চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
সাত
এছাড়া ইসলামী রাষ্ট্রের ব্যয়খাতে ‘করযে হাসানা’ প্রদানেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখানে শুধু এতটুকু ইংগিতই যথেষ্ট যে, সরকারি ব্যয়খাতেও ‘করযে হাসানা’র জন্য একটি পৃথক কোটা রাখা হয়েছে। ‘উমর রা. এবং অন্যান্য খলিফার যুগে এ ধরনের অসংখ্য নযীর পাওয়া যায় যে, লোকেরা নিজেদের বেতনের যামানতে ‘বায়তুলমাল’ থেকে ঋণ গ্রহণ করত। প্রকৃতপক্ষে কোন না কোন সময়ে একজন সচ্ছল লোকেরও ঋণের প্রয়োজন দেখা দেয়। অতএব, সে যখন অন্য একজন সচ্ছল লোকের কাছে ঋণ চায় তখন তা পায় বটে, কিন্তু এর জন্য তাকে সুদ বা লাভ দিতে হয়। কিন্তু ইসলাম যখন সুদ নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করল, তখন (‘করযে হাসানার’ ব্যবস্থা থাকার দরুন) এ সব অভাবগ্রস্তের সুদের অভিশাপে নিপতিত হওয়ার আর কোন কারণই থাকল না। খুব সম্ভব দুনিয়ার বেশির ভাগ লোকই বিনা কারণে কাউকে ঋণ দিতে চায় না। তাই এর একমাত্র সমাধান এ হতে পারে যে, খোদ রাষ্ট্রই ‘করযে হাসানা’ প্রদান এবং তা আদায়ের ব্যবস্থা করবে, যার ফলে বিশ্ববাসী সুদখোরদের অশুচিকর পরিবেশ থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতে সক্ষম হবে।
ব্যক্তিগত প্রয়োজনে খোদ খলীফাও ‘বায়তুলমাল’ থেকে ঋণ গ্রহণ করতেন এবং নির্ধারিত সময়ে তা পরিশোধ করতেও বাধ্য থাকতেন। তাবারী, ইব্ন সা’দ প্রমুখ ঐতিহাসিকের বর্ণনানুযায়ী খলিফা’ উমরের যখন কোন ব্যক্তিগত প্রয়োজন দেখা দিত, তখন তিনি বায়তুলমালের ভারপ্রাপ্ত অফিসারের কাছে ঋণ চাইতেন। রাবি (বর্ণনাকারী) বলেন, “অধিকাংশ সময় যখন তিনি রিক্তহস্ত থাকতেন এবং বায়তুলমালের ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী তাঁর কাছে গিয়ে ঋণ তলব করত, তখন তিনি হয় তাঁর কাছে আরো কিছু সময় চাইতেন, নয়তো নিজের বেতন থেকেই ঋণ পরিশোধ করে দিতেন” ইব্ন সা’দের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, ‘উমর রা. যখন শাহাদাত বরণ করেন, তখন তাঁর কাছে বায়তুলমালের আশি হাজার দিরহাম পাওনা ছিল। তঃপর তাঁর পুত্ররা ঐ ঋণ পরিশোধ করেন। ‘উমর রা. বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ঐ ঋণ গ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায়।
বায়তুলমাল থেকে উৎপাদনশীল ও অনুৎপাদনশীল উভয় খাতে ঋণ দানের ব্যবস্থা ছিল। এমনকি মহিলারাও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বায়তুলমাল থেকে ঋণ গ্রহণ করতেন। ঐতিহাসিক তাবারীর বর্ণনানুযায়ী “হিন্দ বিনতে উতবা ‘উমরের কাছে এসে ব্যবসা করার জন্য বায়তুলমাল থেকে চার হাজার দিরহাম ঋণ প্রার্থনা করেন এবং এর জামানতও দেন। ‘উমর রা. তাকে ঋণ দান করেন। অতঃপর তিনি (হিন্দ) বনূ কিলাবের শহরগুলোতে গমন করে পণ্যদ্রব্য বেচাকেনা করেছিলেন”।
বসরার গভর্নর আবূ মূসা আশ’আরী ব্যবসা করার জন্য আব্দুল্লাহ ইব্ন ‘উমর এবং ওবায়দুল্লাহ ইব্ন ‘উমরকে বায়তুলমালের বিরাট অংকের অর্থ ঋণ হিসেবে দিয়েছিলেন। তাঁরা ইরাক থেকে পণ্যদ্রব্য নিয়ে এসে মদিনার বাজারে তা বিক্রি করেন। অতঃপর বায়তুলমালের সম্পূর্ণ অর্থ এবং এর সাথে অর্ধেক মুনাফাও মদিনার কেন্দ্রীয় বায়তুলমালে জমা দেন। কৃষকরাও ফসল উৎপাদনের উদ্দেশ্যে বায়তুলমাল থেকে ঋণ করত। এক্ষেত্রে মুসলিম-অমুসলিমের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না। “যদি কৃষকের কাছে কৃষিকাজ পরিচালনা করার মত পুঁজি না থাকে তাহলে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।’’
বায়তুলমাল থেকে উৎপাদনের উদ্দেশ্যে দু’ভাবে ঋণ গ্রহণ করা যেতে পারে। যথা- (১) ঋণ গ্রহীতার উৎপাদনে বায়তুলমালের কোন অংশ থাকবে না এবং (২) ঋণ গ্রহীতার লাভ-লোকসানে বায়তুলমালও অংশীদার থাকবে। প্রথম অবস্থায় ঋণ গ্রহীতাকে সমস্ত ঋণই পরিশোধ করতে হবে। সে এর দ্বারা লাভবান হোক বা ক্ষতিগ্রস্ত হোক। আর যদি বায়তুলমাল উৎপাদনের লাভ-লোকসানের মধ্যে অংশীদার থাকে, তাহলে ঋণগ্রহীতা সে অনুপাতেই ঋণ পরিশোধ করবে। হিন্দ বিনতে ‘উতবাকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে যে ঋণ দেয়া হয়েছিল, তার লাভ-লোকসানের সাথে বায়তুলমাল কোন সম্পর্ক রাখেনি। তাই হিন্দকে সমস্ত ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল। “তিনি (হিন্দ) মদিনায় প্রত্যাবর্তন করার পর তার কারবারের লোকসানের কথা উল্লেখ করে ঋণের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে নিতে চান; কিন্তু ‘উমর রা. বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত টাকা হলে না হয় ছেড়ে দিতাম, কিন্তু বায়তুলমালে যা কিছু আছে তা সমগ্র মুসলিমের সম্পত্তি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।