পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পলিব্যাগ, ময়লা-আবর্জনা ও বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে বুড়িগঙ্গা। একদিকে নির্বিচার দখল অন্যদিকে ভয়াবহ দুষণে এই বিখ্যাত নদীটির অস্তিত্ব এখন বিপন্নপ্রায়। গতকাল একটি ইংরেজি দৈনিকে একটি ছবি ছাপা হয়েছে, যাতে দেখা যাচ্ছে, বুড়িগঙ্গার বুকজুড়ে পলিব্যাগ ও বর্জ্যবস্তু ছড়িয়ে আছে। ভাসমান পলিব্যাগ ও অন্যান্য আবর্জনা সরিয়েই নৌকা চলছে। অন্য একটি ইংরেজি দৈনিকে একইদিনে আর একটি ছবি ছাপা হয়েছে, যাতে দেখা যাচ্ছে, রাজধানীর গোবিন্দপুর বাজার এলাকায় বক্স কালর্ভাট পলিথিন ও ময়লা-আবর্জনায় প্রায় বন্ধ হতে বসেছে। রাজধানীর বর্জ্যব্যবস্থাপনা কতটা অপর্যাপ্ত ও নাজুক, এ দুটি ছবি তারই সাক্ষ্য দিচ্ছে। রাজধানীর পচনশীল, অপচনশীল, কঠিন, তরল-সব ধরনের বর্জ্যরেই নিশ্চিত ঠিকানা বুড়িগঙ্গা। পলিব্যাগ ও অপচনশীল বর্জ্য জমে জমে বুড়িগঙ্গার বুক ভরাট হয়ে গেছে। এক সময়ের খরস্রোতা নদী নাব্যতা হারিয়ে পরিণত হয়েছে মরা খালে। কয়েক বছর আগে বর্জ্য অপসারনের একটি প্রকল্প নিলে দেখা যায়, নদীগভীরে রয়েছে ১০-১৫ ফিট পর্যন্ত পলিথিন ও বর্জ্যরে স্তর। শেষ পর্যন্ত ওই প্রকল্পের কাজ চলেনি। পলিথিন ও প্লাসটিকের মত অপচনশীল বর্জ্য শুধু বুড়িগঙ্গাকেই বিপন্ন করছে না, ঢাকার চারপাশের অন্যান্য নদীরও সর্বনাশ করছে। পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য ঢাকার পানিনিকাশ ব্যবস্থাকে প্রায় অকেজো করে ফেলেছে। দু-এক ঘণ্টা ভারি বৃষ্টি হলেই রাজধানীর রাজপথ নদী-খালে পরিণত হয়। পানিবদ্ধতা ভয়ংকর আকার ধারণ করে। যত্রতত্র পরিত্যাক্ত পলিথিন ও অপচনশীল বর্জ্য ফেলার কারণে পানিনিকাষের যাবতীয় নালা-নর্দমা কোথাও সংকুচিত, কোথাও সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আমাদের নাগরিক সচেতনতা নেই বললেই চলে। অন্যদিকে বর্জ্য অপসারণ ও নালা-নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করার ক্ষেত্রেও রয়েছে কর্তৃপক্ষীয় সীমাহীন অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা।
বাংলাদেশেই কেবল নয়, সারাবিশ্বেই পলিব্যাগের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। একইসঙ্গে এর পরিবেশঘাতক ভূমিকার জন্য বিশ্ববাসীর উদ্বেগেরও কমতি নেই। ডেনমার্কের কোপেন হেগেনভিত্তিক একটি সংস্থার হিসাবে সারাবিশ্বে প্রতি বছর ৫ লাখ কোটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহৃত হয়। এর মাত্র ১ শতাংশ পুনর্ব্যবহারের জন্য প্রক্রিয়াজাত করা হয়। ১০ শতাংশ ফেলা হয় সমুদ্রে। একশ বছরেও পলিব্যাগ পচা বা বিনাশের সম্ভাবনা নেই। মাটির সঙ্গে তা কখনো মেশেনা। পলিব্যাগ পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর এ থেকেই তা উপলব্ধি করা যায়। আমাদের দেশের পলিথিনের বহুল ব্যবহার রয়েছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের হিসাবে শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই প্রতিদিন ১ কোটি ৪০ লাখ পলিথিন জমা হয়। সারাদেশে কত জমা হয় এথেকে তার একটা আন্দাজ করা যায়। বস্তুত, পলিব্যাগ দেশের সবিক পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি সাধন করছে। অথচ এর ব্যবহার নিরোধ তো দূরের কথা সামান্য কমানোও সম্ভব হয়নি। ২০১২ সালে প্রথমে ঢাকা ও পরে সারাদেশে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। দুর্ভাগ্যজনক, সেই নিষেধাজ্ঞা এখনো কার্যকর হয়নি। পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, কেনাবেচা ও ব্যবহার সমানেই চলছে। প্রথম দিকে ধরপাকড় ও উড়োতাড়া করার ফলে কিছুটা কাজ হয়েছিল। এখন কালেভদ্রে কর্তৃপক্ষীয় নড়াচড়া লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এ নড়াচড়ায় বাস্তবে কোনো সুফল পাওয়া যায় না। আমাদের তো মনে হয়, পলিথিনের ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে। আর এর কুফলও নানা ক্ষেত্রে ও পরিবেশের ওপর পড়ছে। কোনো আইন-বিধি-আজ্ঞা প্রণয়ণ করাই যথেষ্ট হতে পারে না যদি না তা সঠিকভাবে, পুরোপুরিভাবে কার্যকর হয়। পলিব্যাগের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার সম্পর্কিত নিষেজ্ঞাটি সম্পূর্ণতই অকার্যকর ও ব্যর্থ প্রতিপন্ন হয়েছে। মাটি, পানি, পরিবেশ সুরক্ষায় পলিথিনের ব্যবহার ডেডস্টপ করার বিকল্প নেই। এটা করতে প্রথমে আমদানি ও উৎপাদন ক্ষেত্রের ওপর হাত দিতে হবে। পলিথিনের উপকরণ যদি আমদানি-নিষিদ্ধ হয় এবং এর কারখানাগুলো যদি পুরোপুরি উঠিয়ে দেয়া হয় তবে পলিব্যাগের ব্যবহার বন্ধ ও নিরুৎসাহিত হতে বাধ্য। গোপনে পলিব্যাগ উৎপাদিত হতে পারে, কোনো দেশ থেকে পাচার হয়েও আসতে পারে। সেক্ষেত্রে বিক্রেতা ও ব্যবহারকারীদের ওপর চড়াও হলেই সুফল মিলবে। সবচেয়ে বড় কথা, এ জন্য নাগরিক সচেতনতা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। নাগরিকরা সচেতন হলে পলিথিনের অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়া অধিকতর সহজ ও সম্ভবপর হবে।
স্বীকার করতেই হবে, পলিব্যাগের চাহিদা আছে। হালকা-পাতলা, শক্ত-টেকসই, সহজে পরিবহণযোগ্য এবং মূল্য কম হওয়ার কারণে এর উপযোগিতা ও প্রিয়তা যথেষ্ট। আইন করে, অভিযান চালিয়ে একে দেশছাড়া, বাজারছাড়া করা কঠিন। এজন্য নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত বিকল্পের ব্যবস্থাও করতে হবে। কাগজ, সুতা ও পাটের ব্যাগ পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে যদি তা আরো হালকা-পাতলা, শক্ত ও টেকসই হয়। আর তার মূল্য পলিব্যাগের মূল্যের সমান বা কম হয়। বাজারে পলিব্যাগের পাশাপাশি কাগজ, সুতা ও পাটের ব্যাগ পাওয়া যায়, এগুলোও ভালো এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে দাম একটু বেশি। উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ জোরদার করার সঙ্গে সঙ্গে মূল্য কিছু কমালে এসব ব্যাগ ব্যবহারে মানুষ আরো উৎসাহিত হবে। বড় রকমের একটা সুখবর এই যে, দেশে পাট থেকে এক প্রকার পলিমার তৈরি করা হচ্ছে এবং সেই পলিমার থেকে তৈরি করা হচ্ছে ব্যাগ, যার নাম দেয়া হয়েছে সোনালী ব্যাগ। ঢাকার একটি জুটমিলে পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি হচ্ছে এই ব্যাগ। সোনালী ব্যাগ পলিব্যাগের মতোই হালকা-পাতলা, শক্ত-টেকসই এবং তার দামও প্রায় একই রকম। বাণিজ্যিকভাবে এই ব্যাগ তৈরি হলে দাম আরো কম হবে। দেশেরই একজন বিজ্ঞানী এই জুট পলিমার উদ্ভাবন করেছেন। সরকারীভাবে এ পরিমার থেকেই তৈরি হচ্ছে সোনালী ব্যাগ। বলা যায়, এতদিনে সবচেয়ে উপযুক্ত বিকল্প উদ্ভাবিত হয়েছে। আমরা মনে করি, জুট পলিমার থেকে বিভিন্ন রকমের ব্যাগ তৈরি করে বাজারজাত করা হলে মানুষ স্বভাবতই একে সানন্দে গ্রহণ করবে। জুট পলিমার ব্যাগ সহজে পচনশীল। এর রফতানি সম্ভাবনাও অপার। বিশ্বে পচনশীল পলিব্যাগের যে চাহিদা, তার এক শতাংশও যদি বাংলাদেশ যোগান দিতে পারে, তবে রফতানি আয়ের আর একটি সিংহদোয়ার খুলে যাবে। বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে, পরিবেশ ও মানব কল্যাণে পলিথিন ব্যাগের মূলোৎপাঠনে জরুরি। এব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা একান্তভাবেই প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।