Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিকুনগুনিয়া

| প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চিকুনগুনিয়া হচ্ছে মশাবাহিত একটি রোগ । এক ধরণের ভাইরাস দিয়ে এই রোগ হয়। আমাদের অতি পরিচিত ডেঙ্গুর সঙ্গে এই অসুখের বেশ কিছুটা মিল রয়েছে। ডেঙ্গুর মতো এ ভাইরাসটিও এডিস ইজিপ্টাই এবং এডিস অ্যালবপিক্টাস মশার কামড়ের মাধ্যমেই ছড়ায়। চিকুনগুনিয়া ডেঙ্গুর মতই মানবদেহ থেকে মশা এবং মশা থেকে মানবদেহে ছড়িয়ে থাকে। চিকুনগুনিয়ার উৎপত্তি আফ্রিকা মহাদেশে । তবে সমপ্রতি এটি বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এটি নিয়ে আতঙ্ক বা উদ্বেগের তেমন কিছু নাই। এর কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেলে এবং সঠিকভাবে বিশ্রাম নিলে এ রোগ ভাল হয়ে যায় । এই রোগের সুপ্তিকাল ৩ থেকে ৭ দিন।
চিকুনগুনিয়ার লক্ষণগুলো অন্যান্য সকল ভাইরাস জ্বরের মতোই। জ্বরের সাথে হাড়ের জোড়ায় তীব্র ব্যথাই এই রোগের একমাত্র স্বতন্ত্র উপসর্গ। সাথে থাকে মাথাব্যথা, চোখ জ্বালাপোড়া, বমিভাব, বমি, শারীরিক দুর্বলতা, সর্দি-কাশি, র‌্যাশ ইত্যাদি । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে জ্বর সেরে যায়। তবে অস্থিসন্ধির ব্যথা মাসের পর মাস থাকতে পারে। । ব্যথার তীব্রতাও প্রচন্ড। ফলে রোগীর স্বাভাবিক হাঁটাচলা, হাত দিয়ে কিছু ধরা এমনকি হাত মুঠ করতেও বেশ কষ্ট হয়।
বর্তমানে চিকুনগুনিয়া রুগির সংখ্যা অনেক বেশী দেখা যাচ্ছে । সুতরাং লক্ষণ দেখে সন্দেহ হলে ল্যাবটেস্ট করা উচিত। অসুস্থতার প্রথম ৫ দিনের মধ্যে, পিসিআর টেস্ট করলে রোগ ধরা যায় । ভাইরাসের অ্যান্টিবডি দেখেও রোগ নির্ণয় করা যায় । তবে তার জন্য উপসর্গ সূচনা হওয়ার ৫ বা তার বেশি দিনের পরে সিরাম নমুনা সংগ্রহ করা উচিত। যদি প্রাথমিক ফলাফল নেতিবাচক হয় এবং ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া সন্দেহের সাথে থাকে, তবে অসুস্থতার পর সাত দিন বা তারও পরে আইজিএম অ্যান্টিবডি সনাক্ত করতে পুনঃপরীক্ষা করা যেতে পারে।
অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের মতো চিকুনগুনিয়া রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। এর চিকিৎসা মূলত রোগের উপসর্গগুলো কমানো । ধীরে ধীরে রোগটি ভাল হয়ে যায় । রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে এবং প্রচুর পানি এবং অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার খেতে দিতে হবে। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধই যথেষ্ট। রোগীকে আবার যেন মশা না কামড়ায় এ জন্য তাঁকে মশারির ভেতরে রাখা উচিত। কারণ আক্রান্ত রোগীকে মশা কামড় দিয়ে কোনো সুস্থ লোককে সেই মশা কামড়ালে ওই ব্যক্তিও এই রোগে আক্রান্ত হবেন। এ রোগ প্রতিরোধের কোনো টিকা বা ভ্যাক্সিন নেই। সুতরাং ব্যক্তিগত সচেতনতাই চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায়। মশার কামড় থেকে বেঁচে থাকাই চিকুনগুনিয়া থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায়। শরীরের বেশির ভাগ অংশ ঢাকা রাখা (ফুল হাতা শার্ট এবং ফুল প্যান্ট পরা), জানালায় নেট লাগানো, প্রয়োজন ছাড়া দরজা জানালা খোলা না রাখা, ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা এবং শরীরে মশা প্রতিরোধক ক্রিম ব্যবহার করার মাধ্যমে মশার কামড় থেকে বাঁচা যায়। মশার জন্মস্থান ধ্বংস করতে হবে। আবাসস্থল ও এর আশপাশে মশার প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট করতে হবে। বাসার আশপাশে ফেলে রাখা মাটির পাত্র, কলসী, বালতি, ড্রাম, ডাবের খোসা সহ যেসব জায়গায় পানি জমতে পারে, সেখানে এডিস মশা প্রজনন করতে পারে। এসব স্থানে যেন পানি জমতে না পারে সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং নিয়মিত বাড়ির আশপাশে পরিষ্কার রাখতেই হবে। তাহলেই কেবল চিকুনগুনিয়ার হাত থেকে বেঁচে থাকা যাবে।

-ডাঃ মোঃ ফজলুল কবির পাভেল



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চিকুনগুনিয়া

১৫ জুন, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন