পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রত্যাশিত বিনিয়োগ না হওয়ায় দেশের আভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানেও লেগেছে ভাটার টান। দেশের অর্থনীতি মূলত বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও গার্মেন্টস রফতানীর উপর নির্ভরশীল। গত কয়েক বছর ধরে তৈরী পোশাক খাতও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। ইতিমধ্যে এই খাতের প্রবৃদ্ধিও উল্লেখ্যযোগ্য হারে কমেছে। আমাদের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের বৃহত্তম বাজার মালয়েশিয়া ও সউদি আরবের রুদ্ধ দুয়ার খুলতে নানা উদ্যোগের পরও কোথায় যেন একটি ফাঁক রয়েই যাচ্ছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশী শ্রমশক্তি নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহৃত হওয়ার পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও মালয়েশিয়ায় শ্রমিক প্রেরণে আগের মত গতি ফিরে আসেনি। নতুন নীতিমালা ও জি টু জি প্লাস পদ্ধতিতে স্বল্প খরচে শ্রমিক প্রেরণের সুযোগ আবারো হাতছাড়া হতে বসেছে। জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় স্বল্প খরচে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর কথা থাকলেও সরকারের সংশ্লিষ্টদের কার্যকর নজরদারি ও তত্ত¡াবধানের অভাবে পরিবর্তিত প্রক্রিয়াও একশ্রেনীর দালাল ও সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রীর এক সাক্ষাৎকারে জানা গেছে। এই অভিযোগে মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সেন্ডিং কান্ট্রির মর্যাদা এবং জি টু জি প্লাস চুক্তি স্থগিত হয়ে গেছে বলে শোনা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, তারা এ বিষয়ে এখনো অবগত নন। এ থেকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের অন্যতম বড় বাজার ও বন্ধুপ্রতিম মালয়েশিয়ার সাথে আমাদের সরকারের কাঙ্খিত যোগাযোগে বড় ধরনের ঘাটতি ধরা পড়ে।
বৈদেশিক কর্মসংস্থানে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাজার সউদি আরব এবং আরব আমিরাতেও প্রায় একই রকম অবস্থা বিরাজমান। সেখান অবকাঠামো উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি ডলারের বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগের হার বাড়ার কথা থাকলেও বাস্তব অবস্থা সম্পুর্ণ বিপরীত। বৈশ্বিক বাস্তবতা হচ্ছে, গত কয়েক বছর ধরেই বৈদেশিক কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট রেমিটেন্স প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ২০১৫ সালে ১ শতাংশ, ২০১৬ সালে ২ দশমিক ৪ শতাংশ রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে যা ২০১৭-১৮ সালেও অব্যাহত রয়েছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, দক্ষিন এশিয়ার অন্য যে কোন দেশের তুলনায় প্রবাসী আয়ে নেতিকবাচক প্রবণতা বাংলাদেশে অনেক বেশী। ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, গত বছর যেখানে শুধুমাত্র সউদি আরবে ৫ লাখ ৫১ হাজারের বেশী নারী ও পুরুষ শ্রমিক পাঠানো হয়েছিল, সেখানে চলতি বছরের প্রথম চারমাসে সউদিতে সর্বমোট প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে. গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক কম। কোন কোন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের হার বাড়লেও রেমিটেন্সের হার কমে যাচ্ছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানে মন্দা এবং রেমিটেন্স প্রবাহে ভাটা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও রেমিটেন্স কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে যথাযথ বিশ্লেষণসহ সর্ততামূলক পরামর্শ দেয়া হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসী আয় কমেছিল সাড়ে ১৪ শতাংশ। প্রবাসি আয় আগের বছরের চেয়ে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশী কমে গেলেও এ সময় বিদেশি শ্রমিকরা দেশ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার নিয়ে গেছে। একদিকে দেশে শিক্ষিত বেকারত্বের হার বেড়ে চলেছে অন্যদিকে বৈধ-অবৈধ কয়েক লাখ বিদেশি (প্রধানত ভারতীয়) শ্রমিক দেশ থেকে শত শত কোটি ডলার নিয়ে যাচ্ছে। সরকার বিদেশে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে, আবার দেশের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগও যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছেনা। দেশের গার্মেন্ট শিল্পসহ বেশ কয়েকটি সেক্টরের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তির জন্য ভারত, শ্রীলঙ্কা ও চীনা জনশক্তির প্রতি নির্ভরশীলতা বেড়ে চলেছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটগুলো দেশের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তির যোগান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। আমাদের দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকরা বিদেশে যেমন প্রতিদ্ব›দ্বী দেশগুলোর শ্রমিকদের চেয়ে অনেক কম বেতনে চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছে, একইভাবে নিজ দেশেও একই প্রকারের দক্ষতা নিয়ে বিদেশি কর্মীদের চেয়ে কম বেতনে কাজ করছে। দেশের জনসম্পদ ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এ এক দু:খজনক বাস্তবতা। আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কারিগরী ও বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পেছনে জনগনের রাজস্ব থেকে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও এই বিনিয়োগের সুফল পাওয়া যাচ্ছেনা। দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তির যোগান নিশ্চিত করার পাশাপাশি উদ্বৃত্ত দক্ষ জনশক্তির বৈদেশিক কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করা অসম্ভব নয়। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাসমুহ দূর করা এবং শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোর আরো অনেক কিছু করনীয় আছে। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতা দেশের অর্থনীতির কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি ও সরকারের উন্নয়নের রূপকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।