বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মহান আল্লাহপাক মানুষের জীবনকে সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও পুণ্যাশ্রয়ী করার জন্য কিছু কিছু কাজের আদেশ করেছেন এবং কিছু কিছু কাজ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি যে সকল কাজ নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছেন, তা’ আল কোরআনে এভাবে বিবৃত হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে : ‘ওয়া ইয়ানহা আনিল্ ফাহশাই ওয়াল্ মুন্কারী ওয়াল বাগ্ই’ অর্থাৎ তিনি অশ্লীলতা, অসৎ কাজ এবং সীমালঙ্ঘন করতে নিষেধ করেন। (সূরা নাহ্্ল : ৯০)। আলোচ্য আয়াতে কারীমায় আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তিনটি কাজ নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছেন। এর প্রথমটি হলো ‘ফাহশাই’ এবং দ্বিতীয়টি হলো ‘মুনকার’ এবং তৃতীয়টি হলো ‘বাগই’। এ পর্যায়ে এই তিনটি শব্দের অর্থ ও মর্ম সম্পর্কে আলোচনা করা দরকার। আসুন, এবার সেদিকে নজর দেয়া যাক।
ফাহসাই শব্দের অর্থ হলো অশ্লীলতা, নির্লজ্জতা। চাই তা কথায় হোক বা কাজে। প্রকাশ্য মন্দকর্ম অথবা কথাকে অশ্লীলতা বলা হয়। যাকে সকল মানুষই মন্দ ও নিন্দনীয় বলে মনে করে। সকল প্রকারের অশালীন, কদর্য ও নির্লজ্জ কাজ, আচরণ ও কথা এর অন্তর্ভুক্ত। এমন প্রত্যেকটি খারাপ কাজ, কথা, ইঙ্গিত, যা স্বভাবতই কুৎসিৎ। নোংরা, ঘৃণ্য ও লজ্জাকর তাকেই বলা হয় ফাহশাই বা লজ্জাকর। যেমন কৃপণতা, ব্যভিচার, উলঙ্গপনা, সমকামিতা, নিষিদ্ধ আত্মীয়কে বিয়ে করা, চুরি, মদপান, শরীয়ত বিরোধী পন্থায় ভিক্ষাবৃত্তি, গালিগালাজ করা, কটুকথা বলা ইত্যাদি। (ফাতহুল কাদীর)।
অনুরূপভাবে সর্বসমক্ষে বেহায়াপনা ও খারাপ কাজ করা এবং খারাপ কাজকে ছড়িয়ে দেয়াও অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার অন্তর্ভুক্ত। যেমন মিথ্যা প্রচারণা, মিথ্যা দোষারোপ, গোপন অপরাধ জনসমক্ষে বলে বেড়ানো, অসৎ কাজের প্ররোচক গল্প, নাটক ও চলচ্চিত্র, নগ্নচিত্র, মহিলারা শালীনতাহীন সাজগোজ করে জনসমক্ষে আসা, নারী পুরুষ নীতিহীনভাবে প্রকাশ্যে মেলামেশা করা এবং মঞ্চে ও অনুষ্ঠানে মেয়েদের নাচগান করা ও তাদের শারীরিক অঙ্গভঙ্গির প্রদর্শন করা ইত্যাদি। (ফাতহুল কাদীর; মাদারেক)।
২. ‘মুনকার’ শব্দের অর্থ হলো অসৎ কর্ম, দুস্কৃতি বা মন্দ কাজ। মুন্কার বা অসৎকর্ম-এমন কথা বা কাজকে বলা হয়, যা হারাম ও অবৈধ হওয়ার ব্যাপারে শরীয়তবিদগণ একমত। বস্তুত : যাবতীয় গোনাহই মুনকারের অন্তর্ভুক্ত। চাই তা প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য, কর্মগত ও চরিত্রগত হোক, যাবতীয় অসৎকর্ম ও আচরণকে মুনকার হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। কেউ কেউ বলেন, মুনকার অর্থ শিরক অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার সাথে অংশী স্থাপন করা। তাই, এই মতবিরোধের কারণে কোন কোন শ্রেণি বা পক্ষকে মুনকার বলা যায় না। মোদ্দা কথা হচ্ছে এই যে, অসৎ কাজ সর্বোতোভাবে ঘৃণ্য ও পরিত্যাজ্য। (ইবনে কাসীর; ফাতহুলকাদীর)।
৩. আর ‘বাগই’ শব্দের আসল অর্থ সীমালঙ্ঘন করা। কেউ কেউ বলেন-এর অর্থ যুলুম। কেউ বলেন, এর অর্থ হিংসা-বিদ্বেষ। মোটকথা, এর দ্বারা সকল প্রকার যুলুম, অত্যাচার ও উৎপীড়ন বুঝানো হয়েছে। বস্তুত : নিজের সীমা অতিক্রম করা, এবং অন্যের অধিকার লঙ্ঘন করা এবং তার ওপর হস্তক্ষেপ করাই হলো, ‘বাগই’। চাই তা আল্লাহর হক হোক বা বান্দাহর হক হোক। উভয় অবস্থায়ই সীমালঙ্ঘনকারীরা আল্লাহপাকের কঠোর আযাবের সম্মুখীন হবে।
পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যুলুম ব্যতীত এমন কোনো গোনাহ নেই, যার প্রতিফল ও শাস্তি দ্রæত দেয়া হবে। (মোসনাদে আহমাদ)। এতে অনুধাবন করা যায় যে যুলুমের কারণে যালীমরা পরকালীন কঠোর শাস্তি তো ভোগ করবেই, তদুপরী দুনিয়াতেও সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালা যালিমদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকেন। যদিও তারা বুঝতে পারে না যে, এটা অমুক যুলুমের শাস্তি। তাছাড়া আল্লাহপাক মজলুমকে সাহায্য করারও অঙ্গীকার করেছেন। কারণ যুলুমের প্রভাব অপরাপর লোকদের উপরও সংক্রমিত হয়। চলমান দুনিয়ার অবস্থার প্রতিলক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, এই সীমা লঙ্ঘন পারস্পরিক যুদ্ধের অবতারণা করে, এমন কি সারা বিশে^ অশান্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমতাবস্থায় মজলুমদের প্রতি আল্লাহ পাকের সাহায্য রক্ষা কবচের ভ‚মিকা পালন করে।
চিন্তা করলে দেখা যায় যে, আল্লাহপাক উল্লিখিত যে তিনটি কাজ করতে নিষিধ করেছেন এগুলো মানুষের ব্যক্তিগত, পারিপারিক ও সমষ্টিগত জীবনের সাফল্য ও কৃতকার্যতার অমোঘ প্রতিকার এবং প্রতিবিধান। কারণ, যারা আল্লাহপাকের নির্দেষিত পথে রয়েছে তারাই সফলকাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।