পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
চলতি বছরের শেষদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে সকলের মনেই একটি প্রশ্ন, নির্বাচন হবে তো? কারণ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি প্রার্থী ও ভোটারবিহীন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা দেশবাসীর রয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিগত জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা না পেলেও ভারতের অভিবাবকত্বের কারণে নির্বাচনবিহীন সরকার দাপটের সাথেই চলছে। যাকে জেলে রাখা দরকার তাকে জেলে দিয়েছে। যাকে ব্যাংক, বীমা, মিডিয়ার লাইসেন্স দেয়ার তাকে তা দিয়েছে। ব্যাংক লুট করার সুযোগও এ সরকারের আমলে দেয়া হয়েছে যা ইতোপূর্বে দেখা যায়নি, নিরঙ্কুশ দলীয়করণের মাধ্যমে সরকারি ঘরনা লোকদের ভাগ্যের চাকা দ্রুত ঘুরছে। গণমানুষের দাবি একটি স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ারও একই দাবি। তিনি চেয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের পরিবর্তে নির্দলীয় তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন। এ কথাটির জন্য জীবনের চরম পরীক্ষা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে দিতে হয়েছে এবং হচ্ছে। অন্যায় কারাভোগ থেকে তিনি নেতাকর্মীদের নিকট ফিরবেন সেটা এখন গণমানুষের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
নির্দলীয় তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এখন আর বিএনপির দাবি নয়, এটা এখন সকল দলের দাবি। যারা এতো দিন বিএনপিকে স্বাধীনতা বিরোধীদের আশ্রয় দাতা হিসেবে নানান কথা বলতো তারাও এখন প্রকাশ্যে নির্দলীয় তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছেন। কারণ এখন তারা মনে করেন যে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। একথার পিছনে যুক্তি হলো, নির্বাচন কমিশনের অধীনে দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অভিজ্ঞতা। সব কথা বাদ দিলেও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয়তায় এবং পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতায় ‘নৌকার’ জয় নিশ্চিত করার দৃশ্য, সকাল ১০ ঘটিকার পূর্বেই নৌকা সিল মারার কাহিনী কিছু মিডিয়াতে প্রকাশ পেলেও নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যমতে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। নাটকীয়তার মাধ্যমে হলেও রাষ্ট্রপতি নিশ্চয় যোগ্যব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন (প্রধান কমিশনারসহ) গঠন করেছেন বলে দাবি করবেন। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বর্তমান প্রধান বিচারপতির (বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন) নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল ‘সার্চ কমিটি’। তাই সেই সার্চ কমিটি কর্তৃক অনেক অনুসন্ধান করে যোগ্যব্যক্তিদের দ্বারাই নির্বাচন কমিশন গঠন করার দাবি অমূলক হবে না। তবে মেরুদন্ডহীন ‘যোগ্যব্যক্তি’ দেশ, জাতি ও সমাজের কোন কাজে লাগে না। এ কারণেই অপদার্থ ব্যক্তিরা অনেকেই রাষ্ট্রের বড় বড় পদে আসীন হয়ে নিজ ও পরিবারের ভাগ্যান্বষণে ব্যস্ত থাকেন। ফলে জাতিকে পোহাতে হয় অশেষ দুর্ভোগ। সাংবিধানিক পদসহ দায়িত্বশীল জাতীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের যোগ্যতা হিসাবে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, সৎচিন্তা বাস্তবায়ন সম্পন্ন লোকের প্রয়োজন হয় না, বরং তৈল মর্দনের যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিরই দরকার হয়। যারা ব্যতিক্রম তাদের ঝড়ে পড়তে হয়েছে। স্রোতের বিপরীতে টিকতে না পারার কারণে তৈলের বাটির ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ভোগান্তি হচ্ছে জনগণের।
বলছিলাম কাক্সিক্ষত জাতীয় নির্বাচন সম্পকের্, যে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছিলেন যে, তিনি ভবিষ্যতে আর বিতর্কিত নির্বাচন দেখতে চান না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিতর্কিত হওয়ার উপলব্ধি থেকেই হয়তো তিনি এ কথা বলতে পারেন, নতুবা কথাটি লোকদেখানো কথাও হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটি লোকদেখানো কিনা এটাও সময়ই প্রমাণ কবে দেবে। তবে দৃশ্যতঃ মনে হতে পারে, বক্তব্যটি প্রধানমন্ত্রীর কথার কথামাত্র। কারণ শুধু স্থানীয় নির্বাচন নয়, স্কুল/কলেজের পরিচালনা পর্ষদ ও পেশাজীবী সংগঠনগুলির নির্বাচনও সরকারি দলের প্রভাবমুক্ত নয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন হয়ে গেল। ক্ষমতাসীনরা পূর্বেও বার কাউন্সিলে ক্ষমতায় ছিল এবং এবারও তারাই নির্বাচিত হয়েছেন। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা পরাস্ত হওয়ায় সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রায় ৮,০০০ ভোটের মধ্যে মাত্র ৮৫৩ ভোট রেখে বাকী ভোট বিভিন্ন জেলা বারে স্থানান্তর করায় সুপ্রীমকোর্টের অধিকাংশ আইনজীবীই এবার বার কাউন্সিল নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন নাই। সুপ্রীমকোর্ট বার ভোটকেন্দ্রে ক্ষমতাসীনদের শোচনীয় পরাজয় হয়েছে একমাত্র অ্যাড. আ. বাছেদ মজুমদার ছাড়া। ক্ষমতাসীনদের সাথে মনস্তাতিক দ্ব›েদ্বর কারণে সুপ্রীমকোর্টের বারের ২ বার নির্বাচিত সভাপতি ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ভোট দিতে পারেন নাই, কারণ তার অজান্তেই ভোটটি চট্টগ্রাম বারে ট্রান্সফার করা হয়েছে। এমননিভাবে সুপ্রীমকোর্টের অনেক সিনিয়র আইনজীবী ভোট দিতে পারেন নাই, যদিও সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যরা সুপ্রীমকোর্ট ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে পারতেন। তবে বার কাউন্সিলের নির্বাচনের রিজাল্ট সুপ্রীমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের মতই হতো যেখানে ক্ষমতাসীনদের ভরাডুবি হয়েছে।
সরকারের আগ্রাসী কর্মকান্ডে মনে হয় যে, তারা (সরকার) বিএনপিবিহীন আর একটি একতরফা নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাজা ও জামিনের কাহিনী, অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে ডজন ডজন মামলা, পুলিশের মতো আদালতকে নিয়ন্ত্রণ, সকল নির্বাচনে হরিলুটসহ প্রশাসনে নির্লজ্জ দলীয়করণ প্রভৃতি স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন ও কোলকাতা মনস্ক বুদ্ধিজীবীদের লাগামহীন নীতিকথা প্রচারের মাধ্যমে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পুনরাবৃত্তিই দেশে ঘটতে যাচ্ছে।
একতরফা নির্বাচন ছাড়াও লগি-বৈঠার তান্ডব, ১/১১ সরকার থেকে আমরা (রাজনীতিবিদরা) কি শিক্ষা নিলাম তাও জাতির নিকট পরিষ্কার নয়। পরিসংখ্যান নিলে দেখা যাবে যে, তৃণমূল থেকে আসা রাজনীতিবিদদের পরিবর্তে ব্যাংকলুটেরা ধনীক শ্রেণির হাতেই এখন রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ। ফলে ১/১১ এর মতো যখন দলের দুঃসময় আসে তখন আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং উল্টো খেলা খেলে। দলীয় প্রধান জেলে, যার ভাবমর্যাদার উপর দলের ভাবমর্যাদা নির্ভরশীল, আইনী প্রক্রিয়ায় তার জেলমুক্তি একটি বাতুলতা মাত্র। আইনী প্রক্রিয়ার চেয়ে গণআন্দোলন জোরদার না হলে আইনী দীর্ঘসূত্রতা ও লোকদেখানো ন্যায়বিচার ২০১৮ সালকে পার করে দেয়ার একটি পরিষ্কার চিত্র চোখের সামনে ভেসে ওঠে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার জেল রাজনৈতিক। সরকারের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে বিচারবিভাগ বিচারিক সিন্ধান্ত দেয়ার পারিপার্শ্বিক অবস্থান কোথায়? রাজনৈতিক জেল রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার একমাত্র নির্ভরযোগ্য স্থান আদালত নয়, রাজপথ। রাজপথে থাকতে গিয়ে বিএনপিকে অনেক মাশুল দিতে হয়েছে বটে, কিন্তু রাজপথেই যাদের জীবন মরণ তাদের কি রাজপথের বাইরে যাওয়ার উপায় আছে? এ বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে দলের দন্ডমুন্ডের কর্তাদের। জেলা ভিত্তিক কমিটি কোথাও আছে, কোথাও দ্ব›েদ্ব-কোন্দলে দিন কাটাচ্ছে, কোথাও নিষ্ক্রীয়, তবে মেক্সিমাম জেলায় বিএনপি কমিটি গঠিত হয়েছে সাংগঠনিক পদ্ধতিতে নয় বরং তদবিরে। এ বিষয়গুলি সমাধান করাও কোন কঠিন বিষয় নয়, যদি ওপরওয়ালাদের সদিচ্ছা থাকে।
বিএনপি চেয়ারম্যানের মুক্তির আইনী লড়াইয়ে নিযুক্ত আইনজীবীরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এবং নিযুক্ত আইনজীবীরা দেশের সেরা আইনজীবী। পেশার পাল্লায় ওজন করলে জ্ঞান ও আইন পেশায় পারদর্শী তারা আর্ন্তজাতিক মানের। ফলে মামলা পরিচালনায় কোন ক্রটি-বিচ্যুৎ নাই এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়। দেশব্যাপী জাতীয়তাবাদী সকল আইনজীবীই বিএনপি চেয়ারপার্সনের জামিনের জন্য উদগ্রীব এবং তারা এটাকে প্রেসটিজ ইস্যু মনে করছেন। এ মর্মে তাদের উৎকণ্ঠার অভাব নাই। তারপরও এতো বড় শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমাজ সাংগঠনিকভাবে কি কোন ভ‚মিকা রাখতে পেরেছে? এর কারণ কি? (একটু গভীরে যাওয়া দরকার, অবশ্য গভীরে যাওয়ার ফুসরৎ (সময়) আমাদের কারো নাই, বড় নেতাদের থাকবে কী করে?) অ্যাডভোকেট শামছুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ এরশাদ বিরোধী আন্দোলন সাংগঠনিকভাবে দেশব্যাপী আইনজীবীদের যেভাবে উজ্জীবিত করেছিল বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে এরূপ অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আইনজীবীশক্তি কি সাংগঠনিকভাবে উল্লেখযোগ্য কোন ভ‚মিকা কি রাখতে পেরেছে? কেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের সাংগঠনিক শক্তি মজবুত হয় নাই? এ জন্য কি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একটুও দায়ী নয়? এক সময় বিএনপিপন্থী সিনিয়র আইনজীবীদের প্রচেষ্ঠায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের একটি প্লাটফর্ম গঠিত হয়েছিল যার নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতি টি. এইচ. খাঁনসহ স্বনামধন্য দেশবরণ্য আইনজীবীবৃন্দ। এখন সে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সাংগঠনিক শ্রী হারিয়েছে। বার কাউন্সিলের নির্বাচনে বিএনপি পন্থীদের ভরাডুবির কারণ ব্যাখ্যা করে এক নেতা যখন সাংবাদিক সম্মেলন (যদিও মায়া কান্না) করছিলেন ঠিক ঐ মুহূর্তে আরেক নেতা সরকার দলীয় যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদেরকে ফুল দিয়ে সম্বর্ধনা জানানোর ছবি ভাইরাল করছেন, ঐ সময় তিনি হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন যে, ক্ষমতাসীনদের হাতে তার নেত্রী কারাবন্দী। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কাজীর গোয়ালের মতো, গাভী কিতাবে আছে, গোয়ালে নাই। তাদের সাংগঠনিক প্লাটফর্ম অস্তিত্বহীন, এটাই বার কাউন্সিল নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী শক্তির পরাজয়ের অন্যতম কারণ।
এবারও যদি সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে সরকারের এক তরফা জাতীয় নির্বাচন ঠেকানো না যায় তবে তা হবে জাতির জন্য অশনি সংকেত। এখনতো সরকার বিরোধীরা গুম, খুন, পলাতক ও কারাবন্দী রয়েছে। খোদা না করুন এমন দিন তো আসতে পারে, যে দিন সরকার বিরোধীদের এ দেশে থাকা নিষিদ্ধ করা হতে পারে। সরকারের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী (স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর মতিয়া চৌধুরী সংসদে দাঁড়িয়ে দৃঢ়তার সাথে যখন বলেন রাজাকারদের সন্তানদের তারা চাকরি দেবেন না তখন ভবিষ্যত নিয়ে যদি আমরা গভীরে যাই তবে একথাও পরিষ্কার যে, সরকার অর্ধশতাব্দী পরেও জাতিকে দ্বিখন্ডিতভাবেই চিন্তা করছে)। মতিয়া চৌধুরী, হাসানুল হক ইনু প্রমুখ মন্ত্রীরা এক সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সম্পর্কেও অশালীন কথা বলেছেন। আজ প্রধানমন্ত্রী তাদের সাথে হাত মিলিয়েছেন শুধুমাত্র বিএনপিকে কোণঠাসা করার জন্য। তারাও (বামপন্থী) বুক ফুলিয়ে স্পষ্টই বলে দিয়েছেন যে, তাদের ছাড়া আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে পারবে না। অনুরূপ মন্তব্য এরশাদও করছেন, যাকে এক সময় শেখ হাসিনা মহাচোর বলতেন।
আমাদের এলাকায় একটি প্রবাদ চালু রয়েছে যে, ‘যা হয় না ৯ দিনে তা হবে না ৯০ দিনে’। ইতোমধ্যে ৯ বছরতো পার হয়েই গেল। ২০১৮ সালের অর্ধেক পার হয়ে যাচ্ছে। কার্যকর ভ‚মিকা নেয়ার সময় রয়েছে মাত্র আর তিন মাস। এ সময়ের মধ্যে কার্যকর ভ‚মিকা (অবশ্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে) না নিলে এবারও ট্রেন মিস্ করতে হবে এবং এ জন্য শুধু বিএনপিকে নয় পস্তাতে হবে সকলকেই। ভয় পাওয়ার কিছুই নাই। কারণ সরকারী দলে গৃহজ্বালা শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের সামনে সরকারি দলে নিজেদের মধ্যে মারামারি হচ্ছে, প্রভাবশালী মন্ত্রীকে (মতিয়া চৌধুরী) নির্বাচনে এলাকায় অবাঞ্চিত করা হয়েছে প্রভৃতি মিলিয়ে তারাও চিন্তামুক্ত এ কথা ধারণা করা সঠিক হবে না। তবে বিএনপিকে নিজের ক্ষতস্থানে ঔষধ লাগাতে হবে, শুধু মাত্র পরের দোষ দেখলে হবে না।
জাতির সামনে এখন ক্রান্তিকাল। শুধুমাত্র গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া আবশ্যক। ধর্মভিত্তিক ও ধর্ম নিরপেক্ষ সকলেই যদি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে পারে তবেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট জাতীয় নেতৃবৃন্দের একটি কৈফিয়ৎ থাকে, নতুবা জবাব দিহিতার দায় থেকে মুক্তি পাওয়ার কোন রাস্তা নাই। বিষয়টি সর্বস্তরের জাতীয় নেতৃত্বের বিবেকের উপর ছেড়ে দেয়া হলো। বিএনপি ইতোপূর্বে এমন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে নাই যা এখন করছে। দলের সকল স্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহিতায় আনা যায় নাই, অন্যদিকে কর্মের পুরষ্কার বা তিরষ্কারের প্রচলন না থাকার বিষয়টি অনেকাংশে দায়ী। এ ক্রান্তিকাল উত্তোরণের একমাত্র অবলম্বন রাজপথ। ঐতিহাসিক রাজপথই নির্দলীয় তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করবে। এ রাজপথই দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি এনে দেবে। অন্যথায় কেউ যদি খালেদা জিয়াবিহীন (মাইনাস) নির্বাচনের কথা চিন্তা করেন, বা নতুন করে সংস্কারবাদী গ্রুপ সৃষ্টি হয় তা হবে গুড়ে বালি। কারণ বিষয়টি বিশ্বাস ঘাতকরা মেনে নিতে পারে, কিন্তু তৃণমূল মেনে নেবে না। এমতাবস্থায় নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করা দরকার। শুধু জামিন নয়, সাজামুক্ত খালেদা জিয়া চাই, নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নেতৃত্ব দেবেন খালেদা জিয়া এটাই তৃণমূলের কামনা বাসনা। পুনরায় বলছি, এ জন্য রাজপথই একমাত্র অবলম্বন এবং এ জন্য স্বেচ্ছায় কারাবরণের জোরালো সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া এ ক্রান্তিকাল অতিক্রমের বিকল্প কোন রাস্তা নাই। বিষয়গুলি বিএনপিকে আরো গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। কর্মীদের মুক্তচিন্তার সুযোগ দিতে হবে এবং তদবির নয় সাংগঠনিক পদ্ধতিতে দলকে আরো গতিশীল করতে হবে। মনে রাখতে হবে, তদবিরে সরকার চলতে পারে কিন্তু রাজনৈতিক দল নয়।
লেখক: কলামিস্ট ও আইনজীবী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।