বাড়িতেই ফাইনাল দেখবেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কাতারে
বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ দেখতে কাতারে যাচ্ছেন না আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ। তিনি জানান, আজ
সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে সামারা প্রায় আঠারশো কিলোমিটার দক্ষিণে। উড়োজাহাজে চাপলে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘন্টা। দূরত্ব হয়ত কোন বিষয় নয়, কিন্তু ভাবতে হচ্ছে দুই জায়গার আবাহাওয়াগত পার্থক্য নিয়ে। শুক্রবার সকালেও সেন্ট পিটার্সবার্গের স্পার্তাক স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেছে ইংল্যান্ড ফুটবল দল। অথচ পরের দিন সামারায় শেষ আটে তাদের প্রতিপক্ষ সুইডেন। ম্যাচের ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে সামারায় পা রাখেন গ্যারেথ সাউথগেটের শিষ্যরা।
সুইডেন তো বটেই ইংলিশদের ভাবনার বিষয় সামারার কন্ডিশনও। শুক্রবার তারা যেখানে অনুশীলন করেছে সেই জেলেনোগোরস্কের তাপমাত্রা ছিল ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে সামারায় ব্রাজিল-মেক্সিকো ম্যাচের দিন তাপমাত্রা গত ৫০ বছরের রেকর্ড স্পর্শ করে। সেদিন ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় হাসফাস খেতে হয়েছে নেইমার-কুতিনহোদের। আবহাওয়া অফিস বলছে, আজ সেটা নেমে ত্রিশের আসেপাশে ঘোরাফেরা করবে। তার মানে আড়াই ঘণ্টার ব্যবধানে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পার্থক্য মানিয়ে নিতে হবে ইংলিশদের।
গতকালের অনুশীলনে অবশ্য বেশ খোশ মেজাজেই ছিলেন হ্যারি কেইনরা। হাসি-খুনসুটির মাঝেই চলেছে অনুশীলন। পুরো সময় অনুশীলনে ছিলেন না কেবল ডেমি ভার্ডি। শেষ ষোলয় কলম্বিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টি শুটআউটের ম্যাচে কুঁচকিতে চোট পেয়েছিলেন লেস্টার সিটি স্ট্রাইকার। বাকি সবাই এসময় উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন মিডফিল্ডার ফাবিয়ান ডেফও, প্রথম সন্তানের বাবা হওয়ার খবরে যিনি দেশে যাওয়ায় কলম্বিয়া ম্যাচে ছিলেন না। সেন্ট পিটার্সবার্গের বৃষ্টি¯œাত অনুশীলনে একমাত্র অস্বস্তি তাই ভার্ডিই।
জেনি অ্যান্ডারসনের সুইডেন দল অবশ্য আগেভাগেই পা রেখেছে সামারায়। ইংলিশদের ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে সেখানে পৌঁছে সামারা অ্যারেনায় অনুশীলনও শুরু করেন ভিক্টর ক্লাসন-ফিলিপ হেলান্ডাররা। এসময় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় হাসফাস করতে দেখা যায় তাদের। বিষ্ময়মাখা চাহনিতে রসিক সূর্যের দিকে তাকাতে দেখা যায় দলের মিডফিল্ডার অস্কার হিজেমার্ককে।
সেন্ট পিটার্সবার্গে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ১-০ গোলে জয়ের ম্যাচে সুইডেনও খেলেছে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। সামারার প্রখর রদ্দুরে মানিয়ে নিতে তাই সময় এক দিন বেশি পাচ্ছেন অ্যান্ডারসনের শিষ্যরা। অ্যান্ডারসনও কন্ডিশনের সঙ্গে শিষ্যদের মানিয়ে নিতে চেষ্টার কোন ক্রুটি রাখেননি। দলের সঙ্গে থেকেই দিকনির্দেশনা দিয়েছেন ৫৫ বছর বয়সী।
ডিফেন্সিভ ফুটবলে ইতোমধ্যে সবাইকে মুগ্ধ করেছে বø্যাগাল্ট খ্যাত সুইডিশ ফুটবল দল। চার ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছে তারা। একমাত্র পরাজয় জার্মানির বিপক্ষে। সেটাও ম্যাচের যোগ করা সময়েরও শেষ মুহূর্তের গোলে। ইংল্যান্ড ম্যাচকে সামনে রেখে অনুশীলনে ছিলেন ডিফেন্ডার আন্দ্রেস গ্রাঙ্কভিস্ট। দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিতে যাওয়া স্ত্রীর পাশে না থেকে দলের সঙ্গেই রয়েছেন দলীয় অধিনায়ক। ডিফেন্সের মূল ভরসা তো ৩৩ বছর বয়সীর এ বিষয়ে মন্তব্য, ‘আমি থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার বৌ অনেক শক্ত একজন মানুষ এবং এখানে আসার আগেই আমি জানতাম এমনটি হতে পারে। চাইলে আমি বাড়ি উড়াল দিতে পারতাম। কিন্তু তাতে কি হত, আমি কোয়ার্টার ফাইনাল হাতছাড়া করতে চাই না।’
এক যুগ পর সুইডেনের বিশ্বমঞ্চে প্রত্যাবর্তনটা বেশ রোমাঞ্চকর। বাছাই পর্বে তারা বিদায় করে আসে গেলবারের সেমিফাইনালিস্ট নেদারল্যান্ডসকে। প্লে-অফে তারা বিদায় করে চারবারের বিশ্বকাপ জয়ী ইতালিকে। গ্রæপ পর্বে জার্মানির বিদায়েও তাদের ছিল পরোক্ষ অবদান। নক আউট পর্বে আসরের ডার্ক হর্স সুইজারল্যান্ডকে হারিয়ে চমক উপহার দেয় ১৯৫৮ সালের ফাইনালিস্টরা।
২৪ বছর পর বিশ্বকাপের শেষ আটে খেলছে দলটি। এর প্রধান কারণ দলীয় সংহতি। কোচ জেনি অ্যান্ডারসনও তেমনটিই মনে করেন, ‘কাল (আজ) আমরা অনেক চমক উপহার দেব এমন নয়। অনেক কোচ আছেন যারা মনে করেন আমাদের বিশ্লেষণ করা সহজ কিন্তু হারানো কঠিন, আমিও সেটাই মনে করি। দল হিসেবে আমরা সামঞ্জস্যপূর্ণ, কোন চমক নেই। আমাদের শক্তিটা হলো বিশ্বাসে এবং এটা শুরু থেকেই।’ ‘ফুটবল যে দলীয় খেলা, আমার জন্য, এই দলটিই তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।’
ইংলিশদের সামনে সুযোগ ২৮ বছর পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয়া। এমন ‘সহজ’ সুযোগ হয়ত হাতছাড়া করবে না ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ জয়ীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।