মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গাবাস ও অন্য বেঁচে যাওয়া বন্দিরা বলেন, কারাগারগুলোর মধ্যে শিল্প-স্কেলের পরিবহন ব্যবস্থা আছে- হেলিকপ্টার, বাস, কার্গো বিমান। বন্দিদের প্রতিটি পর্যায়ে নির্যাতন করা হয়। কেউ কেউ জীব-জন্তুর মৃতদেহ বয়ে নেয়ার জন্য ব্যবহৃত ট্রাকের উপর এক হাতে ঝুলে মাংসের হুকের সাথে বাঁধা অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথ পাড়ি দেয়ার কথা জানান। কারাগারে গাবাসের নতুন সেলটি ছিল আগেরগুলোর মত একই ধরনের ১২ ফুট দীর্ঘ ও ৯ ফুট প্রশস্ত। তাতে এত বেশি বন্দি যে তাদেরকে পালা করে ঘুমাতে হত।
সেলের বাইরে চোখ বাঁধা ও হাতকড়া লাগানো এক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি হলেন মানবাধিকার আইনজীবী দারবিশ। একজন বিচারককে সুষ্ঠু বিচারের নিশ্চয়তা দেয়া সিরীয় আইন সম্পর্কে জ্ঞান দিয়ে বক্তৃতা করায় তাকে আটক করা হয়। পরে তিনি তার শাস্তির বিবরণ দেন- উলঙ্গ, পানিহীন, ঘুমাতে না দেয়া ও নিজের প্রস্রাব পান করতে বাধ্য করা।
বিদ্রোহীরা বাইরে থেকে এগিয়ে আসতে থাকায় এবং আশপাশের এলাকায় সরকারের জঙ্গি বিমানগুলো বোমাবর্ষণ করতে থাকায় কারাগারে নির্যাতনের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। প্রাণে রক্ষা পাওয়ারা ভয়াবহ নির্যাতন, ধর্ষণ, প্রাণদন্ড, আহত ও অসুস্থ বন্দিদের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কথা জানান। গাবাসকে শিগগিরই বিশেষ শাস্তি দেয়া হয়। নিজেকে সুহাইল হাসান পরিচয়দানকারী এক ব্যক্তি, সম্ভবত সুহাইল হাসান জামান তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনি ছিলেন বিমান বাহিনী কারাগারের প্রধান। তার উপরে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানো হয়।
এরপর তাকে সাভধানিয়া কারাগারে পাঠানো হবে বলে তিনি ধারণা করছিলেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট মতে, সেটা ছিল তখন গণমৃত্যুদন্ড কেন্দ্র। হাজার হাজার মানুষকে সেখানে সংক্ষিপ্ত বিচারের পর ফাঁসি দেয়া হত। সেখানে গেলে নিষ্ঠুর নির্যাতনের অন্তত শেষ হবে বলে তিনি ভেবেছিলেন। কিন্তু তা হয়নি। তাকে আরো এক বছর প্রাত্যহিক দুঃসহ নির্যাতন সহ্য করতে হয়।
তার শেষ দফা নির্যাতন কেন্দ্র ছিল দামেস্কের কাছে ভূগর্ভস্থ সামরিক বাংকারের একটি অস্থায়ী বন্দিশালা। এটি ছিল বাশার আল আসাদের ভাই মাহেরের নেতৃত্বাধীন এলিট ৪র্থ ডিভিশনের কর্তৃত্বে। তবে মেজ্জি কারাগার বন্দিদের ভিড়ে উপচে পড়ায় বিমান বাহিনী ইন্টেলিজেন্স সেখানে তাদের কর্মকান্ড চালাত। এখানে তাকে আর কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।
ধর্ষণ ও মারধর
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের গত বছরের এক রিপোর্টে বলা হয়, কমপক্ষে ২০টি গোয়েন্দা শাখার বন্দি শিবিরে নারী ও বালিকারা ধর্ষিত ও যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে। ১৫টিতে পুরুষ ও বালকরা। মুসলিম সম্প্রদায়গুলোতে যৌন নির্যাতন হচ্ছে দুই ব্যারেলের অস্ত্র। সেখান থেকে বেঁচে আসা নারীরা প্রায়ই কলঙ্কিত বলে গণ্য হন। আত্মীয়-স্বজনরা তথাকথিত ‘অনার কিলিং’ এর ঘটনায় মুক্তিপ্রাপ্ত সাবেক বন্দি মেয়েদের হত্যা করে। কোনো কোনো সময় নারীদের ধর্ষিতা হয়েছে মনে করে তাদের হত্যা করা হয়।
হামা শহরের মরিয়ম খলিফ নামের ৩২ বছর বয়স্কা ৫ সন্তানের মা বন্দি থাকা অবস্থায় বারবার ধর্ষিতা হন। তিনি আহত বিক্ষোভকারীদের চিকিৎসা করে ও বিদ্রোহীদের চিকিৎসা সামগ্রী প্রদান করায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। সরকারের ভাষায়, তিনি সন্ত্রাসবাদে জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, ২০১২ নালের সেপ্টেম্বরে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। হামার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা শাখা ৩২০-এ নেয়া হয় যার প্রধান ছিলেন কর্নেল সুলায়মান। এমন কোনো খারাপ কথা নেই যা সুলায়মান তাকে বলেননি।
তিন বর্গ ফুটের বেসমেন্টের এক সেলে তাকে ও আরো ৬ নারীকে আটক রাখা হয়। প্রহরীরা তাকে দেয়ালের সাথে ঝুলিয়ে দেয় ও মারধর করে। তার একটি দাঁত ভেঙ্গে যায়। তিনি জানান, একজন বন্দি ক্ষুধার অভিযোগ করায় তাকে টয়লেটে নিয়ে যেতে দেখেন। তার মুখ মলের মধ্যে ঠেসে ধরা হয়।
তিনি বলেন, মধ্যরাতে তারা সুন্দরী মেয়েদের কর্নেল সুলায়মানের কাছে নিয়ে যেত। কর্নেল ও তার বন্ধুরা তার অফিস সংলগ্ন একটি কক্ষে মেয়েদের ধর্ষণ করত। সে কক্ষটি বাশারের ছবি সজ্জিত ছিল। মেয়েরা মদ খেতে না চাওয়ায় তাদের গায়ে আরক ছিটিয়ে দিত। মেয়েদের সেলে কোনো টয়লেট ছিল না। হিংস্র ধর্ষণের শিকার মেয়েদের রক্ত মেঝেতে ছড়িয়ে যেত। একজন নারীর গর্ভপাত ঘটে। একমাস পর চুক্তির মাধ্যমে তার এক চাচাতো ভাই তার মুক্তির ব্যবস্থা করেন।
মরিয়ম ইজ্জত হারিয়েছেন বলে তার পরিবার তাকে প্রত্যাখ্যান করে। স্বামী তাকে তালাক দেয়। পরে তিনি বিদ্রোহীদের এলাকায় পালিয়ে যান। আরেক বেঁচে যাওয়া নারী বন্দি সিআইজেএকে বলেন, একই মাসে একই স্থানে তিনি কর্নেল সুলাইমান কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছিলেন। তার কথার সাথে মরিয়মের কথা মিলে যায়।
যে সব নারী ধর্ষিত হননি তাদের গায়ে হাত দেয়া, যৌন অপমান ও স্বীকারোক্তি না দিলে ধর্ষণের ভয় দেখানো হয়। দামেস্কের এক বন্দিশালায় প্রধান তদন্তকারী নারীদের নিজে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। নির্যাতিতারা তাকে শারশাবিল বলে ডাকতেন। এক নারী বলেন, সে চুলে ও নগ্ন শরীরে হাত দিত।
মারাত্মক সংক্রমণ ও পচা খাবার
বন্দিশালাগুলোতে নির্মম নির্যাতন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে বসবাসের জন্য সেগুলো ছিল ভয়াবহ রকম খারাপ। জাতিসংঘের এক রিপোর্টে সেগুলোকে নির্মূলকরণের সমতুল্য বলা হয়েছে। বহু সেলে টয়লেট ছিল না। বহু বন্দি প্রচন্ড ডায়রিয়া ও প্রস্রাবের সংক্রমণে মৃত্যুর শিকার হয়। পচা ও নোংরা খাবার দেয়ার কথা জানিয়েছেন বেঁচে যাওয়া সাবেক বন্দিরা। কিছু বন্দি পাগল হয়ে মারা যান। অধিকাংশই কোনো ওষুধ পেতেন না। অসুস্থদের চিকিৎসা হত না।
৩৯ বছর বয়স্ক মুনির ফকিরকে মেজ্জি, সাভধানায়া ও অন্যান্য কারাগারে রাখা হয়েছিল। এখন তাকে তার বয়সের তুলনায় তাকে আরো দশ বছর বড় দেখায়। ভিন্ন মতাবলম্বী এ ব্যক্তিকে অহিংস বিক্ষোভে যোগ দিতে যাওয়ার পথে গ্রেফতার করা হয়। নির্যাতনে তার চেহারা এমন দাঁড়ায় যে মুক্তি পেয়ে বাড়িতে যাওয়ার পর তার স্ত্রী তাকে চিনতে পারেননি।
মুনির ফকির বলেন, সাভধানায়া কারাগারে তাদের নির্যাতন করতে ঠান্ডা ব্যবহার করা হয়। তাকে ও তার সহবন্দিদেরকে শূন্য তাপমাত্রায় সেলে নগ্ন করে রাখা হত। কোনো কোনো সময় তারা পানি দিত না। (আগামীকাল শেষ পর্ব)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।