Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্ষুদ্র পৃথিবীর নগণ্য মানুষ কি বোঝে আল্লাহ কত বড়

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

হজের সময় তালবিয়া পড়া হয় আল্লাহর বড়ত্ব, মহত্ত- ও মালিকানার ঘোষণা দিয়ে। ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক। ঈদের সময়ও আমরা তাকবীর বলি, ঘোষণা করি : আল্লাহ বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ মহান; আল্লাহর কোনো শরিক নেই, সকল প্রশংসা তাঁর। নামাজেও আমরা প্রতিদিন ষোষণা করি ‘আল্লাহু আকবার’। মানুষ যে কত দুর্বল ও অসহায় তা মানুষ আন্দাজ করতে পারে না, তাই মানুষ অহঙ্কারও করে। অহঙ্কার থেকেই মানুষ আল্লাহকে অস্বীকার করে। কাফির হয়। মুশরিক হয়। নাস্তিক হয়। মুরতাদ হয়।

আল্লাহর একটি হুকুমে সৃষ্টিজগত তৈরি হয়েছে। আল্লাহ যখন কোনো কিছু ইচ্ছা করেন, তখন শুধু বলেন, ‘কুন’ মানে হয়ে যাও। ‘ফা ইয়াকুন’ তখনই তা হয়ে যায়। (আল কোরআন)। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, শুরুতে আসমান ও জমিন একসাথে মিলিত ছিল। এরপর আমি সবকিছুকে ছড়িয়ে দিয়েছি এবং সমস্ত জীবিত বস্তুকে আমি সৃষ্টি করেছি পানি থেকে। (আল কোরআন)। আল্লাহর এই সৃষ্টির বয়স পৃথিবীর সময় অনুযায়ী কোটি কোটি বছর হতে পারে। আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ যিনি সাত আকাশ সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, আমি তোমাদের নিকটবর্তী আকাশকে নক্ষত্রের বাতি দিয়ে সুসজ্জিত করেছি। (আল কোরআন)। বোখারী শরীফে আছে, সবচেয়ে ছোট জান্নাতটি হবে দশটি পৃথিবীর সমান।

মুসলমান আগেই আল্লাহ ও রাসুলের সব কথার ওপর ঈমান এনেছে। বর্তমানে মানুষ বিশাল সৌরজগত চিনে আল্লাহর রাজত্বের বিশালত্ব আর পৃথিবীর ক্ষুদ্রতা আন্দাজ করতে পারছে। বুঝতে পারছে, সবচেয়ে ছোট জান্নাতটি কেন দশটি পৃথিবীর সমান। আর মহাকাশ ও জান্নাতের তুলনায় দশটি পৃথিবী আসলেই কত ছোট।

কোরআন ও হাদিসের এমন শত শত বর্ণনা থেকে মানুষ বুঝতে পারে আল্লাহর সৃষ্টি কত বড়। এই সৃষ্টি ও জগতসমূহের যিনি রব। রাব্বুল আলামীন। মানুষের জ্ঞান, ধারণা ও কল্পনার চেয়ে কত বেশি সংখ্যা ও পরিমাণ আল্লাহর জানা আছে, তার কুদরতে সৃষ্টি করা আছে, তা মানুষ ভাবতেও পারে না। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, মানুষকে খুবই দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্য আয়াতে আছে, মানুষকে খুবই সামান্য জ্ঞান দান করা হয়েছে।

অতএব, প্রথম আকাশ কত বড়, এর নিচে কত সংখ্যার কী পরিমাণ গ্রহ নক্ষত্র আছে, তা শুমার করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। মহাকাশ কেন, পৃথিবীতেই আল্লাহর দান ও অনুগ্রহের পরিসংখ্যান বের করা মানব জাতির জন্য অসম্ভব। আল্লাহ বলেন, যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গণনার চেষ্টা করো, তাহলে কোনোদিনই তা শেষ করতে পারবে না। (আল কোরআন)।

অতএব, আল্লাহকে বিশ্বাস করা, তার বিধান মেনে চলা, তাঁকে ভয় করা, সবসময় আল্লাহর নিকট রহমত ও ক্ষমা প্রার্থনা করা, তার প্রতি গভীর প্রেম ও সুধারণা পোষণ করা মানুষের কর্তব্য। যে একমাত্র আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও উপাস্যরূপে বিশ্বাস করে, সেই মুমিন। আল্লাহর সাথে শরিক না করলে, গুনাহ থেকে তওবা করলে আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন। জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত দিবেন।

বিজ্ঞানের আবিষ্কারের দ্বারা মানুষ আল্লাহকে বেশি করে জানার সুযোগ পায়। আল্লাহর কুদরত সম্পর্কে উত্তমরূপে অবগত হয়। যেমন- মহাকাশ গবেষণার ফলে যেসব জ্ঞান, তথ্য, ছবি, সংখ্যা ইত্যাদি মানুষ জানতে পারে, তা ঈমানদারদের আস্থা ও বিশ্বাসকে আরো দৃঢ় করে। এসব গবেষণা ছাড়াও আল্লাহর অনুগত বান্দাগণ সৃষ্টির প্রতিটি নিদর্শনকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন এবং সবসময় আল্লাহর জিকির, স্মরণ, আলোচনা, ভাবনা ও আরাধনা করেন।
সৃষ্টি জগত নিয়ে বিশ্বাসী চিন্তা-ভাবনা অন্য সব ইবাদতের চেয়ে কম নয়। আল্লাহর স্মরণ, আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি, আল্লাহর সৃষ্টিকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও আল্লাহর কুদরত থেকে শিক্ষা ও প্রেরণা গ্রহণও মহান ইবাদত। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় পৃথিবী ও আকাশসমূহের সৃষ্টিতে এবং দিন ও রাতের আসা-যাওয়ায় চিন্তাশীল মানুষের জন্য রয়েছে অনেক নিদর্শন। যারা শোয়া বসা ও দাঁড়ানো সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে। তারা বলে, হে আল্লাহ আপনি এসব অকারণে সৃষ্টি করেননি। আপনি আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচান। (আল কোরআন)।

আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি জানতেন আল্লাহর নবী (সা.)। আল্লাহ তাঁর নিকট ওহী প্রেরণ করেছেন। তাঁকে নিজ সৃষ্টিজগতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরিদর্শন করিয়েছেন। মানুষের উচিত আল্লাহর রাসূলের দেয়া তথ্যানুযায়ী আখেরাত, জান্নাত, জাহান্নাম, কবর, হাশর, মিযান, পুলসিরাত ইত্যাদি বিশ্বাস করা। আল্লাহকে ভয় করা। নিজের ক্ষুদ্রতা, দুর্বলতা, অসহায়ত্ব অনুধাবন করা।

আল্লাহর সৃষ্টি কত বড় ও ব্যাপক তা যদি মানুষ বোঝে, মানুষ যদি পৃথিবী কত ছোট তা বোঝে, মানুষ কত দুর্বল তা যদি মানুষ বোঝে, আল্লাহর কুদরতের সামনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কত অসহায় সেটা বোঝে, তাহলে সে প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে। তখন মানুষ নিজেকে বুদ্ধিমান, বড় ও ক্ষমতাশালী মনে করবে না। তারা আল্লাহর ওলী আউলিয়া দরবেশ ও বিনয়ী জ্ঞানী বান্দাদের মতোই আল্লাহর প্রকৃত বান্দা হয়ে সুখ ও বিপদ উভয় সময়ই আল্লাহর রহমতের আশায় আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইতে থাকবে।



 

Show all comments
  • Md Ali Azgor ২২ জুলাই, ২০২২, ৭:৫১ এএম says : 0
    যে বয়সে আমরা সবাই সেজদা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি সে-বয়সে অনেক কবরে শুয়ে আছে, তাই সবাই শুকরিয়া আদায় করি, আল্লাহ সবাইকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার তৌফিক দান করুক।???? আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Atiqur Rahman Noyon ২২ জুলাই, ২০২২, ৭:৫১ এএম says : 0
    টাইটেল টা অসাধারণ
    Total Reply(0) Reply
  • Kallol Sikder ২২ জুলাই, ২০২২, ৭:৫১ এএম says : 0
    আমরা এমন সময় পৃথিবীতে আছি যখন ইমান নিয়ে বেঁচে থাকা বড়ই কষ্টের।
    Total Reply(0) Reply
  • শাপলা ফুল ২২ জুলাই, ২০২২, ৭:৫১ এএম says : 0
    হৃিদয়ে ধাক্কা লাগার মত একটি লেখা দেওয়ার জন‍্য ধন্যবাদ।।
    Total Reply(0) Reply
  • Ifthaker Uddin ২২ জুলাই, ২০২২, ৭:৫১ এএম says : 0
    আল্লাহু আকবর
    Total Reply(0) Reply
  • মনিরুল ইসলাম ২২ জুলাই, ২০২২, ৭:৫৪ এএম says : 0
    মহাবিশ্বেরর স্রষ্টা ও পরিচালক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অধিষ্ঠিত রয়েছে আরশে আজিমে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে ‘তিনি পরম দয়ালু, তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন।’ (সুরা তহা : ৫)। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহ, যিনি ঊর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন আকাশমন্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতীত। তোমরা সেগুলো দেখ। অতঃপর তিনি আরশের ওপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন।’ (সুরা রাদ : ২)
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল রাহী ২২ জুলাই, ২০২২, ৭:৫৪ এএম says : 0
    মহান আল্লাহর সবচেয়ে বড় সৃষ্টি হলো আরশ। আরশের চেয়ে অতিকায় ও পরাবাস্তব কোনো বস্তু আল্লাহ সৃষ্টি করেননি। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘অতএব সর্বশীর্ষ মহিমাময় আল্লাহ, তিনি সত্যিকার মালিক, তিনি ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। তিনি সম্মানিত আরশের অধিপতি।’ (সুরা মুমিনুন : ১১৬)। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) উল্লেখ করেছেন, ‘কেননা তিনি আরশের অধিপতি, যা সমস্ত সৃষ্টির জন্য ছাদস্বরূপ। সমস্ত আসমান ও সমস্ত জমিন এবং উভয়ের ভেতরে যা রয়েছে ও উভয়ের মাঝখানে যা রয়েছে, সব কিছু আরশের নিচে অবস্থিত।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ২/৪০৫)
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল রাহী ২২ জুলাই, ২০২২, ৭:৫৫ এএম says : 0
    আরশের বিশালতা ও ব্যাপ্তি সাত আসমান, সাত জমিন ও কুরসি থেকেও বড়। আল্লাহর আরশ সাত আসমান সাত জমিন ও কুরসি সবগুলোকেই বেষ্টন করে আছে। আল্লাহু আকবার, তাহলে আল্লাহ তায়ালা কত বড়।
    Total Reply(0) Reply
  • Baizeed ২২ ডিসেম্বর, ২০২২, ২:৩৮ পিএম says : 0
    আমি অতি ক্ষুদ্র, খুবই দুর্বল ও অত্যন্ত অসহায় আর আল্লাহ,তিনি হচ্ছেন সবচেয়ে বড়, মহান ও মর্যাদার অধিকারী। আল্লাহ আমাকে দয়া করে ক্ষমা ও নাজাত ভিক্ষা দাও। আমীন।
    Total Reply(0) Reply
  • Baizeed ২২ ডিসেম্বর, ২০২২, ২:৩৮ পিএম says : 0
    আমি অতি ক্ষুদ্র, খুবই দুর্বল ও অত্যন্ত অসহায় আর আল্লাহ,তিনি হচ্ছেন সবচেয়ে বড়, মহান ও মর্যাদার অধিকারী। আল্লাহ আমাকে দয়া করে ক্ষমা ও নাজাত ভিক্ষা দাও। আমীন।
    Total Reply(0) Reply
  • Baizeed ২২ ডিসেম্বর, ২০২২, ২:৩৮ পিএম says : 0
    আমি অতি ক্ষুদ্র, খুবই দুর্বল ও অত্যন্ত অসহায় আর আল্লাহ,তিনি হচ্ছেন সবচেয়ে বড়, মহান ও মর্যাদার অধিকারী। আল্লাহ আমাকে দয়া করে ক্ষমা ও নাজাত ভিক্ষা দাও। আমীন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন