বাড়িতেই ফাইনাল দেখবেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কাতারে
বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ দেখতে কাতারে যাচ্ছেন না আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ। তিনি জানান, আজ
স্পোর্টস ডেস্ক : ১৯৯০ সালে তৎকালীন যুগো¯েøাভিয়া ভেঙে জন্ম নেয় ১১টি নতুন রাষ্ট্র। তাদেরই একটি হলো সার্বিয়া। সার্বিয়া থেকে আবার ২০০৮ সালে জন্ম নেয় নতুন আরেক রাষ্ট্র কসোভো। কসোভোকে অবশ্য এখনো স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকার করে না সার্বিয়া।
ধন্দে পড়ে গেলেন? ফুটবলের মধ্যে কেন রাজনৈতিক আলোচনা? তাহলে খোলসা করা যাক। পরশু কালিনিনগ্রাদে অনুষ্ঠেয় সুইজারল্যান্ড-সার্বিয়া ম্যাচের আড়ালে ছিল এই রাজনৈতিক উত্তাপ। যে উত্তাপে শেষ পর্যন্ত পুড়ে ছারখার হয় সার্বিয়া।
কসোভো স্বাধীন রাষ্ট্র হলেও ২০১৬ সালের আগ পর্যন্ত ফিফা কিংবা উয়েফার কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার অনুমতি ছিল না কসোভোর। যে কারণে দেশটির অধিকাংশ ফুটবল খেরোয়াড় সুইজারল্যান্ডের ফুটবলে নাম লেখান। তাদেরই প্রতিনিধি বিশ্বকাপের সুইস দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য গ্রানিত জাঙ্কা, ভালোন বেহরামি এবং অবশ্যই জের্দান সাকিরি। কি জট খুলছে?
ঠিকই ধরেছেন। ম্যাচটি সার্বিয়ার বিপক্ষে ছিল বলেই মনে-প্রাণে বাড়তি প্রেরণা নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন জাঙ্কা-শাকিরিরা। সেই জাঙ্কা-সাকিরির তোপেই এগিয়ে থেকেও এদিন হার মানে সার্বিয়া। পিছিয়ে পড়া সুইজারল্যান্ডকে ২-১ গোলের জয় ছিনিয়ে এনে দেন তারা। সার্বিয়ার জালে জড়ানো দুটি গোলই দুই কসোভিয়ান বংশদ্ভুত জাঙ্কা ও শাকিরির।
রাজনৈতিক কারণে কসোভোয় জন্ম নেয়া জাঙ্কার বাবা সাড়ে তিন বছর যুগো¯েøাবিয়ার কারাগারে কাটান। জাঙ্কার জন্ম কসোভোয়। শাকিরির জন্মস্থানও কসোভো। দু’জনের শরীরেই বইছে মুসলিম অধ্যুসিত আলবেনিয়ান রক্ত। দুজনই বাল্যকালে পরিবারের সঙ্গে পাড়ি জমান সুইজারল্যান্ডে। গোল করার পর তাই এদিন তাদের উদযাপনে ছিল সার্বিয়ার বিপক্ষে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
শাকিরির মনে কসোভোর স্থান কোথায় তা তার দিকে ভালোভাবে লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়। এদিন তার ডান পায়ের বুটে ছিল সুইজারল্যান্ডের পতাকা ও বাম বুটে সেলাই করা ছিল কসোভোর পতাকা। সার্বিয়ার দর্শকরাও ব্যাপারটা জানতেন। যে কারণে কিক-অফের আগে শাকিরির নাম ঘোষণার সময় তাকে দুয়ো দিতে থাকেন সার্বিয়ার দর্শকরা।
গোল করে ও দলকে জিতিয়ে এর জবাব দেন শাকিরি। প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়া দলকে দ্বিতীয়ার্ধে সমতায় ফিরিয়েছিলেন আরেক আলবেনিয়ান রক্ত বয়ে বেড়ানো জাঙ্কা। দুজনের গোল উৎযাপনের ভঙ্গি ছিল একই রকম- দুই হাত বিপরীতভাবে জোড়া লাগিয়ে দুই মাথাওয়ালা ঈগলের চিহ্ন প্রকাশ করছিলেন তারা। যা আলবেনিয়ান জাতীয় প্রতীক প্রকাশ করে।
ড্র’র দিকে এগুতে থাকা ম্যাচের যোগ করা সময়ে জয়সূচক গোলের পর সাকিরির উদযাপনে ছিল বাড়তি মাত্রা। হলুদ কার্ডের দন্ড উপেক্ষা করে গায়ের জার্সি পর্যন্ত খুলে ফেলেন ২৬ বছর বয়সী স্টোক সিটি মিডফিল্ডার। এমন উদযাপনকে অবশ্য ‘শুধুমাত্র আবেগের বহিঃপ্রকাশ’ বলে উল্লেখ করেন শাকিরি, ‘আমি মনে করি ফুটবলে সব সময় আগে থাকে। আপনারা দেখেছেন আমি কি করেছি। এই গোল করতে পেরে আমি খুশি। এর বেশি কিছু নয়। আমি মনে করি এ নিয়ে এখন আর কথা না বলাই ভালো।’
ম্যাচ শেষে এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি সাবিয়ান কোচ ¤øাদেন রাস্তাজিক, ‘এ বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই। আমি এই বিষয়ের প্রতিনিধি নই। আমি খেলাধুলার মানুষ এবং এভাবেই থাকতে চাই। আমি কোন মন্তব্য নেই।’ তাদের উদযাপন বিতর্কে জড়াতে চাননি বসনিয়ায় জন্ম নেয়া সুইস কোচ ভøাদিমির পেত্রোকোভিচও, ‘ফুটবল ও রাজনীতিকে একসঙ্গে মেলানো ঠিক না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ফুটবলের ভক্ত হওয়া ও এটাকে শ্রদ্ধা করা।’
এই জয়ে ‘ই’ গ্রæপে সুইজারল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ পয়েন্ট, সমান সংগ্রহ ব্রাজিলেরও। বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হওয়া কোস্টারিকার বিপক্ষে গ্রæপ পর্বের শেষ ম্যাচে হার এড়ালেই শেষ ষোলয় পৌঁছে যাবে সুইজারল্যান্ড। সার্বিয়ার বিপক্ষে একই হিসাব ব্রাজিলের জন্যেও। ব্রাজিল হেরে গেলেই নক আউপ পর্বে উঠে যাবে সার্বিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।