পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : ঈদকে সামনে রেখে তৎপর অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টিসহ বিভিন্ন প্রতারকচক্র। পথে বা যানবাহনে চলতে-ফিরতে ইসপগুলের ভুষিমিশ্রিত পানীয়, আখের রস, যৌন উত্তেজক, ডায়াবেটিস অথবা গ্যাস্ট্রিক ‘নিরাময়ক’ হালুয়া খাইয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতে তারা। এদের খপ্পড়ে পড়ে টাকা-পয়সা খুইয়ে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। প্রায়ই ঘটছে জীবনহানির ঘটনা। শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে কেউ কেউ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলছেন। গত তিন মাসে রাজধানীতে অন্তত ৩৫ জন অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়ে টাকা-পয়সা খুইয়ে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যুও হয়। অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টির সাথে থুথু পার্টি, ধাক্কা পার্টি ও টানা পার্টি চক্রও আছে। মতিঝিল, পল্টন, সায়েদাবাদ, মহাখালী, গাবতলী, গুলিস্তান, ফার্মগেট, মালিবাগ ও মগবাজারসহ রাজধানীর প্রায় ৩০টি স্পটে বেপরোয়া এরা। গত বুধবার রাতে ডিএমপির বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা বিভাগ রাজধানীর পৃথক স্থানে একাধিক অভিযান চালিয়ে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ২১ জনকে আটক করেছে।
রাজধানীর বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল, কমলাপুর রেল স্টেশনসহ ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টির সাথে সক্রিয় হয়ে ওঠে টানা পার্টি, থুথু পার্টি, ধাক্কা পার্টিসহ প্রতারকচক্র। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সংঘবদ্ধচক্র সক্রিয় হয়ে ওঠায় একদিনে একাধিক ঘটনা ঘটছে। সাধারণ মানুষ কিছু বুঝে ওঠার আগেই এদের খপ্পড়ে পড়ছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, রাজধানীতে গত বছর ও তার আগের বছর অজ্ঞান ও মলম পার্টির দৌরাত্ম্য বেশি ছিল। এবারও তারা দৌরাত্ম্যের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এবার আমরা ঈদের আগেই অভিযান শুরু করেছি।
ভুক্তভোগীদের মতে, ঈদকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে অজ্ঞান পার্টিসহ প্রতারকচক্রের তৎপরতা আশংকাজনক হারে বেড়েছে। ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে প্রতিদিনই এ ঘটনা ঘটছে। পুলিশের তালিকাভুক্তরাই মাঠে নেমে মানুষের টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার লুট করে নিচ্ছে। অনুসন্ধানেও মিলেছে এর প্রমাণ। জানা গেছে, রাজধানীর সায়েদাবাদসহ যাত্রাবাড়ী এলাকা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তৎপর হয়ে উঠেছে সিদ্ধিরগঞ্জের রহিম, নাসির, আব্বাস, আক্তার, জালকুঁড়ি এলাকার লতিফ, সানারপাড়ের কালা সিরাজ, মকবুল, মনির, জহির, বাদশা, সোহরাব, কেরানীগঞ্জের হোসেন, সেলিম, আনোয়ার, হাসনাবাদের কালা শাজাহানসহ অনেকেই। এরা ছাড়াও নগরীতে সক্রিয় রয়েছে যাত্রাবাড়ী রায়েরবাগের হাসমত, শামীম, সিদ্দিক, শনিরআখড়ার করিম, কবির, মাসুম, কাজলার বেলাল, নাসির, আমজাদ, কাশেম, ধলপুর সিটি পল্লীর কাসেম, জসীম ওরফে নুরা পাগলা, রামপুরার এমদাদ, শ্যামপুরের ইব্রাহীম, ইউসুফ, দনিয়ার স্বপন, আবুল, ছোট আক্তার, মাতুয়াইলের মান্নান খালাসী, মীরহাজিরবাগের স্বপন, সবুজ, সুমন, ইমরান, নাসির, শাহীন, রাসেল, যাত্রাবাড়ীর এনায়েত, মান্নান, সবুজ, খালেক, সুমন, আল আমীন, কট বাবু, ফর্সা মনির, দোলাইপাড়ের দুলাল, রহিম, লিটন, টেম্পু শাহীন, সায়েদাবাদের কিরণ, জুরাইনের কালাম, আলম, আসাদ, সাগর, মাইনুসহ আরো অনেকে। এদের বিচরণ সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, গুলিস্তান, মতিঝিল, ফার্মগেট, মহাখালী এলাকাসহ পুরো নগরীতেই। নগরীর অভিজাত এলাকা উত্তরায় সক্রিয় রয়েছে কালিয়াকৈরের আক্কাছ মোল্লা গ্রুপ। এদের বেশিরভাগই পুলিশের তালিকাভূক্ত। কেউ কেউ একাধিকবার গ্রেফতারও হয়েছে। গত বুধবার রাতে রাজধানীর পৃথক স্থানে একাধিক অভিযান চালিয়ে পুলিশ ২১ জনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলোÑ আবুল হোসেন, মনসুর আলী, শহীদ, শাহজাহান, আবুল হোসেন-২, মনিরুল ইসলাম, রাজু, আবু সাঈদ, নুরুজ্জামান, জাকির হোসেন, আব্দুর রহমান, নূর ইসলাম, সন্তোষ কুমার দে, জুয়েল, আল মামুন, হোসাইন মো: সুমন ও জুম্মন। এসময় তাদের কাছ থেকে ২৮ পুরিয়া হালুয়া, হলুদ রঙের বক্সে জিরো ক্যালরি লেখা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতারকচক্র নিরীহ মানুষজনকে টার্গেট করে থাকে। বিশেষ করে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও উত্তরাঞ্চল থেকে আসা গরিব ও সহজ-সরল যাত্রীরাই প্রতারকচক্রের খপ্পড়ে পড়ে বেশি। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অজ্ঞান পার্টি। দূরপাল্লার যাত্রীদের খাবারে কৌশলে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয় এ চক্র। কিছুক্ষণের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়া যাত্রীকে হাসাপাতালে নেয়ার নাম করে সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে সটকে পড়ে। গাবতলী-আরিচা রুট, মহাখালী-টাঙ্গাইল ও সায়দাবাদ-কুমিল্লা রুটে এই চক্রের তৎপরতা মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েছে। প্রতিটি টার্মিনালে ১৫-১৬ জনের সংঘবদ্ধচক্র এ অপকর্ম করে চলেছে। অভিযোগ রয়েছে, একশ্রেণীর পরিবহন শ্রমিকের সাথে প্রতারকচক্রের যোগসাজশ রয়েছে। কতিপয় দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যও টাকার বিনিময়ে তাদেরকে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে থাকে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বাসের যাত্রী সেজে অথবা বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে মানুষকে আকৃষ্ট করে অজ্ঞান করার ওষুধ মিশ্রিত খাবার খাওয়ায়। একইভাবে রাস্তায় খাবারের পসরা বসিয়ে (আখের রস, ডাব ও হালুয়া, ইসপগুল) এবং সিএনজি অটোরিকশাতে যাত্রীবেশে অন্য যাত্রীকে উঠিয়ে পান ও জুস খাওয়ায়। তিনি বলেন, অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যরা এমনভাবে মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে কথা বলেন যে, অধিকাংশরাই চিনতে না পেরে তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে খাবার খান, কেউ জুস কিংবা ডাবের পানি খান। কেউবা ইসপগুল ও হালুয়া খেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এই সুযোগে প্রতারকচক্র সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়। মনিরুল ইসলাম বলেন, চলতি রমজান ও এবারের ঈদে অজ্ঞান পার্টি যাতে দৌরাত্ম্য দেখাতে না পারে সেজন্য সক্রিয় নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি বিশেষ অভিযানও চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।