বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মো: শামসুল আলম খান : ১৯৯২ সালের পহেলা জানুয়ারি যান চলাচল শুরু হয় ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুতে। ৪৫৫ মিটার দীর্ঘ এ সেতু পারাপারে ওই বছর থেকেই টোল দিয়ে আসছে বিভিন্ন যানবাহন। স্থানীয়দের কাছে ‘শম্ভুগঞ্জ সেতু’ হিসেবে পরিচিত এ সেতু নির্মাণে সাকুল্যে খরচ হয়েছিল ৪৩ কোটি টাকা।
প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরের মাথায় এ সেতুর ইজারা বাবদ খরচের দ্বিগুণ টাকা আয় হলেও এখনো টোলের ভার বইতে হচ্ছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের। এমনকি বছর বছর যানবাহনভেদে বাড়ছে টোল। স্থানীয় নাগরিক, পরিবহন মালিক-চালক-শ্রমিকরা দীর্ঘদিন যাবতই এ সেতু’র টোল মওকুফের দাবি জানালেও মোটেও কর্ণপাত করছে না স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। উল্টো অর্থ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘দোহাই’ দিয়ে চলছে ‘টোলবাজি।’
নাগরিক নেতারা অভিযোগ করে বলেছেন, এক বছর আগে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ময়মনসিংহ সফরকালে আশ্বাস দিয়েছিলেন টোল আদায় বন্ধে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। কিন্তু এখনো তিনি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। মন্ত্রী উদ্যোগী হলে এ ‘বোঝা’ থেকে মুক্তি পেতে পারে এ অঞ্চলের বাসিন্দারা।
জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত এ সেতু দিয়ে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, শেরপুর, মদন, মোহনগঞ্জ, তাড়াইল, কেন্দুয়া, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বিরিশিরি, ময়মনসিংহের তারাকান্দা, ফুলপুর, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ছোট-বড় ট্রাকসহ প্রায় চার থেকে সাড়ে চার হাজার যানবাহন চলাচল করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালের দিকে এ সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইজারা বাবদ আদায় হয়েছে কমপক্ষে ৯০ কোটি টাকা। এ সেতুতে প্রতিটি যান থেকে কমপক্ষে ১৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা আদায় করা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রায় ১৩ কোটি টাকার বিনিময়ে স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এ সেতুটি ইজারা দেয় মেসার্স মোস্তফা কামাল নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে।
সরেজমিনে এ সেতু’র টোল প্লাজায় অবস্থান করে দেখা গেছে, এ সেতুতে ট্রেইলারের টোল নেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা। হেভী ট্রাক ১৩৫ টাকা, মিডিয়াম ট্রাক ১০০ টাকা, বড় বাস ৬৫ টাকা, মিনি ট্রাক ৭৫ টাকা, পাওয়ার টিলার ৬০ টাকা, মিনিবাস ৩৫ টাকা, মাইক্রোবাস ও হায়েস ৪০ টাকা, প্রাইভেটকার ২০ টাকা ও সিএনজি চালিত অটো রিকশা থেকে ১৫ টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে।
স্থানীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, সেতু নির্মাণের খরচ উঠেছে সেই কবেই। অথচ এখনো প্রতি বছরই কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই টোলের হার বাড়ছে। এমনকি রাতের বেলায় শম্ভুগঞ্জ সেতুটিতে কোন সড়ক বাতিই জ্বলে না। ওই সময় অনেকটা আতঙ্ক নিয়েই যানবাহন চালাতে হয়।
টোল প্লাজায় অবস্থানকালেই আলাপ হলো গৌরীপুর টু ময়মনসিংহ সড়কের গোধূলী পরিবহনের চালক মামুন মিয়ার সঙ্গে। ৩৫ বছর বয়সী এ চালক আলাপে বলেন, ‘ভেবেছিলাম খরচের টাকা উঠে গেছে। হয়তো এবার সেতু টোলমুক্ত করা হবে। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে টোলের হার বাড়ছে। এভাবে আর কতকাল টোল দিতে হবে?’ একই রকম কথা বলেন সুবর্ণা এক্সপ্রেসের চালক জসিম উদ্দিন। তার ভাষ্যে-‘পরিবহন শ্রমিকদের রক্ত চুষে কোন নিয়ম কানুন ছাড়াই টোল নেয়া হচ্ছে।’
তবে টোল আদায়কারী ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত হাসান ও ক্যাশিয়ার সুব্রত জানান, ‘আমরা নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই টোল প্লাজা ইজারা নিয়েছি। আর দেশের অন্যান্য সেতুর তুলনায় এ সেতুতে টোল ভাড়া অনেক কম। সরকার টোল মওকুফ করলে আমাদের কিছু করার নেই।’
শম্ভুগঞ্জ সেতুতে টোল আদায় বন্ধের দাবিতে গত বছরের নভেম্বরে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে ময়মনসিংহ জেলা সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন। পরবর্তীতে তারা বিভাগীয় কমিশনারসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে পৃথক পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করেন। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
এ সেতুর টোল মওকুফের দাবি জানিয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কবি স্বাধীন চৌধুরী বলেন, শম্ভুগঞ্জ সেতুতে টোল আদায় বন্ধ এখন গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। সেতুর নির্মাণ খরচ উঠে দ্বিগুণ টাকা আদায় হলেও সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে সংশ্লিষ্টরা টোল আদায় করছে। অবিলম্বে টোল আদায় বন্ধ না হলে সব নাগরিকদের সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) এক কর্মকর্তা জানান, টোল আদায় বন্ধের বিষয়টি মূলত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। কারণ এখান থেকে আয়কৃত পুরো টাকাই অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়। পরবর্তীতে এ টাকাই সওজসহ বিভিন্ন বিভাগের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাবদ বরাদ্দ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।
জানতে চাইলে ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান বলেন, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এ সেতুর টোল আদায় করা হয়। এখানে স্থানীয় সড়ক বিভাগের কিছুই করার নেই। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা আসলে তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।