Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দ্বারে দ্বারে আওয়ামী লীগ

ভোটের রাজনীতি

| প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

0 ভুল-ভ্রান্তির ক্ষমা চেয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা 0 ভোটারদের সঙ্গে গড়েছেন আত্মিক সম্পর্ক 0 নৌকায় ঐক্যবদ্ধতার বার্তা তৃণমূলে


ইয়াছিন রানা : শেষ হল পবিত্র রমজানের ঈদ। শেষ হল রাজনীতিবিদদের ব্যস্ততা। আগামী নির্বাচনের আগে এটিই শেষ রমজানের ঈদ হওয়ায় রাজনীতিবিদদের কাছে বিশেষ পায় এই ঈদ। ভোটের ঈদ হিসেবে এলাকাতে যার যার নির্বাচনী ক্ষেত্র তৈরীর চেষ্টা করেছেন ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী,এমপি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং আগামী নির্বাচনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। রমজানে বেশিরভাগ ইফতার নিজ এলাকায় করা এবং ঈদে ঈদ উপহার দেয়ার মাধ্যমে নেতাকর্মী ও জনগণের সঙ্গে সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতার সম্পর্ক তৈরী করেছেন। আর নৌকায় ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলে।
সকল কাজ ফেলে ঈদ ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকামুখী হয়েছিলেন তারা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছিলেন কাজে ব্যস্তÍ; কড়া নেড়েছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। অনেকে জনগণের কাছে অতীতের ভুল-ভ্রান্তির বিষয়ে ক্ষমা চেয়ে আগামী নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য ওয়াদা নিয়েছেন। আর ব্যানার, পোষ্টার, ফেস্টুনের মাধ্যমে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে নির্বাচনের আগাম বার্তা দিয়েছেন তারা। এদিকে স্থানীয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনেক এমপির দা-কুড়াল সম্পর্ক। দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, ঢাকায় বসে বিশেষ লীগের মাধ্যমে এলাকার কাজকর্ম পরিচালনা করেন এমপিরা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ভীড়তে পারেন না এমপিদের কাছে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একাধিক মন্ত্রী ও শতাধিক এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেতারা। তাই তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে রোজায় একসঙ্গে ইফতার ও ঈদে উপহার পাঠানোর মাধ্যমে দূরত্ব ঘোচানোর চেষ্টা করেছেন এমপিরা।
সূত্র জানায়, ঈদ উপহার পাঠানোর মাধ্যমে অনেক জনপ্রতিনিধি নেতাকর্মী ও জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার পাশাপাশি অতীতের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তারা বলেছেন, যারা কাজ করে তাদেরই ভুল হয়, যারা কাজ করে না তাদের ভুল হয় না। যেসব ভুল করেছেন ভবিষ্যতে সে ভুল না করারও ওয়াদা করেছেন তারা। নির্বাচনের আগে সকল ভেদাভেদ ভুলে নৌকায় ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানিয়েছেন নেতারা।
এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে ঘুম হারাম অবস্থা ছিল গাজীপুর, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল ও ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের। নির্বাচন কাছাকাছি হওয়ায় প্রত্যেক এলাকায় কাউন্সিলর প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি ঈদ উপহার পাঠানোর মাধ্যমে গণসংযোগ করেছেন প্রার্থীরা। এছাড়া দিন-রাত সব সময় চালিছেন প্রচারণা। গরিব, দু:খী, অসহায়দের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করেছেন তারা।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে জনগণের যতটা কাছে যাওয়া যায় অন্য সময় তা সম্ভব হয় না। অন্য সময় হয়তো বড় বড় সমাবেশ করা যায়, হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটানো যায় কিন্তু মানুষের সাথে আন্তরিকতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। ঈদে মানুষে মানুষে হিংসা ভেদাভেদ ভুলে সবার মাঝে তৈরী হয় সৌহার্দ্যরে সম্পর্ক। তাই জনগণের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক তৈরী করা এবং নেতায় নেতায় ও স্থানীয় সংগঠনের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচানোর জন্য ঈদ ও পুরো রোজার মাসেই ছুটে বেড়িয়েছেন রাজনীতিকরা।
নেতারা আরো বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি বা নেতা যত বেশি মানুষের কাছে যেতে পারেন তিনি তত ভাল নেতা হতে পারেন এবং তার ধারা এলাকার উন্নয়ন তত বেশি হয়। কারণ তিনি প্রত্যেক এলাকার সমস্যা সরাসরি জানতে পারেন এবং জনগণের সঙ্গে বন্ধন মজবুত থাকে বিধায় তার ধারা দূর্নীতি কম হয়।
এছাড়া জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ভোটারদের মন জয় করতে শাড়ি-লুঙ্গি, কামিজ, পাঞ্জাবি-পায়জামা বিতরণ করেছেন। এলাকার গরীব দু:খীদের সহযোগিতা করার পাশাপাশি অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রভাবশালী, বয়:বৃদ্ধ ও এলকার সম্মানিত ভোটারদের বিভিন্ন উপহার পাঠিয়েছেন। তালিকা করে এর হিসাব রেখেছেন কেউ যেন বাদ না পড়েন। এছাড়া ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার লাগিয়েছেন।
এ কাজে পিছিয়ে ছিল না স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। সিটিকরপোরেশন, পৌরসভার কাউন্সিলর, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বাররাও উপহার সামগ্রি নিয়ে এলাকার ভোটারদের দাড়ে কড়া নেড়েছেন; জানান দিয়েছেন আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেবার। ঈদের কয়েকদিন আগ থেকে ঘুম হারাম ছিল তাদের। এবারের পরিস্থিতি একটু ভিন্নভাবেই দেখেছেন সবাই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন তারা। কারণ হিসেবে বলছেন, জাতীয় নির্বাচনে ভোটারদের কাছে টানেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তারা ঠিক মত কাজ কাজ করলে এমপি প্রার্থীদের জয়লাভ করতে বেশি সহজ হয়। তাই নৌকার জয়ের জন্য মাঠ প্রস্তুত করেছেন তারা।
সূত্রমতে, মনোনয়নের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরেই দলীয় এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের বলে আসছেন, ‘কারও মুখ দেখে নয়, জরিপ দেখেই মনোনয়ন দেওয়া হবে’। আগামী সংসদ নির্বাচনে কোনো ঝুঁকি নেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তা পেয়ে দলের এমপি-মন্ত্রীরা নিজ নিজ এলাকামুখী হয়েছেন। এছাড়া স্থানীয় সংগঠনের অভিযোগের প্রেক্ষিতেও এলাকায় সক্রিয় এমপিরা। আর এমপি প্রত্যাশীরাও মনোনয়ন পেতে ছুটে বেড়াচ্ছেন প্রত্যেক ঘরে ঘরে। ঈদ ও রোজায় প্রত্যেক মানুষের কাছে যাবার সুযোগ থাকে বিধায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ অধিকাংশই মন্ত্রীই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের পাঞ্জাবি-পায়জামা, শাড়িসহ উপহারসামগ্রী দিয়েছেন। পাশাপাশি গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বস্ত্র ও ঈদসামগ্রী বিতরণ করেছেন। ঈদে বেশির ভাগ নেতা নিজ নিজ এলাকায় ঈদ নামাজ পড়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করেছেন।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামাল হোসেন, রিয়াজুল কবির কাওছারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় নেতা-কর্মীদের জন্য পাঞ্জাবি, শাড়ি, ঈদকার্ড, উপহারসামগ্রী এবং এলাকার গরিব-দুস্থদের মধ্যে কাপড়-শাড়ি লুঙ্গি বিতরণ করেছেন।
সূত্রমতে, শরীয়তপুরের সখিপুর ও নড়িয়াতে আশরাফুন্নেসা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে গরিব-দুঃখীদের মধ্যে কাপড় বিতরণ করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম। মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের মধ্যে পাঞ্জাবি, পায়জামা ও টুপি বিতরণ করছেন দিনাজপুর-২ আসনের সরকারদলীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। নির্বাচনী আসনের ২৪৩ জন ইমামের মাঝে পাঞ্জাবি-পায়জামা ও টুপি বিতরণ করেছেন তিনি।
বেশ কয়েক বছর ধরে রমজানে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। দক্ষিণের অধীনে ২৪টি থানা, ৭৫টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড ও এর অধীনের প্রত্যেকটি ইউনিটের ২৭ হাজার নেতা-কর্মীকে একটি নামিদামি ব্র্যান্ডের পাঞ্জাবি ঈদ উপহার হিসেবে দিয়েছেন।
নোয়াখালী-৬ আসনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী মাহমুদ আলী রাতুল। তিনি এলাকার গরীব, অসহায় ও এতীমদের সহযোগিতার পাশাপাশি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ঈদ উপহার দিয়েছেন। তিনি বলেন, ঈদের আনন্দ দলের নেতাকর্মী ও জনসাধারণ সবার সাথে ভাগাভাগি করে উপভোগ করেছেন তিনি।
মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে গোলাম সারোয়ার কবির, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাত, ঝালকাঠি-১ আসনে মনিরুজ্জামান মনির, ঢাকা-৫ আসনে মশিউর রহমান মোল্লা সজল, ঢাকা-৬ আসনে চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু, ঢাকা-৭ আসনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আকতার হোসেন, চাঁদপুর-৩ আসনে রেদওয়ান চৌধুরী বোরহান বিভিন্ন আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নেতা-কর্মীদের পাঞ্জাবি-পায়জামা উপহার দেয়া এবং গরিব-দুঃখীদের মধ্যে কাপড় বিতরণের মাধ্যমে ঈদ উদযাপন করেছেন।

 



 

Show all comments
  • কাজল ১৯ জুন, ২০১৮, ৩:৩৫ এএম says : 0
    কোন লাভ হবে না
    Total Reply(0) Reply
  • নাহিদ ১৯ জুন, ২০১৮, ৩:৩৬ এএম says : 0
    এসব নিউজ করে কি লাভ? আদৌ কী সুষ্ঠ নির্বাচন হবে ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ