চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
সমাজ দ্ব›দ্ব, সংঘাত ও পরস্পর নানান বিষয়ে প্রতিযোগীতা অতীতে ছিলো, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। জমি-জমা, আর্থিক লেনদেন, ক্ষমতার পালাবদল কিংবা সামাজিক প্রভাব প্রতিপত্তিকে কেন্দ্র করে মানুষ এক অপরের সঙ্গে পারস্পরিক দ্ব›দ্ব সংঘাতে লিপ্ত হয়। পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সমাজ পরিবারে দ্ব›দ্ব সংঘাত বিদ্যমান আছে বলে কোরআনে এসব বিষয় ফায়সালা করার দিক নির্দেশনা এসেছে। সমাজে কোনো একজন অপর একজন ব্যক্তি, পরিবার কিংবা গোষ্ঠী কর্তৃক আর্থিক কিংবা সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলে বিষয়টি সুরাহার জন্যে স্থানীয় সমাজপতিদের নিকট বিচার প্রার্থী হন। এসব সমস্যার বিষয়ে ফায়সালা দেয়ার অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্বল ব্যক্তিদের ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকা থাকে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘যখন মানুষের মাঝে (কোনো কিছুর) ব্যাপারে বিচার ফায়সালা করো তখন তা ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে করবে।’ (সূরা নিসা: ৫৮)। সমাজের চলমান দ্ব›দ্ব, সংঘাত ও সমস্যা গুলো ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করার ক্ষেত্রে মোমিনের দায়িত্ব রয়েছে। যারা ন্যায় নিষ্ঠতার সাথে সমাজের কোনো দ্ব›দ্ব সংঘাতের ফায়সালা দেন তাদেরকে আল্লাহ খুব ভালোবাসেন। এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা দুটো দলের মাঝে ন্যায় ও ইনসাফের সাথে ফায়সালা করে দেবে এবং তোমরা ন্যায় বিচার করবে; নিশ্চয়ই আল্লাহপাক ন্যায় বিচারকদের ভালবাসেন।’ (সূরা হুজরাত:৯)।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, ক্ষমতার দাপট কিংবা প্রতিপক্ষের সমাজে প্রভাব প্রতিপত্তি থাকায় সত্য ঘটনাও মিথ্যে প্রমাণিত হয়ে যায়। প্রভাবশালীদের কেউ কেউ অনৈতিক অপকর্ম কিংবা খুন খারাবির মতো অন্যায় কাজ করেও ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থেকে যায়। প্রভাবশালীদের আক্রমণের ভয়ে অনেক সময় সত্য একটি ঘটনা প্রমান করার জন্যে কোনো একজন সাক্ষীও খোঁজে পাওয়া যায় না। সাক্ষ্য দাতাদের মধ্যে কেউ কেউ কখনও কখনও উৎকোচ গ্রহণ করে মিথ্যে সাক্ষ্যও প্রদান করে থাকেন। এরশাদ হয়েছে,‘ হে ঈমানদারগণ! তোমরা (সর্বদাই) ন্যায় বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকো এবং আল্লাহ পাকের জন্যে সত্যের সাক্ষী হিসেবে নিজেকে পেশ করো, যদি এটি তোমার নিজের, তোমার নিজের পিতামাতার কিংবা নিজের নিকট আত্মীয় স্বজনের উপরও আসে, সে ব্যক্তি ধনী কিংবা গরীব, তাদের উভয়ের চাইতে মহান আল্লাহর অধিকার বেশী, অতত্রব আপনি কখনো ন্যায় বিচার করতে নিজের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করবেন না, যদি তোমরা পেঁচানো কথা কিংবা (সাক্ষ্য দেয়া থেকে) বিরত থাকো, তাহলে (জেনে রাখ), তোমরা যা কিছুই করো না কেন, আল্লাহ পাক তার যথার্থ সংবাদ রাখেন।’ (সূরা নিসা:১৩৫)।
ন্যায় সংঘতভাবে কোনো ঘটনার ফায়সালা দেয়ার ক্ষেত্রে সাক্ষীর ভ‚মিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাক্ষ্যদাতাকে সাক্ষ্যদানের ক্ষেত্রে আল্লাহকে হাজের নাজের জেনে সত্য সাক্ষ্য প্রদান করতে হবে। কারণ সাক্ষ্যদাতা ঘটনার আমানতদার। এছাড়া সাক্ষ্য দাতার সাক্ষ্যর উপর বিচারের ফায়সালা নির্ভর করে। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে নিয়ে কাউকে ক্ষতিগ্রস্থ করার লক্ষে বিদ্বেষ বশত: কোনো বিষয়ে ফায়সালা দেয়া কিংবা সাক্ষ্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার স্বজন প্রীতি করা যাবে না। স্বজন প্রীতি দুর্নীতির একটি অংশ এবং ন্যায় বিচার পরিপন্থী কাজ। এরশাদ হয়েছে,‘ হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা আল্লাহর জন্যে (সত্যও ) ন্যায়ের উপর সাক্ষী হয়ে অবিচলভাবে দাঁড়িয়ে থাকো, কোনো জাতির দুশমনি যেন তোমাদের এমনভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ন্যায় ও ইনসাফ করবে না।’ (সূরা মায়েদা: ৮)।
বর্তমান সময়ের বাস্তবতায় কখনও কখনও ফায়সালা দানকারী কিংবা সাক্ষ্য দাতাকে প্ররোচিত হতে দেখা যায়। আল্লাাহ ইনসাফের সাথে বিবাদ মিমাংসাকারীকে ভালবাসেন। এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ন্যায় নিষ্ঠদের ভালোবাসেন।’ (সূরা মায়েদা:৪২)। ন্যায় সংগত ফায়সালা দেয়া একটি সৎকর্ম। ইহার ফজিলত সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘মু’মিনরা তো (একে অপরের) ভাই বেরাদর, অতত্রব তোমাদের ভাইদের মাঝে মীমাংসা করে দাও, আল্লাহ পাককে ভয় কর আশা করা যায় তোমাদের উপর দয়া ও অনুগ্রহ করা হবে।’( সূরা হুজরাত:১০)। হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, সাত শ্রেণীর লোকদের আল্লাহ সেই কঠিন দিনে তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। তারা হচ্ছে: ১. ন্যায়বিচারক। ২. ঐ যুবক যে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত তথা তাঁর দাসত্ব ও আনুগত্যের মধ্যে বড় হয়েছে। ৩.ঐ ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে জড়ানো। ৪. ঐ দু’ব্যক্তি যারা আল্লাহর জন্যে পরস্পরকে ভালোবাসে; আল্লাহর জন্যই তারা মিলিত হয় এবং আল্লাহর জন্যেই পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ৫. ঐ লোক যাকে অভিজাত বংশীয় কোনো সুন্দরী রমণী কুকর্মের জন্যে আহŸান করে। জওয়াবে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। ৬. ঐ লোক যে গোপনে দান করে, এমনকি তার ডান হাত কি দান করল বাম হাত তা টেরও পায় না। ৭. ঐ লোক যে একাকী গোপনে আল্লাহকে শ্নরণ করে দুচোখের অশ্রæ ঝরায়। (বুখারী:৬৬০)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই যারা ইনসাফ ও ন্যায়বিচার করে আল্লাহর নিকট তারা নূরের আসন গ্রহণ করবে। (সুনানে নাসায়ী:৫৩৭৯)। আল্লাহ তায়ালা বিচারকদের ন্যায়বিচারক হওয়ার তৌফিক দান করুক। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।