বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
আওয়ামী লীগ বিএনপি ও জাপার সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন
বিশেষ সংবাদদাতা : রমজান ও ঈদ উল ফিতরে বরিশাল মহানগরীতে নিরব নির্বাচনী রাজনীতি তৎপর ছিল। আগামী ৩০ জুলাই ৩ সিটি নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানা কৌশলে ভোটের মাঠে তৎপর থাকলেও রোজার মাসে ইফতার মাহফিল করে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন। সর্বশেষ গত শনিবার মহানগরীতে দুটি প্রধান দলের সম্ভাব্য প্রার্থীগন কেন্দ্রীয় ঈদগাহে পরস্পর কোলাকুলি সহ ভোটারদের সাথেও কুশল বিনিময় করে নীরব প্রচারনায় সক্রিয় ছিলেন। গত ১৩ জুন সরকারি ছুটির দিনে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৮ জুন ৩ সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন। বাছাই হবে ১ ও ২ জুলাই। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ জুলাই।
তবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষনা হলেও এখনো আওয়ামী লীগ সহ মহাজোট আর ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী চুড়ান্ত হয়নি। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী মহানগর আমীর মোয়াজ্জেম হোসাইন হেলালকে মেয়র পদে প্রার্থী করার কথা স্থানীয়ভাবে ঘোষনা করে এটা ‘জোটের বাইরে দলীয় সিদ্ধান্ত’ বলে জানিয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আগেই সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী ঠিক করে রেখেছে। জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল সিটি নির্বাচনে আলাদাভাবে অংশ নিক তা আশা করছিল মহাজোট। জামায়াতের ঘোষিত প্রার্থী রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পরে বরিশাল আদালত থেকে জামিন লাভ করে ভোটের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। জামাত প্রার্থীর ঈদ শুভেচ্ছা সম্বলিত বহু রঙের প্ল্যাকার্ড নগরীতে শোভা পাচ্ছে এখন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও ‘বরিশালে বিএনপি সহ ২০ দলীয় জোটকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিবেচনা করার নীতিতে’ এবার সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছে। হিসেবে আগামী কয়েকটি দিন ৩ সিটি নির্বাচনের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিটি নির্বাচন সামনে রেখে বরিশালে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য তিন প্রার্থীরই ঈদের জামাতে সক্রিয় উপস্থিতি সহ পারস্পরিক কুশল বিনিময় ছিল চোখে পড়ার মত। ঈদকে কেন্দ্র করে ভোটের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে দলটির মনোয়ন প্রত্যাশী অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা জাহিদ ফারুক শামিম বরিশালের চেয়ে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। অপর প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন-বীর বিক্রম ঈদের দিন নগরীতে ছিলেন। সাদিক আবদুল্লাহ গত কয়েক বছর ধরেই বরিশালের তৃনমূল রাজনীতিতে সক্রিয়। এবারো দলীয় কর্মী ও গণমাধ্যম কর্মীদের সম্মানে ইফতার মাহফিলে তার সক্রিয় উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। তবে এখনো সাধারন মানুষের চেয়ে তিনি নিজস্ব কর্মী বাহিনীর বেষ্টনীতেই বেশী আবদ্ধ।
এরই মধ্যে বরিশাল মহানগরীতে দুটি প্রধান দলের প্রার্থীতা নিয়ে নানমুখী কথাও প্রচারিত হচ্ছে। মহাজোটের একটি পক্ষ থেকে কর্ণেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামিমকে দলীয় মেয়র প্রার্থী করার কথা খুব নির্ভরতার সাথেই প্রচার করা হচ্ছে। আবার বিএনপির ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামালকে দলীয় মনোনয়নের কথাও বলা হচ্ছে। কিন্তু দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বড় অংশই সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারকে মেয়র প্রর্থী করতে চাইলেও তিনি এখনো তাতে রাজী হননি। সরোয়ার এমপি পদে নির্বাচনে বেশী আগ্রহী বলেও জানিয়েছেন। বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এড. বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন ও দক্ষিণ জেলা সভাপতি এবায়দুল হক চানও মেয়র পদে প্রার্থী হতে আগ্রহী।
তবে কোন দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোই দলীয় মেয়র প্রার্থীর বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থীতা চুড়ান্ত করে আগামী সপ্তাহেই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর কথা। বিএনপির ২০ দলীয় জোট থেকে অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ৩ সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহন সহ সার্বিক বিষয়টি গাজীপুর সিটি নির্বাচনের পরিস্থিতির ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর পরেই দল ও জোট সিদ্ধান্ত নেবে বলেও জানানো হয়েছে।
সুতরাং ২০ দলীয় জোটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ আরো জটিল আবর্তে রয়েছে। ফলে এখনো জোটের প্রার্থীতা চূড়ান্তকরণের বিষয়টি কিছুটা অনিশ্চয়তায়ই রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত ২০ দলীয় জোট তিন সিটি নির্বাচনে আসবে বলেও মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রার্থী চুড়ান্তকরনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু না হলে জোটের মূল শরিক দলটির স্থানীয় থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এ নিয়ে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানা গেছে।
বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থীতা নিয়ে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরেই নানামুখি তৎপরতা আর কোন্দল অব্যাহত থাকলেও চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় পর্যায়েই হচ্ছে। যদিও মহানগর আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাদিক আবদুল্লাহকে প্রার্থী করার সুপরিশ পাঠান হয়েছে কেন্দ্রে। জেলা আওয়ামী লীগও বিষয়টি সমর্থন করেছে। এসব সমর্থন ও সুপারিশ দলের কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারকদের কতটুকু বিবেচনা লাভ করবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে প্রধান দুটি দলের মনোনয়ন যারাই পাক, দলীয় ঐক্য অটুট না থাকলে এ নির্বাচনে দুটি দলই যথেষ্ঠ সংকটে পড়বে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।