Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চার সিটিতেই জয় চায় আওয়ামী লীগ

প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৩ এএম, ২২ জুন, ২০১৮

ইয়াছিন রানা : খুলনা পর আগামী চার সিটি-গাজীপুর, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল সিটি নির্বাচনে জয়ের ধারাবিহকতা রক্ষা করতে চায় আওয়ামী লীগ। জয়ের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীনরা আন্তর্জাতিক মহলকে একটি বার্তা দিতে চায় যে তাদের প্রতিই জনগণের আস্থা রয়েছে। সেজন্য জয় নিশ্চিতে কেন্দ্র থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হবে এবং ‘উইনেবল ক্যান্ডিডেটকে’ মনোনয়ন দেয়া হবে। আজ দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় রাজশাহী, সিলেট ও বরিশালের জন্য মেয়র প্রার্থী বাছাই করা হবে। এছাড়া উন্নয়ন অব্যাহত রাখার জন্য ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে বেছে নেবার জন্য জনগণের কাছে বার্তা পোছানো হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, সিটি নির্বাচনে জয়ের বিকল্প ভাবছে না তারা। চার সিটিতে যদি আওয়ামী লীগ জয়ী হয় তাহলে ‘বিএনপি ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব না’- এই বক্তব্যের কোনো ভিত্তি থাকবে না। সেজন্য সিটি নির্বাচনে কোনোভাবেই হারতে চায় না আওয়ামী লীগ।
গত নির্বাচনে প্রার্থীদের উন্নয়ন কর্মকাÐ ও জনপ্রিয়তা হেফাজত ইস্যুও কারণে চাপা পড়ে খুলনাসহ এই চার সিটিতে পরাজিত হয় দলীয় প্রার্থীরা। কিন্তু এবার ধর্মীয় অপপ্রচার নেই; সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে যে গতবার তারা অপপ্রচারে সায় দিয়েছিল। আর দলের প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা এখন বেশি এবং বর্তমান মেয়রদের কর্মকাÐে তাদের জনপ্রিয়তা একদম তলানীতে। তাই জয়েল ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ। তবে গাজীপুর নিয়ে এখনো শঙ্কা কাটছে না দলের। আর বরিশাল নিয়েও জটিলতার মধ্যে আছে ক্ষমতাসীনরা।
তাই আগামী ২৬ জুন অনুষ্ঠিতব্য এ সিটির নির্বাচনে জয় পেতে এরই মধ্যে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতীয় নির্বাচনের আগে চারটি সিটি নির্বাচন ঐক্যবদ্ধভাবে করার নির্দেশ দিয়েছেন। এসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সবাইকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। দলের নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মনোবল আরো চাঙ্গা হবে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলও অনেকাংশে কমে আসবে। অন্য দিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা হতাশ ও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে। যার সুফল মিলবে জাতীয় নির্বাচনে। এছাড়া প্রমাণ হবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জেলে যাওয়াতে দলটির জনপ্রিয়তা তো বাড়েনি বরং কমেছে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, খুলনা সিটির মতো বাকি সিটি করপোরেশনগুলোতেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশাবাদী। কারণ জনগণ দূর্নীতিগ্রস্থ দল বিএনপি থেকে এরই মধ্যে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হয়েছে এবং বাকিগুলোতেও হবে।
এছাড়া উন্নয়ন প্রচারণায় জনগণের মাঝে একটি বার্তা পৌছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে উন্নয়নের দল আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগের সরকার, এখন সিটি করপোরেশনে যদি অন্য দলের প্রার্থী জয়লাভ করে তাহলে সে সরকারের সঙ্গে লেয়াজু করে বেশি উন্নয়ন করতে পারবেন না। উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থীকেই ভোট দিতে হবে।
উন্নয়নের কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের উপর জনগণের আস্থা থাকলেও অনেক সময় দলের মনোনিত প্রার্থীর উপর আস্থা রাখছে ভোটাররা। সেজন্য কুমিল্লা, রংপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। দলীয় কোন্দলের কারণেও প্রর্থীদেও পরাজয়ের অন্যতম কারণ। সেজন্য এবার গ্রহণযোগ্য এবং উইনেবল ক্যান্ডিডেট মনোনয়ন দেয়া হবে।
আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ তিন সিটির জন্য মেয়র প্রার্থী বাছাই করা হবে। দলীয় সূত্র জানায়, রাজশাহীতে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সিলেটে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানের উপরেই ভরসা আওয়ামী লীগের। এই দুই সিটিতে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য প্রার্থী তারাই। সিলেটে একটু সমস্যা থাকলেও তা সমাধানে বেশি বেগ পেতে হবে না দলকে। তবে বরিশালে মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে বেশ জটিলতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। সেখানে কোন্দল এতো বেশি যে একজন মনোনয়ন পেলে অন্যরা বিপক্ষে কাজ করবে।
দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে সিলেটের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান জানান, তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী। গেলো নির্বাচনে পরাজিত হলেও জনগণের সঙ্গ ছাড়েননি বরং নগরবাসীর সঙ্গে থেকে ছায়ার মতো কাজ করেছেন। ইতিমধ্যে তাকে বেশ কয়েকবার গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়েছে। তিনি মনোনয়ন পেলে অবশ্যই আওয়ামী লীগ এ সিটিতে হারানো সিংহাসন পুনরুদ্ধার করতে পারবে।
রাজশাহীতে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিটনের প্রার্থিতার বিষয়ে সবুজ সংকেত দেয়ায় এখানে দলের অন্য কোনো প্রার্থী নেই। এছাড়া রাজশাহী মহানগর ১৪ দলের সভায় লিটনকে একক প্রার্থী ঘোষণা করে জোটটি। একই সঙ্গে তারা কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী নির্ধারণেও কাজ শুরু করেছেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর খুব একটা বেশি দেরী নেই। এর ঠিক আগ মুহূর্তে অনুষ্ঠিত এসব সিটি নির্বাচনে কোনো ধরনের নেতিবাচক ফলাফল এলে তা জাতীয় নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আওয়ামী লীগ।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, আওয়ামী লীগের উন্নয়নের প্রতি সাধারণ মানুষের যে আস্থা রয়েছে তা আগামী সিটি নির্বাচনগুলোতে প্রমাণ হবে। ইতোমধ্যে গাজীপুরে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে, বাদ বাকি রাজশাহী, সিলেট, বরিশালেও জয়ের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আশা করি সবগুলোতেই নৌকার জয় হবে।
সভাপতিমÐলীর সদস্য কর্ণেল কর্ণেল (অব.) ফারুক খান ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপিকে তো ভোট দেয়ার কোন কারণ দেখি না। উন্নয়ন করছে আওয়ামী লীগ, জনগণ আওয়ামী লীগের প্রার্থীকেই ভোট দেবে। দলের কোন্দলের কারণে অতীতে সমস্যা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী চার সিটিতে কোন্দল নিয়ে কোন সমস্যা নেই।
তিন সিটির মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আ’লীগের বৈঠক আজ
রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আজ বৈঠকে বসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে।
একইসঙ্গে কুড়িগ্রাম-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ঠিক করতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাও রয়েছে। এছাড়া পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকারের আরও কিছু পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে দলটি।
আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন এবং ২৫ জুলাই কুড়িগ্রাম-৩ আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২৮ জুন তিন সিটি ও ২৪ জুন কুড়িগ্রাম-৩ আসনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।
এদিকে তিন সিটির মেয়র পদ ও কুড়িগ্রাম-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীদের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছে আওয়ামী লীগ। গত ১৯ জুন শুরু হয়ে গতকাল বিকাল ৫টায় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল এক বিবৃতিতে দলের সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের সভায় উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন।



 

Show all comments
  • রিয়াজ ২২ জুন, ২০১৮, ১:৪৪ এএম says : 0
    তারা এখন যা চাইবে তাই পাবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ