Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জিনজিরা প্রাসাদ সংরক্ষণে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

ঢাকার কেরানীগঞ্জে প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন ও কালের সাক্ষী ঐতিহাসিক স্থাপনা জিনজিরা প্রাসাদ অবশেষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ও সহযোগিতায় পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কেরানীগঞ্জ রাজস্ব সার্কেল সহকারী কমিশনার (ভূমি) পারভেজুর রহমান জিনজিরা ইউনিয়ন ভ‚মি অফিসের মাধ্যমে জিনজিরা প্রাসাদের মূল ফটকের সামনে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছেন। বহুযুগের এই ঐতিহাসিক প্রতœতাত্তি¡ক স্থাপনাটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, এলাকাবাসী ও সচেতন নাগরিক সমাজ। তারা বহুদিন ধরে এই প্রাসাদটি রক্ষা করার জন্য সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দফতরে জোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অযতেœ-অবহেলায় যুগযুগ ধরে এই স্থাপনাটি পড়ে থাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন দিন দিন প্রাসাদের বিভিন্ন অংশ ভেঙে সেখানে দোকানপাট, বাড়িঘরসহ বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণ করে ভোগদখল করে আসছিল। একসময় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এই জিনজিরা প্রাসাদটি একনজর দেখার জন্য ভিড় জমাত। অবহেলা, অযতেœ কয়েক শ’ বছরের পুরাতন এই প্রাসাদের শেষ চিহ্নটুকু এখনো মাথা উঁচু করে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
জানা যায়, বাংলার মোগল সুবেদার দ্বিতীয় ইব্রাহিম ১৭ শতকের শেষার্ধে জিনজিরা প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। প্রাসাদটি মূলত নির্মিত হয়েছিল প্রমোদকেন্দ্র হিসেবে। পরে সেখানে বাস করতেন মোগল সুবেদার মুর্শিদ কুলি খান। ১৭০৩ সালে তার রাজস্ব প্রশাসন দফতর মকসুদাবাদে স্থানান্তরের পূর্ব পর্যন্ত প্রাসাদটি তার আবাসস্থল ছিল। নবাব আলীবর্দী খানের অধীনে ঢাকার নায়েব নাযিম নওয়াজিশ মুহাম্মদ খানের প্রতিনিধি হোসেন কুলি খানের পারিবারিক আবাসস্থল ছিল এই প্রাসাদ। বাংলার ইতিহাসের বহু বিয়োগান্তক ও বেদনাবিধুর বহু ঘটনার সাক্ষী এই প্রাসাদ। নবাব সরফরাজ খানের পতনের পর তার মা, স্ত্রী, বোন, পুত্রকন্যা এবং তার হেরেমেরে কয়েকজন নারীকে এই প্রাসাদে বন্দী রাখা হয়। ১৭৫৪ সালে হোসেন কুলি খানের হত্যাকাÐের পর এই প্রাসাদে বসবাসরত তার পরিবারের সদস্যদের বন্দি করে রাখা হয়েছিল এখানে। পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর আলীবর্দী খানের স্ত্রী শরিফুন্নেসা , নবাব সিরাদ্দৌলার মা আমেনা বেগম, স্ত্রী লুতফুন্নেসা বেগম, মেয়ে কুদসিয়া বেগম ওরফে উম্মে জোহরাকে এই প্রাসাদে বন্দী রাখা হয়। তাদের সাথে বন্দী রাখা হয় পলাশীর যুদ্ধের অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী ঘসেটি বেগমকেও। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ইতিহাসের বহু ঘটনার সাক্ষী জিনজিরা প্রাসাদ বর্তমানে নিশ্চিহ্ন প্রায়। দীর্ঘদিনের অযতেœ-অবহেলায় থাকা অংশের বাইরের দিকে বিভিন্ন গাছের শেকড় বাকড় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। নির্মাণ করা হয়েছে বড়বড় অট্টালিকা, দোকানপাট। জিনজিরাবাসী এই প্রাসাদটিকে হাওলি নওগড়া নামে ডাকে। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার (৩ জুলাই) কেরানীগঞ্জ রাজস্ব সার্কেল সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) পারভেজুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, প্রতœতত্ত সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের জন্য সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক আমাদের নির্দেশনা দিয়ে একটি চিঠি দেন। এই চিঠির আলোকে আমরা ওই জায়গায় সাইনবোর্ড লাগিয়েছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সংস্কৃতি


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ