শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
মী ম মি জা ন
একদিন তিনি দীওয়ান-ই-হাফিজ থেকে কতকগুলি কবিতা আবৃত্তি করে শোনান। শুনে আমি এমনই মুগ্ধ হয়ে যাই যে, সেইদিন থেকেই তাঁর কাছে ফারসি ভাষা শিখতে আরম্ভ করি।
তাঁরই কাছে ক্রমে ফারসি কবিদের প্রায় সমস্ত বিখ্যাত কাব্যই পড়ে ফেলি।গ্ধ
এছাড়াও নজরুলের আরবি ও ফারসি বিষয়ে পান্ডিত্য সম্পর্কে সদালাপ ডট অর্গ এ বর্ণনা করা হয়েছে, ্র একাধিক আরবী-ছন্দ নিয়ে নজরুলের অসংখ্য কবিতা আছে, বাংলা ভাষার আরও এক প্রতিভাবান কবি ফররুখ আহমদ এ বিষয়ে কারিশমা দেখাতে পারেনি।
ইরানের কবি হাফিজ আর ওমর খৈয়ামের যতজন ‘কবি’ অনুবাদক আছেন তার মধ্যে নজরুল একমাত্র মূল ফারসী থেকে অনুবাদ করেছেন, বাকী সবাই ইংরেজীর থেকে।
“ফারসী” এবং “আরবী”তে নজরুল এর জ্ঞান ছিল পাণ্ডিত্যের পর্যায়ে।গ্ধ
নজরুলের অনুবাদ যে অন্য ১০৩ জন অনুবাদকের অনুবাদ থেকে শ্রেষ্ঠ তা আমরা একটা তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে জানব। তুলনামূলক আলোচনার শুরুতে ফিটজেরাল্ডের অনূদিত রুবাইয়াৎ তুলে ধরছি ও তার পর সেই রুবাইয়াৎ এর অনুবাদগুলি ক্রমান্বয়ে তুলে ধরছি।
ফিটজেরাল্ডের অনুবাদ:
‘ঞরং ধষষ ধ ঈযবয়ঁবৎ-নড়ধৎফ ড়ভ ঘরমযঃং ধহফ উধুং
ডযবৎব উবংঃরহু রিঃয গবহ ভড়ৎ চরবপবং ঢ়ষধুং:
ঐরঃযবৎ ধহফ ঃযরঃযবৎ সড়াবং, ধহফ সধঃবং, ধহফ ংষধুং,
অহফ ড়হব নু ড়হব নধপশ রহ ঃযব ঈষড়ংবঃ ষধুং.
কান্তি ঘোষের অনুবাদ:
ছকটি আঁকা সৃজন ঘরের
রাত্রী দিবা দুই রঙের,
নিয়ৎ দেবী খেলছে পাশা
মানুষ ঘুঁটি সব ঢঙের;
প’ড়ছে পাশা ধ›রছে পুনঃ,
কাটছে ঘুঁটি, উঠছে ফের—
বাক্সবন্দী সব পুনরায়,
সাঙ্গ হ›লে খেলার জের ৷
সিকান্দার আবু জাফরের অনুবাদ:
দিন-রাত্রীর রঙ দিয়ে আঁকা দাবার ছকটি মেলে
নসীব খেলছে বিচিত্র খেলা মানুষের ঘুঁটি চেলে;
ঘর থেকে ঘরে চালে চালে ঘুঁটি পড়ছে মরছে আর
দান শেষ হলে আবার তাদের বাক্সে রাখছে ঢেলে ৷
যেখানে মূল ফারসির বঙ্গানুবাদটি হচ্ছে,
আমরা খেলনা আর আসমান খেলোয়ার—বাস্তবে দেখ কল্পনায় নয় ৷কিছুটা সময় এর মধ্যে দেওয়া-নেওয়ার খেলা করে—সিন্দুকে মানুষকে একে একে পুরে রাখে ৷
কাজী নজরুলের অনুবাদ:
আমরা দাবার খেলার ঘুঁটি, নাইরে এতে সন্দ নাই!
আসমানী সেই রাজ-দাবাড়ে চালায় যেমন চলছি তাই ৷
এই জীবনের দাবার ছকে সামনে পিছে ছুটছি সব
খেলা শেষে তুলে মোদের রাখবে মৃত্যু-বাক্সে ভাই!
অনুবাদগুলো পর্যালোচনা করলে ফিটজেরাল্ডের অনুবাদের অতিরঞ্জিত কবি প্রতিভার লক্ষণ পাওয়া যায়৷ আর বাংলা অনুবাদে তার আরেক রূপ পরিলক্ষিত হয়৷ কান্তিচন্দ্র ঘোষ ফিটজেরাল্ডের সবটুকুই নিয়েছেন সিকান্দার আবু জাফরের মত তবু কবি কল্পনায় বিস্তর ফারাক ৷ অন্যদিকে কাজী নজরুল ইসলামের রুবাইয়াৎ আরবি ঘোড়ার তেজে চলেছে নিখূঁত ছন্দে কেননা ফারসি ভাষা আয়ত্তে থাকার ফলে মূলভাব তার আতœগত ছিল।
আসুন আরেকটি পর্যালোচনা করি!
ফিডজেরাল্ডের অনূদিত রুবাইয়াৎ:
“ঐড়ি ংবিবঃ রং সড়ৎঃধষ ঝড়াৎধহঃু!”—ঃযরহশ ংড়সব:
ঙঃযবৎং—”ঐড়ি নষবংঃ ঃযব চধৎধফরংব ঃড় পড়সব!” অয, ঃধশব ঃযব ঈধংয রহ যধহফ ধহফ ধিরাব ঃযব জবংঃ;
ঙয, ঃযব নৎধাব গঁংরপ ড়ভ ধ ফরংঃধহঃ উৎঁস!
কান্তি ঘোষের অনুবাদ:
রাজ্যসুখের আশায় বৃথা
কেওবা কাটায় বরষা মাস;
স্বর্গসুখের কল্পনাতে
পড়ছে কারুর দীর্ঘশ্বাস ৷
নগদ যা’পাও হাত পেতে নাও,
বাকীর খাতায় শূন্য থাক্ ―
দূরের বাদ্য লাভ কি শুনে? ―
মাঝখানে যে বেজায় ফাঁক ৷
যেখানে নজরুলের অনুবাদ:
করছে ওরা প্রচার―পাবি স্বর্গে গিয়ে হুর পরী,
আমার স্বর্গ এই মদিরা, হাতের কাছের সুন্দরী৷
নগদা যা পা’স তাই ধরে থাক, ধারের পণ্য করিসনে,
দূরের বাদ্য মধুর শোনায় শুন্য হাওয়ায় সঞ্চরী ৷
মূল ফারসির বাংলা ভাষান্তর হলো:
সকলে বলে বেহেস্তের আনন্দ হুরপরীতে―আমি বলি আমার আনন্দ দ্রাক্ষারসে ৷ বাকী মুল্যের জন্য নগদ হাতছাড়া কর না―দূরের খুশির বাদ্য তীব্রই শোনায়।
ফিডজেরাল্ড, কান্তি ঘোষ ও নজরুলের অনুবাদের মধ্যে ভাব, রস, শব্দ চয়ন ও রুবাইয়াৎ এর দেহ সৌষ্ঠব গঠণে নজরুল শ্রেয়।
A Book of Verse underneath the bough,
A jug of wine, a book of verse and thou
Beside me singing in the wilderness
Oh, wilderness were paradise enow!
( Edward Fitzgerald) (অসমাপ্ত)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।