পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আজ মহান মে দিবস। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে সারাবিশ্বে দিবসটি যথোপযুক্ত মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে ১৮৮৬ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশে পুলিশের গুলিবর্ষণে ১০ জনের বেশি শ্রমিক নিহত হয়, আহত হয় অনেকে। শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে কয়েকজন পুলিশও নিহত হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়। প্রহসনমূলক বিচারে কয়েকজন শ্রমিকনেতার ফাঁসি হয়। শ্রমিক আন্দোলনের এই রক্তাক্ত অধ্যায়ের স্মরণে ১ মেকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয় পরবর্তীকালে। সেই থেকে সারাবিশ্বে মে দিবস পালিত হয়ে আসছে। এত বছরেও শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার, সুযোগ-সুবিধা পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা বলা যাবে না। যদিও অনেক ক্ষেত্রেই অবস্থার গুণগত পরিবর্তন ও উন্নতি হয়েছে। মে দিবস শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। তা একই সঙ্গে শ্রমিকদের কাছে বিজয়, আনন্দ, প্রতিজ্ঞা ও অনুপ্রেরণার উৎস। স্বীকার করতেই হবে, দীর্ঘ ও ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলে শ্রমিকদের মানবিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে, শোষণ-বঞ্চনা কমেছে। অবশ্য এখনো কম মজুরি, মজুরিবৈষম্য, নিয়মিত মজুরিপ্রাপ্তি, শ্রমক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা ইত্যাদির সমস্যা রয়েছে। এ কারণে শ্রমিক অসন্তোষও আছে। আছে আন্দোলন, সংগ্রাম। আসলে শ্রমিকদের অধিকার ও ন্যায়সঙ্গত সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির দাবি ও আন্দোলন একটি চলমান প্রক্রিয়া। কারো অজানা নেই, শ্রমিকদের সার্বিক অবস্থা এবং শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক এখন আর সেই ঊনিশ শতকের অবস্থায় নেই। অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক-মালিক সম্পর্কেরও যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক ছাড়া উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কোনো সহজ উপায় নেই। এ জন্য উভয় পক্ষের পারস্পরিক সুসম্পর্ক, দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতা অপরিহার্য।
শিল্প-কারখানার সঙ্গে শ্রমিকদের সম্পর্ক ওতপ্রোত। শ্রমিক ছাড়া উৎপাদন হতে পারে না। শ্রমিকদের শ্রম যেমন উৎপাদনের নিয়ামক তেমনি এই শ্রম তাদের আয়-রোজগারেরও উপায়। মালিকরা শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা করে মুনাফা ও আয়-উপার্জনের জন্য। কিন্তু শ্রমিক ছাড়া কারখানা অচল। শ্রমিক-মালিক স্ব-স্ব স্বার্থে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। কারখানা আছে, শ্রমিক নেই কিংবা শ্রমিক আছে কারখানা নেই, এটা কল্পনা করা যায় না। শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক যত মধুর ও দৃঢ় থাকবে, উভয় পক্ষের লাভ ও সুবিধা ততই বেশি হবে। শিল্প-কারখানায় পুরোদমে উৎপাদন চালু থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ে। অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়ে। অর্থনীতি গতিশীলতা লাভ করে। উৎপাদন ও অর্থনীতিতে সচলতা থাকলে, উন্নতি হলে তখন মালিকদের দায়িত্ব বর্তায় শ্রমিকদের মজুরি ও ভাতা বাড়ানো, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করার। মালিকরা শ্রমিকদের দেখবে, শ্রমিকরা দেখবে মালিকদের, শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের মূল কথা এটাই। শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, মানবিক সুযোগ-সুবিধা, কারখানার কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মালিকদের দায়িত্ব। শ্রমিকদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে, সততার সঙ্গে শ্রম দিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখা।
আমাদের দেশে, স্বীকার করতেই হবে, নানা কারণে উৎপাদন ব্যবস্থা ও শিল্প-কারখানার অবস্থা ততটা ভালো নয়। নানাবিধ সমস্যা-সঙ্কট এখানে রয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগ বন্ধ্যাত্ব, গ্যাস-বিদ্যুতের অভাব, অবকাঠামো সুবিধার অপ্রতুলতা, যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থার দুর্বলতা ইত্যাদি কারণে উৎপাদন ব্যাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে শত শত শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে; হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। যে গার্মেন্ট শিল্প আমাদের শিল্প সেক্টর, উৎপাদন ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান ও রফতানিতে বিপ্লব এনেছে সেই গার্মেন্ট শিল্পের অবস্থাও এখন শোচনীয়। নানা কারণে বহু গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ছাড়াও বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ওদিকে শ্রমিকদের মজুরি ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, তাদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দান এবং কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নত ও নিরাপদ করার বিষয়ে যে আলোচনা-বিতর্ক ছিল তা অবসানে ইতিবাচক অগ্রগতি হলেও সব কিছুর নিষ্পত্তি হয়ে গেছে, বলা যাবে না। শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। তাদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেয়া হয়েছে। এমনকি ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। কারখানার কর্মপরিবেশের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজও চলছে। এই অগ্রগতিকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। উৎপাদন ব্যবস্থা আরো গতিশীল হলে, উৎপাদন-রফতানি ও ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়লে আমরা নিশ্চিত, মালিক-শ্রমিকরা লাভবান হবে, অর্থনৈতিকভাবে দেশ এগিয়ে যাবে। অতএব, উৎপাদন, শিল্পায়নে যেমন নজর দিতে হবে, তেমনি মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, সস্তা শ্রমের দিন শেষ। এটা মাথায় রেখেই উদ্যোগ-পদক্ষেপ নিতে হবে। মালিক-শ্রমিক-সরকার একজোট হয়েই সবকিছু করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।