পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশ বহুদূর এগিয়েছে। ভারত বিভক্তির সময় একবার স্বাধীনতা ও নতুন নাম পেয়েছিল। বৈষম্য ও জুলুমের ফলে মাত্র ২৪ বছরে আবার স্বাধীনতা ও নতুন নাম পেয়েছে। জনগণের রায় ও মনোভাব পদদলিত করায় বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়। ওপরে উল্লেখিত অন্যায় জুলুম এর পাশাপাশি দুর্নীতি, লুটপাট, দুঃশাসন ও অবিচার গত ৪৭ বছর ধরে কমবেশি চলছেই। মানুষ ভোটাধিকার হারিয়ে ফেলেছে। মানবাধিকার খুব দুর্বল। স্বাধীনতা এখন সংশয়সঙ্কুল। এসময় মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের কর্তা ব্যক্তিরা কাজে লাগাতে পারেন। নেতারা আদর্শ চরিত্র অর্জন করে অপার উচ্চতায় উঠতে পারেন। গত ৯ মে মালয়েশিয়ার বহু আলোচিত জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেল। ঘটনাক্রমে সেদিন আমি মালয়েশিয়া ছিলাম। ৪টি দেশ ভ্রমণের কর্মসূচি আগে থেকে তৈরি ছিল। কিন্তু সময়াভাবে দু-দেশে যাওয়া হয়নি। কুয়ালালামপুরেই তিন দিন থাকা হয়। এর মধ্যে নানা কর্মসূচির মাঝে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল ‘মুলতাক্বা ওলামায়ে দেওবন্দ’ শীর্ষক বিশ্ব ওলামা-মাশায়েখ ইজতেমা। উদ্যোক্তারা বলেছেন, সারা বিশ্ব থেকে পাঁচ শ আলেম এতে অংশগ্রহণ করেছেন। স্থানীয় ও আশপাশের মিলিয়ে মোট উপস্থিতি ছিল নয় শ। দারুল উলূম দেওবন্দের ১৮ জন আসাতেযা ছাড়াও ভারতীয় ওলামা, পীর-মাশায়েখ ছিলেন দেড় শতাধিক। ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, দুবাই, হংকং, সৌদি আরব, জার্মানি, ফ্রান্স, জাম্বিয়া, বৃটেনসহ বহুদেশের প্রতিনিধি ছিলেন। বাংলাদেশেরও বহু আলেম এতে অংশ নেন। নির্বাচনের দিনটি সম্মেলন কর্তৃপক্ষ এমনভাবে সাজান যেন কোনো ডেলিগেটকে সম্মেলনস্থলের বাইরে যেতে না হয়। আমি বরাবরই মালয়েশিয়ার দিকে একটু বেশি মনোযোগী। কারণ, এটি বিশাল এক মুসলিম রাষ্ট্র। যা আধুনিকতার শীর্ষে অবস্থান করেও যথাসম্ভব দীনদারি ধরে রেখেছে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও সংস্কৃতিতে ইসলামের গুরুত্ব ও ছাপ ঈর্ষণীয়। হাজার বছরের সুলতান শাসিত শরীয়তী দেশ মালয়েশিয়া নিজের পরিচয় ঠিক রেখেই উন্নতি ও আধুনিকতার শীর্ষ স্পর্শ করেছে। দেশটিকে আমার ভালোবাসার এটি বড় কারণ। দেশটির ৬০% মালয় জাতি, যার অধিকাংশই মুসলমান। সাধারণত তারা শাফেঈ মাযহাব অনুসারী। তবে উদারমনা। দীনি চেতনা তারা পেয়েছে তাবলীগ জামাত থেকে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সাথে তাদের তাবলীগি ওঠা-বসা বেশি। মালয়েশিয়াকে উন্নত ও আধুনিক করার পেছনে বাংলাদেশি মেধা ও শ্রমের ভূমিকা অনেক। এটা তারা মনে রাখে এবং বলেও। বহুবার সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া ভ্রমণের সময় বিশেষ করে এবার ঐতিহাসিক মালাকা প্রণালী ঘুরে দেখার সময় মালয়দের সাথে আমার দোভাষীর মাধ্যমে এসব নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। এবার সাহাবায়ে কেরামের স্মৃতিবিজড়িত মালাকা প্রণালী দেখতে গিয়ে সেখানে তাবলীগি এক জামাতের সাথে কথাবার্তা হয়। (আরব থেকে যারাই জাভা, সুমাত্রা ও চীনে গিয়েছেন তারা এই প্রণালী হয়েই গিয়েছেন। সেখানে এখনো ফলকে লেখা আছে, ‘মাদীক মালাক, আতওয়ালু মাদীক ওয়া আকছারুহু ইযদিহামান ফিল আলাম’ অর্থাৎ সমুদ্রপথে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ ও অধিক জাহাজে পূর্ণ প্রণালী। ইতিহাসে চীনগামী সাহাবীদল এই প্রণালী হয়ে গিয়েছিলেন এবং মালয়েশিয়ায় তারা যাত্রাবিরতি করেছিলেন বলে বর্ণনায় পাওয়া যায়। তাদের স্মৃতিবিজড়িত জায়গাটিতে মালয়েশিয়ার সুলতানরা বহু বছর আগে থেকেই মসজিদ নির্মাণ করে রেখেছেন। বর্তমানে এ স্থানের মসজিদটি বিশ্বের অন্যতম দর্শনীয় মসজিদ। যার এক-চতুর্থাংশই সমুদ্রে। সৈকতে গড়ে উঠছে বিশাল মালাকা শহর। শত শত আধুনিক হোটেল ও রিসোর্ট। বড় একটি পার্ক। পার্কের ভেতর একটি ফলকে সুলতানী আমলে লেখা হয়েছিল, ‘তোমরা ব্যাভিচারের কাছেও যেওনা, কারণ নিঃসন্দেহে ইহা চরম অশ্লিলতা ও মন্দ পন্থা।’- আল কোরআন। আয়াতটি আরবীতে লিখে সাথে মালয় ও ইংরেজী ভাষায় তরজমা করে দেওয়া হয়েছে।) বাংলাদেশিদের প্রতি তাদের মহব্বত অনেক গাঢ়। দেশের কিছু লোক ভারতীয় তামিল আর কিছু চায়নিজ। সব মিলিয়ে মালয়েশিয়া মুসলমানদের একটি গৌরবের দেশ। কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত এ দেশ মূলত অতীতে শত শত বছর ইসলামী শরীয়া মোতাবেক সুলতানী শাসনের আওতায় চলেছে। বর্তমানে সুলতানরা আছেন। পাঁচ বছর পর পর প্রাদেশিক সুলতানরা রাজধানীর কেন্দ্রীয় সুলতান হন। সংসদ তাদের সম্মান দিয়ে দেশ চালায়। সমাজ ও সংস্কৃতিতে ইসলামের প্রাধান্য সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। বিশেষ করে নামায খুবই ব্যাপকভাবে পরিপালিত এবং বিশুদ্ধ কোরআন তিলাওয়াত বলা চলে ঘরে ঘরে প্রচলিত। মালয় মুসলমানরা পর্দা ও দীনি চেতনায় খুবই অগ্রগামী। সারা দেশে সকল পর্যায়ে ইমাম, আলেম ও ধর্মীয় শিক্ষকের মর্যাদা আমাদের দেশের ভিআইপিদের মতো। এয়ারপোর্ট থেকে গোটা রাজধানী ও বিভিন্ন প্রদেশে ঘোরাফেরার সময় বহুবার পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে একজন আলেম হিসাবে যে সমীহ ও শ্রদ্ধা আমি লাভ করেছি তা দুনিয়াতে নজিরবিহীন। সুতরাং মালয়েশিয়ার জন্য দুআ ও শুভকামনা শুধু আমার নয়, সে দেশের সম্পর্কে যারা জানেন, বিশেষ করে মালয়েশিয়া ভ্রমণকারী ওলামা-মাশায়েখ সবার মনেই থাকার কথা।
ইসলাহী ও তালীমি সফর হলেও এবং এ বছর পীর ফক্বীর যুলফিক্বার আহমদ নকশবন্দী মুজাদ্দেদী সাহেব আমাকে এজাযত প্রদান করলেও, পরে বহুবার তালকীন, তাওয়াজ্জুহ, নিসবত প্রদান ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলতে থাকলেও আমি মালয়েশিয়ার নির্বাচনের কথা ভুলতে পারিনি। আসরের পর বের হয়েছি সে দেশের ভোটাভুটি দেখতে। আমাকে যে প্রবাসী বাংলাদেশি গাড়িতে করে একটি বিরাট অঞ্চল ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন তিনি ও তার সাথে যাওয়া বাংলাদেশি ছাত্র আমাকে তাদের যে অভিজ্ঞতার কথা বললেন এর বাইরেও আমি আমার সংবাদ-সংশ্লিষ্ট প্রায় তিন যুগের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে বুঝতে পারলাম যে মালয়েশিয়া সত্যিকার অর্থেই একটি ভালো নেতৃত্ব লাভ করেছে। যে সৌভাগ্য অনেক আরব দেশসহ দুনিয়ার অন্যান্য মুসলিম দেশের সম্প্রতি হয়নি। ন্যায়বিচার ও ইনসাফভিত্তিক সমাজব্যবস্থা চালু আছে বলেই প্রচুর টাকা খরচ ও একটি ইসলামী দলকে ডামি হিসাবে দাঁড় করিয়েও ক্ষমতাসীন দল হেরেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক অনেক উন্নয়ন করা সত্তেও ফেল করেছেন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী তুং আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। জনপ্রিয় শাসকদলের নেতা। মালয়েশিয়ার আধুনিক রূপকার, বলতে গেলে স্থপতি মাহাথির মোহাম্মদ তাকে নিজ হাতে গড়ে তুলে ক্ষমতায় বসিয়ে গিয়েছিলেন। মাহাথির নিজের দলের প্রভাবশালী নেতা, তার উপপ্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইবরাহীমকে যেকোনো কারণে দূরে সরিয়ে রেখে, এমনকি নিজের পুত্র যিনি রাজনীতিবিদ মন্ত্রী ও এমপি তাকেও ক্ষমতায় না বসিয়ে নাজিব রাজাককে বসিয়ে ছিলেন। নিজে ২২ বছর দেশের নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিয়েও স্বেচ্ছায় অবসরে চলে গিয়েছিলেন। এরপর যখন তিনি দেখলেন মালয়েশিয়া নিখুঁত নিয়মে চলছে না। দেশকে শাসক পরিবারের দুর্নীতি গ্রাস করে ফেলছে। ঋণে দেশ জর্জরিত হয়ে যাচ্ছে। ব্যয়ের বোঝা জিএসটির নামে জনগণের কাঁধে নির্দ্বিধায় চাপানো হচ্ছে। তখন তিনি ৯২ বছর বয়সে আবার জনসেবার জন্য রাজনীতি করতে ইচ্ছা করলেন। নাজিব রাজাক তার দলের লাইসেন্স বাতিল করে দেয়। তখন তিনি অন্য দলের সাথে এলায়েন্স করে নির্বাচন করেন। তার হাতে সাজা পাওয়া একটু উগ্রপন্থী দল, চাইনিজ ও ইন্ডিয়ান কম্যুনিটিসহ খুচরা কিছু দল নিয়ে তিনি নতুন জোট গঠন করেন। তার নিজের দল নিজের লোক সব ছেড়ে তিনি অবহেলিত ও ক্ষমতাবঞ্চিত বিক্ষিপ্ত সংগঠনগুলোকে এক করে এক চ্যালেঞ্জপূর্ণ নির্বাচনে যান। এটা অনেকটা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগের বিপক্ষে স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর বিএনপি, ২০ দল ও অন্যান্য খুচরা সব দল নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হওয়ার মতো। উপমাটি কেউ দয়া করে অন্যভাবে নেবেন না। তবে মালয়েশিয়ার এ নজিরবিহীন ঘটনাটি বাংলাদেশি মানসে ঢোকানোর জন্য এই দৃষ্টান্ত না দিয়ে লেখাটি সম্পূর্ণ করা যাবে না। ডক্টর মাহাথির মোহাম্মদ একজন বিশ্বনেতা। তিনি অনুন্নত ও অবহেলিত মালয় জাতিকে তার ন্যায়বিচার, সুশাসন ও দক্ষতার দ্বারা আকাশের উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। একজন সচেতন মুসলমান, নির্লোভ, সৎ ও দেশপ্রেমিক এই নবতিপর নেতা নির্বাচনের আগে বলেছেন, আমি যে আস্থায় নাজিবকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলাম তিনি সে আস্থা ধরে রাখতে পারেননি। উন্নয়ন ব্যাপকতা হারিয়ে আঞ্চলিক রূপ নিয়েছে। আমার সাথে কোনো যোগাযোগ বা পরামর্শ প্রয়োজন মনে করা হয়নি। জাতীয় উন্নয়ন তহবিল থেকে কোটি কোটি ডলার মেরে দেওয়া হয়েছে। বিদেশ থেকে অজ্ঞাত কারণে অফুরন্ত টাকা প্রধানমন্ত্রীর ব্যাংক একাউন্টে জমা হয়েছে। এসব অন্যায় দূর করা এবং নিজ হাতে গড়া দেশটিকে পুনরায় সঠিক ট্র্যাকের ওপর তুলে দেওয়া আমি ঈমানী দায়িত্ব বলে মনে করি। এ জন্য তিনি যাকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিলেন সেই আনোয়ার ইবরাহীমের সাথে সমঝোতা করে নেন। তার স্ত্রীকে তিনি উপপ্রধানমন্ত্রী করেছেন। ইবরাহীমের মেয়েও এমপি। নূরুল ইযাহ আনোয়ার নামের এ মেয়েটি সমঝোতার ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রেখেছে। মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, বেশি হলে দুই বছর তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। এর মধ্যে জোটের সবাই যেন তার কাজে সহায়তা করে। এরপর হয়তো তিনি বেশি আসন পাওয়া দলের নেতা আনোয়ার ইবরাহীমকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে দেবেন। এই মুহূর্তে তিনি তার জীবনের রাজনৈতিক পথ চলায় সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত পাঁচজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে উপদেষ্টা নিয়োগ করেছেন। মিডিয়া বলছে, মাহাথির শারীরিকভাবে বয়স্ক হলেও মানসিক ও আত্মিকভাবে যুবক রয়ে গেছেন। সততা ও দেশপ্রেমের কারণে মানুষ তাকে ভালোবাসে ও বিশ্বাস করে। নতুবা ৬১ বছর ধরে যে দলটি ক্ষমতায় এবং এটি তারই দল, এ দলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শত বাধা উপেক্ষা করে তিনি কী করে এত বেশি আসন পেয়ে সরকার গঠন করলেন তা সাধারণ দৃষ্টিতে কারও বুঝে আসবে না। অনেকে এসব ঘটনাকে শেক্সপিয়রের নাটকের সাথে তুলনা করছেন। মাহাথির যাকে তিনবার জেলে পাঠিয়েছিলেন এমন এক ব্যক্তিকে তিনি এবার অর্থমন্ত্রী করেছেন। তিনি বলে থাকেন, শাস্তি মানুষকে সংশোধন করার জন্য। কিন্তু তার যোগ্যতা অস্বীকার করা যায় না। সৎ হয়ে চললে শাস্তি পাওয়া মানুষটিকেও আমি দেশের কাজে লাগাতে চাই। শত্রæতা বা বন্ধুত্ব ব্যক্তিগত কারণে নয়, দেশ ও জনগণের কারণে, সময়ের প্রয়োজনে এতে পরিবর্তন আসতে পারেই। সরকার গঠনের কয়েক দিনের মধ্যে তিনি দুর্নীতির ৫০ মিলিয়ন ডলার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত এনেছেন। নাজিব রাজাককে দুর্নীতি দমন সংস্থা জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। তার তিনটি ফ্লাট থেকে নগদ তিন কোটি ডলার, অসংখ্য রিঙ্গিত, অঢেল সোনাদানা ও দামি দামি বিলাসদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। নয়জন সাবেক মন্ত্রীকে আটক করা হয়েছে। নাজিব রাজাক ও তার স্ত্রীসহ বড় বড় সন্দেহভাজনকে আকাশ, নৌ ও সড়কপথে দেশত্যাগে বাধা দেওয়া হয়েছে। বড় আমলা গ্রেফতার করা হয়েছে ১৪৪ জন। দুর্নীতির দায়ে ৫০ জন বিচারককে ও ২০০ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পহেলা জুন ১৮ থেকে চাপিয়ে দেওয়া বাড়তি টেক্স মওকুফ করে দিয়েছেন তিনি। জনগণের কষ্ট লাঘবের জন্য তেলে ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জাতীয় ঋণ সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য পথ খুঁজছেন। মন্ত্রীদের বেতন ১০% কমিয়ে দিয়েছেন। মালয়েশিয়ার নির্বাচন দেখে আমার কোনো কিছু বলার মতো শব্দ আমি খুঁজে পাচ্ছি না। শান্তিপূর্ণ বলব, না সুষ্ঠু বলব। মাহাথির নির্বাচন কমিশনসহ বড় বড় রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমন উন্নত ও শক্তিশালী করে গিয়েছিলেন যে অন্যায় ও দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাসীন সরকারকে নির্বাচনের মাধ্যমে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় তিনি কামিয়াব হয়েছেন। অন্যান্য দেশে দখল, দুর্নীতি, দুঃশাসন ও অবিচার যখন জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে তখন জনগণের আর মুক্তির উপায় থাকে না। হোক তা গণতন্ত্রের নামে, সমাজতন্ত্রের নামে, সামরিকতন্ত্রের নামে অথবা রাজতন্ত্রের নামে। দুনিয়া এখন বিভিন্ন নামের আড়ালে মূলত স্বৈরতন্ত্র ও চরম জুলুমের শিকার। ইসলাম যদি তাদের মুক্তির দিকে আহ্বান করে, তা হলে এর বিরুদ্ধে অপবাদের অভাব থাকে না। তখন ইসলাম মৌলবাদী, উগ্র, জঙ্গী, পশ্চাৎপদ প্রভৃতি নাম পেয়ে যায়।
গত কয়েক দিন মালয়েশিয়া থেকে আমার কাছে মিডিয়াকর্মী, সম্পাদক, ব্যবসায়ী, ছাত্র ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা গ্যাজেটের বিভিন্ন অ্যাপসে ঘন ঘন যোগাযোগ করছেন। নতুন নতুন দেখা-সাক্ষাৎ হলে দেশে ফেরার পর এমনই হয়। কিছুদিন পর এসব যোগাযোগ কমে যাবে। তাজা সাক্ষাৎ, ভ্রমণ ও খাওয়া-দাওয়ার রেশ এখনো ফুরায়নি। যোগাযোগে তারা একটি কথা বেশি বেশি বলেন, অভিবাসীদের জন্য মাহাথিরের নীতি কেমন হবে। এ বিষয়ে আনোয়ার ইবরাহীমের দল বেশ অনুদার। নাজিব রাজাককে বাংলাদেশিরা একটি কারণে পছন্দ করতেন, কেননা তার অভিবাসন নীতি ছিল উদার। আমি যেন বাংলাদেশ পর্যায় থেকে নতুন সরকারকে বাংলাদেশিদের প্রতি উদারনীতি গ্রহণের বিষয়ে অনুরোধ জানানোর ব্যাপারটি যথাসাধ্য এগিয়ে নিই। তাদের ধারণা, এ কাজটি আমার দ্বারা সম্ভব। তাদের ধারণা যা-ই হোক আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আবেদন রাখব, সরকার যেন নতুন মালয়েশিয়া সরকারের সাথে সব ধরনের যোগাযোগ রক্ষা করে বাংলাদেশের প্রবাসী ও অভিবাসী কম্যুনিটিকে সাহায্য করেন। এ মুহূর্তে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে একটি শক্তিশালী প্রতিনিধিদল কুয়ালালামপুরে পাঠানোও মন্দ হবে না। নতুন সরকারকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ মালয়েশিয়া থেকে কী কী উপায়ে উপকৃত হতে পারে এসব বিষয়ও আলোচনায় আসা দরকার। দুই দেশ পারস্পরিক সহযোগিতার উচ্চ পর্যায়ে উপনীত হওয়ার এটাই উর্বর সময়।
এ পর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রাপ্ত কিছু অনুভূতির কথা বলা সমীচীন হবে বলে মনে করছি। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মালয়েশিয়ার এ পরিবর্তন বেশ সাড়া জাগিয়েছে। মিশর, জর্দান, সিরিয়া, সৌদিআরব, ইরাক ইত্যাদির সচেতন নাগরিক, বিশেষ করে তরুণরা তাদের ব্যক্তিগত পেইজে বা ব্লগে নিজ নিজ দেশের ক্ষমতাসীন ও জনগণের মধ্যকার হতাশাপূর্ণ সম্পর্ক, যুদ্ধ, দুরবস্থা, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি তুলে ধরছেন। অনেক গ্রুপে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। সবকিছুর মূল ডক্টর মাহাথির মোহাম্মদ। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক এত বৈরী পরিবেশেও এমনকি ইসলাম ও মুসলমানবিরোধী বিশ্বসমাজেও নিজ প্রজ্ঞা, ভারসাম্য ও নীতি-নিষ্ঠার ফলে একটি অধঃপতিত দেশকে কতটুকু উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেন তা বর্ণনা করে যেন আরবরা গর্ব বোধ করছে। কোনো কোনো আলোচনায় নাম আসছে তুরস্কের নেতা রজব তায়্যিব এরদোগানের। শত হতাশার মধ্যে অনারব মুসলিম দেশগুলোতেও এ দু-নেতার বিশ্বাস, সাহস, প্রজ্ঞা ও কর্মপন্থার কথা প্রশংসার সাথে আলোচিত হচ্ছে। মূলত বিশ্বের মানুষ এখন জুলুম, দুর্নীতি, শোষণ ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডার পাঁকচক্রে আটকে পড়েছে। তারা ক্ষমতার লালসায় মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলা একটি দুষ্টচক্রের হাতে বন্দী। এ চক্রের হাত থেকে মানবজাতির মুক্তি খুবই প্রয়োজন। এ মুক্তি তাদের অধিকার। যা ইসলাম তাদের দিতে পারে। ৬০৯ খ্রী. থেকে ১৯১৭ খ্রী. পর্যন্ত ১৩০০ বছর ইসলাম বিশ্ববাসীকে যে শান্তি ও স্বস্তি দিয়েছে। বিশ্বের শাসনে গত ১০০ বছর ইসলাম না থাকায় মানবজাতি এখন ধ্বংসের পথে। যাকে ইসলামের ভাষায় বলতে হয়, আজন্ম মুক্ত আত্মা মানবজাতিকে মানুষের গোলামি থেকে মুক্তি দিয়ে আল্লাহর গোলামির মুক্ত আকাশে ছেড়ে দেওয়া। তাদেরকে ধর্ম, সংস্কৃতি ও নানা মনগড়া রীতিনীতির অত্যাচার থেকে মুক্ত করে ইসলামের ন্যায়বিচার ও সুশাসনের স্বর্গীয় ভুবনে নিয়ে যাওয়া। তাদের পার্থিব সংকীর্ণ জীবনবোধ থেকে মুক্ত করে উদার প্রশস্ত মানবিক জীবন উপহার দেওয়া। পৃথিবীতে একমাত্র ইসলামই মানুষকে প্রকৃত ন্যায়বিচার, সুশাসন, মুক্তি ও উন্নয়ন দান করেছিল। আবার যদি পৃথিবী বাঁচতে চায়, তা হলে তাকে ইসলামের পথেই ফিরে আসতে হবে। এ জন্য প্রকৃত ঈমানদার, আমানতদার, মানবতাবাদী, প্রাজ্ঞ ও কৌশলী নেতৃত্বের প্রয়োজন। নেতৃত্বের এ দুর্ভিক্ষের সময় তুলনামূলক কিছু যোগ্য নেতা বা মন্দের ভালো কোনো সরকার দেখতে পেলেই হতাশ ও অবহেলিত মুসলমানদের মনে আশাবাদ জেগে ওঠে। আমরা আরববিশ্বের জন্য যোগ্য নেতা, সংগঠন ও সরকার যেমন চাই তেমনি গোটা মুসলিমবিশ্বের প্রতিটি দেশে কামনা করি সম্ভাব্য সর্বাপেক্ষা ঈমানদার, আমানতদার, যোগ্য, দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব। যারা আখেরাতকে দুনিয়ার ওপর প্রাধান্য দেবেন। বর্তমান সময়েও সকল ফেতনা ও বাধা মোকাবেলা করে মুসলমানদের কেন্দ্রীয় শাসন শৃঙ্খলা ‘খেলাফত আলা মিনহাজিন নবুওয়ত’ প্রতিষ্ঠার পথ ধীরে ধীরে সুগম করবেন। কারণ, আল্লাহ কোনো ব্যক্তি বা জাতির অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ তারা তাদের নিজেদের অবস্থায় পরিবর্তন না আনে। -আল কোরআন।
লেখক: সাংবাদিক, ধর্ম সমাজ ও রাষ্ট্রতত্তবিদ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।