Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অজ্ঞান পার্টি দমনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

আর কে চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রাজধানীতে ঈদকে সামনে রেখে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বেড়েছে। বাস-লঞ্চ-ট্রেন টার্মিনালসহ জনাকীর্ণ স্থানে হকার সেজে ইফতারের আগে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করছে তারা। আর এসব খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে চেতনানাশক ওষুধ। ফলে এগুলো ক্রয় করে কেউ খেলেই মাশুল দিতে হচ্ছে। জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ ৪০টি পয়েন্টে অজ্ঞান পার্টির শতাধিক গ্রæপ সক্রিয়। সহজ-সরল মানুষকে লক্ষ্য করে তারা ফেরিওয়ালা সেজে জুস, ডাবের পানি, খেজুর, ঝালমুড়ি, শরবতসহ নানা উপকরণ বিক্রি করছে। আর প্রতারিত মানুষ সর্বস্ব হারানোর পাশাপাশি জীবন হারানোর মতো ঝুঁকিতে পড়ছে। প্রতিদিন গড়ে ১০ জন মানুষ অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। সহজ সরল মানুষ শুধু নয়, বুদ্ধিবৃত্তি কাজের সঙ্গে জড়িত মেধাবীরাও অজ্ঞান পার্টির শিকার হয়ে সর্বস্ব হারানোর পাশাপাশি নিজের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে এমন নজির ভূরিভূরি। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে অপরিচিত কারও দেওয়া খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পাশাপাশি অভিযান চালিয়ে তারা অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের গ্রেফতার করছে। প্রতি বছর ঈদুল ফেতরের আগে ও ঈদুল আজহার সময় অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অভিযোগ রয়েছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা গ্রেফতার হলেও তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে ফাঁকফোকড় থাকায় আদালত থেকে অতি সহজে ছাড়া পায়। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এ ধরনের অপরাধী যাতে সহজে ছাড়া না পায় তা নিশ্চিত করতে আইনের ফাঁকফোকড় বন্ধ করা দরকার। আমাদের বিশ্বাস সরকার এ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেবে। মানুষবেশী শকুন অজ্ঞান পার্টির উৎখাতকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হবে এমনটিও কাম্য।
সাধারণ মানুষের ছদ্মবেশে শুধু রাজধানীতেই ছড়িয়ে রয়েছে অজ্ঞান ও মলম পার্টির কয়েক শ’ সদস্য। যারা বিভিন্নভাবে মানুষকে হয়রানির মুখে ফেলে, অজ্ঞান করে হাতিয়ে নেয় সর্বস্ব। আর সর্বস্বান্ত হয়ে অনেকের কাছেই উৎসব পর্যবসিত হয় এক ভয়ঙ্কর বিভীষিকায়। বেশ কয়েক বছর ধরেই অজ্ঞান ও মলম পার্টি বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে আরো বেশি তৎপর হয়ে উঠছে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। যখন সারা বছরের পরিশ্রমের টাকা জমিয়ে বিভিন্ন পেশার মানুষ ঈদ বা যে কোনো বড় ধরনের উৎসবকে সামনে রেখে পরিবার-পরিজন নিয়ে একসঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়িমুখী হয়, তখনই এদের খপ্পরে পড়ে শেষ হয় যায় সব স্বপ্ন আর উৎসবের আনন্দ।
ভাবতে অবাক লাগে, এই পার্টির সদস্যরা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ফুটপাতের গেঞ্জিওয়ালা, টোকাইসহ নানা ধরনের মানুষ। যারা অধিক টাকা উপার্জনের জন্য যোগ দেয় অজ্ঞান পার্টিতে। সংঘবদ্ধভাবে তারা যাত্রীবাহী বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল, রেলস্টেশন এবং মার্কেটগুলোর সামনে অবস্থান নেয়। কখনো ক্রেতার বেশে, কখনো যাত্রীবেশে। আর অজ্ঞান করার জন্য ওষুধের দোকান থেকে অনায়াসে পাওয়া যায় নেশাজাতীয় বিভিন্ন ধরনের ওষুধ। বিভিন্ন সময়ের প্রাপ্ত খবরগুলোয় দেখা যায়, হকার সেজে কবিরাজি ওষুধ, বিস্কুট এবং ইফতারির অন্যতম উপকরণ খেজুরের সঙ্গে মিশিয়ে খাইয়ে দেয় নিরীহ মানুষকে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, এবারের ঈদকে সামনে রেখেও অজ্ঞান পার্টি নতুন উদ্যমে মরিয়া হয়ে উঠেছে এই অপকর্মে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র মতে, এবারো ঢাকা-চট্টগ্রামসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ছড়িয়ে পড়েছে অজ্ঞান ও মলম পার্টির বিপুলসংখ্যক সদস্য। এটা সত্য যে এই চক্রের সদস্যরা প্রায় সারা বছরই অপকর্মের সঙ্গে লিপ্ত থাকে। কিন্তু তারা বেশি তৎপর হয় পহেলা বৈশাখ, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা ও দুর্গাপূজাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবের সময়। কেননা মানুষ এই সময়ে যাতায়াত করে টাকা-পয়সা নিয়ে, আর এ সুযোগকেই কাজে লাগায় তারা। ঈদের এই সময়ে রাজধানীতে কয়েক শ অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্য শুধু রাজধানীতেই সক্রিয় রয়েছে।
আমরা মনে করি, উৎসবসহ যে কোনো স্থানে যাতায়াতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। আর এত কষ্ট করে তিল তিল করে জমানো টাকা-পয়সা নিয়ে কেউ যখন গন্তব্যে যাওয়ার পথে এ ধরনের দলগুলোর খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে ফেলে, তার দায় কোনোভাবেই সরকার এড়াতে পারে না। আর এসব ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের অবস্থা এবং মানবিক দিকগুলোর দিকে দৃষ্টি রেখে সরকারকে আরো বেশি কঠোর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলেই বিবেচনা করি। একটি শ্রেণির অপকর্মের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষের স্বপ্ন আর পরিশ্রমের অর্থ এভাবে শেষ হয়ে যাবে, ধূলিসাৎ হবে উৎসবের আনন্দ এর চেয়ে বেদনার আর কী হতে পারে!
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন