পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রত্যাশিত বেসরকারী বিনিয়োগ না হওয়ায় এমনিতেই দেশে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে স্থবিরতা বিরাজ করছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের এই স্থবিরতা উত্তরণে দেশি-বিদেশি সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে বেশকিছু পরামর্শও দেয়া হয়েছে। তবে সে সব সুপারিশ অনুসারে কোন কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি। উপরন্তু নির্মান সামগ্রির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের সরকারী-বেসরকারী অবকাঠামো উন্নয়নে বড় ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করেছে। দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রয়োজনীয় নজরদারীর অভাবে এমনিতেই বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় ধরনের ঘাটতি ও ধারাবাহিক ব্যর্থতা রয়েছে। যথাসময়ে এডিপি বাস্তবায়ন করতে না পারায় অর্থবছরের শেষদিকে তড়িঘড়ি করে অবকাঠামো নির্মান ও সংস্কারের কাজ শেষ করতে গিয়ে অপচয়, লুটপাট ও কাজের মানহীনতার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। এহেন বাস্তবতায় চলতি অর্থবছরের শেষ প্রান্তে এসে রড, সিমেন্ট, বালুর মত অবকাঠামো খাতের অত্যাবশ্যকীয় নির্মান সামগ্রির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অবকাঠামো উন্নয়নে একধরনের বিপর্যয়কর অবস্থা তৈরী করেছে। এসব সামগ্রির মূল্যবৃদ্ধির দৃশ্যমান বা যৌক্তির কোন কারণ না থাকলেও মূলত সংশ্লিষ্ট মহলের সিন্ডিকেটেড মুনাফাবাজির কারণেই হঠাৎ করে নির্মান সামগ্রির মূল্য বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রডের মূল্য রাতারাতি টনপ্রতি হাজার হাজার টাকা,সিমেন্টের মূল্য ব্যাগপ্রতি ৫০ থেকে শত টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় সারাদেশে বেসরকারী অবাসন প্রকল্পের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন ও শিক্ষা বিভাগের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে।
দেশে উন্নয়ন কাজের গতি যথাযথ নয়। ঠিকাদারী চুক্তি অনুসারে যথাসময়ে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন না করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখার কারণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও জনদুর্ভোগের অন্ত থাকেনা। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় মাঝপথে নির্মানসামগ্রির মূল্য বৃদ্ধি পেলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা নতুন অজুহাত তুলে প্রাক্কলন ব্যয় বাড়িয়ে নেয়ার জন্যও সময় ক্ষেপণ করে থাকে। সময় ক্ষেপনের কারণে মূল্যবৃদ্ধি ও জনদুর্ভোগের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়াররা দায়ী হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের বদলে প্রাক্কলণ ব্যয় বাড়িয়ে কার্যত তাদের পুরস্কৃত করা হয়। উন্নয়ন কাজ ফেলে রাখা, বার বার সময়বৃদ্ধি এবং বাজেট বৃদ্ধির পেছনে কাজ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার যোগসাজসমূলক দুর্নীতি ও লুটপাট। অগ্রাধিকার পাওয়া মেগা প্রকল্পগুলোতেও এর ব্যত্যয় ঘটছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম বা ঢাকা, ময়মনসিংহ হাইওয়ের মত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে সীমাহীন ধীরগতির কারণে দেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে তা এসব উন্নয়ন প্রকল্পের বাজেটের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী। ভুল নকশায় প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং নকশা পরিবর্তনের ফলেও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়ার নজির আছে। তবে এসব ভুল ও অপচয়ের জন্য কাউকে জবাবদিহিতা করতে হয়না বলেই তার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
সরকারের মেয়াদের শেষ বছরে যখন উন্নয়ন কাজে বাড়তি গতি সঞ্চারিত হওয়ার কথা, তখন রড, সিমেন্ট, বালুসহ নির্মান সামগ্রির মূল্যবৃদ্ধির কারণে সরকারী-বেসরকারী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন শ্লথ হয়ে পড়েছে। মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে কাঁচামালের আমদানী ব্যয় বৃদ্ধি এবং টাকার মূল্য কমে যাওয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণেও পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার দাবীকে যৌক্তিক বলে মেনে নেয়া যায়। তবে সকালে-বিকালে মূল্যবৃদ্ধির উল্লম্ফন থেকে বোঝা যায়, এটি একটি সিন্ডিকেটেড তৎপরতা। নির্মান শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা এমন রাতারাতি মূল্যবৃদ্ধিকে অস্বভাবিক ও অযৌক্তিক বলে দাবী করেছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একদিকে যথাসময়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থ হচ্ছে, অন্যদিকে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে থাকা সিন্ডিকেটেড মুনাফাবাজি বন্ধ করে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতেও কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারছেনা। এহেন বাস্তবতায় অবকাঠামো উন্নয়নের মধ্য দিয়ে ও বিনিয়োগ বাড়িয়ে সরকার অর্থনৈতিকভাবে দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার যে রাজনৈতিক রূপকল্প তুলে ধরছেন তা বাস্তবে রূপ দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থবিরতার পাশাপাশি দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অর্থনৈতিক খাতের প্রতিটি সূচকেই নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দিয়েছে। চলতি অর্থবছর শেষে দেশে রাজস্ব ঘাটতি ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে বলে বেসরকারী গবেষনা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ(সিপিডি) গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে। অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে এটি একটি হতাশাজনক পরিস্থিতির ইঙ্গিত বহন করে। তবে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে চলমান উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ রাখার কোন সুযোগ নেই। যে কোন অবস্থায় উন্নয়ন কাজের গতি বৃদ্ধির মাধ্যমেই অর্থনীতিতে নতুন গতি আনতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে নির্বাহী আদেশ দিয়ে প্রকল্পের কাজ দ্রæত শেষ করতে হবে। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির নেপথ্যে কোন সিন্ডিকেটেড কারসাজি থাকলে তা খতিয়ে দেখতে হবে। উন্নয়ন ও বিনিয়োবান্ধব পরিবেশ ও সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাধাগ্রস্ত হয় এমন যে কোন আশঙ্কা দূর করার কার্যকর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।