বাড়িতেই ফাইনাল দেখবেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কাতারে
বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ দেখতে কাতারে যাচ্ছেন না আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ। তিনি জানান, আজ
অন্য সব ফুটবল প্রেমীদের মতই ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার অসহায় আত্মসমর্পনে অবাক হয়েছেন দেশটির ১৯৭৮ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক মারিয়ো কেম্পেস। ম্যাচে পরিকল্পনার অভাব ও মেসিকে ভালোভাবে ব্যবহার করতে না পারা ও সতীর্থদের কাছ থেকে সমর্থন না পাওয়ার ব্যাপারে সমালোচনা করেছেন তিনি। কেম্পেস বলেন, ‘আর্জেন্টিনার খেলায় যা দেখলাম, তা বোধ হয় প্রত্যাশিতই ছিল। শুধুমাত্র বিশ্বকাপের দু’টি ম্যাচ দেখলেই তো হবে না, আমাদের সমস্যা শুরু হয়েছিল যোগ্যতা অর্জন পর্ব থেকেই। তখন থেকেই জঘন্য খেলেছি আমরা। শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা যে রাশিয়ায় যেতে পেরেছে, সেটাই তো ছিল অঘটন।’
তিনি যোগ করেন, ‘সেই একই দল তো বিশ্বকাপে খেলছে। যাদের না আছে কোনও সঠিক পরিকল্পনা, না আছে সঠিক দিশা। এর পর আর কী-ই বা আশা করা যায়? ক্রোয়েশিয়ার কাছে ০-৩ হারের পরে তাই আর্জেন্টিনা ভক্তদের মনে আশা কমছে, রাগ আর অপমান বাড়ছে। আমি বিশ্বাস করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি যে, আমরা নক-আউট পর্বে যাব।’
প্রথম ম্যাচে হোঁচট খেলেও পরের ম্যাচে দল ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করেছিলেন কেম্পেস। কিন্তু তা তো হয়-ই নি উল্টো মুখ থুবড়ে পড়েছে আকাশী-নীলরা, ‘ভেবেছিলাম, প্রথম ম্যাচটা ড্র করার পরে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায় দারুণ লড়াকু একটা আর্জেন্টিনা দলকে দ্বিতীয় ম্যাচে দেখতে পাব। বাস্তবে যেটা দেখলাম, তা প্রথম ম্যাচের চেয়েও খারাপ। খুবই হতাশাজনক পারফরম্যান্স।’
এমন পরিস্থিতিতে দলের সেরা তারকা লিওনেল মেসির পাশে দাঁড়িয়েছেন কেম্পেস, ‘লিওনেল মেসিকে খলনায়ক মনে করা মোটেও ঠিক হবে না। আর্জেন্টিনার জার্সিতে ও সর্বস্ব দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু কোনও সমর্থনই পায়নি দলের থেকে। মেসিকে খুব একা মনে হচ্ছিল। ওরা প্রত্যেকে মাঠের বাইরে খুব ভাল বন্ধু। কিন্তু মাঠের মধ্যে আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের দেখে মনে হচ্ছিল, কেউ কাউকে চেনে না। সত্যিই খুব লজ্জার ব্যাপার। প্রাক্তন কোচদেরও এর দায় নিতে হবে। মেসিকে সব একা সহ্য করতে হয়। ম্যারাডোনার সঙ্গে তুলনা, রোনালদো সেরা না ও সেরা, বিশ্বকাপ জিতবে কি জিতবে না, সব কিছু। কিন্তু বিশ্বের সেরা ফুটবলারেরও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।’
এবার না পারলেও মেসির উপর থেকে আস্থা হারাচ্ছেন না আটাত্তরের গোল্ডেন বুটজয়ী তারকা, ‘এই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার পরের রাউন্ডে যাওয়াটা এখন শুধুই ভাগ্যের ব্যাপার। তাই সেটাকে খুব একটা আর ধরছি না। কাতার বিশ্বকাপের সময় মেসির বয়স হবে ৩৫। তাই রাশিয়াই শেষ স্টেশন না-ও হতে পারে। ৩৫ বছর বয়সেও বিশ্বকাপ খেলা যায় এবং জেতাও যায়। কেন নয়? আমি কাতারেও মেসিকে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেব না। তবে ওর সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করবে কেমন দল পাচ্ছে, তার উপর।’
তবে বর্তমান পরিস্থিতিকেও সামনে আনছেন ৬৩ বছর বয়সী, ‘এই মুহূর্তে কোনও অজুহাতই অবশ্য কেউ শুনবে না। হতে পারে আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থা সুসংগঠিত নয়। হতে পারে গত দু’বছরে আট জন কোচ বদল হয়েছে। এবং, ওরা কেউ কোনও সাফল্যই আনতে পারেনি। এখনকার ফুটবলাররা বেশির ভাগই ইউরোপে খেলছে। রাজার মতো সেখানে থাকে তারা। কোনও সমস্যাই নেই জীবনে। এই বিপর্যয়ের দায় তাই আর্জেন্টিনার ফুটবলার এবং কোচের। অন্য কারও নয়। ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে যে আর্জেন্টিনাকে দেখলাম, তাকে দেখে চেনার উপায় ছিল না। এই অবস্থা থাকলে শেষ ম্যাচেও কিছু আশা না করাই ভাল।’
অতীত প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আর্জেন্টিনায় এখনও লোকে ১৯৮৬-র বিশ্বকাপ জয়ী দলকে নিয়ে গর্ব করে। সেই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনা। তবে মনে রাখা দরকার, দিয়েগোর সঙ্গে অনেক ভাল ফুটবলার ছিল। মেসির সঙ্গে তেমন কেউ নেই। এটাও ঠিক যে, জাতীয় দলের হয়ে খুব কমই খেলে মেসি। আমার কাছে এই আর্জেন্টিনা ড্রেসিংরুমটা খুব গোলমেলে জায়গা লাগছে।’
পরের ম্যাচে আর্জেন্টিনার করনীয় সম্পর্কে কেম্পেস বলেন, ‘পরের ম্যাচের আগে যে তিন দিন সময় পাওয়া যাচ্ছে, সেটাকে কাজে লাগিয়ে কোচকে এই ব্যাপারটাকে আগে ঠিক করতে হবে। আমার মনে হয়, কোচের উচিত ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলে এই পরিস্থিতি থেকে বেরোনোর রাস্তা খুঁজে বার করা। এই ফলাফলটা একেবারেই প্রত্যাশিত ছিল না। তাই ধাক্কাটা বেশি লাগবে। তবু উঠে দাঁড়াতেই হবে দেশের গর্বের কথা ভেবে। আর্জেন্টিনার পক্ষে একটিও ম্যাচ না জিতে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়াটা হবে আমাদের ফুটবল ইতিহাসে সব চেয়ে লজ্জার।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।