পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
৩২ বছর পেরিয়ে গণমানুষের পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাব ৩৩ বছরে পদার্পণ করল। আলহামদুলিল্লাহ। ইনকিলাব অর্থ বিপ্লব। উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা এম এ মান্নান (রহ:) প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব দেশের সংবাদপত্র শিল্পে সত্যিই বিপ্লব ঘটিয়েছে। দৈনিক ‘ইনকিলাব’ হয়ে গেছে দেশের মা-মাটি মানুষের হৃদয়ের কণ্ঠস্বর। ‘শুধু দেশ ও জনগণের পক্ষে’ শ্লোগান নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ তথ্যে খবরের প্রতি অবিচল থেকে ৩২ বছর অতিক্রম করল।
দীর্ঘ এই চলার পথ মোটেও কুসুমাসত্তীর্ণ ছিল না। ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ঐতিহাসিক শুভক্ষণে সকল পাঠক, কর্মরত সাংবাদিক-লেখক-বিজ্ঞাপনদাতা-শুভানুধ্যায়ী সকলকেই অফুরান্ত শুভেচ্ছা। ইসলামের দীপ্ত শিখায় উদ্ভাসিত ইনকিলাবকে দীর্ঘ এই চলার পথের বাঁকে বাঁকে নানান বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছে। কখনো কণ্ঠ চেপে ধরার চেষ্টা হয়েছে; কখনো মত প্রকাশে প্রতিবন্ধকতার চেষ্টা হয়েছে। বাধা অতিক্রম করে আপোষহীনভাবেই এগিয়ে চলেছে ইনকিলাব, থেমে থাকেনি। আর্থসামাজিক টানাপোড়েন এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার দোলাচলে বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও ‘সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার’ প্রতিষ্ঠায় নিত্য লড়াই করেছে। জাতীয় স্বার্থ আর গণমানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের পক্ষে সোচ্চার থেকেছে নিত্যদিন। যা পাঠকদের কাছে ইনকিলাবকে করে তুলেছে আরো আকর্ষণীয়।
ইনকিলাব চলার পথে কখনোই নীতির প্রশ্নে আপোষ করেনি; অন্যায়ের কাছে নত করেনি মাথা। নিত্যদিনের খবরের পাশাপাশি বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি, ভূ-রাজনীতি, সংস্কৃতি, খেলাধূলা, নারী শিক্ষা, প্রযুক্তি, ক্ষেত-খামার, স্বাস্থ্যসেবা, ইসলামী দুনিয়া, ফ্যাশন, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, মতামত, বিশ্লেষণ, শিক্ষাঙ্গন, সমাজ জীবন, নাটক-সিনেমা-সংগীত, আন্তর্জাতিক বিষয়াদির চালচিত্র তুলে ধরেছে সব শ্রেণীর পাঠকের জন্য। খবর প্রকাশে বৈচিত্র্যময়তায় প্রবীণ-নবীন ও ভবিষ্যৎ পাঠকের মধ্যে রচনা করেছে সেতুবন্ধন। পাঠকের কাক্সিক্ষত তথ্য ও সংবাদ দেয়ার পাশাপাশি খবরের পিছনের খবরও তুলে ধরার চেষ্ট করেছে ইনকিলাব প্রতিনিয়ত। প্রতিষ্ঠার পর থেকে চিন্তায়, চেতনায়, কর্মে পরিবর্তিত বিশ্ব ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা কিছু সত্য, সুন্দর, ভালো, মহৎ, জনকল্যাণকর এবং দেশ-জনগণের জন্য ইতিবাচক সেগুলো তুলে ধরছে। ইসলামী আকিদায় উদ্ভাসিত হয়ে শত চাপ ও বিরোধিতার মধ্যে ইনকিলাবের পাতায় পাতায় সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলে শব্দমালা এঁকেছে। ইসলামী মূল্যবোধের ব্যাপারে আপোষ না করেই খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে সকল ধর্মালম্বীর অধিকার, মত ও পথকে সমান গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলামী ভাবধারা লালন করলেও বিপরীতমুখী বাম রাজনীতির চিন্তা-চেতনা ও মতামত অকৃপণতার সঙ্গে তুলে ধরেছে।
মাওলানা এম এ মান্নান (রহ) এর স্বপ্নের ফসল দৈনিক ইনকিলাব। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস করা তরুণ এএমএম বাহাউদ্দীনের সম্পাদনায় পত্রিকাটির জন্ম নেয় আশির দশকের মাঝামাঝি। তখন দেশের সংবাদপত্র শিল্পে ছিল সঙ্কটময় মুহূর্ত। বিজাতীয় সংস্কৃতিচর্চার উর্বর ভূমিতে পরিণীত করা হয়েছিল বাংলাদেশকে। সংস্কৃতিচর্চার নামে উলঙ্গ নৃত্য ও তথাকথিত প্রগতিশীলতার ধোঁয়া তুলে দেশে ইসলাম ধর্ম-আলেম-ওলামা-মাদরাসা শিক্ষা, পীর-মশায়েখ-দাড়ি-টুপি পরিহিত মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করাই ছিল যখন কিছু সংস্কৃতিবান ব্যক্তির নিত্যচর্চা। মিডিয়াগুলো সেই স্রোতে গা ভাসিয়ে চলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সেই সময় জন্ম নেয়া দৈনিক ইনকিলাব তরুণ সম্পাদকের দৃঢ়তায় সংস্কৃতির নামে বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়ে ইসলামী আকিদার সমাজ বিনির্মাণের চেষ্টা করেন। প্রচারণায় অগ্রাধিকার দেয় নদীমাতৃক বাংলাদেশের দেশজ সংস্কৃতি, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-তিস্তা-ব্রহ্মপুত্রের শ্রোতাধারার কৃষ্টি-কালচার চর্চা। তখন দেশের অধিকাংশ মিডিয়া ‘সম্পাদকীয় নীতি’ ছিল আকাশ সংস্কৃতির নামে বিজাতীয় সংস্কৃতির চর্চা উৎসাহিত করা। বিজাতীয় সংস্কৃতির দৌড়াত্মের কারণে সম্মানবোধ নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে আলেম সমাজ কার্যত: নীরব দর্শকের ভূমিকা পালনে বাধ্য হয়। শ্রোতের বিপরীতে অবস্থান গ্রহণ করে চ্যালেঞ্জ নিয়েই ইনকিলাব ইসলামী মূল্যবোধ তুলে ধরা এবং পাঠকদের জাতীয়তাবাদী চিন্তা চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করে। ৩২ বছর চলার পর ৩৩ বছরে পদার্পণের দিনে বলা যায় ‘ইনকিলাব সফল হয়েছে’। ওই সময় অনেক সংবাদকর্মী এবং ঝানু সাংবাদিক শঙ্কা প্রকাশ করে বলতেন ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘ইসলামী চেতনার’ দৈনিক পত্রিকা কি পাঠক গ্রহণ করবে? বিজাতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে লড়াই করে ইসলামী চেতনায় ইনকিলাব কী মিডিয়া জগতে টিকে থাকতে পারবে? বিজ্ঞজনদের সেই শঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ করে ইনকিলাব পাঠকদের হৃদয় জয় করেছে। ইনকিলাব দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমÐলে নিজস্ব পাঠক সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। প্রথাগত ও পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ-প্রবাহের মনোপলি ভেঙে ইনকিলাব খবর প্রকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন করে এনেছে আধুনিক প্রকাশভঙ্গি, নিরপেক্ষ সংবাদ চয়নের নৈব্যক্তিক অভিলাষ। এখানেই ইনকিলাবের স্বীয়কতা।
ইনকিলাবে কর্মরত সাংবাদিকদের চাকরি শুধু জীবিকা নয়; জীবনও বটে। সংবাদপত্র জগতে ইনকিলাবের নিজস্ব ‘ভিশন’ রয়েছে। আর্থিক সংকট ও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও কখনো দমে যাননি কর্মরত সাংবাদিক কর্মচারীরা; স্থবিরতাকে প্রশ্রয় দেয়নি। চ্যালেঞ্জিং পেশা সাংবাদিকতাকে গতিময় করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে ইনকিলাবের সংবাদকর্মীরা। শুধু কেন্দ্রীয় সদর দফতরে কর্মরত সাংবাদিকরাই নয়; বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের ব্যুরো অফিস, আঞ্চলিক অফিস, জেলা-উপজেলা অফিসে কর্মরত সাংবাদিক-সংবাদকর্মীরাও অবদান রাখছেন।
ইনকিলাবের পাতায় পাতায় পাঠক নিজস্বতায় দেখছেন ভূগোল, সমাজ, সুশাসন, বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জ-শহর-বন্দর ও পৃথিবীর প্রসারিত রূপ। খবর প্রকাশ ও প্রচারে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে ঠিকই; কিন্তু তাল মিলাতে গিয়ে কখনো ‘খেই’ হারিয়ে ফেলেনি; বিসর্জন দেয়নি নিজস্বতাকে। সংকটে, সমস্যায় ইনকিলাব আশা-জাগানিয়া স্পন্দনে দেশের মানুষকে সব সময় দেখিয়েছে পথের দিশা। দেশের পরিবর্তনশীল রাজনীতির বাঁকে বাঁকে ইনকিলাব যে ভূমিকা রেখেছে তা কার্যত ইতিহাস। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে প্রাধান্য দিয়েই সমাজ, ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-নৃতাত্তি¡ক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পরিচিতি, গণতান্ত্রিক সুশাসন, স্বাতন্ত্রকে সম্মান ও স্বীকৃতি জানিয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়েও উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা, সরকারের ভাল কাজের প্রশংসা; খারাপ কাজের সমালোচনা করেছে গঠনমূলকভাবেই। শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা; সমর্থনের জন্য অন্ধ সমর্থন কখনো করেনি। শুধু সংবাদপত্র নয়; ইনকিলাব প্রমাণ করেছে দৈনিক পত্রিকা মানে পাঠকদের কাছে আরো কিছু। যা ইনকিলাবের পরতে পরতে দৃশ্যমান। যারা ইনকিলাব পড়েন তারা একদিন পত্রিকা না পড়লে থাকতে পারেন না অসস্থিবোধ করেন। দেশ-বিদেশের হাজার মিডিয়ার ভিড়ে অগণিত পাঠকের সিক্ত ভালোবাসা, আস্থা ও বিশ্বাস ইনকিলাবের অন্তহীন এই কর্ম-প্রচেষ্টাময় চলার পথে আরো সাহস-প্রেরণা যোগাবে সে প্রত্যাশা রইল। ইনকিলাব পাঠকদের আবারো অভিনন্দন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।