বাংলা সন ইসলামী ঐতিহ্যেরই অংশ
বাংলাসন ইসলামী ঐতিহ্যজাত। এ সনের উদ্ভাবন ঘটেছে হিজরিসন থেকে। এর উদ্ভাবন, প্রবর্তন সবই মুসলমানরা করেছে।
জাহানারা আরজু
একটি বর্ষণ দিন
রোদত্ত নয়, ধুলোত্ত নয়, চেয়েছি আমি একটি বর্ষণ দিন
আর এই আতপ্ত ধূলির মৃত্তিকায় প্রত্যহ মুখ গুঁজে
পাঠাতে চেয়েছে দু’বাহু আমার ঊর্ধ্বপানে খুঁজে খুঁজে
মেঘের ঠিকানা! চঞ্চল শাখা তাই হয়েছে ব্যাকুল উড্ডীন!
করুণা নয়, অনাদরত্ত নয় চেয়েছি শুধু ভালোবাসা পেতে
ফাল্গুন চাইনি, চাইনি হতে বসন্তের হলদে পরাগ রেণু
রাধার বিরহে চাইনি হতে কিশোর শ্যামের সে বিরহী কান্নার বেণু,
চেয়েছি স্ফটিক জল-একটি বর্ষণ দিন পথে দিন পথে যেতে যেতে।
মৃত্তিকার সুকঠিন কারাগারে আমার সত্তা আজো জেগে রয়
ঊর্ধ্বমুখে সুদূর আকাশে মেলে তারই মনের প্রার্থনা যত,
শুধু বাঁচা নয়, অফুরন্ত পল্লবে পুষ্পে ফুটবে যে শত শত
সহস্র শাখায় সে অঙ্কুর। এই মৃত্তিকার মর্মে তাই ডেকে কয়।
এবং সে শিশুচারা মহীরূহের এক স্বপ্ন হতে চায়,
একটি বর্ষণক্ষণ চেয়ে সে তৃষ্ণার্ত চাতক প্রাণ চমকায়।
মিজানুর রহমান তোতা
আকাশ পথে হেঁটে চলা
দিবাস্বপ্নে বিভোর চারপাশের কীটগুলো
কিলবিল করে মাথার ভেতরের পোকা
থামতে চায় না, থামানো গেল না
ভুত সরাতে গিয়ে নিজেই ভুত, আজব
আকাশপথে হেটে চলতে গিয়ে ক্লান্ত
তবু কোন রকমে গা ঘামানো কসরত
জেগে দেখি স্বপ্ন দেখছিলাম, শুধুই স্বপ্ন
পৃথিবীর সব সুখও স্বপ্ন, গাঢো অন্ধকার
পথ আর শেষ হতে চায়, এর শেষ নেই।
সাইয়্যিদ মঞ্জু
কাঠ পোড়া কয়লা
জ্বেলেছো যে আগুন বুকের অতলে
নিভে না কিছুতে, শুধু যায় জ্বলে
এ কেমন প্রতিদান আমায় দিয়ে গেলে
সেই থেকে জ্বলছি
চন্দন চিতায় তোমার জ্বালানো অনলে
মন পোড়ে পোড়ে হয় কাঠপোড়া কয়লা
যার পোড়ে সে বুঝে, এ কত অমর যন্ত্রণা।
মাহমুদ কামাল
মায়া-মরীচিকা
এই ঘর, ব্যবহার্য সকল তৈজস
রাগ-অনুরাগ
শ্বাস-প্রশ্বাস আর হাতের বন্ধন
রক্তসূত্র-
শুদ্ধতার যতো অহংকার
চেনাপথ- পরিচিত শব্দাবলী
উশ্কে ওঠা প্রিয় স্মৃতিগুলো
কিশোরীর বিস্ফারিত চোখ
মনে রাখা একটি বিকেল
অপরিচয়ের গ্লানি
যাবতীয় ভুলগুলো
উশুম-কুসুম ভোর নাকি চোর
শীত-রৌদ্র
গাছগুলো এমনকি নূয়ে পড়া গাছের পাতাও
প্রিয় মুখগুলো
এইসব এইসব-এসবই তো মায়া
মায়া-মরীচিকা...
সুমন আমীন
চন্দ্রাবতী প্রেম
জীবনের গূঢ় তত্তে¡ সময় হারিয়ে যায়
সময় কী ভাবনার করিডোরে ধাক্কা দেওয়া
ধ্বংসাত্মক সুনামির নূহের প্রলয়।
স্মৃতি তার কোনো লয় নাই
প্লাবনের পরেও কিস্তিতে বেঁচে থাকা
পরহেজগার মানব মানবী যেনো।
নয়তো এত দিন মাস বছর ফুরায়
তুমিতো ফুরাও না জয়দেব
মগজের স্নায়ুকোষে জ্বলজ্বল তোমার উপস্থিতি।
কচুরিপানায় ঢাকা স্তব্ধ প্রায়
নরসুন্দা কূলে
কাকে খুঁজে খুঁজে হয়রাণ
এই আমি নীলাক্ত কষ্টের চন্দ্রাবতী!
পৃথিবীর তাবৎ জয়দেব
নগর আলোর সাময়িক মোহে
ভুলে যায় ধ্রুব চন্দ্রাবতী প্রেম।
আলম শামস
আজ বৈশাখ
আজ বৈশাখ, নতুনের উৎসব
ছয় ঋতুর বারোটি মাস মাড়িয়ে
এলো নতুন বছর। স্বাগত ১৪২৫
বৈশাখী কেতন ওড়ছে ঘরে ঘরে
শাপলা কেয়া কদম, আরও কত।
ভুখা মাটির মুখে হাসি। দামাল বৃষ্টি
দিগন্ত জোড়ানো শস্য ক্ষেত
স্বপ্নে আঁকা এক প্রেমের ছবি
বাতায়নে নতুন সৌরভ মোহনীয় আমেজ
আম বোলের গন্ধে আকুল কণ্ঠে ব্যাকুল বাউল
ষোড়শী কন্যার চঞ্চলা ছন্দে সবুজ শ্যামল গাঁ।
ফাহিম ফিরোজ
কবিতাদ্বয়
ভোঁ-দৌড়
আড্ডা, তোমার নখের ভেতর ঢোকে মুখ দিয়ে বের হয়
কইলা... কইলা পহেলা রাইতে, এখানে থাকতে চাও
এই ফাঁকে, কে যেন আমার মুখের গভীরে আড্ডা ঠেলে দ্যায়
মেয়েটি দেখলো! খুশি চিত্তেই থাকতে বললাম, সঙ্গে নিরাপত্তা
এই দিকে, আমার বন্ধুর লগে সে বাইরে গেল। দ্রæত ফিরে এসে
বলল, মায়ের মোবাইল...। কে যেন বলল, যত সব!
পাশে ছিল পেঁপে গাছ; বোঁটা ছিঁড়ে হঠাৎই নিচে...
আজিকার আড্ডাও তাই।
দোহাই পর্ব
পায়ের জীবন্ত নখ কেউ
তুলে ফেললেও
কইও না... কইও না সেই রাতের কথন
রাত কিভাবে মধুর সংঘাতে লিপ্ত ছিল
আরেক নিশির লগে। তার থেকে
ফুটে ছিল ফুল
কিছুগন্ধ টের পেয়েছিল হিজড়ার দল
কিন্তু চতুর জানালা তার উপর একটি
কালোপর্দা মেলে ধরে ছিল
আর কী, এভাবে সে যাত্রায় রক্ষা পেয়েছিল।
ফখরুল হাসান
যাযাবর হবো
আমার মাঝে প্রেম খুঁজো না তুমি
আমি তো শ্মশানে পোড়া ছাই
মন বলে সত্যিই আমার কিছু নাই
আমাকে স্বপ্নের মায়াজালে জড়িয়ে
তাই তোমার তো কোনো লাভ নাই
আমি কৃষকের চৈত্রের চৌচির জমি
মাঝে মাঝে বন্যায় ভেসে যাই
আমাকে নিয়ে ঘরবাঁধার স্বপ্ন দেখো না তুমি
বাউলের একতারায় সংসার সাজাই
আমাকে বুঝতে যেও না তুমি
আমি রাখালি বাঁশির সুরে হারিয়ে যাই
আমাকে খুঁজো না তুমি অন্য কোথাও
মানবতার শ্লোগানে রাজপথ চষে যে বেড়াই
আমার ভেতরে আমি কিছুতেই নাই।
মানবতার মাঝে নিজের স্বাধীনতা খুঁজে পাই।
ইদ্রিস সরকার
সূর্য ফোটার দেশ
স্পন্দিত এ বদ্বীপ আমার
স্বদেশী দাঁতাল লুটছে খামার
আলোক উজ্জল শ্যামল স্বদেশ
সোনার দেশ সূর্য ফোটার দেশ
মেঘ-বৃষ্টি ঝড় রোদ্র হাওয়ার
মধুর সুখের সুধা খাওয়ার
আমার দেশ সোনার মতো খাঁটি
আমার দেশ মন ভোলানো পাটি
আমার স্বদেশ আমার স্বকেশ
রবিকরোজ্জল ¯িœগ্ধ পরিবেশ
শস্য ফলে কালের গর্ভে এ নাম
দুর চীনেও এদেশের সুনাম
এসো তোমার ধুইয়ে দেই মাগো পা, টা
মা তোমার বুকেও কিসের কাঁটা!
শাহীন ভূঁঞা
নববর্ষের গান
আসুক নূতন দিন পাপী-তাপী সবার জীবনে,
জাগুক সবার প্রাণ আলোকিত এ-সূর্যের মত;
(যে-সূর্য উদ্দীপ্ত হয়ে বয়ে চলে শুধু অবিরত,
উঁকি দেয় দীপ্ত মুখে প্রাণের উন্মুক্ত বাতায়নে)।
আসুক হাওয়া আজ চেতনার নিজস্ব প্রাঙ্গণে,
যে-হাওয়া আনে বয়ে (যে-জীবন শঙ্কাহত, ক্লান্ত
বিষের ধোঁয়ার নীলে দুর্বিষহ, বেদনা-বিক্ষত)
সে-অপসৃত জীবনে সুখের বারতা ক্ষণে ক্ষণে।
দুঃসহ দুঃখের পালা শেষ করে রৌদ্র-দগ্ধ মন
খুঁজে পাক শুভ্র রেখা (যে রেখার নেই অবসান,
খুশির খবর নিয়ে যে রেখা জীবনে আসে ফিরে)।
সংকট সংঘাত দ্বন্ধ আর যতো মিথ্যার বন্ধন,
দূরে যাক, পুড়ে যাক, যে-শান্তি উচ্ছ¡ল বহমান
সে-শান্তি আসুক আজ প্রতীক্ষিত জীবনের তীরে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।