পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন। ২ মে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে কিছু অপ্রিয় কথা বলেছেন। সড়কে মর্মান্তিক দূর্ঘটনা এবং বাসের চাপায় হাত-পা হারানো নিয়ে যখন হৈচৈ; তখন তিনি নাগরিক দায়িত্ব এবং মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমার এই কথাগুলো হয়তো পছন্দ করবেন না। কিন্তু যা বাস্তব তাই বলছি। রাস্তা পারাপারের নিয়ম আছে, সেটা আমরা কতটা মানছি। একটা গাড়ি দ্রæত গতিতে আসছে, আমরা হাত তুলে রাস্তায় নেমে গেলাম। যারা পথচারী তাদেরও কিছু রুলস জানা দরকার মানা দরকার। আপনি বাসে চড়ে যাচ্ছেন; কেন আপনি হাত বাহির করে যাবেন? আপনারা (সাংবাদিক) যার হাত গেল তার জন্য কান্নাকাটি করছেন; কিন্তু সে যে নিয়ম মানছে না সে কথা তো বলছেন না? রুঢ় শোনালেও ভাষণ সত্য।
ওই সংবাদ সম্মেলনে যারা ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কথায় কেউ কেউ লজ্জা পেয়েছেন বটে; কিন্তু তারাও তোষামোদ আর চাটুকারীতার শ্রোতে গা না ভাসিয়ে দেয়া! ক্ষমতাসীন দলকে পছন্দ এবং ওই দলের আদর্শ লালন করলে প্রকৃত চিত্র আড়াল নয়, সরকারের মঙ্গলার্থে তাদের ভুল ত্রæতি ধরিয়ে দেয়া এবং বাস্তব চিত্র ধরিয়ে দেয়া মিডিয়াকর্মীদের কাজ। পরামর্শ-উপদেশ-সুপারিশ করলে ক্ষমতাসীনরা ভুল শুধরে নেয়া সতর্ক হওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু সেদিকে না গিয়ে যেন সবাই যেন কাজী নজরুলের তোষামোদ কবিতার মোসাহেবের মতো স্তুতির প্রতিযোগিতায় নেমে গেছেন। এতে নিজেদের হয়তো ভাগ্যের দরজা খুলে যায়; কিন্তু দলের কোনো উপকারে আসে না।
বাসে যাত্রীদের হাত-পা হারানো এবং সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। সড়ক দুর্ঘটনা নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে। দিন দিন দুর্ঘটনা বাড়ছেই; সেই সঙ্গে বাড়ছে নিহত-আহত ব্যক্তির সংখ্যা। জনগণ, গণমাধ্যম চেঁচিয়েই যাচ্ছে, আর কর্তৃপক্ষ শুনেই যাচ্ছে; কিন্তু যথাসময়ে যথাক্রিয়া সম্পাদিত হচ্ছে না। চালকের অদক্ষতা-অশিক্ষা, বেহাল রাস্তা, ফুটপাত দখল, কারণে-অকারণে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, পথচারীর অসতর্কতা, রাস্তার অপ্রশস্ততা, পরিবহন শ্রমিকদের আইন অমান্য করার প্রবণতা, পরিবহন মালিকদের উন্নাসিক মানসিকতা এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। কিন্তু শুধু কী তারাই দায়ী? দুর্ঘটনার আর কারণ নেই? আমরা নাগরিকরা যারা নিত্যদিন সড়ক পথে যাতায়াত করছি; বাসে রিক্সায়-সিএনজিতে চলছি ফিরছি, সড়ক পথে হাটছি, রাস্তা পারাপার হচ্ছি; আমরা কী সচেতন ভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করছি? চলাফেরার নিয়ম কানুন মানছি? বাসে-সিএনজিতে ওঠানামা শৃংখলা ভাবে করছি? ট্রাফিক আইন মানছি? ফুটপাতে চলার সময় নিয়ম শৃংখলা মানছি? নাকি শুধু প্রশাসনকে দোষারোপ করে যাচ্ছি? আমরা যারা নাগকির তাদের সবার আত্মোপোলদ্ধির সময় এসেছে। সুনাগরিক হতে হলে অপরিহার্য। মিডিয়াকর্মীদের দায়িত্ব আরো বেশি।
৩০ এপ্রিল রাজধানীর শনির আখড়ায় লেগুনা থেকে ছিটকে পড়ে ইডেন কলেজের ছাত্রী নুসরাত জাহান ঝুমা প্রাণ হারালেন। ১৯ বছরের সম্ভাবনাম তরুণীর মর্মান্তিক মৃত্যুদৃশ্য দেখে অনেকেই চোখে পানি ফেলেছে। প্রত্যক্ষদর্থীরা জানান, শনির আখড়ার কাছে লেগুনাটি পৌঁছালে মেয়েটি আগাম নামার প্রস্তুতি নেয়। লেগুনাটি প্রচÐ গতি নিয়ে স্পিড ব্রেকারে উঠলে সে ছিটকে নীচে পড়ে যায়। প্রশ্ন হলো লেগুনা দাঁড়ানোর আগেই যাত্রীকে নামার চেস্টা করতে হবে কেন?
শুধু কলেজ ছাত্রী নুসরাত জাহান নয়; বাস যাত্রীদের মধ্যে নানা ধরণের অনিয়ম যেন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। আগে নামা, আগে ওঠা, চলন্ত অবস্থায় বাসে ওঠা, থামার আগে বাস থেকে নামা, নামার সময় বাম পায়ের বদলে ডান পা আগে ফেলা এসব কী সভ্য কাজ? আগে নামার প্রতিযোগিতাই বা কেন? টিভিতে প্রায়ই ‘একটি দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না’ বিজ্ঞাপন প্রচার হতে দেখা যায়। নিত্যদিন সতর্কতামূলক বাণীটি প্রচারিত হলেও কেউ তা মানছে না; আমল-চিন্তা করছেন না। এমনকি পরিবহণে উঠানামা, বাস দাঁড়ানোর নিয়ম শৃংখলা, ট্রাফিক আইন মানতে বাস চালককে বাধ্য করা যাত্রী হিসেবে আমরা কোনো দায়িত্ব পালন করছি না। বরং অনেকেই আইন অমান্য করা এবং বাস চালকদের আইন অমান্যে উদ্বুদ্ধ করছি। এটা কী সুনাগরিকের কাজ? অন্যের দোষ ধরার আগে নিজে সতর্ক হই না কেন? রাজধানীসহ সড়ক মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের জন্য কিছু নিয়মকানুন ও শৃংখলা রয়েছে। নির্ধারিত রয়েছে বাস স্টপেজ, টেম্পু-রিক্সা স্টপেজ। ঢাকায় রয়েছে পায়ে হাটার লেইন। সে লেইনে প্রায়ই মোটর সাইকেল উঠানো হয়। প্রায়ই দেখা যায় যত্রতত্র বাস দাঁড়ানো, রাস্তার মাঝখানে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী নেমে পড়ার দৃশ্য। টেক্সি, সিএনজি, রিক্সায় অভিন্ন দৃশ্য। রাস্তায় বাস দাঁড় করিয়ে দু’একজন যাত্রী নেমে যাওয়ায় অন্য যাত্রীরা বিরক্ত হন; পাশাপাশি অন্য যানবাহন ও দ্রæতযানকে হঠাৎ দাঁড়াতে হয়। যা হয় যানজটের কারণ দুর্ঘটনার অনুসঙ্গ। আবার বাস চালককে দ্রæত যান চালানো এবং কখনো কখনো ট্রাফিক আইন অমান্য করে উল্টো পথে চলার জন্য প্ররোচিত করা হয়। যা দুর্ঘটনা, যানজটকে বাড়িয়ে দেয়। ঢাকার নাগরিকরা পায়ে হাটা যেন ভুলতে বসেছি। কয়েক গজ হেটে গিয়ে বাসে ওঠা বা বাস থেকে নেমে কয়েক গজ হেটে গন্তব্যে যাওয়ার মানসিকতা যেন কারো নেই। পথ চলতে বা পাবলিক পরিবহনে যারা এসব করছি তারা কী সুনাগরিক? নিজের বিবেককে একবার প্রশ্ন করুন! নিয়ম না মানা, নিজের সামান্য সুবিধার্থে ১০ জনের অসুবিধা করা, যত্রতত্র বাস থামিয়ে উঠানামা করা কী সভ্যতা-ভব্যতা? সভ্য সমাজে এটা কী যায়? পরিধানে কোটটাই আর পরিপাটি গেটআপই কী সুন্দর-সুস্থ্যতা ভদ্রতা! কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীর সার্টিফিকেট নিলেই কী সুনাগরিক হওয়া যায়? একজন সুনাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। প্রথমেই সুনারিককে নিজেকে আইন-কানুন মানতে হবে; অন্যকে মানতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যানবাহনে চলাচল করলে চালক-ড্রাইভার যাতে আইন মেনে চলাচল করে, নির্ধারিত স্টপিজে দাঁড়ায়, ট্রাফিক আইন মানতে বাধ্য হয় সে ব্যাপারে যাত্রীদের দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। শুধু কী তাই! বাসসহ যে কোনো পাবলিক যানবাহনে উঠানামার নিয়ম ও পদ্ধতি রয়েছে। সেগুলো যথাযথ ভাবে পালন করা এবং অন্যদের উদ্বুদ্ধ করা সচেতন নাগরিকের কর্তব্যে পড়ে। আমরা কতজন সে দাযিত্ব পালন করছি? প্রতিটি রাস্তায় যানবাহন ভেদে চলাচলে সর্বচ্চো গতিসীমা বেঁধে দেওয়া আছে। সেগুলো না মেনে বাস চালকদের মধ্যে বেপরোয়া গতি ও ওভারটেকিং প্রতিযোগিতা হয়। ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ হয় না ও আইন লঙ্ঘনের ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে। আবার বিআরটিএ’র অনিয়ম দুর্নীতির কারণে লাইসেন্স জালিয়াতি, লাইসেন্স প্রদানের আগে চালকের দক্ষতা ও যোগ্যতা যাচাই না করা, ফিটনেস ও সার্টিফিকেটবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামানোর ঘটনা আছে। কিন্তু যাত্রীরা যদি সতর্ক হয় এবং বাস চালককে চলাচলের নিয়মকানুন মানতে বাধ্য করা হয় তাহলে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো সম্ভব। লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি বিপদ ডেকে আনে। কেউ যদি লক্করঝক্কড় গাড়িতে না উঠি; তাহলে বাস মালিকরা এমনিতেই ফিটনেসবিহীন গাড়ি নামানো আগ্রহ দেখাবে না। যাত্রী কঠোর হলে বাস চালক বেপরোয়া হতে সাহস পাবে না। হঠাৎ হাত তুলে রাস্তার মাঝখানে চলন্ত গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাস্তা পাড় হওয়া, ফুটওভার ব্রিজ থাকার পরও লোহার গ্রীল টপকিয়ে রাস্তা পারাপার নিত্য ঘটনা। ব্যস্ত সড়কে যেথানে জেব্রা ক্রসিং নেই অথচ আচমকা রাস্তা পাড় হওয়ার ঘটনা প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এখন আবার কানে মোবাইলের হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে; কেউ মোবাইলে কথা বলতে বলতে, কেউবা মোবাইল টিপতে টিপতে পথচলা ও রাস্তা পাড় হওয়ার দৃশ্য ভাবে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী ও গ্রাম থেকে আসা সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়। অথচ পথচারীদের নৈতিক দায়িত্ব সতর্কভাবে চলাফেরা করা। ৪ এপ্রিল প্রান্থপথে বাসের চাপায় হাত হারানো রাজীব হোসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ২০ এপ্রিল বনানীতে বাসের চাপায় পা হারান গৃহকর্মী রোজিনা আক্তার মারা গেছেন। ১১ এপ্রিল বাসের ধাক্কায় গুরুত্ব আহত হন রুনি আক্তার। গোপলগঞ্জে হৃদয় নামে এক তরুণ পা হারান। ১৬ এপ্রিল পলাশী মোড়ে বাসের চাপায় আহত হন পুলিশ সদস্য দেলোয়ার হোসেন। ৫ এপ্রিল দুই বাসের প্রতিযোগিতার মাঝে রিকসায় আহত হন আয়েশা খাতুন। ১৭ এপ্রিল দুর্ঘটনায় হাত হারান খালিদ হোসেন। ২৮ এপ্রিল দোলাইপাড়ে বাসের চাপায় পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাসেল সরকারের। প্রতিটি ঘটনা মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। ওই ঘটনাগুলো ভুক্তোভোগী পরিবারগুলোর ‘সারা জীবনের কান্না’ হয়ে গেছে। শুধু কী চালকদের দোষে এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে? ব্যস্ত ঢাকা শহরে বাসের সিটে বসে হাত বের করে দিয়ে বা চলন্ত গাড়ি থেকে নামার চেষ্টা এবং ব্যস্ত সড়কে দ্রæত যানকে আটকিয়ে রাস্তা পার হওয়া কী সুনাগরিকের কাজ?
নাগরিক হলেন নির্দিষ্ট ভূখন্ডের প্রতি আনুর্গত্য প্রদর্শকারী ব্যক্তি যিনি তার উপর আরোপিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেন এবং ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। আর রাষ্ট্র এবং মানবতার কল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয় গুণসম্পন্ন ব্যক্তিকে বলে সুনাগরিক। সুনাগরিক প্রতিটি রাষ্ট্রের জন্য মূল্যবান সম্পদ। সুনাগরিকের বুদ্ধি, বিবেক, আত্মসংযম, জ্ঞান, সচেতনতা, সততা, ন্যায়বোধ গুণগুলো অপরিহার্য। এসব গুণের মাধ্যমে তারা রাষ্ট্রের সেবা করে এবং রাষ্ট্রকে কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। আসুন না সবাই সুনাগরিক হই, সভ্য হই। অন্যের দোষ ধরার আগে আয়নায় নিজের চেহারা দেখি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।