Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাম্বার নাচ থামাল বেলজিয়াম

রেজাউর রহমান সোহাগ, রাশিয়া থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৮, ৩:২৬ এএম

ভোলগার তীরে কাজান অ্যারেনায় সলিল সমাধি হয়েছিল লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্ন। তারও আগে এই মাঠ থেকেই বিদায় ঘটেছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানির। কাজানের সেই মাঠেই এবার মৃত্যু হলো নেইমারের ব্রাজিলের বিশ্বকাপ স্বপ্ন। শেষ আট থেকে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ২-১ গোলে বিদায় করে রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নাম লিখিয়েছে বেলজিয়াম। ডি ব্রæইন-এডেন হ্যাজর্ড-রোমেলু লুকাকুদের বেলজিয়াম। ‘ডার্ক হর্স’ তকমা নিয়ে আসর শুরু করা বেলজিয়াম।
ম্যাচ তখনও শুরু হয়নি। কাজান অ্যারেনায় মাইক্রফোন হাতে বেলজিয়ামকে নির্ভয়ে খেলার পরামর্শ দিলেন দলটির ১৯৮৬ বিশ্বকাপের তারকা গোলকিপার জেন-মারি ফাফ। সেবারই প্রথম সেমিতে খেলেছিল বেরজিয়াম। ফাফের কথাগুলো যেন উদ্দোমে মুড়ে দেয় ভিনসেন্ট কোম্পানিদের। তাতেই থেমে গেল রাশিয়ায় সাম্বার নাচ। নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে রেড ডেভিলরা। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ দিনের প্রথম ম্যাচে উরুগুয়েকে ২-০ গোলে হারানো ফ্রান্স।
নেইমার এদিন পারেননি সবুজের গালিচায় প্রজাপতির নাচন তুলতে। মার্সেলো-উইলিয়ানদের শটে যেন প্রাণ ছিল না। সেসুসদের দুর্বল শটগুলো বাব বার কেবল মনই ভেঙেছে সেলেসাও ভক্তদের। রক্ষণে কাসিমিরোর অনুপস্থিতি ছিল স্পষ্ট। আসলে ব্রাজিলকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে কাসিমিরোর অনুপস্থিতি। তিতে কি এমনি বলেছিলেন, ‘নেইমার আক্রমণের প্রাণ হলে কাসিমিরো পুরো দলের প্রাণ।’
কোয়ার্টার ফাইনালে জাপানের কাছ থেকে বেলজিয়াম যদি একটি জিনিস শিখে থাকে তা হলো পাল্টা আক্রমণ। সেই শিক্ষাটাই কাজে লাগিয়ে প্রথমার্ধেই সেলেসাও রক্ষণকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেন ডি ব্রæইন-হ্যাজার্ড-লুকাকুরা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমার্ধে দুই গোলে পিছিয়ে থেকে জিততে পারেনি কোন দল। দ্বিতীয়ার্ধে কস্তা-ফিরমিনহো-আগুস্তোদের নামিয়ে আক্রমণের ঢেউ তুলেও মাত্র একটি গোল শোধ দিতে পারে ব্রাজিল। এসময় লক্ষ্যে নেয়া নেইমারদের ১৫ শটের বিপরীতে মাত্র একটি শট নিতে পারে বেলজিয়াম। এরপরও শেষ রক্ষা হয়নি তিতের দলের। লড়াইটা ছিল আসরের বেস্ট অ্যাটাক ও বেস্ট ডিফেন্সের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত অ্যাটাকেরই জয় হলো।
দুই দলই প্রথমার্ধে গোলের অনেকগুলো সুযোগ তৈরী করে। কিন্তু নেইমার-জেসুসরা শেষভাগে এসে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। বলা যায় তাদের গোছালো ভাবে এগুদে দেয়নি ভিনসেন্ট কোম্পানির নেতৃত্বাধীন বেলজিয়ামের ডিফেন্স। লাল দুর্গের আসোপাশেই ঘোরাঘুরি করেছেন কুতিনহো-উইলিয়ানরা। আর শেষ বাধা হিসেবে গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়া তো ছিলেনই।
ম্যাচের শুরুতেই পর পর দুটি সুযোগ হাতছাড়া করে ব্রাজিল। নেইমারের কর্নার মিরান্ডার পা ঘুরে বলে ছোঁয়া দিয়েছিলেন থিয়াগো সিলভা, বল উঁচু হয়ে বারে লেগে ফিরে আসে। চার মিনিট পর আরেকটি কর্নার থেকে অরক্ষিত জায়গায় বল পেয়েছিলেন পাওলিনহো। কিন্তু শট নিতে গড়বড় করে ফেলেন বার্সেলোনা। তিন মিনিট পর উল্টো গোল খেয়ে বসে ব্রাজিল। নাসের শাদলির কর্নার ফিরমিনহোর কনুইয়ে লেগে জালে জড়ায়। বিশ্বকাপের চলতি আসরে এটি ১১তম আত্মঘাতি গোল।
গোল খেয়ে আক্রমণের গতি বাড়ায় ব্রাজিল। বেলজিয়ামও নেইমার-কুতিনহোদের রুখে দিয়ে তড়িৎ গতিতে পাল্টা আক্রমণে ত্রাস ছড়ায়। তেমনি এক পাল্টা আক্রমণে ব্যবধান ২-০ করে দেন কেভিনো ডি ব্রæইন। হলুদ-সবুজ গ্যালারি স্তব্ধ করে কাজানে তখন লালের উৎসব। লুকাকুর বাড়ানো বল ধরে ডি বক্সের বাইরের ডান প্রান্ত থেকে ম্যানচেস্টার সিটি মিডফিল্ডারের নিখুঁত শট।
দ্বিতীয়ার্ধে উইলিয়ানকে তুলে নিয়ে শুরু থেকেই রিবার্তো ফিরমিনহোকে নামান তিতে। ৫৭তম মিনিটে জেসুসের বদলি নামেন চোট কাটিয়ে ফেরা ডগøাস কন্তা। ৬২তম মিনিটে কস্তার ক্রস কর্তোয়া ঠেকিয়ে না দিয়ে তাতে বিপজ্জনক কিছুই হতে পারত। এর আগে মার্সেলোর ক্রসে পা লাগাতে পারেননি ফিরমিনহো। তবে বদলি নামা রেনেতো আগুস্তো সেই পথে হাঁটেননি। মাঠে নামার তিন মিনিটের মাথায় কুতিনহোর উঁচু করে বাড়ানো বুদ্ধিদীপ্ত ক্রস দারুণ হেডে ব্যবধান কমান আগুস্তো। ম্যাচের তখনও ১৪ মিনিট বাকি। হঠাৎ করেই যেন প্রাণ ফিরে পায় সামারার হলুদ গ্যালারি।
এই একটি গোলই যেন সাম্বার ছন্দের কথা মনে করিয়ে দেয় সেলেসাওদের। লাল রক্ষণে ওঠে হলুদ আক্রমমণের ঢেউ। তেমনি এক আক্রমণে গোলের সবচেয়ে ভালো সুযোগ তৈরি করেন কস্তা। কিন্তু তার বাড়ানো বলে পুরো পোস্টকে সামনে পেয়েও এবার শটটা লক্ষ্যে রাখতে পারেননি আগুস্তো। কস্তার গতি কাজে লাগিয়ে আক্রমণের বান বইয়ে দিয়েও কাজের কাজ করতে পারেননি নেইমাররা। যোগ সময়ের শেষ মিনিটে নেইমারের দুরপাল্লার শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন কর্তোয়া। ২০০২ সালের পর আবারো বিশ্বকাপের অপেক্ষা বাড়ে ব্রাজিলের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্বকাপ

২৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ