বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
রোজাদারের কর্তব্য হলো সত্য কথা বলা এবং কোন অবস্থাতেই মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ না করা। কোন দিকের ভীতি প্রদর্শন অথবা প্রলোভন প্রদর্শনের সময়ও সত্যের ওপর অবিচল থাকা। প্রকৃত মুসলমানের লক্ষণ এর মাধ্যমেই বিকশিত। সততা ও সত্যবাদিতার রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার জন্য মহান রব্বুল আলামীন ঈমানদার বান্দাগণের প্রতি আহŸান জানিয়ে ইরশাদ করেছেন: ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভূক্ত হও।’ -সূরা আত্ তাওবাহ: আয়াত ১১৯।
বস্তুত: সততা ও সত্যবাদিতা ব্যক্তি জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন ও আন্তর্জাতিক জীবনের অঙ্গনে সম্মান ও মর্যাদালাভের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই গুণের পরিচয় আল্লাহ জাল্লা শানুহু এভাবে প্রদান করেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: প্রকৃত তারাই মুমিন যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ঈমান এনেছে এবং এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করেনি এবং নিজেদের জান মাল দিয়ে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করেছে। তারাই সত্যবাদী। -সূরা আল হুজরাত: আয়াত ১৫। যার মাঝে এ গুণের সমাহার থাকবে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষই তাকে ভক্তি ও শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখবে এবং পরকালেও সে মহান আল্লাহ পাকের নিকট হতে উত্তম প্রতিদান পাবে। সততা ও সত্যবাদিতার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন: সত্যবাদিতা পুণ্যের কাজ। আর পুণ্য জান্নাতে পৌঁছিয়ে দেয়। অপর দিকে মিথ্যাকে সকল পাপের উৎস হিসাবে আখ্যায়িত করে বলা হয়েছে, প্রকৃতই মিথ্যা সকল পাপের জননী। সমাজ জীবনে যারা মিথ্যাবাদী ও মিথ্যাচারী তার সকলের নিকট মিথ্যাবাদী ও ঘৃণিত ব্যক্তি বলে পরিচিতি লাভ করে। সকল মানুষই তাদের ঘৃণার চোখে দেখে এবং তাদের সংস্পর্শ ও সংশ্রব থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলে। অপর দিকে যারা সত্যবাদী ও সত্যাশ্রয়ী তাদের শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করে এবং তাদের সান্নিধ্যের জন্য ব্যকুল হয়ে উঠে।
বস্তুত: যাবতীয় পানাহার ও কামাচার পরিত্যাগ করার নামই হচ্ছে সিয়াম সাধনা। এই সাধনা শুধুমাত্র এতেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এই সাধনা করতে হবে আল্লাহর জন্য, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক পূর্ণাঙ্গ জীবন অতিবাহিত করার স্থির সংকল্প সহকারে। কেউ যদি এই ভাবধারাকে অক্ষুণœ রেখে সিয়াম পালন করে, তাহলে তাকে অবশ্যই মিথ্যা কথা বলা ও মিথ্যাচারীতা পরিত্যাগ করতে হবে। সিয়াম সাধনা যে আল্লাহর জন্য নিবেদিত সেই আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ বিধান পালন করে জীবনের সকল অঙ্গনে পূর্ণ মাত্রায় সংহতি ও সুসামঞ্জস্য সংস্থাপন করতে হবে। সিয়াম পালন করা ও সেই সঙ্গে মিথ্যা কথা বলা, মিথ্যা ও অশ্লিল কাজ কর্ম করা সম্পূর্ণরূপে পরস্পর বিরোধী কাজ। ইসলামের পূর্ণাঙ্গ বিধানের উদ্দেশ্যই হলো মানব জীবনের সকল দিকের সাথে সামঞ্জস্য স্থাপন করা। কিন্তু যে ব্যক্তি রোজা রেখেও মিথ্যা কথা বলে ও মিথ্যা কাজ করে সে মূলত: সিয়াম সাধনাকে অপমান করে এবং মানুষের সামনে সিয়াম সাধনাকে উপহাসের বস্তুতে পরিগণিত করে। পিয়ারা নবী মোহাম্মদ রাসুলুল্লাহ সা. এ জন্যই সুস্পষ্টভাবে এই শ্রেণীর আমলের অসারতা ঘোষণা করেছেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মিথ্যার আমল পরিত্যাগ করল না, তার খাদ্য ও পানীয় পরিত্যাগ করার আল্লাহর কোনই প্রয়োজন নেই। -সহীহ বুখারী। এতে প্রতীয়মান হয় যে, এই শ্রেণীর লোকদের রোজা ব্যর্থ হয়ে যাবে এবং এর দ্বারা কোনো পূণ্য অর্জিত হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।