Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

অস্তিত্ব সঙ্কটে ঐতিহ্যবাহী সিল্ক

রাজশাহীর ঈদবাজার ধীরে ধীরে জমছে

| প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রেজাউল করিম রাজু : ঈদ মানে আনন্দ। চায় নতুন জামা কাপড় জুতো। বছরজুড়ে যায় কেনাকাটা হোক না কেন। ঈদের সময়ের কেনাকাটার আনন্দ আলাদা। উচ্চবিত্ত থেকে নি¤œবিত্ত সবাই সাধ আর সাধ্যের সাথে সমন্বয় করে ঈদ বাজার করে। এবারো শুরু হয়েছে নগর থেকে গ্রাম পর্যন্ত কেনাকাটা। শিক্ষানগরী রাজশাহীতে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয় রমজানের দু’তিন দিন আগে থেকে আরো দিন তিনেক পর্যন্ত। এসময় বাজার বেশ জমজমাট ছিল। এরপর বেচাকেনার ছন্দপতন ঘটে। কারন হলো এখানে বাইরে থেকে লেখাপড়া করতে আসে দেড় লাখ শিক্ষার্থী। এবার রমজানের শুরুতেই গ্রীস্মকালীন ও রমজানের ছটি হয়ে যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এসব শিক্ষার্থীরা নগর ছেড়ে যাবার সময় গ্রামে থাকা স্বজনদের জন্য কেনাকাটা করে নিয়ে যায়। সে কারনে শুরুতে বাজারে বেশ ভীড় ছিল। তারা চলে যাবার পর বেচাকেনায় ছন্দপতন ঘটে। এখন বাজারে আসছে এখানে বসবাসকারীরা। তারা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আসছে। এ বাজার ও বাজার ঘুরছে পছন্দের কাপড়ের জন্য। এখন মূলত ভীড় কাপড়ের দোকানে। এখানকার প্রধান বাজার সাহেব বাজার, আরডিএ মার্কেট, গণকপাড়া মার্কেট, নিউমার্কেট ঘিরে মূলত চলে কেনাকাটা। তাছাড়া ক’বছর হলো নামকরা ব্র্যান্ডের জামা কাপড়, জুতো স্যান্ডেলের শো রুম করা হয়েছে। মূল টার্গেট ষ্টাইলিষ্ট শিক্ষার্থী আর বিত্তবানরা। সেখানে তারাই ভীড় জমাচ্ছে। ঈদ বাজারের খবর নিতে গিয়ে গতকার সাহেব বাজার, আরডিএ মার্কেট আর গণকপাড়াপাড়া পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় কোথাও কোথাও ভীড় থাকলেও বেচাকেনা প্রত্যাশিত মত হচ্ছেনা। ভীড়ের কারন ক্রেতাদের একজনের সাথে থাকছে অনেক জন। এসবিটি ক্লথ স্টোরের তরুণ ব্যবসায়ী সাকির বলেন বাপদাদার ব্যবসা। লেখাপড়া শেষ করে ব্যবসায় এসেছি। এবারে মত এতো কম ব্যবসা কখনো হয়নি। তবে আসা ছাড়িনি। বেতন আর ঈদ বোনাস হলে কেনাকাটা বাড়বে। এখন বাজারে সবচেয়ে বেশী বিক্রি হচ্ছে থ্রিপিস। মেয়েদের পছন্দ জর্জেট সুতি থ্রিপিস। আর ছেলেদের পাঞ্জাবী শার্ট প্যান্ট। হঠাৎ করে আম পাকা গরম শুরু হওয়ায় সুতি কাপড়ের দিকে ঝুকছে। বেশ কজন বিক্রেতা জানান এ বছর মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের টুপিস থ্রিপিস ফোরপিস সালোয়ার কামিজ, জর্জেট, জামদানী কাপড়ের দিকে তরুন তরুনীদের ঝোক বেশী। তাদের চাহিদার দিকে লক্ষ্যরেখে ব্যবসায়ীরা দোকান সাজিয়ে বসেছে। আর ছেলেদের শার্ট প্যান্টের পাশাপাশি রয়েছে পাঞ্জাবীর কাপড়। এরমধ্যে রয়েছে সুতি আর সিনথেটিক্স টরে। রেডিমেড কাপড়ের দোকানে রয়েছে রকমারী জামা কাপড়। নি¤œবিত্তের ভরসা ফুটপাতের জামা কাপড়। সাহেব বাজার, স্টেশন রোডসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ফুটপাতে জামা কাপড়। সেখানে এখনো তেমন জমেনি। ক্রেতারা আসছে দরদাম করছে। বিক্রি হচ্ছে কম। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা শেষ মুহুর্তে তাদের বেচাকেনা জমবে। বার বার এমনটি হয়। ফ্যাশান হাউস গুলোয় ঢু মেরে দেখা যায় সেখানে বিত্তবানদের বিলাসী কেনাকাটা চলছে। এখনো তেমন বিক্রি শুরু হয়নি শাড়ি বাজারের। বিক্রেতারা জানান, শাড়ির ক্রেতার সংখ্যা দিন দিন কমছে। টেইলার্স গুলোয় খোজ নিয়ে জানাযায় এখনো তারা প্রত্যাশা মত অর্ডার পাননি। সাহেব বাজারে আসা একজন ক্রেতা জুইসি বলেন ঈদের কেনাকাটা একটু একটু করে শুরু করেছি। তবে গতবারের চেয়ে এবার সব কাপড়ের দাম বেশী। একই থ্রিপিস ও একই মানের কাপড় একেক দোকানে একেক নামে বিক্রি হচ্ছে। আর দামও একেক রকম। সবাই যেন ক্রেতার ব্যাগ কাটাতে ব্যাস্ত।
রাজশাহীতে কেনাকাটা করতে গেলে প্রথমে চলে আসে সিল্কের নাম। রাজশাহী সিল্কসিটি হিসাবেও খ্যাত। এক সময়ে রাজশাহী সিল্কের ভীষন দাপট থাকলেও এখন তা আর নেই। এ অঞ্চলে আর তেমন সিল্কের সুতো হয়না। একে একে নিভিছে দেউটির মত করে অর্ধশত ফ্যাক্টরীর বাতি নিভতে নিভতে এখন দশ বারোটায় ঠেকেছে। সেখানে আর রাজশাহীর সুতো নেই। এরা চিন ভিয়েতনাম থাইল্যান্ড থেকে সুতো নিয়ে কাপড় তৈরী করছে। আগের সেই মান আর দাম কোনটিই নেই। তবুও এরা ধরে রেখেছে সিল্কের ঐতিহ্য। এবার সেখানে তেমন জমে ওঠেনি। দামও গতবারের চেয়ে চড়া। একজন ব্যবসায়ী জানালেন মাস তিনেক আগেও আমদানী সুতার দাম ছিল প্রতিকেজি পাঁচ হাজার টাকা। হঠাৎ করে সরকার ট্যাক্স বাড়ানোর কারনে এখন তা দাড়িয়েছে সাত হাজার টাকায়। আগে যে শাড়ি বিক্রি হয়েছে দেড় হাজার টাকায় এখন তা বেড়ে দাড়িয়েছে প্রায় আড়াই হাজার টাকা। শুধু শাড়ি নয় সব সিল্কের কাপড়ের দাম বেড়েছে। দু:খ করে বলেন এমনটি চলতে থাকলে যেকটি কারখানা চালু আছে সেকটি আর থাকবেনা। হারিয়ে যাবে রাজশাহী সিল্কের নাম। তারপর তারা নজরকাড়া ডিজাইনের বিভিন্ন পোষাক নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন ক্রেতার। জামা কাপড় কেনার পর শুরু হয় ম্যাচ করে জুতো স্যান্ডেল কেনা। বড় বড় শোরুম থেকে ফুটপাত পর্যন্ত নানা ডিজাইনের জুতো স্যান্ডেল সাজিয়ে অপেক্ষায প্রহর গুনছেন। তেমনি কসমেটিক্সের দোকান গুলোর অপেক্ষা। ঈদের দিন নতুন বাটি প্লেটে সেমাই ফিরনী পোলাও পরিবেশন না করলে পূর্নতা আসেনা গৃৃহিনীদের। তাদের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষায় তৈষজপত্রের ব্যবসায়ীরা। বছরের এসময় ঘরের পর্দা সোফা সেটের কাপড় বদল করা হয়। সেখানে রয়েছে প্রস্তুতি। অর্ডার কিছু কিছু মিলছে এমনটি জানালেন সাহেব বাজার বড় রাস্তার ধারের দুজন ব্যবসায়ী। নানা ছাড় নিয়ে অপেক্ষায় ইলেক্ট্রনিক্সের ব্যবসায়ীরা। সর্ব শেষে বিক্রি হয় পোলাও চাল, সেমাই মশল্লাসহ আনুষঙ্গিক জিনিষপত্র। বেনেতি ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিয়েছেন। প্রত্যেক ব্যবসায়ীর প্রত্যাশা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঈদ বাজার পুরোপুরি জমে উঠবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিল্ক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ