Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণ চীন সাগরে ক্রসফায়ারে পড়েছে ভারত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দক্ষিণ চীন সাগরে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর সিদ্ধান্ত এই টালমাটাল জলসীমাকে আরও উত্তাল করে দিয়েছে। মাঝখানে ক্রসফায়ারে পড়েছে ভারত। তাকে সেখানে বেশ কিছু মহড়ায় অংশ নিতে হয়েছে সতর্কতার সাথে যাতে সেখানে চীন অসন্তুষ্ট না হয় আবার যুক্তরাষ্ট্রও অখুশি না হয়। প্রশান্ত এলাকায় এ মাসে পর পর দুটো সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে ভারত, যেখানে চীন ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বাণিজ্য ও জ্বালানি স্বার্থ এবং স¤প্রতি চীনের সাথে সম্পর্কের উন্নতির বিষয়গুলো মাথায় রেখেই সতর্ক হয়ে নয়াদিল্লীকে এখানে অংশ নিতে হয়েছে।
গুয়াম উপকূলে ৭ জুন থেকে যুক্তরাষ্ট্র আর জাপানের সাথে অপারেশান মালাবারে অংশ নিচ্ছে ভারত। ভারত সেখানে তাদের বহুমুখী স্টেলথ ফ্রিগেট আইএনএস সাহইয়ার্দি, সাবমেরিন-বিধ্বংসী কর্ভেট আইএনএস কামোর্তা, ফ্লিট ট্যাঙ্কার আইএনএস শক্তি এবং পি৮১, দূর পাল্লার একটি নৌ টহল বিমান পাঠায়। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে এই প্রথমবারের মতো মার্কিন জলসীমায় এই মহড়া অনুষ্ঠিত হলো। কিন্তু চীনের স্পর্শকাতর মনোভাবের কথা চিন্তা করে এর আগে মহড়ায় অংশ নেয়ার জন্য অস্ট্রলিয়ার দেয়া প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। ২৭-২৮ এপ্রিল উহানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে যে অনানুষ্ঠানিক সম্মেলন হয়, সে সম্মেলনের মেজাজ ঠিক রাখতেই অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দেয় ভারত। গুয়াম থেকে আইএনএস সাহইয়ার্দি আরও পূর্বে যাবে। ২৮ জুন থেকে ৪ আগস্ট সেখানে হাওয়াই উপকূলে রিম অব দ্য প্যাসিফিক এক্সারসাইজে অংশ নেবে। ২৬টি দেশের অংশগ্রহণে এই মহড়াটি হতে চলেছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া। চলতি মাসের শুরুর দিকে, দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত জলসীমায় দ্বীপে সামরিকায়নের জন্য অসন্তুষ্টির বহিপ্রকাশ হিসেবে চীনকে এই মহড়া থেকে বাদ দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
পহেলা জুনে সাংগ্রি-লা সংলাপেও ভারতকে একই রকম সতর্কতার সাথে কথা বলতে দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি সেখানে প্রথম কোন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উদ্বোধনী ভাষণ দেন। তার বক্তৃতায় মোদি নৌ চলাচলের স্বাধীনতা এবং আইন-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক রীতি নীতির প্রতি দায়বদ্ধ থাকার কথা বলেন। একই সাথে তিনি বড় শক্তিগুলোর প্রতিদ্ব›িদ্বতা ফিরে আসার বিষয়ে সতর্ক করেন তিনি। মার্কিন সংরক্ষণবাদী আচরণের সমালোচনা করে তিনি শি-এর সাথে বৈঠকে একত্রে কাজের উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, “আমাদের দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল সম্পর্ক বৈশ্বিক শান্তি ও অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের স্বার্থের ব্যাপারে স্পর্শকাতর ভারত ও চীন যখন আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে এক সাথে কাজ করবে, তখন এশিয়াসহ সারা বিশ্ব একটা সুন্দর ভবিষ্যতের আশা করতে পারে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে, ইন্দোনেশিয়ায় যৌথভাবে ভারতের বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনার ব্যপারে কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় চীন। সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে মোদি ইন্দোনেশিয়া যান এবং সেখানে প্রতিরক্ষা ও নৌ চুক্তিসহ বেশ কিছু চুক্তি করেন। সুমাত্রা দ্বীপের মুখে সাবাং বন্দরে ভারতের যুদ্ধজাহাজের সম্ভাব্য উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে বেইজিংয়ের। সেক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মালাক্কা প্রণালীর পূর্বদিকে প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে ভারত। পৃথিবীর ব্যস্ততম জাহাজ চলাচলকারী চ্যানেলগুলোর মধ্যে মালাক্কা অন্যতম। একই সাথে দক্ষিণ চীন সাগরে প্রবেশেরও গুরুত্বপূর্ণ পথ এটা। সাংগ্রি লা সংলাপের একদিন আগে, মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জিম ম্যাটিস আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন প্যাসিফিক কমান্ডের নাম পরিবর্তন করে ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড করার ঘোষণা দেন। অনেকেই এটাকে প্রতীকী অর্থে এবং এই অঞ্চলে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে দেখছে। অন্যরা এটাকে দেখছে চীনের সামরিক এবং অর্থনৈতিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে। সূত্র : এসএএম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দক্ষিণ চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ