পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) পরাজিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের গঠিত ও সমর্থিত বাহিনীর আরব অংশকে শক্তিশালী করে তুলত চাইছে সউদী আরব। সিরিয়ার আরব গ্রুপগুলোকে নিয়ে একটি নতুন বাহিনী গঠন করতে চায় দেশটি। এ জন্য তারা আলোচনাও শুরু করেছে।
তুরস্কের সরকারী আনাদলু এজেন্সি মঙ্গলবার জানায় যে সউদী আরবের তিনজন সামরিক উপদেষ্টা মার্কিন সমর্থিত সিরীয় বাহিনী সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)-এর সাথে বৈঠকের উদ্দেশ্যে বিমানে করে উত্তর সিরিয়ার কোবানি শহরে পৌঁছেন। কোবানি আইন আল-আরব নামেও পরিচিত। এসডিএফ-র অধিকাংশ সদস্যই কুর্দি পিপলস প্রটেকশন ইউনিটের (ওয়াইপিজি) সদস্য। তবে কিছু আরব যোদ্ধাও রয়েছে এ বাহিনীতে। জানা গেছে, সউদী উপদেষ্টারা আরব গোত্রীয় আল-স্যানদিদ আর্মির সহযোগিতায় আরব গ্রæপগুলোর একটি নতুন বাহিনী গঠন করতে চাইছেন।
তুর্কি রিপোর্টে বলা হয়, সউদী কর্তৃপক্ষ আরব যোদ্ধাদের নিয়োগের লক্ষ্যে উত্তরপূর্ব সিরিয়ার আল-হাসাকাহ ও আল-কামিশলি শহরে চেকপয়েন্ট স্থাপন করেছে। যোগদানকারী যোদ্ধাদের প্রত্যেককে ২শ’ ডলার করে দেয়া হবে।
সিরিয়ায় মার্কিন সমর্থিত উদ্যোগকে জোরদার করার লক্ষ্যে মিত্র আরব দেশগুলোর মধ্য থেকে সৈন্য সংগ্রহের পরিকল্পনার কথা এপ্রিল মাসে ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার একদিন পর সউদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইর বলেন যে তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করছে। সিরিয়া সংকটের শুরু থেকেই সেখানে সৈন্য পাঠানো নিয়ে আলোচনা চলছে।
সউদী আরব সিরিয়াতে কোনো সৈন্য পাঠায়নি, তবে ২০১১ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য পশ্চিমা দেশ ও উপসাগরীয় দেশগুলোর চেষ্টায় সে সমর্থন দিয়ে আসছে। সিরীয় সরকার বিরোধীরা ক্রমশ উগ্রপন্থী হয়ে ওঠে এবং মার্কিন আগ্রাসনোত্তর প্রতিবেশি ইরাক থেকে আল কায়েদা সিরিয়াতেও বিস্তৃত হয়। মার্কিন ও সউদী অস্ত্রের এক উল্লেখযোগ্য অংশ আইএসের হাতে পড়ে।
২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র আাইএস বিরোধী একটি জোট গঠন করে এবং সিরিয়ার সরকার বিরোধী গ্রুপগুলোর প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে ও পরিবর্তে ২০১৫ সালে এসডিএফকে সমর্থন দেয়। এদিকে রাশিয়া, ইরান ও সরকারপন্থী বিভিন্ন গ্রুপের সমর্থনে শক্তিশালী হয়ে ওঠা সিরীয় সামরিক বাহিনীর সাথে লড়াইয়ে সউদী সমর্থিত বিভিন্ন ইসলামী গ্রুপ যেমন জয়েশ আল-ইসলাম ও আহরার আল-শাম জোট ক্রমাগত পরাজয়ের শিকার হয়।
এদিকে ফ্রি সিরিয়ান আর্মির অন্যান্য যোদ্ধারা আসাদ বিরোধী তুরস্কের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করে এবং তুরস্ক যাদের সন্ত্রাসী সংগঠন বলে গণ্য করে সেই ওয়াইপিজির বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এদিকে কুর্দি প্রধান ওয়াইপিজির প্রতি মার্কিন সমর্থন ওয়াশিংটন ও আংকারার মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে। তারপর এসডিএফের সাথে সউদী সংযোগ ইরান ও কাতারের সাথে কাজ করতে আগ্রহী তুরস্কের সাথে সউদী সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটিয়েছে।
এ পদক্ষেপ এসডিএফের মধ্যে পরস্পর বিরোধী মতের সৃষ্টি করতে পাারে। যুক্তরাষ্ট্র এসডিএফকে শুধু আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যবহার করতে চায়। গত বছর দেইর এজ জরে সিরীয় সামরিক বাহিহনী ও তাদের মিত্রদের পূর্বদিকে অগ্রাভিযানের সময় এসডিএফ আইএসের কার্যত রাজধানী রাক্কা দখল করতে সক্ষম হয়। জানুয়ারিতে তুরস্ক সিরিয়ার উত্তরপূের্বর কুর্দি অধ্যুষিত আফরিন থেকে ওয়াইপিজিকে বিতাড়িত করতে ফ্রি সিরিয়ান আর্মির সাহায্যে সীমিত আগ্রাসন চালায়। তুর্কি সামরিক অভিযানের কারণে কুর্দি যোদ্ধারা, যারা এসডিএফের অধিকাংশ উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত, তুর্কি অভিযান প্রতিরোধে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই ত্যাগ করে।
এ কুর্দি যোদ্ধারা সিরিয়া সরকারের সাথে জোটবদ্ধ হয়, অন্যদিকে সিরিয়া সরকারপন্থী বাহিনী দেইর এজ জরের কাছে এসডিএফের অবশিষ্ট আরব যোদ্ধাদের সাথে লড়াইয়ে নিয়োজিত হয়। এদিকে কুর্দি যোদ্ধারা এসডিএফ ত্যাগ করায় যুক্তরাষ্ট্র আইএসের বিরুদ্ধে স্থল অভিযান বন্ধ করতে বাধ্য হয়। মে মাসের শুরুতে সে অভিযান আবার শুরু হয়েছে।
সিরিয়ায় আইএসের প্রায় পূর্ণ পরাজয়ের প্রশংসা করে ট্রাম্প সিরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তিনি ইরানের সাথে বিরোধের প্রেক্ষিতে সউদী আরবের সাথে সম্পর্ক জোরদার করেছেন। ইরান সিরিযায় তার উপস্থিতি সম্প্রসারিত করেছে। ইরানি শিয়া মিলিশিয়ার আসাদের পক্ষে লড়াই করছে। সিরিয়া সে দেশে রুশ ও ইরানি বাহিনীর উপস্থিতি বৈধ মনে করে। বাশার আল আসাদ যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ককে আগ্রাসনকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি তাদের ও সউদী আরবকে সিরিয়ার সাত বছরের গৃহযুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার জন্য দায়ী করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।