Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রুটি ও লেবু বিক্রেতা থেকে মুসলিম উম্মাহর নেতা

রুটি ও লেবু বিক্রেতা থেকে মুসলিম উম্মাহর নেতা | প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০১৮, ১২:০১ এএম

ব্লুমবার্গ : এক সময় রাস্তায় রুটি ও লেবু বিক্রি করতেন রজব তাইয়্যেব এরদোগান। আজ তিনি আধুনিক তুরস্কের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা। সমর্থকরা তাকে দেশের রক্ষাকর্তা হিসেবে দেখে থাকেন। শুধু তাই নয়, তুরস্কের সাথে সাথে তিনি মুসলিম উম্মাহরও অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হয়েছেন। ধর্মপরায়ণ, ক্যারিশমেটিক এরদোগান ২৪ জুন অনুষ্ঠিত তুরস্কের নির্বাচনে পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ১৫ বছরের ক্ষমতাকে আরো স¤প্রসারিত করলেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি হলেন দেশটির প্রতিষ্ঠাতা মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের পর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও ক্ষমতাধর শাসক। এরদোগানকে ‘সুলতান’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এরদোগানকে ইতঃপূর্বে গাজী পার্কে কয়েক মাসের বিক্ষোভ সহ্য করতে হয়েছে। তবে দেড় দশকে তুরস্কের নজিরবিহীন প্রবৃদ্ধির জন্য বিশ্বব্যাপী নন্দিত তিনি। গত বছর তিনি বলেছিলেন, ‘আমি একনায়ক নই, এটা আমার রক্তে নেই।’ তুরস্কের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এবং ধর্মপরায়ণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে তার সুদৃঢ় সমর্থন রয়েছে, যারা তার শাসনে উন্নতি লাভ করেছেন।
দ্যা ওয়াশিংটন ইন্সটিটিউটের তুরস্ক বিষয়ক গবেষক সোনার ক্যাগাপ্তে বলেন, এরদোগানের অর্থনৈতিক রেকর্ড এবং কর্তৃত্ববাদী মজলুম হিসেবে তার ইমেজই তাকে প্রেসিডেন্ট পদে জয় এনে দেয়। তুরস্কে বিগত কয়েক দশকের ঘনঘন সামরিক অভ্যুত্থান এবং দুর্বল জোট সরকারের পর স্থিতিশীল সরকার উপহার দেয়ার জন্য এরদোগানের প্রশংসা করা হয়।
তিনি শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর লাগাম টেনে ধরেছেন। নতুন ব্রিজ, বিমানবন্দর অন্যান্য বৃহৎ প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি এক সময়ের তলাবিহীন তুরস্ককে শক্তিশালী বাজারে পরিণত করেছেন। তার শাসনামলে সাধারণ তুর্কিদের আয় তিনগুণ বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরেছেন তিনি।
নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন এরদোগান। ইস্তাম্বুলের গাজী পার্কের উপরে অটোম্যান যুগের আদলে শপিং মল তৈরি করা হচ্ছে। ইস্তাম্বুলের পার্শ্ববর্তী কাসিমপাশায় জন্ম নেয়া এরদোগানের বাবা ছিলেন একজন কোস্টগার্ড কর্মকর্তা। সংসারে অস্বচ্ছলতার কারণে কিশোর বয়সে রাস্তায় রুটি এবং লেবু বিক্রি করতেন এরদোগান।
তরুণ বয়সে ইসলামিক ইয়ুথ সংগঠনে যোগদান করেন তিনি। এ সংগঠনটি তুরস্কের কট্টর সেক্যুলার নীতির বিরোধিতা করে। তুরস্কের ক্ষমতাধর জেনারেলরা মসজিদ ও রাষ্ট্রের মধ্যে বিশাল ব্যবধান তৈরি করে।
এক সময়ে আধা পেশাদার হিসেবে ফুটবল খেলোয়াড় এবং ব্যবসায় শিক্ষায় স্নাতক ডিগ্রিধারী এরদোগান ১৯৯৪ সালে ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি দেড় কোটি লোকের এ শহরটির ট্রাফিক জাম এবং বায়ু দূষণ রোধে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
যখন তার ইসলাম ঘেঁষা দলকে নিষিদ্ধ করা হয় তখন বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি এ সময় একটি ইসলামী কবিতা পাঠ করেন। সেই কবিতাটি ছিল এরকম-
‘মসজিদ আমাদের ব্যারাক, গম্বুজ আমাদের হেলমেট, মিনার আমাদের বেয়নেট এবং ঈমানদাররা আমাদের সৈনিক।’
এই কবিতার মধ্যে ধর্মীয় উসকানির গন্ধ পায় সেক্যুলার শাসকরা। এরদোগান বারবারই এ কবিতা আবৃত্তি করেন। ২০০১ সালে এরদোগান এবং তার সহযোগী এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল ইসলাম ঘেঁষা জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) গঠন করেন। পরের বছরের নির্বাচনে দলটি ভূমিধস বিজয় অর্জন করে। এরপর আরো দুটি সংসদ নির্বাচনেও জয় পায় একেপি। দেশব্যাপী বিশাল বিশাল নির্বাচনী প্রচারাভিযানে তিনি বিরামহীন অংশ নেন। অসুস্থতাও তাকে থামাতে পারে না। নির্বাচনী প্রচারণার মাঝেই হয়তো স্থানীয় কোনো ফুটবল খেলায় মেতে ওঠেন তিনি।
তুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য করতে দেশে ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মুসলিম রাষ্ট্র তুরস্ককে সদস্যপদ দিতে গড়িমসি করায় ক্ষুব্ধ এরদোগান বলেন, ইইউর সদস্যপদের জন্য তুরস্ক অনাদিকাল অপেক্ষা করবে না। এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্ক আজ মুসলিম বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশ। সাম্প্রতিক কালে মুসলিম উম্মাহর স্বার্থ নিয়ে কথা বলা তিনিই একমাত্র নেতা। জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল দ‚তাবাস স্থাপন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞের মতো মুসলমানদের জন্য স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোতে বরাবরই আওয়াজ তুলেছেন এরদোয়ান। সউদী জোটের কাতারবিরোধী অবরোধ প্রায় ব্যর্থ করে দেয়ার পেছনে তার গুরুত্বপ‚র্ণ অবদান রয়েছে। ওই অবরোধকে ইসলামবিরোধী পদক্ষেপ বলে মনে করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট।
সা¤প্রতিক সময়ে এরদোগান তুরস্কে সেক্যুলারদের প্রবর্তিত হিজাবের ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করেছেন। মদ বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছেন তিনি। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছেলেমেয়েদের সহ-অবস্থান নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এরদোগান বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না যে ইসলামিক সংস্কৃতি এবং গণতন্ত্র একত্রে চলতে পারে না।’ এ নির্বাচনে তরুণ ভোটাররাই ছিল প্রধান ফ্যাক্টর।
তুরস্কের ইজিয়ান উপকূলের ইজমির বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যাফেতে হিজাব পরিহিত একদল ছাত্র-ছাত্রী খোশগল্প করছিলেন এবং চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে শিক্ষকের লেকচার নোটগুলি দেখে নিচ্ছিলেন। ১৫ বছর আগে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান ক্ষমতায় আসার আগে এই দৃশ্যটি অকল্পনীয় ছিল। তুরস্কের পুরোনো ধর্মনিরপেক্ষ নিয়ম অনুযায়ী ক্যাম্পাসে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
তুরস্কের অনেক শহরের মতো ইজমিরও এরদোগানের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দ্বারা দৃশ্যত রূপান্তরিত হয়েছে। শহরের রাস্তাগুলোতে ইউরোপীয়-নির্মিত বিলাসবহুল ‘সেডান’ গাড়ির পাশাপাশি রাস্তাগুলোর পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে বহুতল অফিস ভবন। বোববারের নির্বাচনে পুনরায় বিজয়ী হওয়ার পেছনে এসব অর্জনও ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুসলিম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ