পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
প্রায় আট বছর ধরে চলমান সিরীয় যুদ্ধে ইসরাইলের অবস্থান রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও স্থানীয়দের কাছে ছিল ধোঁয়াশাপূর্ণ। অনেকেই মনে করেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকেই ক্ষমতায় দেখতে চায় দেশটি। আসাদের শাসনামলে ইসরাইলের দখলকৃত সিরীয় গোলান অঞ্চল ছিল শান্ত। কিন্তু আসাদবিরোধীরা ক্ষমতায় গেলে অঞ্চলটি অশান্ত হয়ে ওঠতে পারে। যা ইসরাইলের জন্য অজ্ঞাত হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। তবে কেউ কেউ যুক্তি তুলে ধরে বলছেন, ইরানের সঙ্গে আসাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, তেহরানকে যুদ্ধে হস্তক্ষেপের অনুমতি এবং ইসরাইল সীমান্তে ইরানের উপস্থিতি বৃদ্ধি তেল আবিবের জন্য আরও বড় হুমকি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এমনটাই উঠে এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার সহযোগিতা পুষ্ট আসাদের বাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্রোহীদের দমনের কাছাকাছি পৌঁছানো এবং যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার কারণে ইসরাইল হয়ত চায় তিনিই ক্ষমতা থাকুন। যদিও ইসরাইলি রাজনীতিকরা প্রকাশ্যে আসাদকে উৎখাতের কথা বলে আসছেন। জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক অধ্যাপক এলি পোদেহ বলেন, যখন ধীরে ধীরে এটা স্পষ্ট হচ্ছে যে আসাদই ক্ষমতায় থাকছেন তখন সম্ভবত সর্বশেষ ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার আলোচনায় আসাদের শাসনকে মেনে নিতে রাজি হয়েছে ইসরাইল। ইসরাইল চায় ইসরাইলি-সিরীয় সীমান্তের স্থিতিশীলতা ও শান্ত পরিবেশ। আসাদের সরকার যদি এটা নিশ্চিত করে যেমন অতীতে করেছে, তাহলে ইসরাইল সন্তুষ্ট থাকবে। ২০১৫ সালে সিরীয় যুদ্ধে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে। ইসরাইলের সঙ্গেও রাশিয়ার সুসম্পর্ক রয়েছে। ইসরাইলকে সিরীয় ভূখন্ডে ইরান ও সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ও লেবাননের হেজবুল্লাহ গোষ্ঠীর ওপর নির্বিঘেœ বিমান হামলা চালানোর সুযোগ দিয়েছে রাশিয়া। যুদ্ধে বিবদমান বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে রাশিয়ার মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার হস্তক্ষেপের কারণেই আসাদের বিষয়ে ইসরাইলের মনোভাবের পরিবর্তন ঘটেছে, যদিও এটা ঘটেছে পরোক্ষভাবে। নিউ ইয়র্কভিত্তিক থিংকট্যাংক দ্য সেঞ্চুরি ফাউন্ডেশনের গবেষক আরোন লুন্ড বলেন, ২০১৫ সালে সিরিয়ায় রাশিয়ার হস্তক্ষেপের ইসরাইল আলোচনা ও চুক্তি করার মতো কোনও শক্তিকে পায়। সিরিয়ার আকাশে মুখোমুখি হওয়া এড়িয়ে এবং রাশিয়াকে অবমাননা না করেই সিরীয় ভূখন্ডে ইসরাইলি বিমান হামলার চালানোর বোঝাপড়া দেশটি দুটি করে নিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রæপের ইসরাইল/ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশ্লেষক ওফার জালজবার্গ জানান, ২০১৬ সালের শেষ দিকেও বেশিরভাগ ইসরাইলি নেতা ও কর্মকর্তারা চেয়েছিলেন ও মনে করতেন সিরিয়া বিভক্ত হয়ে যাবে। তারা ভাবতেন এতে করে তাদের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশটি দুর্বল হয়ে পড়বে। কিন্তু রাশিয়ার হস্তক্ষেপে আসাদ ক্ষমতায় টিকে থাকেন। ইসরাইল মস্কোর সঙ্গে সংঘাত এড়ানো ও সমন্বয়ের ব্যবস্থা গড়ে তোলে। একই সঙ্গে তারা রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে হামলা চালানো শিখে যায়। জালজবার্গ বলেন, যখন ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রকে সিরিয়ায় সেনা রাখার জন্য চাপ দেয় তারা মস্কোর সম্মতিতেই তা করে। ইসরাইল চায় তাদের ভাষায় সিরিয়ার অভ্যন্তরে নিজস্ব লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে সামরিক শক্তিকে ব্যবহার করতে। মার্কিন সেনা সিরিয়ায় অবস্থান করলে তাদের সুবিধা হয় এক্ষেত্রে। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমেও আসাদ ইস্যুতে নেতানিয়াহু সরকারের মনোভাব বদলের ইঙ্গিত উঠে আসছে। মঙ্গলবার ইসরাইলি সংবাদামাধ্যম হারেৎজ’র মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক জবি বার’এল লিখেছেন, ইসরাইল চায় আসাদ ক্ষমতায় থাকুন। আল-জাজিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।