মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সবশেষ হালনাগাদকৃত এক মার্কিন পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি। এদের মধ্যে প্রায় দুই কোটি মানুষ রয়েছে চরম দারিদ্র্যের কবলে। যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে জাতিসংঘের সা¤প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশটিতে দিনকে দিন ধন বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। দিনে ২ ডলারেরও কম অর্থে জীবন ধারণ করতে বাধ্য হওয়া মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর হালনাগাদ করা ‘ইউএস সেনসাস ব্যুরোর’ তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৮ জনে ১ জন অন্তত দরিদ্র। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৪ কোটি দরিদ্র মানুষ মোট জনসংখ্যার ১২.৭ শতাংশ। এদের মধ্যে ১ কোটি ৮৫ লাখ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করেন, যাদের পারিবারিক আয় দারিদ্র্য সীমার অর্ধেকের কম। এদিকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বৈষম্য ও মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর জাতিসংঘ স¤প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘে নিয়োজিত বিশেষ দূত ফিলিপ অ্যাস্টন তার দায়িত্বের অংশ হিসেবে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দারিদ্র্য ও মানবাধিকার পরিস্থিতির বিপন্ন বাস্তবতার কথা তুলে এনেছেন। তার গবেষণা এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রের সা¤প্রতিক পরিস্থিতির ভয়াবহতাকেই তুলে ধরেছে। দারিদ্র্য ও মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত অ্যাস্টন তত্ত¡াবধানে পরিচালিত গবেষণার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যারা দরিদ্র ছিল তাদের ৪০ শতাংশই ছিল অতি দরিদ্র। ২০১৫ সালে ওই হার বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪৬ শতাংশ। এছাড়াও প্রতিদিন মাথাপিছু ২ ডলারেরও কম অর্থে জীবনযাপন করতে বাধ্য হওয়া চরম দরিদ্রদের সংখ্যা বাড়ছে বেকারত্ব ও সামাজিক সুরক্ষা না পাওয়ার কারণে। অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের দারিদ্র্যের হিসেবেও এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। ওইসিডি দেশগুলোতে যেখানে এ হার ১৪ শতাংশ সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের যুবকদের এক চতুর্থাংশই দরিদ্র। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্র বলতেই চোখের সামনে যে উজ্জ্বল-চাকচিক্যময় আভিজাত্যের বাস্তবতা হাজির হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক সমাজের অবস্থা তেমন নয় মোটেও। এখনও দারিদ্র্যের কবল থেকে মুক্তি মেলেনি দেশটির কয়েক কোটি মানুষের। বছরে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে ওই দারিদ্র্যের কারণেই। শিশুসহ স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত লাখ লাখ মানুষ। মাথার ওপর ছাদ নেই লাখ লাখ মানুষের। এমন বাস্তবতায় অর্ধশতাব্দী আগে নোবেলজয়ী মানবতাবাদী অধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিং-এর ‘দরিদ্র জনতার আন্দোলন’ কর্মসূচির (পুওর পিপল ক্যাম্পেইন) পুনর্জাগরণ ঘটেছে সে দেশে। নতুন করে সংগঠিত সেই ক্যাম্পেইন দাবি তুলেছে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও গণতান্ত্রিক সংস্কারের। দুইজন সাধারণ মার্কিন অধিকারকর্মীর ঘোষিত ৪০ দিনের কর্মসূচিতে ঢল নেমেছে মানুষের। প্রধান ধারার সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদের জন্য তেমন কোনও জায়গা না মিললেও মূলধারার বাইরের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এ সংক্রান্ত খবর হাজির করেছে পাঠকের সামনে। দেখা গেছে, নিজেদের অর্থ খরচ করে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে এই ডাকে সাড়া দিয়েছে রাজধানী ওয়াশিংটনসহ ৫০টি অঙ্গরাজ্যের লাখো মানুষ। গুপ্তঘাতকের হত্যাকাÐের শিকার হওয়ার আগে ১৯৬০’র দশকে যুক্তরাষ্ট্রর দরিদ্র মানুষদের সুরক্ষার প্রশ্নকে সামনে এনেছিলেন মার্কিন মানবাধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিং। অহিংস আন্দোলনকে অনুপ্রেরণায় নিয়ে অর্থনৈতিক সমতার ডাক দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল গুপ্তঘাতকের হত্যার শিকার হওয়ার আগে তার নাগরিক অধিকার আন্দোলনকে স¤প্রসারিত করেছিলেন লুথার কিং। দরিদ্র যুক্তরাষ্ট্রবাসীর সুরক্ষা ও নাগরিক সেবা আদায়ের জন্য অর্থনৈতিক বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন তিনি। এই আন্দোলনের নাম দিয়েছিলেন ‘পুওর পিপলস ক্যাম্পেইন’। অর্ধ শতাব্দী পরে সেই আন্দোলনের পুর্নজাগরণ ঘটছে মার্কিন সমাজে। ধর্ম-নৈতিকতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পথে মার্কিন সমাজের পুনর্গঠনের ডাক দিয়েছেন দুই মার্কিনি। সামাজিক ন্যায়বিচারের ডাক দেওয়া দুই মার্কিনি হলেন উইলিয়াম জে বারবার এবং লিজ থিইয়ারিস। প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী বারবার নর্থ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যের রাজনীতিক। বর্ণবাদবিরোধী সংগঠন ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব কালারড পিপল-এনএএসিপি এর ন্যাশনাল বোর্ডের সদস্য এবং এর পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটির সভাপতি। নর্থ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যের গ্রিনলিফ খ্রিস্টান চার্চের যাজক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। লিজ থিওহারিস কায়রোস-এর সেন্টার ফর রেলিজিয়ন, রাইটস অ্যান্ড সোশ্যাল জাস্টিস-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়কারী। ইউনিয়ন থিওলজিক্যাল সেমিনারির দারিদ্র্য বিমোচন সংক্রান্ত উদ্যোগেরও সমন্বয়ক তিনি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য বিমোচনে দরিদ্র মানুষদের সংগঠিত করার কাজ করছেন দুই দশক ধরে। ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল গুপ্তঘাতকের হত্যার শিকার হওয়ার আগে দেশব্যাপী বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, নৃগোষ্ঠীর দরিদ্র মানুষদের নিয়ে রাজধানী ওয়াশিংটনে জমায়েত করতে চেয়েছিলেন লুথার কিং। প্রথম উদ্যোগ হিসেবে হাজার হাজার অংশগ্রহণকারীর জন্য আবাসিক এলাকা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। অহিংস নাগরিক অসহযোগের একটি ধরণ হিসেবে নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছিল ওই অঞ্চলকে। তবে ওয়াশিংটনের ওই বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়নি মার্টিন কিং-এর। তার আগেই হত্যাকাÐের শিকার হয়েছিলেন তিনি। এক সপ্তাহের মধ্যে তার প্রতি সংহতি জানিয়ে ওয়াশিংটনের লিঙ্কন মেমোরিয়াল হলে সমবেত হয়েছিল প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। অর্ধ-শতাব্দী পর উইলিয়াম জে বারবার এবং লিজ থিউহারিস-এর হাত ধরে কিং-এর সেই পুওর পিপল ক্যাম্পেইনের পুর্নজাগরণ ঘটায় মার্কিন সমাজে নাগরিক অবাধ্যতার নতুন জোয়ার এসেছে। ৫০ বছর আগের সেই আন্দোলনের থেকে আজকের মার্কিন সমাজের ঐতিহাসিক পরিক্রমার ধারা-প্রবণতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে নতুন করে সংগঠিত ‹প্ওুর পিপল ক্যাম্পেইন›র উদ্যোগে। তাদের দ্য সোলস অব পুওর ফোক শীর্ষক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, কিং-এর সেই আন্দোলনের ৫০ বছর পরে এসেও যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকার নির্ধারিত দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে ৪ কোটি ১০ লাখ মানুষ। আর নিম্ন আয় অথবা দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছেন ১৪ কোটি মার্কিনি, যারা মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি (৪৩.৫ শতাংশ)। শিশুদের ১০ জনের মধ্যে চারজন সেখানে অন্তত এক বছর দারিদ্র্যের মধ্যে কাটাতে বাধ্য হয়। প্রতিবছর আড়াই লাখ মানুষ দারিদ্যের কারণে মারা যায়। এই দারিদ্র্যের বাস্তবতাকে সমাজের অন্যান্য বাস্তবতার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখেন না তারা। এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে মিলে যায়, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর হালনাগাদ করা ‘ইউএস সেনসাস ব্যুরোর’ পরিসংখ্যানও। এই সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৮ জনে ১ জন অন্তত দরিদ্র। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৪ কোটি দরিদ্র মানুষ মোট জনসংখ্যার ১২.৭ শতাংশ। এদের মধ্যে ১ কোটি ৮৫ লাখ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করেন, যাদের পারিবারিক আয় দারিদ্র্য সীমার অর্ধেকের কম। যুক্তরাষ্ট্রের দারিদ্র্য ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের সা¤প্রতিক এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, দেশটিতে দিনকে দিন ধন বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। দিনে ২ ডলারেরও কম অর্থে জীবন ধারণ করতে বাধ্য হওয়া মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মার্কিন সমাজের অসমতা ও দারিদ্র্যের বাস্তবতাকে প্ওুর পিপল ক্যাম্পেইন-এর সংগঠকরা ৫টি পরস্পর-সম্পর্কযুক্ত বিষয়ের ফলাফল মনে করেন। এগুলো হলো: ১. কাঠামোগত বর্ণবাদ, ২. কাঠামোগত দারিদ্র, ৩. প্রাণ-প্রকৃতি ও প্রতিবেশের মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়, ৪. যুদ্ধ অর্থনীতি ও সামরিকতন্ত্র আর ৫. ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের নৈতিকতার ভুয়া বয়ান- যাতে বলা হয় এসব ইস্যুকে তোমরা সামনে এনো না। এই বাস্তবতার অবসান চেয়ে তারা ৪০ সপ্তাহের আন্দোলন-কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ১৪ মে প্রথম সপ্তাহে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় এই কর্মসূচি। ৩৫টি অঙ্গরাজ্যের মানুষ দারিদ্রতাকে সহিংসতা আখ্যা দিয়ে নির্ধারিত হওয়া প্রতিপাদ্যের বিক্ষোভে শামিল হয়। ওয়াশিংটনের বিক্ষোভস্থল থেকে আন্দোলনের দুই নেতা বারবার ও থিউহারিসসহ অন্তত ২০০ মানুষকে গ্রেফতার অথবা হাজিরা দেওয়ার জন্য সমন পাঠানো হয়। দ্বিতীয় সপ্তাহে ২১ মে শিকাগো ও স্প্রিংফিল্ডে শুরু হওয়া বিক্ষোভে পদ্ধতিগত বর্ণবাদ ও দারিদ্রের ওপরে জোর দেওয়া হয়। রয়টার্স, হাফপোস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।