান্ডকে লিড এনে দেন হ্যারি মাগুইরে। অ্যাশলে ইয়াংয়ের কর্নার কিক থেকে উড়ে আসা বল জোরালো হেডে জালে পাঠান লেস্টার সিটি ডিফেন্ডার। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এটি তার প্রথম গোল। আসরে ইংলিশদের করা দশ গোলের মধ্যে এটি ছিল সেট পিস থেকে করা অষ্টম গোল।
প্রথমার্ধের শেষ সময়ে গোলের সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন রাইম স্টার্লিং। অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে পেছন থেকে উড়ে আসা বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোলরক্ষকে কাটাতে গিয়েছিলেন। কোনমতে বলে হাত দিয়ে স্টার্লিংয়ের ছন্দে ব্যাঘাত ঘটান রবিন ওলসেন। ততক্সণে রক্ষণভাগের বাকিরা এসে ম্যানচেস্টার সিটি ফরোয়ার্ডকে ঘিরে ধরেন। পক্ষান্তরে সুইডেনের নজর ছিল লম্বা পাসে পাল্টা আক্রমণের দিকে। কিন্তু গ্যারেথ সাউথগেটের শক্ত রক্ষণ তাদের সেই সুযোগ দেয়নি। পরিষ্কার কোন গোলের সুযোগই তৈরি করতে পারেনি তারা। ছিল ভুল পাসের ছড়াছড়ি। প্রথমার্ধে লক্ষ্যে কোন শটই রাখতে পারেনি তারা।
আসরে ছয় গোলের পাঁচটিই দ্বিতীয়ার্ধে করা সুইডেন বিরতির পর শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারত। কিন্তু মার্কাস বার্গের হেড বাঁ-দিকে ঝাপিয়ে রুখে দেন গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। ঘুরে দাঁড়িয়ে সুইডেনের উপর আবারো চাপ বাড়াতে থাকে ইংলিশরা। ৫৮তম মিনিটে জয়ের শক্ত ভিত গড়ে দেন দেলে আলি। জেসে লিঙ্গার্ডের ক্রস দারুণ হেডে জালে পাঠান টটেনহ্যাম মিডফিল্ডার। আসরে এটি ছিল হেড থেকে করা ইংল্যান্ডের পঞ্চম গোল। বিশ্বকাপের এক আসরে যা সর্বোচ্চ। এর আগে ২০০২ বিশ্বকাপে হেড থেকে সর্বোচ্চ চার গোল করেছিল জার্মানি।
দুই মিনিট পর ক্লাসেনের শট ডানদিকে ঝাপিয়ে রুখে দেন ২৪ বছর বয়সী গোলরক্ষক। ৭২তম মিনিটে আবারো ইংলিশ ত্রাণকর্তার ভুমিকায় দেখা দেন পিকফোর্ড, বার্গের শট পোস্টের উপর দিয়ে পাঠিয়ে। বাকি সময়ে আধিপত্য ধরে রেখেও গোলের দেখা পায়নি ইংল্যান্ড।
অবশ্য নিজেদের ইতিহাসে তৃতীয়বারের মত শেষ চারে নাম খেলাতে এটুকুই যথেষ্ঠ ছিল। তবে এখানেই যে তারা থামতে চান না সেটা ম্যাচ শেষে স্পষ্ট জানিয়ে দিযেছেন দলপতি হ্যারি কেইন, ‘সামনে এখনো বড় খেলা বাকি আছে। ভালো লাগছে, আত্মবিশ্বাসীও। এখন আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
রবিবারের ফাইনালের জন্য আর একটি জয় চায় থ্রি লায়ন্সদের। সবকিছু ঠিক থাকলে শেষ বাধা হিসেবে তারা পাবে শেষ চারে বেলজিয়াম ও ফ্রান্সের মধ্যে জয়ী দলকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।