Inqilab Logo

রোববার, ০৯ জুন ২০২৪, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চরাঞ্চলে নেই ঈদ আনন্দের ছোঁয়া

চাঁদপুর থেকে বি এম হান্নান | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চারিদিকে যখন ঈদের আনন্দ আর খুশির জোয়ার তখন চাঁদপুরের চরাঞ্চলে বেদনার গল্প। চরাঞ্চলের মানুষের অভাব-অনটন সারা বছরই লেগে থাকে। ঈদের দিনেও তেমন আনন্দ নেই তাদের। বছর বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মেঘনার ভাঙনে নাকাল মানুষগুলোর জীবনে উৎসবের ছোঁয়া লাগে না কখনো। এবার অভয়াশ্রম শেষে ঈদীতে ইলিশ না পাওয়ায় দুর্ভোগ আরো বেড়েছে।
সবার জন্য আনন্দের ঝলকানি নিয়ে ঈদ হাজির হলেও জীবিকার তাগিদে নৌকা আর জাল নিয়ে মেঘনায় মাছ শিকারে নেমে পড়েন জেলেরা। উৎসবের দিনেও পেটের তাগিদে নৌকা টানতে গিয়ে অনেকেই থাকেন ভাবলেশহীন। শিশু, নারী, পুরুষ কারো ভাগ্যেই জোটেনি নতুন জামা।
চরবাসীর অভিযোগ, সরকারিভাবে বিশেষ ভিজিডির চাল বরাদ্দ হলেও বরাবরের মতো তা সবার ভাগ্যে জোটেনা। জেলা প্রশাসক জানালেন, সরকারিভাবে চাঁদপুর জেলার চরাঞ্চলের দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য ঈদের বিশেষ ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তাদেরকে সহায়তা করা হচ্ছে। বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ বিস্তারিত জানাতে পারবেন। তবে জনপ্রতিনিধিদের দাবি এ বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল।
চাঁদপুর সদর রাজরাজেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী জানান, ১ হাজার ৫শ’ ৫৭ জনকে ঈদের বিশেষ ভিজিএফ বিতরণ করা হয়েছে। যদিও তার চরাঞ্চলের অধিবাসী ২৫ হাজারের ওপরে।
চাঁদপুর জেলার ৩টি উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস প্রমত্তা মেঘনায় মাঝে জেগে ওঠা চরাঞ্চলে। চাঁদপুর সদরের রাজেরাজেশ্বর ইউপি ও ইব্রাহীমপুর ইউপি, হাইমচর উপজেলার হাইমচর সদর, নীলকমল ও গাজীপুর ইউপি, মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর, এখলাসপুর, জহিরাবাদ ও ফরাজিকান্দি ইউনিয়নের (অংশবিশেষ) বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলে ঈদী সিকিস্তি হত দরিদ্র পরিবারগুলোর বসবাস। এরা মূল ভ‚খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। বিদ্যুৎসহ নাগরিক ও আধুনিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অবহেলিত এ জনপদের মানুষ সরকারি বিভিন্ন সহায়তা থেকেও বঞ্চিত হন। শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, আইন-শৃঙ্খলা প্রভূতি ক্ষেত্রে চরাঞ্চলের অধিবাসীরা চরমভাবে বঞ্চিত।
উপজেলা সদর থেকে চরাঞ্চলের দ‚রত্ব কমপক্ষে ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার। দিনের নির্দিষ্ট সময় ট্রলারে তাদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। যাতায়াত সমস্যার কারণে এখানে কোন স্বাস্থ্যকর্মী এমনকি পরিবার পরিকল্পনাকর্মীকেও পাওয়া যায় না। বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার অভাব প্রকট। শিক্ষক স্বল্পতা, আসবাবপত্রের সংকটসহ বিভিন্ন কারণে যথাযথ পাঠদান হচ্ছে না। দুর্গম এলাকার কারণে উপজেলা সদরের শিক্ষকদের এখানে বদলি করা হলেও কেউ আসতে চান না। ফলে ১/২ জন শিক্ষক দিয়ে সারা বছর বিদ্যালয়ে নামমাত্র লেখাপড়া চলে।
চরাঞ্চলবাসীর জীবিকা নির্বাহ করতে হয় মেঘনার সাথে যুদ্ধ করে। তাদের প্রধান পেশা মাছ শিকার। সারা বছর চলে বেঁচে থাকার লড়াই। শুধু দুমুঠো ভাতের জন্য নয়, লড়াই করতে হয় বন্যা, ভাঙন আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে। অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে টিকে থাকলেও উৎসব আনন্দের স্বাদ পায় না এই সব মানুষ। একেতো ঈদী ভাঙনে নিঃস্ব, অন্যদিকে এ সময় নেই ঈদীতে মাছ। স্বজঈদের জন্য কিনতে পারছেনা নতুন পোশাক। চরের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে ঈদের আনন্দ থেকে। চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের অসহায়ত্বের সীমা যেন কখনোই শেষ হয় না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চরাঞ্চলে


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ