Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাম নিয়ে বেঁচে আছে রাজশাহী সিল্ক

প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রেজাউল করিম রাজু : শবেবরাতের পর থেকে একটু একটু করে বাড়তে বাড়তে মধ্য রমজানে এসে পুরোপুরি জমে উঠছে ঈদ বাজার। ঈদ মানে আনন্দ। নতুন জামা-কাপড়। তাই যার যার মত সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে চলছে কেনাকাটা। বড় বড় বিপণী বিতান থেকে রাস্তার ফুটপাত সর্বত্র ভিড়। বিত্তবানদের বিলাসী কেনাকাটার পাশাপাশি মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তদের কেনাকাটার দৃশ্য নজর এড়ায় না। বিত্তবানরা ভিড় করছেন বনেদী মার্কেটগুলোয়। আর অন্যরা সাধারণ বাজারে। শিক্ষানগরী হিসেবে পরিচিত রাজশাহীতে নগরীর বাইরে থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে আসে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা কম নয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল কলেজ রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন কলেজ ও কারিগরি কলেজ ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করে। পরে ভিড় হবে ভেবে শবেবরাতের পর থেকে এরা মূলত কেনাকাটা শুরু করে দর্জির দোকানে বানাতে দিয়েছে। ফলে এবার আগেভাগে বেড়েছে দর্জি দোকানগুলোর ব্যস্ততা। এখন ঈদ করতে বাড়ি ফেরার সময় নিজেদেরটার পাশপাশি গ্রামে থাকা স্বজনদের জন্য কেনাকাটা করে নিয়ে যাচ্ছে। আবার গ্রামে থাকা স্বজনদের অনেকে মোবাইল ফোনে পোশাকের ছবি পাঠিয়ে দাম বিকাশ করে দিচ্ছে। তাদের জন্যও কেনাকাটা চলছে। আবার অনেকে প্রথম দিকে একসেট বানানোর পর আরো নতুন নতুন ডিজাইন দেখে আরো একসেট নিচ্ছে। এমন কথা জানালেন ক’জন ব্যবসায়ী। এদের কারণে কাপড় জুতো কসমেটিক্স-এর দোকানগুলোয় ভিড় বেশি। বাস্তবতা হলো এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠনগুলো নগরীর অর্থনীতিতে ভাল ভূমিকা রাখছে। এরা ছাড়াও কেনাকাটা করছে স্থানীয়রা। তারা শুরু করেছেন রয়ে-সয়ে। বেতন বোনাসের টাকা হাতে পাবার পর। সকাল নটা-দশটা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জমজমাট থাকছে ঈদ বাজার। ক্রেতার চাপ সামলাতে কাহিল দোকান মালিক আর বিক্রয়কর্মী। বিক্রয়কর্মীরা ব্যস্ত ক্রেতাদের নানা কথা বলে একটার পর একটা পোশাক দেখিয়ে আকৃষ্ট করতে। ক্রেতার পছন্দ আর আন্দাজমত ক্রয় ক্ষমতা বুঝে দাম হাঁকছে। একই থ্রিপিসের দাম একেকজনের কাছে একেক নামে আর দামে বিক্রি করছে। আর মালিক ব্যস্ত ক্যাশবাক্স সামলাতে। আবার অনেক ক্রেতা আছে এক দোকান থেকে আরেক দোকানে। যদি আরো ভাল ডিজাইন পাওয়া যায়। কিংবা দামটা যাচাই করে নিতে। বেশকটি দোকান পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, একই ধরনের থ্রিপিসের দাম কোথাও তিনগুণ দাম হাঁকা হচ্ছে। যদি বলা হয় ঐ দোকানে এর দাম এত আপনার এখানে এতো বেশি কেন? বিক্রয়কর্মীর ঝটপট উত্তর চকচক করলেই সোনা হয় না। একই রকম দেখতে হলে কি হবে। এটা পাকিস্তানি কি ভারতীয়। কাপড়ের মান ভাল ইত্যাদি। আবার অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতা সাহস করে দাম অর্ধেকের কম বললে একটু দর কষাকষি করে দিয়ে দিচ্ছে। এমন তিনগুণ দাম চাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তর আসে একদামে কি সব বিক্রি হয়। আমরাও দাম চাই, ক্রেতারাও দাম বলে। এতে ক্রেতাদের কেউ জেতে কেউ হারে। তবে মালিকদের ব্যবসা ঠিক থাকে। বছরের একটা মাসেইতো ব্যবসা। এবারো ভারতীয় বিভিন্ন সিরিয়ালের ডিজাইন ঘাড়ে ভর করেছে উঠতি বয়সীদের। নানা নামের থ্রিপিস বিক্রি চলছে। তবে ভারতীয় এসব থ্রিপিসকে ধাক্কা দিয়েছে দেশীয় থ্রিপিস। ভাল মানের কাপড় আর ডিজাইন নিয়ে এসেছে। ক্রেতার মন বুঝে অনেকে দেশীয় থ্রিপিস ভারতীয় বলে বিক্রি করছে।
রাজশাহীর বড় বাজার সাহেব বাজার, আরডিএ মার্কেট, গণকপাড়া মার্কেট, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকান আর মার্কেটে চলছে ঈদ কেনাকাটা। সব শ্রেণীর মানুষের ভিড় সাহেব বাজার, গণকপাড়া আরডিএ মার্কেটে। ছেলেদের পছন্দ আরডিএ আর নিউমার্কেট। আরডিএ মার্কেটে প্রচ- ভিড়। এখানে এক ছাদের নিচে সব জিনিস পাওয়া যায় বলে। তাছাড়া মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ত সবার জন্য মাল থাকে। যাদের কাপড়-চোপড় কেনাকাটা শেষ হয়েছে তারা এখন ভিড় করছে ম্যাচিং করে জুতো-স্যান্ডেল আর কসমেটিক্স কেনার জন্য। নিম্নবিত্তদের ভিড় হকার্স মার্কেটগুলোয়। জামা-কাপড়ের জন্য গণকপাড়া রাস্তার ধারে। আর স্যান্ডেলের জন্য ভুবনমোহন পার্কের চারপাশ জুড়ে থাকা জুতো-স্যান্ডেলের দোকান। অনেক বিত্তবানদের এখানে দেখা মেলে। তবে নিজেদের জন্য নয়। কাজের ছেলে বা বুয়ার জন্য। রাজশাহী মানে রেশমনগরী। বিসিকের রেশমপল্লী আর সোনাদিঘী মোড়ের দু’একটা দোকান। নানা ডিজাইনের সিল্কের শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, শার্টসহ সব বয়েসী মানুষের জন্য সিল্কের পোশাক নিয়ে সেজেছে রেশম কারখানার শোরুমগুলো। কাপড়ের মান নিয়ে যতই প্রশ্ন থাকুক। নজর কাড়া ডিজাইন নজর কাড়ছে ক্রেতাদের। গাড়ির ভিড় সব সময় ঐ এলাকায়। সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টরি সপুরা সিল্ক মিলস তাদের বিশাল শোরুমে সাজিয়েছে রেশম ছাড়াও সুতিসহ দেশী-বিদেশী কাপড় দিয়ে। রয়েছে মেয়েদের বিভিন্ন জিনিস। সব বয়েসী ক্রেতাদের জন্য এমন আয়োজন। সিল্কের বিভিন্ন শোরুম ঘুরে দেখা যায়, দেড় হাজার থেকে ত্রিশ-চল্লিশ হাজার টাকা দামের সিল্কের শাড়ি রয়েছে। সব সিল্কের শাড়ি হলেও মানের দিক দিয়ে রকম-ফের রয়েছে। খাঁটি মানের সিল্কের পণ্য নিতে হলে তাকে চড়া দাম দিতে হবে। সাধারণের জন্য তাই কৃত্রিম রেশম সুতা দিয়ে তৈরি হয়েছে শাড়ি পাঞ্জাবি শার্ট। যার ফলে দাম কম রাখা যাচ্ছে। এ  যেন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো। খাঁটি মানের রেশম কাপড় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রাজশাহী রেশম কারখানায় দু’দশক ধরে তালা ঝুলছে। যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হচ্ছে। সবার প্রতিশ্রুতি রেশম কারখানা খুলে দিয়ে রেশমের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হবে। মরা পদ্মায় বালি চরের বিস্তৃতি বেড়েছে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। এখনতো রেশম কাপড় তৈরি হয় চায়না ভিয়েতনাম থেকে আনা সুতো দিয়ে। এখানে উৎপন্ন হয় খুব সামান্য পরিমাণ সুতা। এর মধ্যেই নাম নিয়ে বেঁচে আছে রাজশাহীর রেশম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নাম নিয়ে বেঁচে আছে রাজশাহী সিল্ক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ