Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাশ্মিরের গ্রাম ছাড়ছেন মুসলিমরা

আসিফা ধর্ষণ ও হত্যাকান্ড : আতঙ্কে

| প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

জম্মু কাশ্মির সরকার থেকে বিজেপির সব মন্ত্রীর পদত্যাগ
ইনকিলাব ডেস্ক : ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মিরে আট বছর বয়সী শিশু আসিফাকে ধর্ষণ ও হত্যার পর ফুঁসে উঠেছে স্থানীয়রা। তবে একইসঙ্গে কাজ করছে আতঙ্ক। আসিফার পরিবারের পর গ্রাম ছেড়েছেন শতাধিক মুসলিম। যারা থেকে গেছেন আতঙ্ক বিরাজ করছে তাদের মাঝেও। কথা বলছেন না স্থানীয় হিন্দুরাও। সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম চ্যানেলনিউজ এশিয়া এর প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাসানা গ্রামে আর যেন কোনও মুসলিম পরিবার নেই। এটা যেন ধর্ষণ সঙ্কটে জর্জরিত ভারতের চিত্র বহন করছে। পুলিশের দাবি, সংখ্যালঘু মুসলিমদের তাড়াতেই এই কাজ করেছিল একটি চক্র।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে কাঠুয়ার উপত্যকায় ঘোড়া চরানোর সময় অপহরণ করা হয় আসিফাকে। আদালতে দায়ের করা মামলার বিবরণ অনুযায়ী, আসিফা নামের ওই শিশুকে অপহরণের জন্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও দেবীস্থান মন্দিদের হেফাজতকারী সানজি রামই তার ভাগ্নে ও একজন পুলিশ সদস্যকে নির্দেশ দেয়। নির্দেশ বাস্তবায়নের পর সাত দিন ধরে মন্দিরে আটকে রেখে একদল হিন্দু পুরুষ ধর্ষণ করে আসিফাকে। পরে মাথায় পাথর মেরে ও গলা টিপে হত্যা করা হয় তাকে। আসিফাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যাকাÐের ঘটনায় আটজনকে অভিযুক্ত করেছে ভারতের আদালত। মধ্য জানুয়ারির ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত ১০ এপ্রিল অভিযোগপত্র জনসম্মুখে আনা হয়। জানুয়ারিতে এ নিয়ে তেমন উত্তেজনা না হলেও এ ঘটনায় অভিযোগপত্র দেওয়ার পর সোচ্চার হয়ে ওঠে বলিউডসহ সারা ভারত।
কাঠুয়া অঞ্চলের যাযাবর মুসলিম বাকারওয়াল গোষ্ঠীর মেয়ে ছিলো ৮ বছরের ছোট্ট আসিফা। কাঠুয়ার উপত্যকায় ঘোড়া চরানোর সময় অপহরণ করা হয় তাকে। আদালতে দায়ের করা মামলার বিবরণ অনুযায়ী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সানজি রাম তার ভাগ্নে ও একজন পুলিশ সদস্যকে আশফিয়া নামের ওই শিশুকে অপহরণের নির্দেশ দেয়। কাঠুয়ার যে গ্রামে আসিফা থাকতেন, সেই রাসানা গ্রামটি হিন্দু অধ্যুষিত। অসিফার ধর্ষণ ও হত্যাকাÐে বিভক্ত হয়ে পড়ে ওই গ্রাম। ধর্ষকদের বিচারের আওতামুক্ত করতে মিছিলও হয়েছে সেখানে। সেখানে অংশ নেন বিজেপি মন্ত্রীও।
টাইমস অব ইন্ডিয়া তাদের এক প্রতিবেদনে নিজস্ব অনুসন্ধান সূত্রে জানিয়েছিল, ভুক্তভোগী শিশু আসিফার বাবা মোহাম্মদ ইউসুফ পুজওয়ালা তার স্ত্রী, দুই সন্তান ও গবাদিপশু নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছেন। এর আগে জানা গিয়েছিল,পরের মাসে তারা কাশ্মির ছেড়ে যাবেন। গ্রামবাসীদের চাপে পরিবার রাসনায় কবরও দিতে পারেননি আসিফার। জম্মু থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে এক গ্রামে কবর দিতে হয় তাকে।
চ্যানেল নিউজ এশিয়া জানায়, পুলিশের দাবি অনুযায়ী মুসলিমদের তাড়ানোর এই প্রক্রিয়ায় সফল হয়েছেন চক্রান্তকারীরা। জানুয়ারি ধর্ষণের পর সেখান থেকে চলে গেছেন মুসলিম স¤প্রদায়ের শতাধিক গ্রামবাসী। ধর্ষণ ও হত্যার শিকার আসিফার বাড়ি আগেই খালি হয়ে গিয়েছিল। এখন সেটি পাহারায় আছেন পাঁচজন পুলিশ।
রাসানায় যে কয়জন মুসলিম আছেন তারাও উদ্বিগ্ন। কানিজা বেগম নামে একজন জানান, ‘তার ১০ বছর বয়সী মেয়েকে এখন বাইরে খেলতে দিতে ভয় পান তিনি। স্কুলে গেলেও তার ভাই নিয়ে যান সাথে।’
জম্মু ও কাশ্মির ভারতের একমাত্র মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্য। জম্মুর দক্ষিণাঞ্চলে কিছু অংশ হিন্দু অধ্যুষিত। তবে এই হত্যাকাÐের আগ পর্যন্ত রাসানায় হিন্দু-মুসলিম স¤প্রীতি ছিল। পুলিশের কাছে খুব কমই পরস্পরবিরোধী অভিযোগ ছিল তাদের।
আসিফার ঘটনাও প্রথমে সবার চোখে পড়েনি। জম্মু আদালতের সামনে হিন্দু আইনজীবীরা চার্জশিট দাখিল না করার দাবি জানান। এরপর সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে ঘটনাটি। রাসানা গ্রামেও পাল্টে যায় পরিস্থিতি। মুসলিমরা গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। হিন্দুরাও কারও সাথে কথা বলতে চান না। যশপল শর্মা নামে এক স্থানীয় জানান, ‘এই ঘটনার পর গ্রাম খালি হয়ে গেছে। কেউ কারও সঙ্গে কথাও বলতে চান না।’ তিনি বলেন, রাসানা এক বিভীষিকার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আসিফার পরিবারকে সাহায্য করতে ছয়জন মুসলিম পাঞ্জাব থেকে গাড়ি চালিয়ে রাসানায় গিয়েছিলেন। তাদের প্রধান মুবিন ফারুকি বলেন, এই অসুস্থ মানসিকতার বিরুদ্ধে পুরো দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
এই ধর্ষণের পর জম্মুসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলছে। গত মঙ্গলবার জম্মুতে আন্দোলনের আশঙ্কায় ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জম্মু কাশ্মির সরকার থেকে পদত্যাগ করছেন বিজেপির সব মন্ত্রী
এদিকে জম্মু ও কাশ্মিরে ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি’র ৯ মন্ত্রীকে দলের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এর ফলে সেখানে বিজেপির সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মির পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-পিডিপি’র কোনও জোট ভাঙার কোনও আশঙ্কা তৈরি হয়নি। কারণ মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির মন্ত্রিপরিষদের নতুন মুখ আনতে যাচ্ছে বিজেপি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস নাও’ এ খবর জানিয়েছে।
বিজেপি নেতৃবৃন্দ বলেছেন, দল নতুন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়ে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের সেবা করতে চায়। বিজেপির মন্ত্রী চন্দ্র প্রকাশ গঙ্গা ও চৌধুরী লাল সিং রাজ্য সরকার থেকে পদত্যাগের পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। ওই দুই মন্ত্রী কাঠুয়ায় আট বছরের শিশু আসিফাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় অভিয্ক্তুদের রক্ষার দাবিতে হিন্দু একতা মঞ্চের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে তারা পদত্যাগ করেন।
পিটিআই বলেছে, খুব সম্ভবত এপ্রিল মাসের ২০ তারিখে মন্ত্রিপরিষদে রদ-বদল করা হবে। ভারতীয় আরেক সংবাদ সংস্থা আইএএনএস জানিয়েছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট অবিনাশ রায় খান্নার সভাপতিত্বে দলের শীর্ষ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সূত্রটি নিশ্চিত করেছে, রাজ্য সরকার থেকে বিজেপির সব মন্ত্রীকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভায় রদ-বদলের আগেই তারা পদত্যাগ করবেন। কিন্তু তার মানে এই না, বিজেপি সরকার থেকে বের হয়ে আসছে। পিডিপি সূত্রগুলো বলেছে, এই পদত্যাগ বিজেপির দলীয় সংস্কারের অংশ। এটা আমাদের জোট সরকারের গঠনতন্ত্রকে কোনভাবে প্রভাবিত করবে না। জম্মু ও কাশ্মীর সরকারে মুখ্যমন্ত্রীসহ সর্বোচ্চ ২৫ জন মন্ত্রী থাকতে পারবে। এর মধ্যে ১৪ জন মন্ত্রী হবেন পিডিপি থেকে। বাকি ৯ জনকে বিজেপি মনোনয়ন দিয়ে থাকে। সূত্র : ওয়েবসাইট।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুসলিম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ