মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
তুরস্কের ঐতিহাসিক নির্বাচনে আবারো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। রোববার অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৫২ দশমিক ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়ে বেসরকারি ভাবে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। ৯৯ দশমিক ১১ শতাংশ ভোট গণনার পর এ ফলাফল জানা যায়। তুরস্কের নির্বাচন কমিশনের প্রধান সাদি গুভেন এরদোগানের বিজয়ী ওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, প্রেসিডেন্ট বৈধভাবে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন।
বিজয়ী হওয়ার পর এরদোগান বলেন, এ বিজয় গণতন্ত্রের বিজয়, এ বিজয় আট কোটি তুর্কি নাগরিকের বিজয়। স্থানীয় সময় সোমবার সকালে রাজধানী আঙ্কারায় নিজের দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একে) পার্টির প্রধান কার্যালয়ের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। এ নির্বাচনের পর এরদোগানই হবেন তুরস্কের প্রথম নির্বাহী ক্ষমতা সম্পন্ন প্রেসিডেন্ট। খবর বিবিসি,আল জাজিরা ও আনাদলু বার্তা সংস্থা। এ নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী সিএইচপি’র প্রার্থী মুহাররেম ইনসে পেয়েছেন ৩০ দশমিক ৬৮ শতাংশ ভোট। শুক্রবার ভোটের চ‚ড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটের ফলাফল প্রকাশের আগেই রোববার রাতে এরদোয়ান বলেন, বেসরকারি ফলাফলের ভিত্তিতে আমি এখন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। তুরস্কের জনগণ আমাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। আমি আশা করি, এই নির্বাচনের উপর ছায়া ফেলে কেউ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে পারবে না।
নির্বাচনে জয়ের পর সাংবাদিকদের এরদোয়ান বলেন, ‘শাসক নয়, বরং সবসময় জনগণের সেবক হওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার জনগণ এ ব্যাপারে সজাগ। ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটের মাধ্যমে তারা তাদের ভালোবাসার জানান দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, প্রায় ৯০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির মাধ্যমে তুরস্ক দুনিয়াকে গণতন্ত্রের শিক্ষা দিয়েছে। এ নির্বাচনে তুরস্কের জনগণ, এ অঞ্চল এবং দুনিয়ার সব নিপীড়িত মানুষের বিজয় অর্জিত হয়েছে।
৬৪ বছর বয়সী এরদোয়ান রাজধানী আঙ্কারায় তার দলের সদর দপ্তর থেকে এক ঘোষণায় বলেন, এই নির্বাচনে আমার দেশের ৮ কোটি ১০ লাখ মানুষের প্রত্যেকে জয়ী হয়েছেন।
তুরস্কে রোববার একইসঙ্গে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পার্লামেন্ট নির্বাচনেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে এরদোগানের দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একে) পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট পিপলস অ্যালায়েন্স। ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, ৫৩ দশমিক ৬২ শতাংশ ভোট পেয়েছে এরদোয়ানের জোট। সিএইচপি’র নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স পেয়েছে ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট। এইচডিপির সালাহতিন দেমিরতাস পেয়েছেন ৮.৪ শতাংশ ও আ্ওয়াইআই-র মেরাল আকসেনার পেেেছন ৭.৩ শতাংশ ভোট।
৬০০ আসনের পার্লামেন্টে এরদোয়ানের দল একেপি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ২৯৩ জন এমপি। জোট শরিক এমএইচপি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ৫০ জন। সিএইচপি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ১৪৬ জন এমপি। তাদের জোট শরিক আইওয়াইআই পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ৪৪ জন।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভোটের ফলাফল নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে বিরোধী দল। ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর বিরোধী দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে তারা জানিয়েছে, ফলাফল যাই হোক না কেন তারা গণতন্ত্রের পক্ষে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
২০০৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এরদোয়ান। ২০১৪ সালেই তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন। তার প্রধান সমর্থক হচ্ছেন রক্ষণশীল এবং ধার্মিক অপেক্ষাকৃত বয়স্ক তুর্কিরাা। তিনি তুরস্কের এতকাল ধরে চলে আসা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলামী ম‚ল্যবোধকে শক্তিশালী করেছেন এবং তার সময়ে দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামোতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
নিজের অনুসারীদের স্বপ্ন দেখাতে আর তুরস্কের অতীত ঐতিহ্য মনে করিয়ে দিতে ভালোবাসেন এরদোয়ান। সমর্থকদের তিনি ‘অটোমান সুলতানদের নাতিপুতি’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ নামে ডাকেন তাদের। ২০১৭ সালে সরকারি স্কুলগুলোর এক অনুষ্ঠানে তিনি মন্তব্য করেন, ২০৩০ সালের মধ্যে তুরস্ক এমন ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী হবে, যেমন ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী ছিল অটোমান সাম্রাজ্য।
এরদোয়ানের বিজয়ের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ অভিনন্দন জানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল ছানি, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, টার্কিশ রিপাবলিক অব নর্দার্ন সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট মুস্তাফা আকিঞ্চি, বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বয়কো বরিসোভ প্রমুখ।
কেন গুরুত্বপূর্ণ
তুরস্কের অবস্থান এমন এক জায়গায় যে এর নেতা কে হচ্ছেন তার বৈশ্বিক গুরুত্ব আছে। কারণ তার একদিকে ইউরোপ, অন্য দিকে ইরাক আর সিরিয়ার সীমান্ত। এর মধ্যে বৃহৎ মুসলিম বিশ্বের এক নেতৃস্থানীয় দেশ তুরস্ক পশ্চিমা বিশ্বেরও এক গুরুত্বপ‚র্ণ মিত্র, ন্যাটো জোটের সদস্য।
তুরস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও সদস্য পদপ্রার্থী। তুরস্কের সেনাবাহিনী ন্যাটো জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাহিনী।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ, কুর্দি সমস্যা, ইরাক-সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই, অভিবাসী সংকট - ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে তুরস্কের ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপ‚র্ণ।
এ নির্বাচনে জয়ী হলে এরদোগান আরো ক্ষমতাশালী হয়ে উঠবেন। আর যদি তা না হয় তাহলে তুরস্ক রাষ্ট্রের গতিপথই বদলে যেতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।