মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের সূচিত বৈশ্বিক অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বদলে দেওয়ার সম্ভাবনাপূর্ণ বাণিজ্য যুদ্ধে চীন প্রত্যাঘাত করেছে, ভারতও একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার হুমকি দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন বাজারে চীনা পণ্যের ওপর প্রতিবন্ধকতা আরোপের হুমকির জবাবে সয়াবিন, বৈদ্যুতিক গাড়ি ও হুইস্কিসহ ৩৪ বিলিয়ন ডলারের আমেরিকান পণ্য তালিকার ওপর আমদানি শুল্ক বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে। জি৭-এ কানাডা ও ইউরোপিয়ানদের সাথে বাদানুবাদের সময় ট্রাম্প ভারতের কথা উল্লেখ করায় এবং অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ভারত খুশি হয়নি। এখন ভারত বলছে, তারা মোটরবাইক, মুসুর ডাল ও কিছু স্টিল পণ্যসহ তালিকাভুক্ত ৩০টি মার্কিন পণ্যের ওপর ৫০ ভাগ শুল্ক আরোপ করার পরিকল্পনা করছে।
বেইজিং জানিয়েছে, তারা বাণিজ্য যুদ্ধ চায় না, তবে বেইজিংয়ের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ও প্রযুক্তিনীতির প্রশ্নে সংঘাতে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর ট্রাম্পের ঘোষণার ‘সমান মাত্রার’ জবাব দেবে। বেইজিংয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, চীন ‘বাণিজ্য যুদ্ধ চায় না’ তবে ‘দৃঢ়ভাবে জবাব দেবে।’ এতে বলা হয়, আরো মার্কিন কৃষি পণ্য, প্রাকৃতিক গ্যাস ও অন্যান্য পণ্য কেনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চুক্তিটিও বাতিল করতে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক সম্পর্ক। তবে বেইজিংয়ের কৌশল তার মুক্তবাণিজ্যের প্রতিশ্রæতি লঙ্ঘন করছে, মার্কিন কোম্পানিগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে- ট্রাম্পের এমন অভিযোগের ফলে ওই সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান হারে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপ, জাপান ও অন্যান্য বাণিজ্যিক অংশীদারও একই ধরনের অভিযোগ করছে। তবে ট্রাম্প অস্বাভাবিকভাবে বেইজিংকে চ্যালেঞ্জ করছেন, এই বিপুল পরিমাণের রফতানিতে ব্যাঘাত সৃষ্টির হুমকি দিচ্ছেন।
এই বাণিজ্য যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রই উসকানিদাতার ভূমিকা পালন করছে, চীন রক্ষণাত্মক অবস্থানে রয়েছে,’ জানিয়েছে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি-সমর্থিত পত্রিকা গেøাবাল টাইমস। এতে বলা হয়, ‘চীন একটি শক্তিশালী অভিভাবক, বিদ্যমান বাণিজ্য আইন ও ন্যায্যতা রক্ষার পর্যাপ্ত সামর্থ্য তার আছে।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, ৬ জুলাই থেকে বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের ৫৪৫টি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ ভাগ শুল্ক আরোপ করবে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে সয়াবিন, বৈদ্যুতিক গাড়ি, কমলার রস, হুইস্কি, স্যামন ও সিগার। খাদ্য ও অন্যান্য কৃষি পণ্যের ওপর শুল্ক সন্দেহাতীতভাবে ট্রাম্পের গ্রামীণ সমর্থন ভিতের ওপর সবচেয়ে বেশি আঘাত হানবে।
বেইজিং ইতোমধ্যেই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব ন্যূনতম করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তার মার্কিন পণ্যের বদলে ব্রাজিল বা অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করার পরিকল্পনা করেছে। প্রস্তাবিত ভারতীয় আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে নির্দিষ্ট কিছু স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের ওপর মার্কিন উচ্চতর শুল্কের জবাবে। এর ফলে ভারতের ওপর ২৪০ মিলিয়ন ডলারের প্রভাব পড়তে পারে। এই পদক্ষেপটি গ্রহণ করা হয় বাণিজ্য ইস্যুতে মতপার্থক্য কমিয়ে আনার জন্য চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে ওয়াশিংটনে মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর বৈঠকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে।
মে মাসের প্রথম দিকে বাদাম, আপেল, কিছু ধরনের মোটরসাইকেলসহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ২০ ধরনের পণ্যের ওপর ১০০ ভাগ পর্যন্ত শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করে ভারত। অতিরিক্ত করারোপের ফলে ওইসব পণ্যের দাম ১০ ভাগ থেকে ৫০ ভাগ পর্যন্ত বেড়ে যাবে। বাদাম, আপেল ইত্যাদির ওপর করারোপ হবে কম। ফলে ভোক্তাদের এসব পণ্যের জন্য ১০ ভাগ পর্যন্ত বেশি দাম দিতে হবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে ৮০০ সিসির ওপরের মোটরসাইকেলের ওপর। এটি গ্রহণ করা হয়েছে হার্ডলে-ডেভিডসনকে লক্ষ্য করে। এর ওপর অতিরিক্ত ৫০ ভাগ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটিকে বিবেচনা করা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রকৃত জবাব হিসেবে। তিনি কাল্ট মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডের ওপর কর কমানোর দাবি জানিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার ডবিøউটিও জানিয়েছে, ভারত চার পৃষ্ঠার এক ঘোষণায় বলেছে, ‘ভারত এই মর্মে আবারো ১৮ মে, ২০১৮-এ বাণিজ্য পরিষদকে ছাড় ও জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন টেরিফস অ্যান্ড ট্রেড ১৯৯৪ ও এগ্রিমেন্ট অন সেফগার্ডসের ধারা ৮.২-এ থাকা অন্যান্য বাধ্যবাধকতা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তটি জানিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ব্যবস্থায় বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত করার পরিমাণের সমান।’ এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত কিছু পণ্যের ওপর কর বাড়ানোর আকারে ছাড় ও অন্যান্য বাধ্যবাধকতা স্থগিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এখন ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ কেবল ইউরোপিয়ান মিত্রদেরই সমস্যায় ফেলেনি, সেইসাথে এশিয়ান প্রতিদ্ব›দ্বী চীন ও ভারতকে একই অবস্থানে এনে দিয়েছে। তেলের মূল্য প্রশ্নে ওপেকের বিরুদ্ধেও সমন্বিত অবস্থান গ্রহণ করার আলোচনা শুরু করে দিয়েছে চীন ও ভারত। তেলের সাম্প্রতিক মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্বের বৃহত্তম দুই তেল আমদানিকারক, এই দুই এশিয়ান জায়ান্ট তাদের অর্থনীতিতে প্রভাব কমানোর উপায় নিয়ে কাজ করছে।
এশিয়ার এই দুই উদীয়মান অর্থনীতির কাছে এখন পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধে তাদের অবস্থানে সমন্বয় সাধন করার খুবই যৌক্তিক কারণ রয়েছে। তাদের নিজস্ব দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, এমন সমস্যাও সমাধান করতে হবে তাদের। ভারতের অনেকে এখন এটিকে কেবল পরিমাণের ওপর নয়, বরং ভারতের বৈরী বা সাংবাৎসরিকভাবে প্রতিকূলে না থাকে তা নিশ্চিত করে বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ হিসেবেও দেখছেন।
ট্রাম্প সম্ভবত তেমন কোনো ভাবনা-চিন্তা ছাড়াই এমন একটি প্রক্রিয়ার সূচনা করেছেন যার ফলে হয়তো উদীয়মান অর্থনীতি চীন, ভারত, জাপান ও ইউরোপকে তাদের নিজেদের মধ্যে আরো জোরালোভাবে বাণিজ্য করার দিকে মনোযোগী হতে বাধ্য করবে। আর এর ফলে আগামী দিনে বৈশ্বিক অর্থনীতির সীমারেখা নতুন করে তৈরি হবে। সূত্র ঃ এসএএম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।