Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ

ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার আগে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামে চলছে কাঁদা ছোড়াছুড়ি

| প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : যাচাই-বাছাই করে আওয়মী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি করে দিবেন- এমন ঘোষণার পরও সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে প্রচার-অপপ্রচারে ক্ষুব্ধ হয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, এগুলো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও ধৃষ্ঠতার শামিল। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার আগে কাউকে সভাপতি-সম্পাদক বানিয়ে দেয়া যেমন অপরাধ, সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোও অপরাধ।
কমিটি ঘোষণা ছাড়াই শনিবার শেষ হয় ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশমতো সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি করতে ব্যর্থ হয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী সকলের নামের তালিকা গণভবনে দিয়ে এসেছেন ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। দু’একদিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কমিটি করে দিবেন বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের বিদায়ী সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু এর মধ্যেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে একটি সংঘবদ্ধ চক্র মিথ্যা অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের কমিটি দেয়ার দায়িত্ব আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার। তিনি সোহাগ-জাকিরকে বলেছেন, তোমরা কাউন্সিলরদের বাড়ি চলে যেতে বলো। কমিটি আমি ঘোষণা করবো। তারপর থেকেই ছাত্রলীগের শীর্ষ পদের আলোচিত প্রার্থীদের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একের পর সংঘবদ্ধ অপপ্রচার ছড়ানো শুরু হয়েছে। এই ধরনের নোংরামি আওয়ামী লীগের ছাত্রসংঠনে কাম্য নয়। যেমন, যারা দাদা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা তাকে বানানো হচ্ছে রাজাকার। একজন স্নাতক পাস ছেলেকে বলা হচ্ছে পরীক্ষায় অকৃতকার্যÑ এগুলো কোন ধরণের নোংরামি বলেও প্রশ্ন করেন আওয়ামী লীগের ওই নেতারা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান এ বিষয়ে গতকাল বলেন, একটি কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ছেলেমেয়েদের নামে অপপ্রচার ছড়াচ্ছে। কারণ, তারা বুঝতে পেরেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার তদারকিতে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষিত হলে দীর্ঘদিন ধরে তারা যেভাবে ছাত্রলীগকে পরিচালিত করে এসেছে, সেভাবে আর পারবে না এবং ছাত্রলীগ তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। এজন্য তারা প্রধানমন্ত্রীকে বিভ্রান্ত করতে এই নোংরামিগুলো করছে। প্রকারান্তরে এটি বঙ্গবন্ধুকন্যার সঙ্গে এক ধরণের ধৃষ্ঠতাও বটে।
তবে এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সোচ্চার হয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান কিছু নেতাকর্মী। ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক নাসিম আল মমিন রূপক লিখেছেন, ‘শিবিরকে ছাত্রলীগ বানাও। যখন সে পথ বন্ধ করে দেয়া হয় তখন আসল ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করে দাও এবং এটাই তাদের রাজনীতি!!!’ ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দেব নন্দী লিখেছেন, ‘বিভ্রান্ত মানুষরাই বিভ্রান্তি, গুজব ছড়ায়।’
এসব অপপ্রচারে ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম খান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘... জানি, আপনারা অনেক বড় খেলোয়াড়। অনেক দিন খেলাধুলা করেই তো সংগঠনের বারোটা বাজিয়েছেন। আপনারা কে কে এর সাথে জড়িত সবাইকে চিনি। এক এক করে সবার আমলনামা নিয়ে জাতির সামনে হাজির হতে পারি। কিন্তু এটা চাই না। তাই প্রাথমিকভাবে আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, দয়া করে নেত্রীকে ঠাÐা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিন। নেত্রী যাদের নেতা বানাবে আশা করি তারা পার্টির কোন লোকের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবে না। আর এই মসৃণ পথ যদি আপনাদের অপচেষ্টায় বন্ধুর হয় তাহলে নেত্রীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথ মসৃণ করার জন্য সকলের আমলনামা নিয়ে আমরা হাজির হবো।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘেটে দেখা দেখে, ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক কমিটির সহ সভাপতি আদিত্য নন্দীর নামে ছড়ানো হচ্ছে তিনি পরীক্ষায় ফেল করেছেন। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ছেলে আদিত্য ২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টে বিভাগ থেকে সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৩.০৬ পেয়ে স্নাতক পাস করেছেন। বর্তমানে একই বিভাগের স্নাতকোত্তর বিভাগের শিক্ষার্থী তিনি। আদিত্য ২০০৫ ও ২০০৫ সালে ব্যাবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় সিজিপিএ ৫.০০ অর্থাৎ এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে পড়াকালীন সময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হাতেখড়ি। এরপর ২০০৮ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে সক্রিয়। ১/১১ এর সরকারের সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কারামুক্তি আন্দোলনে প্রথম বর্ষে পড়েও সক্রিয় ছিলেন আদিত্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন জগন্নাথ হলের এ শিক্ষার্থী।
অপরদিকে ছাত্রলীগের আরেক প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে তিনি বিবাহিত এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পরিবারের সন্তান। যেই মেয়ের সাথে শোভনের বিয়ের কথা ছড়ানো হচ্ছে সেই মেয়ের বাবার সাথে কথা বলে জানা গেছে, তার মেয়ে অবিবাহিত, শোভনের সঙ্গে কোনো সর্ম্পক নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শোভনের দাদা শামসুল হক চৌধুরী ছিলেন, কুড়িগ্রামে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ১৯৭০ সালের গণপরিষদের সদস্য। এরপর ১৯৭১ ও ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে কুড়িগ্রামের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। ছিলেন কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। শোভনের বাবা নুরুন্নবী চৌধুরী খোকন ২০০১ সাল থেকে বর্তমানে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে একই উপজেলার বর্তমানে চেয়াম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সদ্য বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শোভন এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক, বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, অপপ্রচারের পাশাপাশি অনেকে কোন কোন প্রার্থীকে সভাপতি-সম্পাদক বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করছেন- এটাও অপরাধ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ