বাড়িতেই ফাইনাল দেখবেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কাতারে
বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ দেখতে কাতারে যাচ্ছেন না আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ। তিনি জানান, আজ
দরজায় কড়া নাড়ছে আরও একটি বিশ্বকাপ। ২০টি সফল আয়োজনের পর ২১তম আসরটি হতে যাচ্ছে রাশিয়ায়। শুরুর আগেই এ আসর নিয়ে শোরগোল পড়ে গেছে ফুটবল পাড়ায়। সমর্থকদের ঘুম নেই নিজ নিজ দলকে নিয়ে। নানা খুঁটিনাটি তথ্য নিয়ে তর্কে জমিয়ে তুলছেন চায়ের আড্ডায়। তাই পাঠকদের জন্য ১৫টি মজার তথ্য তুলে ধরা হলো, যা হয়তো আপনি নাও জানতে পারেন-
* ভাবা যায়, স্টেডিয়ামে এক সময় পিস্তল নিয়ে খেলা দেখতে যেতো দর্শকরা। প্রথম বিশ্বকাপের ঘটনা এটা। সেবার দুই প্রতিবেশী দেশ আর্জেন্টিনা ও স্বাগতিক উরুগুয়ে ফাইনালে ওঠায় দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা ছিলো চরম পর্যায়ে। তাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেফারি সকল দর্শকদের তল্লাশি করতে বলেন। এতে ১৬০০ রিভলভার পাওয়া যায় তাদের কাছ থেকে।
* প্রথম বিশ্বকাপে ফিফার নিজস্ব কোন বল ছিলো না। দলগুলোর বল দিয়ে খেলা হতো। সেবার ফাইনালে বল নিয়ে দ্বন্দ্ব লেগে যায় দুই ফাইনালিস্ট উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনার মধ্যে। দুই দলই চায় নিজেদের বল নিয়ে খেলতে। শেষে সিদ্ধান্ত হয় প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার বল দিয়ে খেলা হবে আর দ্বিতীয়ার্ধে উরুগুয়ের। মজার ব্যাপার হলো, প্রথমার্ধে নিজেদের বল দিয়ে ২টি গোল দেয় আর্জেন্টিনা। আর দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের বল দিয়ে উরুগুয়ে দেয় ৪টি গোল। ফলে ৪-২ ব্যবধানে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে।
* দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ফিফার ইতালিয়ান ভাইস প্রেসিডেন্ট অত্তোরিনো বারসি বিশ্বকাপ ট্রফি নিজের বেডরুমের বিছানার নিচে লুকিয়ে রাখেন। তার ভয় ছিল নাৎসি বাহিনী ট্রফিটি চুরি করতে পারে!
* ১৯৭৪ সালে টিম জায়ার পশ্চিম জার্মানি ছাড়ার জন্য একটি বিএমডবিøউ টিম বাস চুরি করে। তবে খুব বেশি দূর যেতে পারেনি তারা। জার্মানি ছাড়ার আগেই তাদের পাকরাও করে পুলিশ।
* ১৯৯০ সালে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায় সংযুক্ত আরব আমিরাত। দলের খেলোয়াড়দের প্রতিজ্ঞা করা হয় যদি কেউ গোল করতে পারে, তাহলে তাকে দেওয়া হবে একটি রোল রয়েস গাড়ি। অনভিজ্ঞ দলটির ভালো করার সুযোগ ছিল খুবই কম। তবে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পরার আগে তারা ২টি গোল দিতে সমর্থ হয়। আর প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী শেখ মোহাম্মদের কাছ থেকে দুই গোলদাতা ইসমাইল মোবারক ও থানি জুমা একটি করে রোল রয়েস গাড়ি উপহার পান।
* ১৯৫০ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে কোন নক আউট ফাইনাল ছিল না। তার পরিবর্তে পরীক্ষামূলক ভাবে রাউন্ড রবিন লিগ ভিত্তিতে সর্বোচ্চ পয়েন্ট সংগ্রহকারী দলকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। আর তাতে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে। তেমনি ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ বিশ্বকাপে ছিলো না কোন গ্রুপ পর্ব।
* কোন মতে হার এড়াতে পারলেই চ্যাম্পিয়ন। আগের সব ম্যাচেই ব্রাজিল পায় বড় বড় জয়। তাই এ ম্যাচে নিয়ে বিশাল আগ্রহ ছিল ব্রাজিলিয়ানদের। ১৯৫০ বিশ্বকাপের ফাইনাল রাউন্ডের শেষ ম্যাচে উরুগুয়ে ও ব্রাজিলের লড়াই দেখতে রিও’র মারাকানা স্টেডিয়ামে দর্শক উপস্থিত হয়েছিল ১ লক্ষ ৯৯ হাজার ৯৮৪ জন। যা এখনও বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দর্শক উপস্থিতির রেকর্ড। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ম্যাচটি হারে ব্রাজিল। আর সে ম্যাচে হারের বেদনা সহ্য করতে না পেরে বেশ কিছু ব্রাজিলিয়ান ভক্ত মারাকানার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।
* বাছাই পর্ব থেকে বাকি দলগুলো নাম প্রত্যাহার করে নেওয়াই কোন ম্যাচ না খেলেই ১৯৫০ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়ে যায় ভারত। সে সময়ে খালি পায়ে খেলে অভ্যস্ত দলটি বিশ্বকাপেও খালি পায়ে খেলার দাবি করে। কিন্তু ফিফা সে অনুমতি দেয়নি। পরে বাধ্য নাম প্রত্যাহার করে নেয় ভারত।
* ব্রাজিলই একমাত্র দল যারা বিশ্বকাপের সবগুলো আসরে খেলেছে। আগের ২০ আসরে সর্বোচ্চ পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নও তারা। এছাড়াও বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ৭০টি জয়ের রেকর্ডও তাদের। তবে সফল এ দলটির বিশ্বকাপ সূচনাটা ভালো ছিলো না। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১৯৩০ বিশ্বকাপে যুগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলের ব্যবধানে হেরে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু দলটি।
* ১৯৯৪ বিশ্বকাপের হট ফেভারিট দল ছিল কলোম্বিয়া। কিন্তু গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২-১ গোলে হেরে যায় তারা। সেখানে একটি আত্মঘাতী গোল দেন আন্দ্রে এসকোবার। সেই আত্মঘাতী গোলের কারণে গ্যাংস্টাররা তাকে গুলি করে হত্যা করে।
* বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি সময় টানা চ্যাম্পিয়ন থাকার রেকর্ডটি ইতালির। ১৯৩৪ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর ১৯৩৮ সালেও বিশ্বকাপ জিতে নেয় তারা। এর পরের দুই আসর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে ১৯৩৪ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত টানা ১৬ বছর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ছিল তারা।
* বিশ্বকাপের ইতিহাসে ২০০২ সালেই দুটি ভিন্ন দেশে এ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান যৌথভাবে আয়োজন করেছিল সে আসর। এবার প্রথমবারের মতো একই সঙ্গে দুই মহাদেশে বিশ্বকাপ আয়োজিত হতে যাচ্ছে। কারণ রাশিয়া একই সঙ্গে ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশের মধ্যে পড়েছে।
* ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপে ম্যাচ শেষে জার্সি বদল নিষিদ্ধ ছিলো। খেলোয়াড়দের বুক উন্মুক্ত হয়ে যেতো বলেই এই অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ফিফা।
* প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচটি খেলেছিল স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ড। ১৮৭২ সালে। কিন্তু বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে স্কটল্যান্ডের সময় লাগে ৮২ বছর। ১৯৫৪ সালে সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপে সুযোগ পায় তারা। আর ইংল্যান্ডের সুযোগ পেতে সময় লাগে ৭৮ বছর। ১৯৫০ বিশ্বকাপে প্রথমবার অংশ নেয় দলটি। প্রথম ম্যাচেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ০-১ গোলে হারে তারা। যদিও ইংলিশ মিডিয়া এটা মানতে নারাজ। তাদের দাবি ইংল্যান্ড আসলে ম্যাচটি জিতেছিল ১০-১ গোলে। ভুলবশত ছাপা হয় ০-১!
* ফাইনালে ৩ গোলের ব্যবধানই সর্বোচ্চ জয়। আর এই তিনবারের সঙ্গেই যুক্ত ব্রাজিল। ১৯৫৮ সালে ফাইনালে সুইডেনকে ৫-২ গোলে হারায় তারা। আর ১৯৭০ সালে ইতালিকে ৪-১ গোলে হারায় দলটি। বড় ব্যবধানে দুইবার জিতলেও একবার হারও দেখে তারা। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের কাছে ৩-০ গোলে হারে দলটি।
তথ্য কণিকা
ফুটবল বিশ্বের জনপ্রিয় খেলার একটি। ৯০ মিনিটের এই খেলায় খেলোয়াড় এবং দর্শকদের মধ্যে বেশ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আর খেলা মানেই রেকর্ড ভাঙ্গার প্রতিযোগিতা। একজন খেলোয়াড়ের রেকর্ড আরেক খেলোয়াড় ভেঙ্গে দিয়ে নতুন
আসুন রেকর্ড গড়বে, সৃষ্টি
করবে নতুন এক ইতিহাস।
জেনে নিই ফুটবল
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ
রেকর্ড
সম্বন্ধে-
১। বিশ্বকাপ আসরে সর্বাধিক (৫ বার) অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড় এন্তনিয়ো কারবাজাল (মেক্সিকো), লোথার ম্যাথুস (জার্মানি), জিয়ানলুইজি বুফন (ইতালি)।
২। সর্বোচ্চ (২৯টি) ম্যাচ খেলেছেন মিরোস্লাভ ক্লোসা (জার্মানি)।
৩। ১৬ টি গোল করে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা মিরোস্লাভ ক্লোসা (জার্মানি)।
৪। সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ জয়ী দেশ হিসেবে শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল (৫ বার)।
৫। টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশিবার অংশগ্রহনকারী দল ব্রাজিল (২০ বার)।
৬। দল হিসেবে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছে জার্মানি (১০৬ টি)।
৭। দল হিসেবে সর্বোচ্চ কার্ড পেয়েছে আর্জেন্টিনা (১২০ টি)।
৮। মাত্র ১৫ বছর ৪ মাস ৪ দিন বয়সে বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন জস ভ্যান ইনজেলজেম (বেলজিয়াম)।
৯। সর্বজ্যেষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন ফারীদ মন্দ্রাগন (কলম্বিয়া), যার বয়স ছিল ৪৩ বছর ১৩ দিন।
১০। এক ম্যাচে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫ টি গোল করেছেন অলেগ সালেঙ্কো (রাশিয়া)।
১১। সর্বোচ্চ ৬ টি কার্ড পেয়েছেন জিনেদিন জিদান (ফ্রান্স), রাফায়েল মারকুয়েজ (মেক্সিকো), কাফু (ব্রাজিল)।
১২। ১৯৩০ সালে সর্বপ্রথম শীর্ষ গোলদাতার জন্য ‘গোল্ডেন বুট পুরস্কার’ প্রদান করা হয়।
১৩। ১৯৯৪ সাল থেকে শ্রেষ্ঠ গোলরক্ষকের জন্যে ‘গোল্ডেন গেøাবস পুরস্কার’ প্রদান করা হয়।
১৪। দ্রæততম হ্যাটট্রিক করেছেন হাঙ্গেরীর লাসলো কিস (৬৯’, ৭২’, ৭৬’)।
১৫। ৩ বার বিশ্বকাপ জয়ী খেলোয়াড় হিসেবে শীর্ষে রয়েছেন পেলে (ব্রাজিল)।
১৬। সর্বোচ্চ ৩ টি ফাইনাল খেলেছেন কাফু (ব্রাজিল)।
১৭। বিশ্বকাপ ফাইনালে ভিন্ন দুই দেশের হয়ে খেলেছেন লুইস মন্টি; ১৯৩০ (আর্জেন্টিনা) এবং ১৯৩৪ (ইতালি)।
১৮। খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে সর্বপ্রথম বিশ্বকাপ জয়ী মারিয়ো জরগে লোবো জাগাল্লো (ব্রাজিল)।
১৯। সর্বপ্রথম লাল কার্ড পেয়েছেন প্লাসিদো গালিন্দো (পেরু)।
২০। ‘ব্যাটল অফ নুরেমবার্গ’ নামে পরিচিত নেদারল্যান্ড বনাম পর্তুগাল(২০০৬)-এর খেলায় এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ১৬ টি হলুদ কার্ড এবং ৪ টি লাল কার্ড দেখানো হয়েছে।
২১। দ্বিতীয়বারের মত কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ী করেছেন ইটালির ভিক্টোরিয়ো পোজ্জো (১৯৩৪, ১৯৩৮)।
২২। সর্বকনিষ্ঠ ক্যাপ্টেন হিসেবে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছেন আমেরিকার টনি মেউলা (২১ বছর ৩ মাস ২০ দিন)।
২৩। ভিন্ন দুই দেশের হয়ে বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে ৩ টি গোল করেছেন রবার্ট প্রসিনেকি; যুগোস্লোভিয়া (১৯৯০), ক্রোয়েশিয়া (১৯৯৮, ২০০২)।
২৪। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৬টি আতœঘাতি গোল হয়েছে।
২৫। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২৭ টি গোল করেছে হাঙ্গেরী (১৯৫৪)।
২৬। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে দর্শকের উপস্থিতি সংখ্যা ছিল ৩৫,৮৭,৫৩৮ জন এবং প্রতি খেলায় ৬৮ হাজার ৯৯১ জন উপস্থিত ছিলেন।
২৭। এক ম্যাচে উপস্থিতি দর্শকের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১,৭৩,৮৫০ জন (১৯৫০, মারাকানা স্টেডিয়াম) এবং সর্বনিম্ন ২০০০ জন (১৯৩০, এস্টাদিও সেন্টেনারিও)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।