নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
কখনো গায়ে ওঠেনি টেস্ট জার্সি। সেই তুষার ইমরানই ঘরোয়া ক্রিকেটের লঙগার ভার্সনের রাজা। বয়সকে বুড়ো আঙ্গুল দেখি রানের ফুলঝুরি ছুটিয়ে চলেছে তার ব্যাট। প্রতিনিয়তই অর্জনের ঝুলিতে জমা পরছে নতুন কিছু। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং রেকর্ডের উল্লেখযোগ্য অনেকগুলোই তার দখলে। তবে একটি আক্ষেপে পুড়ছিলেন তুষার। ছিল না ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরি। অর্জনে সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারে এতদিন জোড়া সেঞ্চুরি ছিল তুষারের অধরা। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পালায় অচেনা সেই স্বাদও পেয়ে গেলেন ৩৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। তুষারের এই কীর্তি দক্ষিণাঞ্চলকে নিয়ে গেলেন শক্ত অবস্থানে। কিন্তু লিটন দাস ও আফিফ হোসেনের দারুণ দুটি সেঞ্চুরিতে ম্যাচ বাঁচাল পূর্বাঞ্চল।
বিসিএলের চতুর্থ রাউন্ডে সিলেটে ড্র হয়েছে দক্ষিণাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের ম্যাচ। ম্যাচে তুষারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে গতকাল শেষ দিনে পূর্বাঞ্চলকে ৪১৫ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল দক্ষিণাঞ্চল। লিটন ও আফিফের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে পূর্বাঞ্চল ১ উইকেটে ২২৪ রান তোলার পর ড্র হয় ম্যাচ। দক্ষিণাঞ্চল দিন শুরু করেছিল দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১৪২ রান নিয়ে। ২৯ রানে শুরু করা সৌম্য ফিরে যান আর ৬ রান যোগ করে। কিন্তু ৪৬ রানে শুরু করা তুষার এগিয়ে যায় দৃঢ় পায়ে। লাঞ্চের আগেই সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১৪৪ বলে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০ হাজার রান করা বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান নিজের সেঞ্চুরির রেকর্ডকে নিয়ে গেলেন আটাশে।
বিসিএলে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি এ নিয়ে হলো মাত্র দ্বিতীয়বার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জোড়া সেঞ্চুরি হলো ১২ বার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তুষারের এটি ২৮তম সেঞ্চুরি। দুইয়ে থাকা নাঈম ইসলামের সেঞ্চুরি ২৩টি। ১৫৬ ম্যাচে তুষারের রান এখন ১০ হাজার ৪১৮। ৯ হাজার রানও নেই বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যানের। সেঞ্চুরির পরপরই অবশ্য অবসর নেন তুষার। জ্বলে ওঠেন প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ মোহাম্মদ মিঠুন। ৫ চার ও ৩ ছক্কায় করেন ৬৬ রান। শেষ দিকে ৫ বলে ৩ ছক্কায় ১৯ করেন অধিনায়ক রাজ্জাক। লাঞ্চের দুই ওভার পর ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণাঞ্চল।
পূর্বাঞ্চলের চ্যালেঞ্জ তখন দুই সেশন টিকে থাকা। তৃতীয় ওভারে ইমতিয়াজ হোসেনকে হারিয়ে কাজটা কঠিন হয়ে ওঠে আরও। কিন্তু এরপরই লিটন ও আফিফের পাল্টা আক্রমণ। যেন টিকে থাকা নয়, রান তাড়াতেই নেমেছিল তারা! ওভারপ্রতি প্রায় ৫ রান করে তুলে দুজনে গড়েন ২০৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। ১১ চার ও ৪ ছক্কায় ১২৯ বলে ১১৩ রান করেন লিটন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার দশম সেঞ্চুরি। ১০ চার ও ৩ ছক্কায় বাঁহাতি আফিফ সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১৩১ বলে। পঞ্চম প্রথম শ্রেণির ম্যাচে প্রতিভাবান এই ব্যাটসম্যানের এটি দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। আফিফের সেঞ্চুরির পরই বেলা সাড়ে তিনটাতেই ড্র মেনে নেয় দুই দল।
এদিকে, বগুড়ায় মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরিতেও প্রথম ইনিংসে ফলো অন এড়ানো যায়নি। দ্বিতীয় ইনিংসে ছিল কঠিন চ্যালেঞ্জ। মিজানুর রহমান ও নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে সেই চ্যালেঞ্জ জিতে মধ্যাঞ্চলের বিপক্ষে ম্যাচ বাঁচিয়েছে উত্তরাঞ্চল। বগুড়ায় ড্র হয়েছে মধ্যাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের ম্যাচটি। প্রথম ইনিংসে ২২৯ রানে পিছিয়ে থাকা উত্তরাঞ্চল শেষ দিনে ফলো অনের পর দ্বিতীয় ইনিংসে করে ২ উইকেটে ২১৩ রান। তবে মিজানুর সেঞ্চুরি করলেও অল্পের জন্য পারেননি শান্ত। দুজনের ১৫৪ রানের জুটি ভাঙে শান্তর বিদায়ে। ১৫২ বলে ৮৯ করে এলবিডবিøউ হন সাইফের বলে। মিজানুরকে থামানো যায়নি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নবম সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন ১৯১ বলে। তার সেঞ্চুরির পরই ম্যাচের ইতি টানেন দুই অধিনায়ক। প্রথম ইনিংসে প্রায় দুই দিন ব্যাট করে ৫২৯ রান তুলেছিল মধ্যাঞ্চল। উত্তরাঞ্চল শেষ দিন শুরু করেছিল প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটে ২৮৬ রান নিয়ে। শেষ দিনে আর ১৪ রান যোগ করেই শেষ হয় তাদের ইনিংস। ৪ ম্যচে ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে পূর্বাঞ্চল। এক পয়েন্ট কম নিয়ে তিনে দক্ষিণাঞ্চল। ৪১ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উত্তরাঞ্চল। ২৯ পয়েন্ট নিয়ে সবার শেষে মধ্যাঞ্চল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণাঞ্চল-পূর্বাঞ্চল, সিলেট
দক্ষিণাঞ্চল ১ম ইনিংস : ৪০৩।
পূর্বাঞ্চল ১ম ইনিংস : ৩০০।
দক্ষিণাঞ্চল ২য় ইনিংস : ৬৮ ওভারে ৩১১/৭(ডি.) (আগের দিন ১৪২/৩) (তুষার ১০৩ (আহত অবসর), সৌম্য ৩৫, মিঠুন ৬৬, নুরুল ১০, দেলোয়ার ০, নাঈম ৮*, রাজ্জাক ১*; আবু জায়েদ ২/৬৩, সোহাগ ৩/৮২, খালেদ ০/৩১, আশরাফুল ২/৬১, সাইফ উদ্দিন ০/৫৩, আফিফ ০/১, অলক ০/১৮)।
পূর্বাঞ্চল ২য় ইনিংস : (লক্ষ্য ৪১৫) ৪৫ ওভারে ২২১/১ (ইমতিয়াজ ৯, লিটন ১১৩*, আফিফ ১০০*; কামরুল রাব্বি ১/৩২, নাঈম ০/৮৯, রাজ্জাক ০/৭৪, দেলোয়ার ০/১৬, ফজলে রাব্বি ০/১২)।
ফল : ম্যাচ ড্র।
ম্যাচ সেরা : তুষার ইমরান (দক্ষিণাঞ্চল)।
মধ্যাঞ্চল-উত্তরাঞ্চল, বগুড়া
মধ্যাঞ্চল ১ম ইনিংস : ৫২৯।
উত্তরাঞ্চল ১ম ইনিংস : ৯৩.১ ওভারে ৩০০ (আগের দিন ২৮৬/৭) (মুশফিক ১১১, তাইজুল ২৫, শরিফুল ৫*, নাঈম (আহত অনুপস্থিত); আবু হায়দার ২/৬৮, শরিফ ০/৪৮, এবাদত ৪/৬১, মোশাররফ ২/৫৩, তানবীর ১/৪২, মাহমুউল্লাহ ০/২২)।
উত্তরাঞ্চল ২য় ইনিংস : (ফলো অনের পর) ৬৫.২ ওভারে ২১৩/২ (মিজানুর ১০০*, জুনায়েদ ১, শান্ত ৮৯, আরিফুল ২২*; আবু হায়দার ০/২৬, শরিফ ১/৯, মোশাররফ ০/৪৩, এবাদত ০/৯, তানবীর ০/৬১, মাহমুদউল্লাহ ০/২৪, মার্শাল ০/, সাইফ ১/১, সাদমান ০/১)।
ফল : ম্যাচ ড্র।
ম্যাচ সেরা : মার্শাল আইয়্যুব (মধ্যাঞ্চল)।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের জোড়া সেঞ্চুরিয়ানরা
স্কোর ব্যাটসম্যান ম্যাচ ভেন্যু মৌসুম
১৩৩ ও ১২১* শাহরিয়ার হোসেন বাংলাদেশ-এমসিসি ঢাকা ১৯৯৯-২০০০
২১০ ও ১১০ মিনহাজুল আবেদীন চট্টগ্রাম-ঢাকা ময়মনসিংহ ২০০১-০২
১১৯* ও ১১০* শাহিন হোসেন বরিশাল-চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম ২০০১-০২
১০৬ ও ১৫১ জাভেদ ওমর বেলিম ঢাকা-বরিশাল ধানমÐি ২০০৫-০৬
১০৯ ও ১০০ মোহাম্মদ মিঠুন খুলনা-সিলেট চট্টগ্রাম ২০১১-১২
১৯২ ও ১১৩* তামিম ইকবাল চট্টগ্রাম-ঢাকা মেট্রো বগুড়া ২০১২-১৩
১৬৬ ও ১২৭* ইমরুল কায়েস খুলনা-বরিশাল বিকেএসপি-২ ২০১৪-১৫
১০৭ ও ১১৫* মার্শাল আইয়ুব ঢাকা মেট্রো-খুলনা মিরপুর ২০১৫-১৬
১৬৮ ও ১৭৪* শাহরিয়ার নাফীস বরিশাল-চট্টগ্রাম বগুড়া ২০১৫-১৬
১০৪ ও ১০০* তাসামুল হক চট্টগ্রাম-রাজশাহী চট্টগ্রাম ২০১৬-১৭
১৩৭ ও ১৫০ জুনায়েদ সিদ্দিক উত্তরাঞ্চল-দক্ষিণাঞ্চল রাজশাহী ২০১৭-১৮
১৩০ ও ১০৩* তুষার ইমরান দক্ষিণাঞ্চল-পূর্বাঞ্চল সিলেট ২০১৭-১৮
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।