মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটিতে ধর্মীয় এবং জাতিগত বিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। ইতিপূর্বে পুলিশ কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অথবা ধর্মীয়/কম্যুনিটিভিত্তিক সংস্থায় অভিযোগ করে কোন প্রতিকার না পাওয়ায় গত বছর ৭১ শতাংশ ভিকটিমই বিচার প্রার্থনায় আগ্রহী হয়নি। নিউইয়র্ক সিটির হিউম্যান রাইটস কমিশনের জরিপে এমন ভয়ংকর তথ্য উঠে এসেছে। এ জরিপ চালানো হয় ২০১৬ সালের জুলাই থেকে গত বছরের শেষার্ধ পর্যন্ত। বাংলা, ইংরেজী, আরবী, রাশিয়ান, হিন্দি, উর্দু, যুডিশ-এই ৭ ভাষায় পরিচালিত জরিপে অংশ নেন ৩১০০ জন। দক্ষিণ এশিয়ান এবং মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমান ছাড়াও শিখ ও জুইশরাও অংশ নেন এতে। এই জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ উপলক্ষে গত মঙ্গলবার ব্রুকলীনে আরব-আমেরিকান ফ্যামিলি সাপোর্ট সেন্টারে এক অনুষ্ঠান হয়েছে কমিশন অন হিউম্যান রাইটসের পক্ষ থেকে। স্বাগত বক্তব্য এবং সামগ্রিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কী করা উচিত তা নিয়ে খোলামেলা মতামত ব্যক্ত করেন কমিশনার কারমেলিন পি মালালিস।
জরিপে উঠে এসেছে :
*৩৮.৭% কোন না কোনভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন।
* ৮.৮% শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন।
* ১৬.৬% ধর্মীয়, বর্ণ অথবা জাতিগত বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন কর্মক্ষেত্রে অথবা চাকরির ইন্টারভিউর সময়।
* ২৭% নারী হেনস্থার শিকার হন হিজাব পরিহিত অবস্থায় সিটির সাবওয়েতে।
* ৮০% জুইশ লাঞ্ছিত হয়েছেন অথবা বিদ্বেষমূলকভাবে সহায়-সম্পদের ওপর হামলা হয়েছে।
* ১৯% দক্ষিণ এশিয়ানই কর্মক্ষেত্রে বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হয়েছেন।
* ৭১% বলেছেন যে, তারা আক্রান্ত হবার তথ্য পুলিশ কিংবা কম্যুনিটিভিত্তিক সংগঠন অথবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করেননি। কারণ, এর আগে অভিযোগ করে কোন প্রতিকার দূরের কথা, উল্টো হুমকির শিকার হয়েছেন।
*জরিপে অংশ নেয়া শিখ সম্প্রদায়ের অনূর্ধ্ব ৩৫ বছর বয়েসীরা বলেছেন যে তারা আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়রানি-নাজেহাল-লাঞ্ছিত হচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নিউইয়র্ক সিটির এই মানবাধিকার কমিশন সুপারিশ করেছে যে, কম্যুনিটিভিত্তিক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে সক্রিয় একটি নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে হবে। যার মাধ্যমে ভিকটিমরা বিচার প্রার্থনায় উৎসাহিত হতে পারবেন। দুর্বৃত্তদের যদি গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যায় তাহলে দ্রুত হ্রাস পাবে এমন জঘন্য ঘটনাবলি।
বলা হয়, জুইশ ফর র্যাসিয়েল এ্যান্ড ইকনোমিক জাস্টিস, সোউটো ইয়েটো সেন্টার ফর আফ্রিকান উইমেন, শিখ কোয়ালিশন, কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন্স’র নিউইয়র্ক চ্যাপ্টার, আরব-আমেরিকান এসোসিয়েশন অব নিউইয়র্ক, আরব-আমেরিকান ফ্যামিলি সাপোর্ট সেন্টার, ছায়া-সিডিসি, মানবাধিকার কমিশনের স্টাফকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে নাগরিকের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার জন্যে। তৃণমূলে কথা বলতে হবে। অভয় দিতে হবে যে, অবিচার কিংবা বিচারহীনতার সংস্কৃতি দীর্ঘতর হবে যদি ভিকটিমরা সোচ্চার না হন। এমনকি সিটির এই মানবাধিকার কমিশনের মাধ্যমেও অভিযোগ করা যাবে। অনলাইন অথবা টেলিফোনেও তথ্য জানানোর সুযোগ রয়েছে। নির্ভয়ে যেন সকলে অভিযোগ পেশ করেন। পুলিশী এ্যাকশন অবশ্যই দ্রুত শুরু হবে মানবাধিকার কমিশনের মাধ্যমে ঘটনাবলি উপস্থাপন করা হলে। এই কমিশনের টেলিফোন নম্বর হচ্ছে ৭১৮-৭২২-৩১৩১।
এ সময় জানানো হয়, সিটি, স্টেট এবং ফেডারেল প্রশাসনের অনুদানে পরিচালিত অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা/ মানবাধিকার সংস্থার এটর্নীরাও এসব ব্যাপারে বিস্তারিত সহায়তা দিচ্ছে। পুলিশ যদি অভিযোগ আমলে নিতে কালক্ষেপণ করে তাহলে তার বিরুদ্ধেও আইনগত পদক্ষেপের সুযোগ রয়েছে। সুতরাং ভিকটিমরা যেন কোনভাবেই অভিযোগ করা থেকে বিরত না হন।
নিউইয়র্ক সিটির মানবাধিকার আইন লংঘনকারিকেও সর্বোচ্চ আড়াই লাখ ডলার জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে। এই কমিশন সে পদক্ষেপ নেয়ার অধিকার রাখে। তবে ভিকটিমরা এগিয়ে না এলে কোন আইনই প্রয়োগ করা সম্ভব হবে না।
কমিশনার কারমেলিন তার বক্তব্যে বলেন, কোথায় তারা নামাজ/পূজা/প্রার্থনা করেন কিংবা কী তার দৈহিক অবস্থা বা কোত্থেকে তিনি এসেছেন-এ কারণে কেউ নাজেহাল/আক্রান্ত/লাঞ্ছিত হবে-এটি নিউইয়র্ক সিটি কখনো মেনে নেবে না। কাউকেউ বৈষম্যের শিকার হতে দেয় না এই সিটি কিংবা উপরোক্ত কারণে কেউ হয়রানি হবে-সেটিও বরদাশত করে না নিউইয়র্ক সিটি। আমরা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছি এহেন পরিস্থিতি দমনে। জিরো টলারেন্স মনোভাব রয়েছে সিটি প্রশাসনে।
কমিশনার বলেন, মুসলমান, শিখ অথবা জুইশদের নিরাপত্তায় বদ্ধপরিকর এই সিটির সকল এজেন্সী। কর্মক্ষেত্রে বিমাতাসূলভ আচরণকেও মেনে নেয় না এই প্রশাসন। কমিশনার উল্লেখ করেন, জরিপে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মনবাধিকার কমিশন সোচ্চার হবে। সিটির সকল এজেন্সীর সাথে মতবিনিময় করার মধ্য দিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আর এভাবেই সকল মানুষের জন্যে নিরাপদ সিটির ঐতিহ্য সমুন্নত রাখার চেষ্টা করা হবে।
এ সময় সিটি মেয়রের ইমিগ্রেশন সম্পর্কিত কমিশনার বিটা মোস্তফি বলেন, বর্ণ, জাতীয়তা, ধর্মীয় কারণে কেউ হয়রানি হবে অথবা কর্মস্থলে বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হবে-এটি কোনভাবেই মেনে নেয়া উচিত নয়। এমন পরিস্থিতির অবসানে আমরা কাজ করছি মানবাধিকার কমিশনের সাথে। চলতি পথে অথবা কর্মস্থলে কেউ যাতে অযথা হয়রানি না হন-সে চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে অভিবাসী সমাজ স্বস্তিতে নেই-এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এই জরিপে। তাই আমরা কম্যুনিটির শান্তি-স্বস্তি অটুট রাখতে এখন থেকে দ্বিগুণ উৎসাহে কাজ করবো। কারণ, এই সিটির দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষায় সজাগ থাকা।
নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের কম্যুনিটি এফেয়ার্স ইউনিটের কমিশনার মারকো এ ক্যারিয়ন বলেন, বৈষম্য, হয়রানি, বায়াস, হেইট ক্রাইমের স্থান নয় এই সিটি। মেয়র ব্লাসিয়োর প্রশাসন বদ্ধপরিকর কম্যুনিটির সকলের নিরাপত্তা সংরক্ষণ এবং নাগরিকের যে কোন প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াতে। এধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কম্যুনিটি এফেয়ার্স ইউনিটের সকল কর্মকর্তা সার্বক্ষণিকভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন সকল সংস্থার সাথে।
এ ধরনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের নির্বাহী পরিচালক স্টিভেন চৈ। তিনি বলেন, হেইট ক্রাইম প্রতিরোধে সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণে এই জরিপ-প্রতিবেদনের গুরুত্ব অপরিসীম।
নিউইয়র্কস্থ জুইশ কম্যুনিটি রিলেশন্স কাউন্সিলের বোর্ড মেম্বার ও কমিশনার যোনাথন গ্রীণস্পান বলেন, ব্রুকলীনের অধিবাসী হিসেবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই সিটিতে প্রতিনিয়ত ধর্মীয় ও জাতিগত বিদ্বেষের কারণে জুইশরাও হয়রানি, হেনস্থা এবং সহায়-সম্পদের ক্ষতির শিকার হচ্ছে। আজকের এই জরিপ প্রতিবেদনে সিটি প্রশাসনের আন্তরিকতার বহি:প্রকাশ ঘটলো যে, এই সিটিতে কোন ধরনের হেইটক্রাইম অথবা বৈষম্যকে স্থান দেয়া হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।