Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকায় মাসে ৪২ কোটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার

প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পলাশ মাহমুদ : আইন অনুযায়ী পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ। পলিথিন উৎপাদ করলে ১০ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু আইন প্রয়োগ করে পরিবেশ বিধ্বংসী পলিথিন বন্ধ করার যেন কেউ নেই। শুধু রাজধানী ঢাকাতেই প্রতি দিন ১ কোটি ৪০ লাখ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে। এ হিসেবে প্রতিমাসে ব্যবহার হচ্ছে ৪১ কোটি পিস। পলিথিন ব্যবসায়ীদের দৌরাত্বের কারণে পাটপণ্য ব্যবহারও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, ‘পরিবেশ মন্ত্রণালয়, এনবিআর, বিনিয়োগ বোর্ডের কোনো ইতিবাচক ভূমিকা নেই। সবাই ঘুমন্ত অবস্থায়। তারা যেন কিছুই দেখছে না। ব্যাঙের ছাতার মতো গজানো পলিথিন কারখানাগুলোর কোনো আইনি বৈধতা নেই।’
গতকাল (রবিবার) দুপুরে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব শপিং ব্যাগ প্রস্তুতকারক অর্গানাইজেশন (বিইএসএমও) আয়োজিত ‘নিষিদ্ধ পলিথিনে পরিবেশ বিপর্যয় এবং পাটজাত ও পরিবেশবান্ধব পণ্য বিস্তারের চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রতিমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
পলিথিন ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনা করে ২০০২ সালে পলিথিনের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করে সরকার। ২০০২ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে বলা আছে, পলিথিন ব্যাগ বিক্রয়, প্রদর্শন, মজুদ ও বাণিজ্যিকভাবে বিতরণ করা যাবে না। কিন্তু এরপরও বিভিন্ন ব্যবসায়ী পলিথিন ব্যাগ বিক্রি ও পণ্য পরিবেশনে ব্যবহার করছেন। ওই বছরের ১ জানুয়ারি ঢাকা ও ১ মার্চ সারা দেশে পরিবেশ রক্ষায় পলিথিনের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত) ২০০২ অনুযায়ী, এ আইন অমান্য করলে ১০ বছরের সশ্রম কারাদ- ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। আর বাজারজাত করলে ৬ মাসের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বাজারগুলোতে প্রকাশ্যে পলিথিন ব্যবহার করা হলেও এ আইনের কোন প্রয়োগ নেই।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, এ আইন বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। তাদের অভিযোগ, বাজারে পলিথিন ব্যাগের বিরুদ্ধে নিয়মিত মনিটরিং নেই। এ কারণে অসাধু পলিথিন ব্যাগ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলাশহরে দেদারছে উৎপাদন করছে অপচনশীল এসব ব্যাগ। পলিথিন তৈরির কারখানাগুলোর বেশিরভাগই পুরান ঢাকা কেন্দ্রিক। ঢাকার পলিথিন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে একাধিক প্রভাবশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। মিরপুর, কাওরান বাজার, তেজগাঁও, কামরাঙ্গীচর ও টঙ্গীতে বেশ কিছু কারখানা রয়েছে। যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত গড়ে উঠেছে শতাধিক কারখানা। এছাড়া চট্টগ্রামসহ জেলা শহরগুলোতে গড়ে উঠেছে শতাধিক কারখানা। পলিথিন বাজারজাতকরণে পরিবহন সিন্ডিকেট নামে আরেকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে।
এসব সিন্ডিকেটের কারণে পরিবেশবান্ধব ব্যাগের ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না জানিয়েছে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী বলেন, পলিথিনের প্যাকেট ব্যবহার বন্ধে ও পাটজাত পণ্যের প্যাকেজিং নিশ্চিতে ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট ২০১০ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবসায়ীদের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
এজন্য তিনি পলিথিনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীরা যেমন করে এতবড় অপরাধ করেও দীর্ঘদিন ক্ষমতা আঁকড়ে ছিল, ঠিক তেমনই পলিথিন ব্যবসায়ীরাও অনেক ক্ষমতাধর। তাদের এ ক্ষমতার মূলোৎপাটন করতে হবে। সামাজিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও পরিবেশবাদীদের মতে, পলিথিন অপচনশীল পদার্থ হওয়ায় দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অবিকৃত অবস্থায় থেকে মাটিতে সূর্যালোক, পানি ও অন্যান্য উপাদান প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। পচে না বলে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায় ও উপকারী ব্যাকটেরিয়া বিস্তারে বাধা তৈরি করে।
এছাড়া পলিথিন মোড়ানো গরম খাবার খেলে মানুষের ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ হতে পারে। পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকিং করলে তাতে অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়, যা দ্রুত পচনে সহায়তা করে। অন্যদিকে, উজ্জ্বল রঙের পলিথিনে রয়েছে সীসা ও ক্যাডমিয়াম, যার সংস্পর্শে শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত ও চর্মপ্রদাহের সৃষ্টি হয়।
ঢাকা শহরের পয়ঃনিষ্কাশনের ৮০ ভাগ ড্রেন পলিথিন ব্যাগ কর্তৃক জমাট বেঁধে আছে। যার দরুন সামান্য বৃষ্টি হলেই ঢাকা শহরে দেখা দেয় অসহনীয় জলাবদ্ধতা। বৃষ্টির সময় অনেক ম্যানহোল থেকে শত শত পলিথিন ভেসে বের হতে দেখা যায়। ড্রেনেজ সিস্টেমকে সর্বদাই অচল করে রাখে। সম্প্রতি ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গার তলদেশ থেকে বর্জ্য অপসারণের যে কর্মসূচি নেয়া হয়েছিল তাতে দেখা যায়, উত্তোলনকৃত বর্জের অধিকাংশই পলিথিন ব্যাগ।
গতকালের ওই অনুষ্ঠানে পলিথিন বন্ধে কয়েটি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- পলিথিন নিষিদ্ধকরণ আইন এবং পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূক ব্যবহার আইন অমান্যকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। পলিথিন ও টিস্যু ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাট, কাগজের ব্যাগ ও ঠোংগা ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং এগুলো সহজলভ্য করতে হবে। ব্যাগ ও ঠোংগা ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পলিথিন ও টিস্যু ব্যাগ তৈরির কাঁচামাল আমদানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বন্ড লাইসেন্সের মাধ্যমে আমদানিকৃত পলি প্রোপইলিন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর, পাট অধিদপ্তর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এফবিসিসিআই, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঢাকায় মাসে ৪২ কোটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ