Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দারিদ্র্য বিমোচন ও গ্রামোন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে সবচেয়ে আগে

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

যে দেশের প্রাকৃতিক স¤পদ, জনসংখ্যা, মূলধন গঠনের হার, কৃষি ও শিল্পের অবস্থা, জাতীয় আয় ও এর বণ্টন, মাথাপিছু আয় ও জনগণের জীবনযাত্রা প্রণালী প্রভৃতি থেকে সে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো অনুমান করা যায়। তাছাড়া শিক্ষা, আয় ও স্বাস্থ্যসেবা এ তিনটি সূচক মোটামুটিভাবে মানুষের জীবনযাত্রার মান নির্ধারণ করে এবং মানবউন্নয়ন সূচকও নির্ধারণ করে। বাংলাদেশে যে পরিমাণ প্রাকৃতিক স¤পদ ও মানবশক্তি রয়েছে তার যথাযথ ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারলে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে ও জীবনযাত্রার মানের বিশেষ পরিবর্তন ঘটবে এতে সন্দেহ নেই। এ কথা অনস্বীকার্য, পরিবার, সমাজ তথা দেশের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে অর্থনীতি। অর্থনীতিকে বাদ দিয়ে চলা মানে লক্ষ্যহীনভাবে চলা।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক থেকে পৃথিবীর সব দেশকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। (ক) উন্নত (খ) উন্নয়নশীল এবং (গ) স্বল্পোন্নত। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে বাস করে। স্বল্পোন্নত দেশ বলতে সেসব দেশকে বুঝায় যাদের বর্তমান মাথাপিছু আয় উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অতি নগণ্য এবং দারিদ্র প্রকট, অথচ যাদের অর্থনৈতিক স¤প্রসারণের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশসমূহের তুলনায় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় নি¤œ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান বিশ্বে দারিদ্রে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা একশ বিশ কোটির কাছাকাছি। কয়েক বছর আগের মানবোন্নয়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের ৪৬টি দেশ ১৯৯০ সালের তুলনায় অধিক গরিব হয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় বর্তমান বিশ্বে ১২০০ শিশু মৃত্যুর কোলে মাথা রাখছে, যার একটাই কারণ-দারিদ্র। উদারীকরণ, বেসরকারীকরণ ও বিশ্বায়নের মোড়কে বাজার অর্থনীতির ভিত্তি উন্নয়নের মূল কথা হলো, জনপিছু সর্বোচ্চ উৎপাদন, সর্বাধিক কর্মসংস্থান নয়। এ হচ্ছে বিশ্বায়নের ফসল। আমাদের মত গরিব দেশ ও মানুষের কাছে বিশ্বায়ন চিরদিনই অধরা হয়ে থাকবে। তৃতীয় বিশ্বের অর্থনীতি বিশেষ করে বিত্তীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশ্বায়নের প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে হলে সরকারের চরিত্র ও মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।
সে জন্য প্রথমে যে কাজটি সবচেয়ে জরুরি তা হল, দারিদ্র কাকে বলে তা সঠিকভাবে নিরূপণ করা না হলে দারিদ্রের সংজ্ঞা নিয়ে যেমন বিতর্ক থাকবে, তেমনি বিতর্ক থাকবে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারীদের সংজ্ঞা নিয়েও। জাতীয় আয়ের কত শতাংশ আয়ের ভাগীদার দারিদ্র ও দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারীরা, তারও সঠিক কোনো তথ্য আজ পর্যন্ত তুলে ধরা হয়নি কোথাও। ন্যূনতম মজুরিকে যদি দারিদ্রসীমায় ধরা হয় তাহলে দেশে দরিদ্রের সংখ্যা কত দাঁড়াবে এ বিষয়েও নির্দিষ্ট তথ্যের অভাব পরিলক্ষিত হয়। তবে এ ব্যাপারে সঠিক তথ্যের অভাবের ফলে দৃঢ় এবং বলিষ্ঠ অর্থনীতি আশা করা যায় না।

বাংলাদেশে দারিদ্র অতি প্রকট। এটি অর্থ ব্যবস্থাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে। চরম দারিদ্র প্রতিটি স্বল্পোন্নত দেশে চক্রের মতো আর্বতনশীল। এ সব দেশে লোকের আয় কম। আয় কম হলে সঞ্চয়ও কম হয়, মূলধন গঠন কম হয় এবং মূলধন গঠন কম হলে বিনিয়োগ সম্ভব হয় না। তাই আয় বৃদ্ধির সুযোগ ঘটে না। অর্থাৎ আয়ের স্বল্পতাই নিদারুণ দারিদ্রের কারণ। এ নিদারুণ দারিদ্র প্রতিটি স্বল্পোন্নত দেশের একটি প্রধান সমস্যা। এ প্রসঙ্গে চৎড়ভ. জবমহবৎ ঘঁৎশংবব মন্তব্য করেছেন, ‘কোনো দেশ দরিদ্র বলেই দরিদ্র হয় অর্থাৎ জনসংখ্যার বিপুল অংশ দরিদ্র বলেই কোনো দেশ দরিদ্র হয়। তাই দেশের অগণিত মানুষকে অতিশয় দুঃখ-কষ্টের মধ্যে জীবন-যাপন করতে হয়। এখন প্রশ্ন জাগে, স্বল্লোন্নত দেশগুলোতে দারিদ্রের প্রবণতা বৃদ্ধির মূল কারণ কী? বিভিন্ন তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ থেকে দেখা গেছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে দারিদ্রের প্রবণতা বৃদ্ধির অনেক কারণের মধ্যে অজ্ঞতা ও নিরক্ষরতা, অধিকহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ধর্ম-বর্ণ সম্প্রদায়গত ভেদাভেদ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া (১) স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে মাটির মালিক হওয়াকে বিশেষ মর্যাদার বিষয় বলে গণ্য করা হয়। ফলে স্বল্প ও মুনাফাহীন হলেও প্রত্যেকেই নিজের নামে এক খন্ড জমি পাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। এ মোহ এবং উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী প্রকৃতপক্ষে যার কৃষিজমির বিশেষ প্রয়োজন নেই, সে ব্যক্তিও স¤পত্তির অতি ক্ষুদ্রতম অংশ ভাগ করে নিতে দ্বিধাবোধ করে না। (২) আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রায় ৪০ শতাংশ লোক দিনে এক বেলাও আহার সংগ্রহ করতে পারে না। বাংলাদেশের প্রায় ৫০ শতাংশ লোক দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে, ৩০ শতাংশেরও কিছু বেশি লোক দু’বেলা পেট ভরে খেতে পায় না। এ বাস্তবতায় দেশের উৎপাদিত খাদ্যশস্য যে সব সময়ই উদ্বৃত্ত থাকবে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। অভ্যন্তরীণস্তরে এই যে অসম বণ্টনের প্রতিকারের কোনো সদিচ্ছা রাষ্ট্রনেতাদের আছে বলে মনে হয় না। ফলে একদিকে উৎপাদিত উদ্বৃত্ত পণ্য গুদামে থাকবে এবং পচে নষ্ট হবে অন্যদিকে দেশের মানুষ না খেয়ে মরবে। (৩) স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে জনসংখ্যা অধিকহারে বৃদ্ধি হওয়ার মূল কারণ গরিব পিতা-মাতা ধরে নেয় যে সন্তানের সংখ্যা অধিক হলে ভবিষ্যতে পরিবারের আয় বৃদ্ধি পাবে। এ ধারণার বশবর্তী হয়ে তারা অধিক সন্তানের জš§ দেয়। (৪) বণ্টন ব্যবস্থার বৈষম্য সামাজিকস্তরে এক বিরাট পার্থক্যের সৃষ্টি করে। এটি খুব ধীরগতিতে কাজ করে বলে সহজে এ কারণটিকে প্রত্যক্ষ করা যায় না। সরকার সব দেশেই আপন আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি হাতে নিলেও সেগুলো রূপায়ণের দায়িত্ব যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর ন্যস্ত থাকে, তাদের নিষ্ঠা, সততা ও কর্ম প্রচেষ্টার অভাব প্রকল্পগুলো থেকে যে সুফল লাভের আশা করা হয়, সেটি লাভ করা যায় না। (৫) সামাজিক শ্রেণী বিভেদ, বর্ণ ও সম্প্রদায়গত বিভেদ, কর্মে শ্রেণী বিভেদ, উচ্চ-নিচ ভেদাভেদ এবং নিরক্ষরতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্যের সৃষ্টি করে। আমরা দেখেছি, নিরক্ষরতা, জাত-পাতের বৈষম্য, সরকারি আমলা ও কর্মচারীদের দুর্নীতি, সরকার গৃহীত প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে পার্থক্য সৃষ্টি করে চলেছে। এর ফলে দারিদ্র মোচনে গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাস্তবে কোনো স্থির পরিবর্তন ঘটাতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাছাড়া বিপুল সংখ্যক মানুষের নিরক্ষরতা তাদের বঞ্চিত থাকার সুযোগ করে দিচ্ছে। (৬) দেশে জনপ্রতি আয় বা জিডিপি বৃদ্ধি হলেই সে দেশে দারিদ্র কমে যাবে, এমনটি মনে করা যুক্তিসঙ্গত নয়। ইতিপূর্বে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ডা. মোহাম্মদ ইউনূস উল্লেখ করেছিলেন, কোনো দেশে দুর্ভিক্ষের মূলে খাদ্যদ্রব্যের অভাব নয়, বন্টন বৈষম্য ও সরকারের উদাসীনতাই দায়ী। (৭) দ্রæত উন্নয়নের লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়ার ফলে আমাদের দেশের মত স্বল্পোন্নত দেশের কৃষি উৎপাদনের পরিকাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে কৃষিক্ষেত্রে যে বিপুল কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ছিল সেটিও সংকুচিত হয়ে বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটিয়ে চলেছে। এ অবস্থায় অনিবার্যভাবেই সেই সব মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে যাদের ক্রয়-ক্ষমতা কম বা নেই। ফলে শস্য উৎপাদন ঘটলেও সেটি লভ্য নয় বহু কোটি মানুষের কাছে। দারিদ্র ও ক্ষুধা এখন হাত ধরাধরি করে গ্রাস করতে চলেছে মানবকুলকে। বিশ্বের অর্থনৈতিক ধারা এমনভাবে প্রবাহিত হচ্ছে যা বিত্তশালীকে আরও বিত্তবান হতে সাহায্য করছে কিন্তু দারিদ্রে নিষ্পেষিত জনগনের সে অর্থনীতি সামান্যতম সহায়তা করছে না। খাদ্য ও পণ্যসামগ্রীর মূল্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থপূরণ করছে।

দেখা যাচ্ছে যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে বিভিন্ন কারণে দারিদ্রের পরিমাণ ও গভীরতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এমতাবস্থায় স্বল্পোন্নত দেশগুলো দারিদ্র দূরীকরণে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আয়ের সুষম বন্টন হতে পারে। কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে মাথাপিছু আয় হ্রাস পাবে। ফলে আয়গত বৈষম্য দেখা দেবে।

(১) বাজার অর্থনীতিতে দারিদ্র সীমারেখা মুছে যাবে না। তাই ভ‚মি সংস্কার এবং গ্রামোন্নয়নের মাধ্যমে সহনশীল উন্নয়নই হলো দারিদ্র মোচনের চাবিকাঠি। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে এবং তারা কৃষির উপর নির্ভরশীল। ভ‚মি আইনের সংস্কার সাধন করে ভ‚মিহীন কৃষকদের মধ্যে ভ‚মি বন্টনের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে একদিকে যেমন কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে আয়ের অসমতাও দূর হবে। (২) দরিদ্র শ্রেণীর লোকেরা যে সকল অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য ভোগ করে সে সকল দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে এবং এ সকল দ্রব্যের সাধারণ বন্টন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। (৩) অনুন্নত অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিদ্যুৎ, পানীয়জল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে পশ্চাৎপদ অঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভব। ফলে ওই অঞ্চলের মানুষের আয়ের বৃদ্ধি ঘটবে ও আয়গত অসমতা অনেকাংশে হ্রাস পেতে থাকবে। (৪) গ্রামাঞ্চলের দারিদ্র দূরীকরণের উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা ও শিল্প ব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীভ‚ত করতে হবে। গ্রামাঞ্চলে যদি আবশ্যকীয় দ্রব্যাদি ও অন্যান্য ন্যূনতম প্রয়োজন পূরণ করা সম্ভব হয় তাহলে দারিদ্র দূরীকরণের পথে অনেক দূর অগ্রসর হওয়া যাবে। গ্রামীণ অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়ন দ্রæতগামী করে দারিদ্র নির্মূলীকরণ সম্ভব। (৫) শহর ও গ্রামভিত্তিক নিযুক্তির জন্য সরকারেরও নীতি নিদের্শিকা তৈরি করতে হবে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সাবলীল করতে হবে। শিল্প-কলকারখানা ও মূলধন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক নিয়োগও বৃদ্ধি করতে হবে। (৬) উৎপাদন ব্যবস্থায় সরকারের একটি নির্দিষ্ট নীতি থাকা প্রয়োজন। দ্রব্যসামগ্রীর উপর সরকারি কর বা রেহাই মূল্য পরিকল্পনা ও নীতির মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে যাতে দেশের অধিকাংশ মানুষ এর সুবিধা লাভ করতে পারেন। জনসাধারণের মঙ্গলার্থে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারকে ক্ষতিও স্বীকার করতে হবে। (৭) আয়ের বণ্টনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট মজুরিনীতি থাকতে হবে। শিল্প ও কৃষি উভয় ক্ষেত্রেই ন্যূনতম মজুরি-নীতি ও জাতীয় মজুরি নীতির দ্বারা ঠিক করতে হবে। (৮) সরকারি নীতি নির্ধারণ করে একচেটিয়া ব্যবসার উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ সঠিক ও কঠোর করতে হবে। দেশের আয় কতিপয় মানুষের হাতে না গিয়ে বরং সব শ্রেণীর মানুষের হাতে যাতে যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। (৯) বিগত কোনও কোন সরকারের আমলে দরিদ্রের জন্য সরকারি কর্মসূচি নিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার চেষ্টা হয়েছিল, এখনও হচ্ছে কিন্তু তখন বাজার উন্নত ছিল না, এখন বাজার অনেক উন্নত। সুতরাং এখন গরীব মানুষকে বাজারের জন্য তৈরি করে দেওয়াটা অনেক বেশি জরুরি।

মানব সম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক নিচে। এটি খুবই বেদনাদায়ক বার্তা। কাজেই বাংলাদেশের রাষ্ট্র নেতাদের প্রথম এবং প্রধান কাজ হওয়া উচিত কৃষি ও কৃষিজীবী সম্বন্ধে যথাযথ পরিসংখ্যান নির্ণয়, দারিদ্র সীমারেখার যথাযথ সংজ্ঞা নির্ধারণ, দারিদ্রসীমায় বসবাসকারীর সংখ্যা কত তা নিরূপণের প্রতি তীক্ষœ দৃষ্টি দেওয়া। যদি তা না হয় তবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং জাতীয়স্তরে বিশৃঙ্খলা অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়াবে। সেজন্য জনপ্রতি আয় বা জিডিপির হিসাবের চেয়েও এখন অধিক প্রয়োজন সে সব অঞ্চল ও শ্রেণীগুলোকে চিহ্নিত করা, যেগুলো দারিদ্র কবলিত অবস্থায় রয়ে গেছে। এরপর এদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য গৃহীত কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না সেদিকে কঠোর নজরদারি করা যাতে প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ যথার্থ ও স¤পূর্ণরূপে হিতাধিকারীদের উন্নয়ন সুনিশ্চিতকরণে ব্যয় হয়।

বিশ্ব খাদ্য ও কৃষিসংস্থা বিশ্বের রাষ্ট্র প্রধানদের বারবারই আগামীর ভয়াবহতা স¤পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছে। ক্ষুধার বিরুদ্ধে তাদের প্রতিশ্রæতিকে মনে করিয়ে দিয়ে বলছে, ক্ষুধা নিরসনের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ যদি এখনও সুনিশ্চিত করা না হয় তবে দুর্ভিক্ষের কালোছায়া প্রসারিত হবে এবং মানব সভ্যতার অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে তুলবে। প্রতিকারের প্রথম স্তর হিসাবে তাদের পরামর্শ, ক্ষুধা নিবৃত্তি ও খাদ্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা আনয়নের জন্য প্রথম প্রয়োজন বাস্তবসম্মত অর্থনৈতিক অধিকার সুনিশ্চিত করা এবং কৃষি ও গ্রামের উন্নয়ন ঘটানো। আমরা চোখের সামনে দেখতে পাই আমাদের দেশ খাদ্যে স্বয়ম্ভর হওয়া সত্তে¦ও বিভিন্ন স্থানে সময়ে সময়ে খাদ্যাভাব ঘনিয়ে উঠে। সেক্ষেত্রে খাদ্যসামগ্রীর অসম বিতরণ ব্যবস্থা যেমন দায়ী তেমনি গ্রামীণক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের অভাবও সমভাবে দায়ী। গ্রামোন্নয়নে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় হওয়া সত্তে¡ও গ্রামগুলোর অবস্থার তারতম্য কেন ঘটছে না সে অনুসন্ধানের প্রয়োজন কেউই অনুভব করছে না। গ্রামোন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা কোন কাজে ব্যয় করা হচ্ছে সেটি নির্ণয় করা আবশ্যক।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

 



 

Show all comments
  • jack ali ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৩২ পিএম says : 0
    ruler always says that our country is well ahead of Singapore, Canada.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দারিদ্র্য বিমোচন

১৮ অক্টোবর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন