পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতে যখন মুসলমানদের নামাজ পড়ার জায়গা ও ঐতিহাসিক মুসলিম ব্যক্তিত্বদের ভাবমর্যাদা বিনষ্ট করা নিয়ে উত্তেজনা চলছে তখন ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রশস্তি করে কবিতা (‘নাতিয়া শায়েরি’) রচনা করে চলেছেন এক হিন্দু পÐিত। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া।
যার কবিতায় উঠে এসেছে মহানবীর প্রশংসা, তিনি হচ্ছেন পÐিত রাম সাগর পৃথ্বিপাল ত্রিপাঠী। তিনি অবশ্য পরিচিতি শুধু সাগর ত্রিপাঠি নামে। তার পরিবার আবার অযোধ্যার রাম লীলা বিন্যাস মন্দির ট্রাস্টের পৃষ্ঠপোষক। কিন্তু ৬৮ বছর বয়সী সাগর ত্রিপাঠী নিজেকে পরিচিত করেছেন ভিন্ন ভাবে, শায়রি বা কবিতার মাধ্যমে। তার কবিতায় আসছে স্রষ্টার প্রশস্তির সঙ্গে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রশংসা। তিনি বিশ^ ব্রাহ্মণ পরিষদেরও সভাপতি।
কেন? এর উত্তরে সাগর ত্রিপাঠী টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, “নবী মুহাম্মদ শুধু মুসলিমদের নন, তিনি বিশ্ব মানবের। তাই তার কাছে করুণা চাওয়ায় কোনো ভুল নেই।”
একটি শের-এ তিনি বলেছেন, ‘সিরফ এক কওম কি নেহি হ্যায় ও/ রহমতে আলামিন হ্যায় আকা (তিনি শুধু একটি কওমের নন, তিনি সারা বিশে^র জন্য আল্লাহর রহমত)।
ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে নয়, মুহাম্মদ (সা.)কে সাগর ত্রিপাঠী দেখেন মানবতার প্রতীক হিসেবে, সা¤প্রদায়িকতার স¤প্রীতির প্রচারক হিসেবে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, মুম্বাইয়ের কোলাবায় সাগর মুখী যে ফ্ল্যাটে সাগর ত্রিপাঠী থাকেন, সেখানে তার অর্জিত বিভিন্ন পুরস্কারের সঙ্গে রয়েছে মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন, মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনী। সেই সঙ্গে আছে হিন্দুদের পবিত্র গ্রন্থ গীতা ও রামায়ণ। তার বসার ঘরে বিশাল সোফার পেছনে রয়েছে কিছু জায়নামাজ, যাতে তার মুসলিম ভক্তরা এলে নামাজ পড়তে পারেন।
সাগর ত্রিপাঠি উর্দু ও দেবনাগরীতে কবিতা রচনা করেন। তার কবিতায় গঙ্গা-যমুনা তাহজিব-এর (যৌথ সংস্কৃতি) প্রকাশ দেখা যায়।
অযোধ্যার পÐিত পরিবারের একজন হয়ে বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির নির্মাণের বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটি এখন আদালতে বিচারাধীন বিষয়, আমি বেশি কিছু বলতে চাই না।
“তবে এটুকু বলতে পারি, যদি মানুষ তাদের অহমবোধ ছাড়ে, আর রাজনীতিকরা দ‚রে থাকে, তবে এই সমস্যার সমাধান সহজেই সম্ভব।”
উত্তর প্রদেশের সুলতানপুর জেলায় জন্ম নেওয়া সাগর ত্রিপাঠীর কবি হয়ে ওঠা সহজ ছিল না। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর পরিবার চাইছিল, তাদের ছেলে হবে সরকারি কর্মকর্তা। কিন্তু উর্দু কবি রঘুপতি সাহাই ফিরাক গোরখপুরীর প্রভাবে কবি জীবনই বেছে নেন সাগর ত্রিপাঠী।
“আমার মনে হয়েছিল, আমি বরং তার জন্য চা-পানি আনা নেওয়া করব, আর তার কবিতা শুনব,” হাসতে হাসতে বলেন সাগর ত্রিপাঠী।
তরুণ বয়সে মুম্বাইয়ে পাড়ি জমানোর পর অর্থ রোজগার ভালোই করেছিলেন তিনি।
“কিন্তু তার মধ্যেও আমি মনের মাঝে এক ধরনের শ‚ন্যতা অনুভব করতাম, মনে হত কী যেন নেই, আমার সেই শ‚ন্যতা ভরিয়ে দিয়েছে কবিতা।”
ত্রিপাঠি তার বই বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ গরিব মুসলমান ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য ব্যয় করেন।
সাগর ত্রিপাঠীর প্রশংসা করে খ্যাতিমান উর্দু কবি আবদুল আহাদ সা‘জ টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, “সমকালীন উর্দু মুশায়রা (কবিতার আসর) জগতে সাগর সাহেব একটি গুরুত্বপ‚র্ণ নাম, তার অবদান প্রশংসার দাবি রাখে।”
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।