Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জার্মানি তো এমন ফুটবলই খেলে

ইমামুল হাবীব বাপ্পি | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৮, ১০:০৫ পিএম

বিশ্বকাপে জার্মানি মানেই যেন শেষ বাঁশি না বাজা পর্যন্ত হাল না-ছাড়া। জার্মানি মানেই একঝাক ক্ষুধার্ত নেকড়ের ন্যায় মুহূর্তের আক্রমণে প্রতিপক্ষকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলা। জার্মানি মানেই অবিশ্বাস্য সব প্রত্যাবর্তনের গল্প। দেয়ালে পিট ঠেকে যাওয়া জার্মানি প্রতিপক্ষের উপর কেমন নির্দয় হতে পারে তা আবারো দেখল ফুটবল বিশ্ব। রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে মুখ থুবড়ে পড়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা দ্বিতীয় ম্যাচেই স্বমহিমায় উজ্জ্বল।
ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে মারিও গোটসের গোলে হৃদয় ভেঙ্গেছিল আর্জেন্টাইন ভক্তদের। ঐ একটি, মাত্র একটি গোলই সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসিকে করেছিল বিশ্বকাপের ট্রফিশূন্য। এবারের গল্পটা অবশ্য তেমন নয়। তবে জার্মানদের কাছে এর চেয়ে কমও বা কিসে। হারলে গ্রæপ পর্ব থেকে নিতে হবে বিদায়। গত চার আসরে যে ঘটনা ঘটেছে তিনবার। এর আগে জার্মানরা গ্রæপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছেল একবারই, সেটাও ১৯৩৪ সালে, বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসের।
এমন পরিস্তিতিতে জার্মানিকে চোখ রাঙাচ্ছিল সুইডেন। আক্রমণের উত্তল ঢেউ তুলেও টলানো যাচ্ছিল না সুইডিশ রক্ষণকে। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যোগ করা সময়ও শেষ হতে কয়েক মুহূর্ত বাকি। এমন সময় দশজনের জার্মানদের সেই প্রত্যবর্তনের গল্প। ডি বক্সের বাঁ-প্রান্ত থেকে টনি ক্রুসের বানিয়ে নেয়া ফ্রি-কিক নিঁখুত বায়ুপথ ধরে আশ্রয় নেয় সুইডেনের জালে। মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে যায় হলুদ গ্যালারি। রচিত হয় বিশ্বকাপে জার্মানির টিকে থাকার গল্প।
মেক্সিকোর বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে জার্মানিকে হারতে দেখে হতাশ নয়, রিতিমত অবাক হয়েছিল ভক্ত-সমর্থকরা। এ কোন জার্মানি! চার বছর আগের দলের অনেকেই রয়েছেন। অথচ কী আশ্চর্য পরিবর্তন! গতি নেই, মাঝমাঠ নড়বড়ে, আক্রমণে ধার নেই। আত্মবিশ্বাসের অভাবও স্পষ্ট। সোচিতে সুইডেনের বিপক্ষে প্রথমার্ধে বলের দখল রেখে একের পর এক আক্রমণ শানালেও সেই জার্মানিকে যেন পাওয়া যাচ্ছিল না। বিশেষ করে ৩২তম মিনিটে ওলা তোয়নভোনের গোলে সুইডেন এগিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। জার্মানদের পোস্টে তখন পর্যন্ত এটাই ছিল সুইডিশদের প্রথম শট। এরপরই যেন ঘুম ভাঙে জোয়াকিম লো’র শিষ্যদের। অবশ্য প্রথমার্ধে এগিয়ে থেকেই মাঠ ছাড়ে সুইডেন।
দ্বিতীয়ার্ধে গুরুর মন্ত্রে আরো শানিত হয়ে মাঠে নামে জার্মানরা। শুরু থেকেই সুইডেনের ডি বক্সে হামলে পড়ে ৫-৬ জন। ফলও মেলে তিন মিনিটের মাথায়। জটের মধ্য থেকে দলকে সমতায় ফেরান মার্কো রেউস। এরপরও আক্রমণের এই ধারা বজায় থাকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। কিমিচ-রুডিগার-বোয়েটাংরা ডিফেন্স করেন মাঝমাঠে। গোলরক্ষক নয়্যারকেও বলের যোগ দিতে দেখা গেছে মাঝমাঠে এসে। এরপরও টলানো যচ্ছিল না সুইডিশ রক্ষণকে। গোলরক্ষক ওলসেনও যেন ছিলেন নিজের সেরা ফর্মে। এমন ম্যাচে তার ম্যাচ সেরা হওয়াটা কিন্তু তার প্রমাণই দেয়। কখনো আবার জার্মানদের ভাগ্যবঞ্চিত করেছে বারপোস্ট। এরপর ৮২তম মিনিটে জেরোমি বোয়েটাংয়ের দ্বিতীয় হলুদ কার্ডে জার্মানদের দশজনের দলে পরিণত হওয়া। মনে হচ্ছিল ঐতিহাসিক একটা দিনই অপেক্ষা করছে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের জন্যে। কিন্তু ঐ যে, জার্মানরা যে শেষ মুহূর্ত পর্যন্তও হাল ছাড়ে না।
সব মিলে প্রথম দুই ম্যাচে যেন ভিন্ন দুই জার্মানি। পার্থক্য আরও বেশি করে চোখে পড়ার কারণ, ২০০৬ সালে জোয়াকিম লো দায়িত্ব নিয়ে জার্মানির ফুটবল সংস্কৃতিকেই বদলে দিয়েছেন। প্রচন্ড গতিতে নিজেদের মধ্যে বল বিনিময় হলো তার মূলমন্ত্র। প্রথম ম্যাচে জার্মানির খেলা থেকে সেই গতিটাই যেন হারিয়ে গিয়েছিল। আসলে যে দু’জনের জন্য বিশ্ব-ফুটবলে জার্মানির শাসক হয়ে ওঠা, তাঁরা কেউ দলে নেই। প্রথম জন ফিলিপ লাম অবসর নিয়েছেন চার বছর আগে ব্রাজিল বিশ্বকাপে দেশকে চ্যাম্পিয়ন করে। আর এক জন বাস্তিয়ান সোয়াইনস্টাইগার ফুটবলকে বিদায় না জানালেও জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন। এদের বিকল্প যে এখনও খুঁজে পাননি লো। এরপরও শনিবার জয়ের সঙ্গে সেই গতিও ফিরল জার্মানির খেলায়।
প্রথম ম্যাচেই হাভিয়ের হার্নান্দেজরা দেখিয়ে দিয়েছিলেন জার্মানির দুর্বলতা। এদিন সুইডেনও একই ছকে খেলে। জার্মানির আক্রমণ সামলে কাউন্টার অ্যাটাকে গোল করার চেষ্টা করে তারা। প্রথমার্ধেই সফল হয় তাদের পরিকল্পনা। ৩২ মিনিট কাউন্টার অ্যাটাক থেকেই গোল করে সুইডেনকে এগিয়ে দেন ওলা তোইভোনেন। এই গোলের আগেই পিছিয়ে পড়তে পারত জার্মানি। ম্যাচের ১২তম মিনিটে বক্সে ঢুকে পড়া মার্কাস বার্গকে ঠেকাতে পেছন থেকে ধাক্কা দেন বোয়েটাং। সুইডেনের ভিএআরের আবেদন কানেই নেননি রেফারি। নিলে ম্যাচের ভাগ্যটা ভিন্ন হতে পারত। এছাড়াও ম্যাজ জুড়ে বেশ ক’বার পাল্টা আক্রমণে জার্মানদের বক্সে আতঙ্ক ছড়ায় সুইডেন। বিশ্বসেরা নয়্যারকেও বেশ ক’বার দলকে রক্ষা করেন।
লো কেন বিশ্বের অন্যতম সেরা কোচ তা বুঝিয়ে দেন দ্বিতীয়ার্ধে। আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াতে মিডফিল্ডার জুলিয়ান ড্রাক্সলারের পরিবর্তে নামান স্ট্রাইকার মারিয়ো গোমেজকে। ম্যাচ শেষে লো বলেন, ‘শেষ বাঁশি বাজার আগ পর্যন্ত এটা ছিল আবেগে ঠাসা ভয়ঙ্কর এক ম্যাচ।’
শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে চুপ হয়ে যাওয়া সুইডিশ কোচ জানে অ্যান্ডারসনের মতে, ‘তারা যথেষ্ঠ সুযোগ তৈরী করতে পারেনি। আমাদের কিপার ভালো সিছু সেভ দিয়েছে। তবে দুর্ভাগ্যবসত আমাদের অন্তঃতপক্ষে একটা পয়েন্ট পাওয়া উচিত ছিল।’
‘এফ’ গ্রæপে দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শক্ত অবস্থানে মেক্সিকো। জার্মানি ও সুইডেনের পয়েন্ট তিন করে। আসরে টিকে থাকতে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে জিততেই হবে জার্মানিকে। মেক্সিকোর বিপক্ষে সুইডেন জিতে গেলে চলে আসবে গোল ব্যবধানের হিসাব।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্বকাপ

২৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ