পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও মালিকের ৫৬৪১০টি গাড়ির মধ্যে শুধুমাত্র ১৬টি গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট রিনিউ করা হয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে জানানো হয়েছে, বেধে দেওয়া একমাস সময়সীমার মধ্যে এই ১৬টি গাড়ির পক্ষেই কেবল ফিটনেস সার্টিফিকেট রিনিউ করা হয়েছে। বিআরটিএ বলেছে, জানতে চাওয়ার পরও কোনো সংস্থা ও মালিক জানায়নি যে, তাদের গাড়ি রাস্তা থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। গত মার্চ মাসে বিআরটিএ’র নজরে আসে, বিভিন্ন সরকারি সংস্থার, যেমন বাংলাদেশ পুলিশ, মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রকল্পের নামে রেজিস্ট্রিকৃত ৩৭৪০টি গাড়িসহ বেসরকারি মালিকানাধীন ৫২৬৭০টি গাড়ি ফিটনেস সার্টিফিকেট রিনিউ করেনি ১০ বছর বা তার বেশি সময় ধরে। অত:পর বিআরটিএ তার ওয়েবসাইটে এসব গাড়ির তালিকা প্রদান করে, বিজ্ঞাপন দিয়ে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ফিটনেস সার্টিফিকেট রিনিউ করার তাকিদ দেয়। এই সঙ্গে জানিয়ে দেয়, যেসব গাড়ি এই সময়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট রিনিউ না করবে, তাদের ‘রাইট অপ’ করে দেয়া হবে। প্রশ্ন উঠতে পারে, ওই ১৬টি গাড়ি বাদে আর সব গাড়ি কি আনফিট হয়ে পড়ায় রাস্তা থেকে তুলে নেয়া হয়েছে? বাস্তবে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এত গাড়ি এক সঙ্গে আনফিট হয়ে যেতে পারে না। চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়তে পারেনা। গাড়িগুলো রাস্তা থেকে তুলে নেয়া হয়েছে, এমন কোনো তথ্য বিআরটিকে না জানানো থেকেই বুঝা যায়, সেগুলো এখনও চলাচলে আছে, চালু অবস্থায় আছে। তবে ফিটনেস কতটা আছে, সেটা বলার কোনো উপায় নেই। ফিটনেস না থাকারই কথা। নিয়মিত পরীক্ষা করে গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট নেয়া সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও মালিকের জন্য বাধ্যতামূলক, যে রকম বাধ্যতামূলক অন্যান্যের ক্ষেত্রেও। ১০ বছরের ও বেশি সময় ধরে হাজার হাজার গাড়ি এই প্রক্রিয়ার বাইরে থাকলো কেমন করে, সে প্রশ্ন সঙ্গতকারণেই করা চলে। এ ব্যাপারে মালিকপক্ষের দায় অমার্জনীয়। কারণ, তারা ইচ্ছা করে কিংবা ক্ষমতার জোরে এই বিধানটি মানেনি। বিআরটিএ’র দায়ও কম নয়। এত বছর পর গাড়িগুলোর খোঁজ-খবর নেয়া থেকেই বুঝা যায়, তার দায়িত্ব পালনে ঘোরতর অবহেলা রয়েছে।
সরকারি সংস্থা, মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রকল্পের গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট নেয়া বা সংগ্রহ করা তুলনামূলকভাবে সহজ। অথচ বছরের পর বছর ধরে এই সহজ কাজটি হলোনা কেন, ব্যতিক্রম ঘটলো কেন, তার জবাব সংশ্লিষ্টদেরই দেয়ার কথা, অন্য কারো নয়। সরকারি গাড়ির মধ্যে ৯০০ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নামে। এসব গাড়ির মধ্যে এমন গাড়িও আছে যা ২৫-৩০ বছরের পুরানো। যারা আইন বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত সেই পুলিশের তরফেই যদি এমন আইন অমান্য বা বিচ্যুতি ঘটে তবে দু:খ রাখার জায়গা থাকেনা। মন্ত্রনালয়, বিভাগ ও প্রকল্পের কর্তাব্যক্তিরাও হয়তো মনে করেছেন, সরকারি গাড়ির আবার ফিটনেস সাটিফিকেট কি? রিনিউয়াল কি? অবস্থান ও ক্ষমতার জোরে এভাবে আইন-বিধিকে খাটো করে দেখা দুর্ভাগ্যজনক এবং অত্যন্ত খারাপ নজির। ধারণা করি, এর বাইরে যেসব গাড়ি রয়েছে (৫২৬৭০টি) সেসব গাড়ির মালিক পক্ষও প্রভাবশালী, যারা গাড়ির ফিটনেস সাটিফিকেট রিনিউ করাকে কোনো ব্যাপারই মনে করেনি বা করে না। বিআরটিএ তাকিদ দেওয়ার পরও যখন সরকারি-বেসরকারি কোনো পর্যায় থেকেই যথোচিত সাড়া পাওয়া যায় না, তখন তারা যে বিষয়টিকে গ্রাহ্যের মধ্যে আনার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনি সেটা বুঝতে অসুবিধা হয়না। অথচ সাধারণ মানুষের গাড়ির ক্ষেত্রে এমনটি হলে তুলকালাম হয়ে যেতো। গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট কিংবা অন্যান্য কাগজপত্র সংগ্রহ ও নবায়নের ক্ষেত্রে হয়রানির একশেষ হতে হয়। এর জন্য ঘাটে ঘাটে টাকা পয়সা গুণতে হয়। সাধারণ মানুষ আইন মানতে চায় এবং আইন মানতে গিয়েই তাদের নানা হয়রানি, বিড়ম্বনা ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। পক্ষান্তরে সরকারি কর্মকর্তা ও প্রভাবশালীরা আইন না মেনে দিব্যি ভালো আছেন, বহাল তবিয়তে আছেন। এই বৈপরীত্যের কারণ, আইনের শাসন সকলের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য না হওয়া।
বিআরটিএ’র হিসাবে সারাদেশে রেজিস্ট্রাড গাড়ির সংখ্যা ৩৪ লাখ ১৯ হাজার। এসব গাড়ির মধ্যে ফিটনেস আছে এরূপ গাড়ির সংখ্যা কত, কতটাই বা আনফিট, আমাদের জানা নেই। সংশ্লিষ্টদের জানা আছে কিনা, তারাই বলতে পারবেন। বাস্তবে আমরা রাস্তাঘাটে ভাঙ্গাচোরা, রঙচটা, লক্কড়মার্কা বহু গাড়ি চলতে দেখি। দেখেই বুঝা যায়, ধুকে ধুকে চলাচল করলেও এসব গাড়ির ফিটনেস নেই। কীভাবে এসব গাড়ি চলাচলের অধিকার ও সুযোগ পায় তা উপলব্ধি করা কঠিন নয়। দেশে এমন কোনো দিন নেই যেদিন সড়ক দুর্ঘটনায় দু’চারজন লোক নিহত না হচ্ছে। সাম্প্রতিক কালে সড়ক দুর্ঘটনা মহামারির রূপ নিয়েছে। এমনও দিন গেছে যেদিন ১৮জন, ২০জন এমন কি ২৩ জনও মারা গেছে। সড়ক দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ ফিটনেসবিহীন গাড়ি। যাত্রিক ত্রুটি ও অক্ষমতার কারণে এ ধরনের গাড়ি যখন তখন দুর্ঘটনা ঘটায়। কোনো উন্নত দেশে, এমন কি উন্নয়নশীল দেশে ও রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলের কথা কল্পনা করা যায়না। আমাদের দেশে সেটা বাস্তব এবং এ জন্য প্রতিনিয়ত খেসারত দিতে হচ্ছে প্রাণ দিয়ে, পঙ্গুত্ব বরণ করে। উচ্চ আদালত ২০১৫ সালে রাস্তা থেকে আনফিট গাড়ি সরিয়ে দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সে নির্দেশনা কার্যকর হয়নি। আমরা আশা করতে চাই, রাস্তা থেকে আনফিট গাড়ি সরিয়ে দেয়ার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারী-বেসরকারী সংস্থার অনুকূলে যেসব গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে অথচ বছরের পর বছর ফিটনেস সার্টিফিকেট রিনিউ করা হয়নি তাদের বিরুদ্ধেও যথোচিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।