২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
ভারতকে এখন বিশ্বের ডায়াবেটিসের রাজধানী বলা যেতে পারে। প্রায় ৬০ মিলিয়ন লোক এদেশে ডায়াবেটিসে ভুগছেন। বংশগত কারণ তো আছেই, জীবনযাপনের দোষও কিছু কম নয় রক্তে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে। তবে, সঠিক জীবনযাপন ও নিয়মিত চেক-আপ না করালে এ থেকে নান জটিলতাও হতে পারে।
যা জানা প্রয়োজন
* আমাদের মধ্যে ভুল ধারণা আছে যে ডায়াবেটিস হলে সবসময় তার নির্দিষ্ট লক্ষণ থাকবে। কিন্তু মোটে ৩০ শতাংশ রোগীর ক্লাসিক সিম্পটম যেমন ঘনঘন ইউরিন হওয়া, তেষ্টা পাওয়া ইত্যাদি থাকে। অনেকের ক্ষেত্রেই এত দেরিতে অসুখ ধরা পড়ে যে ততদিনে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা দেখা দেয় রোগীর মধ্যে।
* দু’ধরণের জটিলতা হতে পারে: মাইক্রোভাসকুলার ও ম্যাক্রোভাসকুলার কমপ্লিকেশন। প্রথমটির দরুণ স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। ডায়াবেটিস থাকলে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অনেকগুণ বেড়ে যায়। হার্ট ফেলিওর, হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ইত্যাদি হওয়ার ঝুঁকি এদের বেশি। আবার পায়ে রক্তের যোগান দেয় যে ধমনীগুলো, সেগুলো শুকিয়ে যেতে পারে। এর ফলে হাঁটতে যেমন ব্যথা হতে পারে তেমনই কেটে গেলে শুকোতেও দেরি হয়। ফুট আলসার বা ফুট ইনফেকশনও ডায়াবেটিসের অন্যতম ফলাফল। আর দ্বিতীয় ধরণের জটিলতার কারণে রেটিনোপ্যাথি হতে পারে। কিডনির সমস্যাও হতে পারে। ডায়াবেটিস কিন্তু রেনাল ফেলিওর-এর অন্যতম বড় কারণ। ডায়াবেটিস রোগীদের তাই প্রতি বছর চোখের রুটিন চেক-আপ করা দরকার। অনেকে তো আবার রেটিনোপ্যাথির কোন উপসর্গও বুঝতে পারেন না। হয়তো কারও অ্যাডভান্স্ড রেটিনোপ্যাথি রয়েছে, কিন্তু তিনি কিছুই বুঝতে পারেননি। হঠাৎ একদিন সকালে দেখলেন চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। মতে রাখা দরকার, ডায়াবেটিস থেকে কোন জটিলতা হলে, তার ফল দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
* ডায়াবেটিস একবার ধরা পড়লে নিয়মিত চেক-আপ করানো দরকার। ডাক্তারের পরামর্শে মোনোফিলামেন্ট টেস্ট করাতে হতে পারে। এতে বোঝা যায় রোগীর নিউরোপ্যাথি আছে কি না। এর ফলে পায়ের অনুভুতি চলে যায়। কোন রকম ব্যথা অনুভব করতে পারেন না রোগী। এছাড়া রক্ত টেস্টও করতে দেওয়া হয়। লিপিড প্রোফাইলও টেস্ট করতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমস্যা হয় দেরিতে ডায়াগনোসিস হলে। হয়তো তার পাঁচ-দশ বছর আগে ডায়াবেটিস শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ডাক্তারের কাছে যখন তিনি আসেন, ততদিনে হয়তো কিছু জটিলতা দেখা যেতে শুরু করেছে। সেজন্যই ডায়াবেটিস হল ‘সাইলেন্ট কিলার’।
* ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চারটি জিনিসের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ: ডায়েট, এক্সারসাইজ, ওষুধ ও সচেতনতা। ডায়াবেটিস হলেই যে খাওয়াদাওয়ার উপর কার্ফু জারি করতে হবে, এমনটা নয় মোটেও। সবই খেতে পারেন, তবে পরিমিত পরিমাণে। রোগীর কত ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন প্রয়োজন, তার উপর ভিত্তি করে ডায়েট চার্ট তৈরি করে দেওয়া হয়। সাধারণ ওজনের মানুষের ক্ষেত্রে দৈনিক ১২০০-১৫০০ ক্যালরি ইনটেক প্রয়োজন। রিফাইন্ড শুগার বা মিষ্টি খাওয়া বারণ। চায়ে চিনি খাবেন না। এছাড়া আলু, ভাত খাওয়ার উপর কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। ভাত ও আটার রুটিতে কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালরির পরিমাণ প্রায় সমান। মোট ক্যালরি ইনটেকের মধ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট-এর (ডালদা, ঘি) পরিমাণ ১০ শতাংশের বেশি যেন না হয়। ডায়েটে ফাইবার আর কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি রাখুন। সবুজ সবজির মধ্যে ফাইবার থাকে প্রচুর।
* সপ্তাহে ১৫০ মিনিট এক্সারসাইজ করা প্রয়োজন। যদি পাঁচদিন আধঘণ্টা করে সময় বের করে নেন এক্সারসাইজের জন্য, তাহলেই যথেষ্ট। আরও কিছু বেশি ঘাম ঝরাতে পারলে তো কথাই নেই। ব্রিস্ক ওয়ার্কিং করতে পারেন। আধঘণ্টা একটু জোরে হাঁটলে প্রায় দু›থেকে তিন কিলোমিটার হেঁটে ফেলতে পারবেন।
* একইসঙ্গে ধূমপান একদম বারণ। যেহেতু ডায়াবেটিসের রোগীদের হার্টের অসুখ, স্ট্রোক, কিডনির অসুখ ইত্যাদির সম্ভাবনা বেশি থাকে, তাই সিগারেট থেকে পুরোপুরি দূরে থাকতে হবে। সপ্তাহে সাত পেগের বেশি অ্যালকোহল খাবেন না। কারণ, অ্যালকোহলে ক্যালরির পরিমাণ খুব বেশি থাকে। নুন কম করে খাবেন। এতে রক্তচাপ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
* এসবকিছুর সঙ্গে প্রয়োজন ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা। ডায়াবেটিস হলে কি কি জটিলতা হতে পারে সে সম্পর্কে রোগীর ধারণা থাকলে তবেই সে আগেভাগে সচেতন হবে।
-ডাঃ শাহজাদা সেলিম
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
কমফোর্ট ডক্টর’স চেম্বার , ১৬৫-১৬৬, গ্রীনরোড, ঢাকা
মোবাঃ ০১৭৩১৯৫৬০৩৩, ০১৫৫২৪৬৮৩৭৭।
Email: [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।